
সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মায়ানমার ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ভারতের আসামে ভূমিকম্পের পর ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে সেটির এপিসেন্টার যেখানেই হোক না কেন বিশেষ করে দেশের ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। এজন্য ভূমিকম্প মোকাবিলায় ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে সরকারের প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম রিসোর্স কক্ষে দুর্যোগ গবেষণা প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের (ডিআরটিএমসি) আয়োজনে ওয়েক আপ কল অন আর্থ কোয়েক শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া বক্তারা প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
মতবিনিময়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মায়ানমারের ভূমিকম্পের আলোকে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ঝুঁকি, প্রস্তুতি ও জরুরি কর্মপদ্ধতি ওই মতবিনিময়ে বক্তাদের বক্তব্যে ওঠে আসে। এছাড়া ভূমিকম্প নিয়ে ইতোপূর্বে গবেষণা, প্রকাশনা ও মূল্যায়নের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি থাকলেও বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও অধিকতর কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বক্তারা। যা ভূমিকম্প দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশকে বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোর প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি লাঘব করতে পারে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং কমিউনিটি পর্যায় থেকে সরকারি নীতি নির্ধারকদের সম্মিলিতভাবে ভূমিকম্প দুর্যোগ মোকাবিলার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ও ডিআরটিএমসির পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ভূমিকম্প নিয়ে সরকারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকলেও গত সাত-আট বছর যাবত ভূমিকম্পের মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে একেবারেই নিরব। কেননা রোহিঙ্গা, করোনাসহ নানা ইস্যুতে সেটি চাপা পড়ে যায় কিন্তু মায়ানমারে ভূমিকম্পের পর আমাদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে কেননা ১০০ বছরের টাইমলাইনে একটা ভূমিকম্প হতে পারে। এখন ভূমিকম্পের এপিসেন্টার যেখানেই হোক, ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই, মাঠ পর্যায় থেকে সরকার পর্যন্ত যেন অবিলম্বে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্রমেয়াদি প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস। এছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেডক্রস বাংলাদেশ, একশন এগেইনস্ট হাঙ্গার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, একশন এইড বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ব্র্যাক, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি, নলেজ ক্র্যাফট বাংলাদেশ, ইউনাইটেড পারপাস, পাওয়ার পার্টিসিপেশন সেন্টার, সেভ দ্যা চিলড্রেন, হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউ এবং ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।
/আরিফ জাওয়াদ/মাহফুজ