
কেউ শরবত বানাচ্ছেন, কেউ তরমুজ কেটে টুকরো টুকরো করছেন, কেউ প্লেটে প্লেটে ইফতারি সামগ্রী সাজাচ্ছেন। তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন। ইফতারের এ আয়োজন চলছিল যশোর সরকারি এমএম কলেজ ক্যাম্পাসে।
রবিবার (১৬ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল হতেই ক্যাম্পাসের আব্দুল হাই কলা ভবনের সামনে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। তাদের একটাই উদ্দেশ্য একসঙ্গে ইফতার করা। এরকম দৃশ্য এ রমজান মাসের প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে। ইফতারের মাধ্যমে সুদৃঢ় বন্ধনের লক্ষ্যে এক এক বিভাগের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেন ইফতারের। রবিবার ছিল প্রাণিবিদ্যা ও গণিত বিভাগের আয়োজন। অন্যবারের থেকে এবার ইফতার আয়োজনগুলো আরও বেশি জমজমাট। দল বেঁধে ইফতার করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আরও বেশি। ইফতারের সময় কে কোন বর্ষের শিক্ষার্থী, সেসবের ভেদাভেদ থাকে না। সিনিয়র-জুনিয়র সবাই মিলে হয় ইফতার।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘রমজানে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এই ইফতার এলে সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার একটা উপলক্ষও বটে। বিভিন্ন বিভাগ নিজেদের মতো ইফতার আয়োজন করে। অনেক সময় সিনিয়র ভাইবোনরাও এসে যোগ দেন। স্মৃতি রোমন্থন করেন। সবাই আমরা একসঙ্গে বসে খাই। এটাই আনন্দের।’
ক্যাম্পাসকে আরেকটা পরিবার বলে মনে করেন একই বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি বলেন, ‘সারা দিন রোজা রাখার পর ক্যাম্পাসের বন্ধু, ছোট-বড় ভাইবোনদের সঙ্গে ইফতার করার অনুভূতি অন্য রকম। বাড়িতে থাকলে হয়তো পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতাম, সেটি মিস করি ঠিক। কিন্তু এই প্রাঙ্গণ আমার ঠিকানা হয়েছে চার থেকে পাঁচ বছরের জন্য। ক্যাম্পাস জীবন শেষে এই বন্ধুত্ব-বন্ধনের স্মৃতি নিয়ে যদি বের হতে না পারি, তাহলে আর এখানে পড়ার সার্থকতা কোথায়?’
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান জানান, ইফতারে সাধারণত ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, ধনেপাতা, ঘুগনি একসঙ্গে মেশানো হয়। ফলের মধ্যে বেশি থাকে পেয়ারা আর তরমুজ।
তিনি আরও বলেন, ‘ইফতারি সামগ্রী খুব দামি না হলেও এতেই সবাই খুশি। পরিমাণে খুব অল্প তবু সবার চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস অনেক বেশি। সারা দিনের ক্লান্তি যেন হার মানে এই মুহূর্তের কাছে। কষ্ট হলেও সবাই মশগুল থাকেন ইফতার আড্ডায়, তবে কেউ কেউ ব্যস্ত থাকেন শেষ মুহূর্তের শরবত বা অন্য সামগ্রী তৈরিতে। শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের নিয়ে ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে সাহরি-ইফতার করতে না পারার কষ্ট ভুলে থাকতে চান।’
একই বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ‘পরিবার ছেড়ে বাইরে প্রথম রমজান। মা-বাবার সঙ্গে রোজা পালন করতে পারছি না, কিন্তু বন্ধুরা আছে। বিভাগের সিনিয়ররাও আছেন। সবাই একসঙ্গে ইফতার করছি। সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করায় ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। ভালো লাগছে।’
এমএম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক হাসান ইমাম গতকালেরে ইফতারে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আয়োজন সম্পর্কে বলেন, ‘প্রতিদিন ক্যাম্পাসে ইফতারের আয়োজন করা হয়। বিভাগ ওয়ারি এ আয়োজন থাকে। সব দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে সবাই এ ইফতারে যোগ দেন।’