নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কোটি কোটি টাকার কাজ ঝুলে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনের তাগিদ ও একাধিক চিঠিতেও নির্বিকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে কাজের গতি ফেরাতে কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে নোবিপ্রবি প্রশাসন। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এদিকে সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল দায়িত্ব নেন ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। এর আগে পতিত সরকারের প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান ও অনুমোদন দেয়।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের প্রধান সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কেএস ব্রিকস’। ২০২৪ সালের মার্চে শুরু হওয়া প্রায় ২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ১৮ মে। তবে নির্ধারিত সময় শেষ হলেও এখনো ড্রেনের কাজ শুরুই করেনি প্রতিষ্ঠানটি। বারবার তাগিদের পরও কাজের গতি বাড়েনি।
প্রশাসনের দাবি, তাদের দুবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বারবার কাজ করার জন্য ফোনেও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কার্যত ‘কানে তুলছে না কথা’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি উন্নয়ন প্রকল্প পরিবহন শেড নির্মাণের কাজ পেয়েছে ‘মেসার্স মাজাহারুল ইসলাম’। প্রায় ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ৩০ মার্চ। প্রতিষ্ঠানটি সময় বৃদ্ধির আবেদন করে, যা মঞ্জুরও করে প্রশাসন। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো বড় অংশের কাজ বাকি। কাজে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলার জন্য বাস্কেটবল ও ভলিবল কোর্ট নির্মাণের কাজ পেয়েছে চট্টগ্রামের ‘ইইএস এন্টারপ্রাইজ’। ৫৩ লাখ টাকার এই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও পুরোপুরি কাজ শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে কাজের ধীরগতিতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। বর্ষা মৌসুমে ড্রেন ও রাস্তার কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন অনেকে। দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় নতুন প্রশাসনের সমালোচনাও করেছেন তারা।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আল জোবায়ের জিসান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার দুই দশক হতে চললেও নোবিপ্রবি এখনো অবকাঠামোগত সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ক্লাসরুম-আবাসনসংকটের পাশাপাশি ড্রেনেজব্যবস্থারও বেহাল দশা। যেসব উন্নয়নকাজ শুরু হয়, সেগুলোও সময়মতো শেষ হয় না, যা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে। শান্তি নিকেতন থেকে অ্যাকাডেমিক ভবন-১ পর্যন্ত সড়কটির সংস্কার এবং ড্রেন নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। হজরত বিবি খাদিজা হল থেকে শুরু করে সালাম হল হয়ে অ্যাকাডেমিক ভবন-১ পর্যন্ত সড়কটিও বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায়। তখন এ পথে চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে যে ক্রিকেট পিচ তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল, সেটিও শেষ হয়নি এখনো। ভলিবল-বাস্কেটবল কোর্ট তৈরির কাজও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। গুণগতমান বজায় রেখে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন কাজ সম্পন্ন করে, সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।’
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেএস ব্রিকসের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বিল থেকে অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ টাকা আটকে রেখেছে। ১০ শতাংশ জামানতের বাইরেও অতিরিক্ত অর্থ আটকে রাখার ফলে কাজ করতে পারছি না। শুরুতে কাজের গতি ভালো থাকলেও অর্থ আটকে রাখায় তা কমে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১০০ টাকার কাজ করে ৪০ টাকা আটকে রাখলে কাজ করব কীভাবে? এটা তো কার্যত কাজ না করানোর জন্যই করা হচ্ছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষ করানোর ইচ্ছে থাকত, তাহলে তারা পুরো টাকা পরিশোধ করত। প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থাও নষ্ট হয়েছে। তারপরও আশ্বস্ত করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করব।’
এ বিষয়ে বুধবার (২১ মে) নোবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ ও তদারকি কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘তিনটি পৃথক প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। আমরা তাদের চূড়ান্ত সময়সীমা দিয়েছি। রাস্তার কাজ ১৮ মে শেষ করার কথা থাকলেও তারা শেষ করতে পারেনি। আমরা বিশেষ বিবেচনায় তাদের আরও কয়েক দিন সময় দিয়েছি। অন্যদিকে পরিবহন শেডের কাজ ৩০ মের মধ্যে শেষ করতে হবে। না হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হবে। কাজগুলো অন্য উপায়ে সম্পন্ন করা হবে এবং ক্ষতিপূরণও আদায় করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে মিটিং করে বিষয়গুলো তাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি। তাদের কাছ থেকে মুচলেকাও নেওয়া হয়েছে।’
জামানত আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত রমজানে কাজ তদারকিতে গিয়ে অনিয়ম ধরা পড়ে, রড পরিমাণে কম দেওয়া হয়েছিল। আমরা কাজটি পুনরায় করাই। কিছু অসন্তোষ থাকলেও রমজান ও ঈদ বিবেচনায় ২০ শতাংশ রেখে আংশিক পেমেন্ট দিয়েছি। কাজ শেষ হলে পুরো টাকা পরিশোধ করা হবে, টাকা আটকে রাখার প্রশ্নই আসে না।’