
সারা দেশের মতো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শাবিপ্রবি) ব্যাপক বনায়ন করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এসব বনায়ন ছিল অপরিকল্পিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ফলদ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হলেও এর মধ্যে অধিকাংশই ছিল ইউক্যালিপটাস। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রভাব। কমেছে পাখির বিচরণ।
বনায়ন গবেষকরা জানান, একটি ইউক্যালিপটাস গাছের আশপাশের প্রায় ১০ ফুট এলাকা ও ভূগর্ভের প্রায় ৫০ ফুট নিচের পানি শোষণ করে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়। এই প্রক্রিয়াটি ২৪ ঘণ্টাই চলতে থাকে। ফলে দ্রুত মাটিতে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এতে আশপাশের অন্য প্রজাতির গাছও জন্মাতে পারে না। গাছটি মাটিকে শুষ্ক করে ফেলে। ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, গাছটি কেটে ফেললেও মাটির উর্বরতা ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগে। এমনকি এ গাছের ফুল ও ফল ঝরে পড়লে সেখানেও পরিবেশের বিপর্যয় দেখা দেয়। এই গাছের ফুল এবং পাপড়িগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। এ গাছের পাতায় এক ধরনের অ্যান্টিসেপটিক থাকায় এর নিচে ছোট গাছ বাড়তে পারে না এবং এর প্রভাবে মারা যায় পোকা-মাকড়ও।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক তানজিয়া জাহান মনি বলেন, ‘ইউক্যালিপটাস পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটি মাটি থেকে প্রচুর পানি শোষণ করে এবং এর রেণু বাতাসের সঙ্গে মিশে পরিবেশ ও মানুষ উভয়ের ক্ষতি করে। এ ব্যাপারে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেছি। ক্যাম্পাসে ইউক্যালিপটাস গাছের মতো ক্ষতিকর গাছগুলো কেটে এর পরিবর্তে পরিবেশের জন্য উপকারী গাছ রোপণের অনুরোধ করব।’
বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশের ভারসাম্যের কথা চিন্তা না করে অপরিকল্পিত বনায়ন করা হয়েছে জানিয়ে শাবিপ্রবির ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাসনাত বলেন, ‘বনায়নে অধিকাংশই ছিল ইউক্যালিপটাস গাছ। এই গাছের রেণু পরিবেশ ও মানুষ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি এ গাছের নিচে অন্য কোনো গাছও জন্মাতে পারে না। পাশাপাশি আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, এসব গাছে কোনো পাখি খাবার পায় না বা আশ্রয় নিতে পারে না।’
বনায়নের নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে এই ক্ষতিকর গাছ থেকে রক্ষা করতে এবং এসব গাছের পরিবর্তে ফলদ ও ঔষধি গাছ রোপণ করার আহ্বান জানিয়ে ড. মোহাম্মদ আবুল হাসনাত আরও বলেন, ‘সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়ে যদি এই গাছের পরিবর্তে পরিবেশের জন্য উপকারী গাছ লাগানো যায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধারিত্রীর জন্য আমরা (ধরা)’র কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘ইউক্যালিপটাস মূলত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিক্রি করার জন্য লাগানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত স্থানীয় আবহাওয়া উপযোগী ও জীববৈচিত্র্যের কথা চিন্তা করে বনায়ন করা। কিন্তু এর পরিবর্তে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ লাগানোকে আমি সমর্থন করি না।’