খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনড় রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এবং ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগান।
অন্যদিকে কুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবির বিপক্ষে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বুধবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মিছিলটি শুরু হয়। দুর্বার বাংলার পাদদেশে গিয়ে তারা মানববন্ধন করেন। এ সময় শিক্ষক-কমকর্তারা কিছু শিক্ষার্থী কুয়েটের ভিসিকে হয়রানি করছে বলে দাবি করেন। ক্যাম্পাসে এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে কুয়েট পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু সেই তালিকা প্রকাশ না করে ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে কুয়েট প্রশাসন। তারা বলছেন, বহিষ্কারের নামে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রদের হয়রানি করা হতে পারে। সেই সঙ্গে হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে জানান, কুয়েটে হামলার ঘটনায় বহিরাগত এক ব্যক্তি কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীকে আসামি করে আদালতে মামলা করেছেন, ওই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা মাঠ ছাড়বেন না বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভিসি চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে গেছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে সমর্থন দিতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি। ছবি: খবরের কাগজ
মঙ্গলবার দুপুরে তালা ভেঙে আবাসিক হলে প্রবেশের পর রাতে হলে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। কুয়েট শিক্ষার্থী শেখ তৌফিক বলেন, ‘আমরা হলে উঠলেও খাবার পানির সংকট রয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ। দুই মাস আগের ট্যাংকির পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হলের কর্মচারীদের এখনো নিয়োগ হয়নি। আমাদের সমস্যাগুলো হল প্রভোস্টকে অবহিত করেছি। তিনি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের কারণে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম দুই মাস বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে চার-পাঁচ মাস শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ। এতে আমরা শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
অন্যদিকে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার কনফারেন্স রুমে শিক্ষক-কর্মচারীদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবির বিপক্ষে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এ সময় কুয়েটের উপাচার্যকে শিক্ষার্থীরা হয়রানি করছে বলে শিক্ষক-কমকর্তারা দাবি করে এর প্রতিবাদ জানান।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যে ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে নির্দোষ হতে পারেন। ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটি সেটা যাচাই বাছাই করছে।’ তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতিকারীদের সাজা না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন না।’ এ ছাড়া ৪ মে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পরিবেশ তৈরির জন্য তিনি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে ছাত্রদের হল ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দুই মাস আগে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। ওই সময় হলের ইন্টারনেট সংযোগ এবং পানির লাইন যেভাবে ছিল এখনো সেভাবে রয়েছে।’
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর নামের তালিকা ও সংখ্যা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। তাই এসব তালিকা দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধনে বলা হয়, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্ত্বেও গুটিকয়েক শিক্ষার্থী হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেছে, যা স্পষ্টত আইনের লঙ্ঘন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রাখার কথা বলা হয়। তারা যেন কোনো ধরনের অপপ্রচারে প্রভাবিত না হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করেন।
উল্লেখ্য, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীকে আসামি করে স্থানীয় এক বাসিন্দা আদালতে মামলা করেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।