ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ববিতে পরীক্ষা দিতে এসে আটক ছাত্রলীগ নেত্রী

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
ববিতে পরীক্ষা দিতে এসে আটক ছাত্রলীগ নেত্রী
আটক ছাত্রলীগ নেত্রী টিকলী শরীফ। ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) পরীক্ষা দিতে এসে আটক হওয়া এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার (১৬ এপ্রিল)  বিকেলে জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারের পাঠানো হয়।

আটক ছাত্রলীগ নেত্রী টিকলী শরীফ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের উপ-ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সামনের সারির একজন নেত্রী ছিলেন। গত বছর জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময়ে টিকলী ক্যাম্প ছাড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে সম্প্রতি তিনি বরিশালে আসেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে ভোলা রোডে একটি রেস্তোরাঁর ভেতরে টিকলী শরীফসহ তিনজনকে অবরুদ্ধ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হলে রাত ৯টার দিকে প্রক্টর তাদের তিনজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। টিকলীর সঙ্গে থাকা অন্য দুই শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেত্রী টিকলী শরীফ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কয়েকজন ফোন করে জানান টিকলী শরীফসহ কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী ক্যাম্পাসের সামনে একটি রেস্তোরাঁয় বসে গোপন মিটিং করছেন। সেখানে গিয়ে গোপন সভা করা অবস্থায় তাকেসহ তিনজনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশকে অস্থিশীল করার পাঁয়তারা করছেন। 

মঙ্গলবার রাতে পুলিশ হেফাজতে থাকা ছাত্রলীগ নেত্রী টিকলী শরীফ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমার বুধবার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। আমি লাইব্রেরিতে পড়ছিলাম। সন্ধ্যায় বাইরে বের হলে আমার জুনিয়রদের সঙ্গে দেখা হয়, তাদের নিয়ে চা খেতে গেলে সেখান থেকে আমাদের আটক করা হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সোনিয়া খান সনি বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থী বিষয়টি আমাকে জানানোর পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্তদের হস্তান্তর করি। পরবর্তী ব্যবস্থা পুলিশ আইন অনুযায়ী গ্রহণ করবে।’

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতাকর্মীরা টিকলী শরীফসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে গেলে আমাদের কাছে তাদের হস্তান্তর করে। আটক তিনজনের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। টিকলীর বিরুদ্ধে বন্দর থানায় থাকা মামলাটিতে তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন। কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলার আসামি হওয়ায় তাকে সেখানে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

কৃষিতে খরচ কমবে ৮২%

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
কৃষিতে খরচ কমবে ৮২%
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কৃষিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিতে যাচ্ছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক গবেষণা। বাজারে প্রচলিত ইউরিয়ার পরিবর্তে উদ্ভাবিত হয়েছে ন্যানো ইউরিয়া, যা প্রচলিত সারের তুলনায় ৮২ শতাংশ পর্যন্ত খরচ সাশ্রয়ী। পরিবেশবান্ধব এই প্রযুক্তি কৃষির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও আনবে টেকসই পরিবর্তন।

যুগান্তকারী এই ন্যানো ইউরিয়া উদ্ভাবন করেছেন যবিপ্রবির কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং ল্যাবরেটরি অব ন্যানো বায়ো অ্যান্ড অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং (NAME Lab)-এর প্রধান গবেষক ড. জাভেদ হোসেন খান। দীর্ঘ সাত বছরের গবেষণায় তিনি এই স্প্রে সারটি উদ্ভাবন করেন, যা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈব সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কুলা বায়ো (Kulabio)-এর সঙ্গে এক যৌথ চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃতি পেয়েছে।

ন্যানো ইউরিয়া হলো অতি সূক্ষ্ম কণায় প্রস্তুত এক ধরনের ইউরিয়া সার, যা স্প্রে করে সরাসরি গাছের পাতায় প্রয়োগ করা হয়। প্রচলিত সারের তুলনায় এতে অণুর আকার অনেক ক্ষুদ্র। ফলে গাছ তা দ্রুত ও কার্যকরভাবে শোষণ করতে পারে। এতে অপচয় হয় না। আবার মাটির উর্বরতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
ন্যানো ইউরিয়ার উদ্ভাবক ও গবেষক ড. জাভেদ বলেন, ‘আমরা এমন এক ন্যানো সার উদ্ভাবন করেছি, যা সাধারণ ৪২০০ টাকার ইউরিয়ার জায়গায় মাত্র ২৩০ টাকায় এক বিঘা জমিতে প্রয়োগ করা সম্ভব।’
 অর্থাৎ, এতে খরচ সাশ্রয় হবে প্রায় ৮২ শতাংশ। ন্যানো ইউরিয়ার কার্যকারিতা ইতোমধ্যে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কৃষকরা এতে ফলন বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ব্যয় কমার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়েছেন।

২৩ এপ্রিল ২০২৫, যবিপ্রবির সংশ্লিষ্ট ল্যাব এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি কুলা বায়োর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কুলা বায়োর পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ফ্রেডেরিক কেন্ডিরগি এবং যবিপ্রবির পক্ষে ড. জাভেদ হোসেন খান।
চুক্তি অনুযায়ী, কুলা বায়ো যবিপ্রবির উদ্ভাবিত ন্যানো সার প্রযুক্তি গ্রহণ করবে এবং নিজেদের জৈব সার প্রযুক্তি NAME Lab-এর সঙ্গে ভাগ করবে। পরবর্তী পাঁচ বছর এই দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে গবেষণা ও উৎপাদন কার্যক্রমে অংশ নেবে।

এ বিষয়ে ড. জাভেদ বলেন, ‘আমি কুলা বায়োর বোস্টন কারখানা ঘুরে দেখেছি এবং তাদের প্রেসিডেন্ট ড. হ্যারিসন ইউনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। তারা আমাদের প্রযুক্তিতে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং খুব শিগগির আমাদের ল্যাব পরিদর্শনে আসবেন।’
বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ টন ইউরিয়া সার ব্যবহার করে, যার প্রায় ৮০% আমদানিনির্ভর। ২০২৪ অর্থবছরে ইউরিয়া আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। ন্যানো ইউরিয়া প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে এই ব্যয় অর্ধেকে নেমে আসবে। একই সঙ্গে পরিবেশ ও মাটির ওপর বিরূপ প্রভাব হ্রাস পাবে।

যবিপ্রবির এক অধ্যাপকের একাগ্র প্রচেষ্টায় তৈরি হওয়া এই প্রযুক্তি শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ নয়, তা এখন ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক পরিসরে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের প্রতিষ্ঠান যখন বাংলাদেশের প্রযুক্তির পাশে দাঁড়ায়, তখন সেটি শুধুই গর্বের বিষয় নয়— বরং তা এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে।
ন্যানো ইউরিয়া হতে পারে বাংলাদেশের কৃষিতে আমূল পরিবর্তনের অসাধারণ নিয়ামক, যা একদিকে উৎপাদন খরচ কমাবে, অন্যদিকে নিশ্চিত করবে পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ। কৃষি গবেষণায় এটি একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে সবাই আশাবাদী।

/রিয়াজ

শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে কুয়েট শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে কুয়েট শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর থেকে বেশ কয়েকবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে তর্কে জড়িয়েছেন। এ অবস্থায় পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কুয়েট-১৯ ফেসবুক পোস্টে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে খোলা চিঠি লেখা হয়। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি ডিপার্টমেন্টের সব ছাত্র প্রতিনিধির স্বাক্ষর সংযুক্ত করা হয়েছে। গত রবিবার রাতে ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীরা এ প্রতিক্রিয়ার কথা জানান।

এতে শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, ‘আমরা আপনাদের সন্তানতুল্য। আমাদের কোনো আচরণে যদি বিন্দুমাত্র অসম্মান প্রকাশ পেয়ে থাকে, আমরা দুঃখিত ও আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত। আমাদের ভুলের জন্য গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং আপনাদের কাছে বিনীত ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনারা আমাদের পিতৃতুল্য। অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও শ্রদ্ধার। আপনাদের প্রতিটি কথা আমাদের জীবনের পথনির্দেশ। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনারা আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা বিশ্বাস করি, প্রাণের কুয়েট আবারও ঐক্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার বন্ধনে জড়িয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী একসঙ্গে কাজ করে এই শিক্ষাঙ্গনকে বিশ্বমানে উন্নীত করবে। আমরা আশাবাদী, কুয়েট পরিবারের প্রতিটি সদস্য একসঙ্গে একটি সুস্থ, সুন্দর, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নির্মাণে ভূমিকা রাখবে।’

ঘটনার পরিপ্রেক্ষাপট তুলে ধরে খোলা চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, ‘গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এক ন্যক্কারজনক ও বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। এ হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আহত হন, যা কুয়েটের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, কিছু স্বার্থান্বেষী ও কুচক্রীমহল এই হামলার প্রকৃত সত্য আড়াল করে, তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। অথচ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের শিক্ষকরা বিচক্ষণ এবং সর্বোপরি ছাত্রবান্ধব। তা সত্ত্বেও দুঃখজনক এই ষড়যন্ত্রের ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের একটি কৃত্রিম দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই স্বার্থান্বেষী মহল প্রচার চালাচ্ছে, আন্দোলনটি নাকি শিক্ষকবিরোধী কিংবা শিক্ষাবিরোধী। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এই আন্দোলন কখনো শিক্ষাবিরোধী ছিল না, শিক্ষকবিরোধীও ছিল না। এই আন্দোলন ছিল সন্ত্রাসবিরোধী, দুর্নীতিবিরোধী এবং শান্তিপূর্ণ একটি উদ্যোগ। এর মূল উদ্দেশ্য লেজুরভিত্তিক রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিরাপদ ও জ্ঞান চর্চার উপযোগী একটি কুয়েট গড়ে তোলা। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একক দাবি, একটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, নিরাপদ ও সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ। এই আন্দোলন তারই প্রতিফলন। তবুও আন্দোলনের সময় কোনো শিক্ষার্থীর আচরণ বা বক্তব্য যদি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের মনে আঘাত লেগে থাকে, তবে আমরা হৃদয়ের গভীর থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

আবারও অস্থিতিশীল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১০ এএম
আবারও অস্থিতিশীল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। গত ৯ মাসে উপাচার্য প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিনকে অন্তত ১০টি আন্দোলন সামাল দিতে হয়েছে। এ জন্য উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দ্বন্দ্ব, উপাচার্যের একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা এবং স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করেছেন বেশির ভাগ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা।

এ দিকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনকে সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এ ছাড়া গত রবিবার রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে বরখাস্ত করাসহ চার দফা দাবিতে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে মুহসিন স্যার আমাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগ আছে পতিত সরকারের অনুসারী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ঝুঁকি নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিলেন তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ভর্তি পরীক্ষা-সংক্রান্ত কমিটিতে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও ট্রেজারারকে রাখা হয়নি। ইতোমধ্যে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে চাকরিচ্যুত মনপুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনিরুল ইসলামকে রেজিস্ট্রার হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়েছে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অর্থ বণ্টন উপকমিটির আহ্বায়ক ও অর্থসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী মূল কমিটির সদস্য করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মো. আবদুল কাইউমকে। তার স্ত্রী ইসরাত জাহান লিজাকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন করা হয়েছে। 

বিসিসির আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুল বাতেন চৌধুরীকে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির (ক্লাস্টার ২) আহ্বায়ক করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. মোহাম্মদ তানভীর কায়ছারকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় গ ইউনিটের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থ দপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেছা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুলতান আহমেদ মৃধার ছেলে মাসুম আতিকুর রহমানকে। 

নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমানকে করা হয়েছে উপাচার্যের একান্ত সচিব। শেখ হেলালের সুপারিশে চাকরি পাওয়া সহকারী স্টোর অফিসার জাহাঙ্গির আলম রাহাতকে উপাচার্যের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ডেপুটি রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমানকে যুক্ত করা হয়েছে উপাচার্যের দপ্তরে। বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক কমিটির সাবেক সম্পাদক বনী আমিনকে পদায়ন করা হয়েছে রেজিস্ট্রার দপ্তরে। 

গত বছরের ৩০ অক্টোবর উপ-উপাচার্যের হিসেবে অধ্যাপক গোলাম রাব্বানি নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর থেকেই উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, যা গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে আসে। সেদিন অ্যাকাডেমিক অগ্রগতি জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের চেয়ারম্যানদের উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান উপ-উপাচার্য। উপ-উপাচার্যের ডাকা সভা নিয়মবহির্ভূত উল্লেখ করে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সভায় যোগ না দেওয়ার নিদের্শ জানিয়ে উপাচার্য পাল্টা চিঠি দেন। 

এ ছাড়া গত বছরের নভেম্বরে বিভিন্ন কমিটিতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে স্থান দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে তাকে সব কমিটি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জুলাই বিপ্লবে হামলাকারীদের তথ্য চেয়ে জবিতে বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৯ পিএম
জুলাই বিপ্লবে হামলাকারীদের তথ্য চেয়ে জবিতে বিজ্ঞপ্তি
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনের সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাহিরে সংঘটিত বেআইনি এবং সহিংস ঘটনায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর হতে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।  

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই ২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় (১৫ জুলাই ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত) ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাহিরে সংঘটিত বেআইনি এবং সহিংস ঘটনায় জড়িত জবি’র শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগকারীর তথ্য, অভিযোগ ও অভিযুক্তদের বিস্তারিত বিবরণ এবং স্বপক্ষে প্রমাণসহ সিলগালাকৃত খামে জমা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। 

অভিযোগকারীর তথ্য ও পরিচয় কঠোর গোপনীয়তার সাথে রক্ষা করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে এ বিষয়ে একটি কমিটি করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আহ্বায়ক করা হয় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়াকে। 

তিনি বলেন, আমাদের যে কমিটিটা হয়েছিল সেটার কার্যক্রম আমরা বৃহত্তর ভাবে শুরু করেছি। তাই প্রাথমিকভাবে আমরা বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, ইনিস্টিউট এবং এর বাইরেও যদি কেউ আক্রান্ত হয় এই তথ্যটা বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা সিলগালা খামে তথ্য আহবান করেছি। কিছু অভিযোগ এসেছে, সেগুলোও আমরা দেখছি। তবে আমরা একটু বৃহত্তর পরিসরে কাজ শুরু করেছি যাতে কেউ বলতে না পারে যে তাদের তথ্য নেওয়া হয় নি। তারপর সে অনুযায়ী আমরা শুনানি, গণশুনানি বা তাদের ইন্টারভিউ নিব, তারপর আমরা বাকি কাজ গুলো করব।

মুজাহিদ/সিফাত/

শাবিপ্রবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও ছাত্রদলের কর্মসূচি, কারণ দর্শানোর নির্দেশ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম
শাবিপ্রবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও ছাত্রদলের কর্মসূচি, কারণ দর্শানোর নির্দেশ
শাবিপ্রবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও ছাত্রদল কর্মসূচি পালন করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শাবিপ্রবি শাখা সভাপতি রাহাত জামান ও সাধারণ সম্পাদক নাইম সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। তাদের কার্যক্রমের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রক্টর বরাবর লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে শাবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

নোটিশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শাবিপ্রবি শাখা, গত ০৮/০৪/২০২৫ইং তারিখে ফিলিস্তিনীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে একটি মানববন্ধন করেন যা প্রসংশনীয়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন এবং গত ২০/০৪/২০২৫ইং তারিখে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মানববন্ধন ও র‍্যালি করেন যা কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় একটি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ করেছেন এবং অপরাপর ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। তাই আপনাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা আগামী ০৩ (তিন) কার্য দিবসের মধ্যে প্রক্টর বরাবর লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হল।’

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি নিষিদ্ধ থাকা স্বত্তেও মানববন্ধন ও মিছিল করে শাখা ছাত্রদলের কর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার। অনুমতি না থাকলেও দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করায় সমালোচনা দেখা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে।

এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সংগঠনটির শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কারণ দর্শানোর নোটিশ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদলের কর্মসূচির জন্য তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের জবাবের উপর ভিত্তি করে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

ইসফাক/তাওফিক/