
প্রতি বছর ঈদ আমাদের জীবনে নিয়ে আসে আনন্দ। ঈদের দিন নতুন জামা পরার মাধ্যমে সেই আনন্দ যেন আরও বৃদ্ধি পায়। ঈদ এলেই সবাই বিভিন্ন শপিংমলে ছুটে নিজের পছন্দের জামা কেনার জন্য। কিন্তু আমাদের আশপাশে এরকম অনেক মানুষ আছেন যাদের ঈদের নতুন জামা কেনার সামর্থ্য নেই। সেসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দায়িত্বই যেন নিচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। একেক সংগঠন দায়িত্ব নিচ্ছে একেক শ্রেণির বা একেক অঞ্চলের মানুষের ঈদ বস্ত্রের ব্যবস্থা করার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তদানমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সঞ্চালন’ গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ ৭০ জন খালা, মামাদের মধ্যে ঈদবস্ত্র বিতরণ করে। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিন’ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে পাঠদান করছে। গত ১৪ মার্চ ‘কিন’ স্কুলের ১৩০ জন বাচ্চার মধ্যে ঈদবস্ত্র বিতরণ করে। এ ছাড়া গত ১৪ মার্চ এবং ১৬ মার্চ দুই ধাপে সিলেটের মুসলিম বেদে পল্লি ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ৫৫টি পরিবারের মধ্যে ঈদবস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্নোত্থান’। এভাবেই সিলেট অঞ্চলে সবার মাঝে ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনগুলো।
তাদের এই অসাধারণ কাজের পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রমের গল্প। রমজান মাস শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল এবং মেসগুলোতে রুমে রুমে গিয়ে ফান্ড সংগ্রহ করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ করার পর সংগৃহীত সেই টাকার ঈদবস্ত্রের মাধ্যমে ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছেন তারা।
তাদের এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা ও অনুভূতি সম্পর্ক জানতে কথা হয় সংগঠনগুলোর প্রধানদের সঙ্গে।
এ ব্যাপারে সঞ্চালনের সভাপতি মো. নাদিমুল বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন যখন ক্যাম্পাসের হলে, টংয়ের দোকানে যাই তখন দেখতে পাই অনেক শিশু, খালা, মামারা কাজ করেন, যাদের অনেকেরই ঈদের নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমরা সবাই ঈদে নতুন কাপড় পরি। ক্যাম্পাসের এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোও যাতে আমাদের মতো করে ঈদের আনন্দে মেতে উঠতে পারে এজন্যই প্রতি বছর সঞ্চালনের পক্ষ থেকে নতুন কাপড় বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে। আমরা চাই, আমাদের সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। সঞ্চালন সব সময় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে ছিল, আগামীতেও পাশে থাকবে। আমাদের এই মহৎ কাজে যারা সাহায্য সহযোগিতা করে পাশে ছিলেন সবাইকে সঞ্চালন পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ।’
‘কিন’-এর সাধারণ সম্পাদক ইনজামামুল হক ইরাম বলেন, “ঈদ সবার জন্য খুশির বার্তা বয়ে আনে। কিন শাবিপ্রবির আশপাশের সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে শিক্ষাদানের কাজ করে থাকে। অন্যান্য বছরের মতো তাদের জন্যই আমাদের এবারের আয়োজন ‘কিন ঈদ আনন্দ ২০২৫’। সবার মতো তাদের ঈদও কাটুক অনাবিল আনন্দ আর ভালোবাসায়।”
সার্বিক বিষয়ে স্বপ্নোত্থানের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই কোনো একটা কমিউনিটি বা অঞ্চলে ঈদবস্ত্র বিতরণ করে থাকি, এতে কিছু মানুষ ঈদের আনন্দ খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারে। মানুষের মুখের হাসিই আমাদের সফলতা। আমাদের এই আয়োজনে যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
/রিয়াজ