চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মূল ক্যাম্পাসে ফেরানোর দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন চারুকলার ৯ শিক্ষার্থী।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন- চারুকলা ইন্সটিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নূর ইকবাল সানি, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান সোহেল। এছাড়াও রয়েছেন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান ইয়াসিন, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান ইপা, তরিকুল ইসলাম মাহী এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের মাহমুদুল ইসলাম মিনহাজ।
জানা গেছে, চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মূল ক্যাম্পাসে ফেরানোর দাবিতে সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা ৩টা থেকে সেখানে আমরণ অনশন শুরু করছেন তারা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনশন করছেন তারা। দীর্ঘ সময় ধরে অনশন করায় নারী শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়নি। বার বার শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছেন। তাই তারা অনশন কর্মসূচিতে বসেছেন।
চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নাফিজা তালুকদার বলেন, ২১ এপ্রিল বেলা ৩টা থেকে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন আমাদের বন্ধুরা। এখনও কিছু খায়নি তারা। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে প্রক্টর স্যার এবং প্রো-ভিসি কামাল উদ্দিন স্যার এসেছিলেন। এরপরও অনশন ভাঙেন নি শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে চবি প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত না করার প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১ এপ্রিলের মধ্যে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার কথা দিয়েছিল। কিন্তু তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। প্রশাসন কথা রাখেনি। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। তাই বাধ্য হয়ে আবারও আন্দোলনে নামতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, চারুকলা ইন্সস্টিটিউট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত একটি ইনস্টিটিউট। এটি চট্টগ্রাম নগরীর বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে অবস্থিত। ৪টি বিভাগ এবং প্রতিবর্ষে ৭০ টি আসনের সমন্বয়ে গঠিত এ ইন্সস্টিটিউট। এটি দেশের প্রথম চারুকলা বিভাগ ও একমাত্র ইনস্টিটিউট যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থিত। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চারুকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
২০২৩ সালের ২ নভেম্বর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকার কারণে চারুকলা ইনস্টিটিউট সংস্কারের উদ্দেশ্যে ২২ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। ওই বছরের ৫ নভেম্বর থেকে চারুকলাকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবি ওঠে। পরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালের ২১ জানুয়ারি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এক বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে ক্যাম্পাসে ফেরার একদফা দাবিটি অনেক লম্বা এবং ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া সেজন্য সময় দরকার। বর্তমানে চারুকলা ইনস্টিটিউট সংস্কার করে পরবর্তী সময়ে একদফা দাবির বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে বলে জানান তিনি।
এর পরবর্তীতেও প্রশাসনের কাছ থেকে চারুকলাকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের আশ্বাস পেলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের। এরই জেরে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ফের একদফা দাবিতে টানা তিন দিন লাগাতার আন্দোলন করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম অচল করে দেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন করে গণ-অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জেরে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরানোর আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে আশ্বাস পেয়ে জন্য আন্দোলন থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
তারেক মাহমুদ/মাহফুজ