বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। গত ৯ মাসে উপাচার্য প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিনকে অন্তত ১০টি আন্দোলন সামাল দিতে হয়েছে। এ জন্য উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দ্বন্দ্ব, উপাচার্যের একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা এবং স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করেছেন বেশির ভাগ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা।
এ দিকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনকে সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এ ছাড়া গত রবিবার রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে বরখাস্ত করাসহ চার দফা দাবিতে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে মুহসিন স্যার আমাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগ আছে পতিত সরকারের অনুসারী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ঝুঁকি নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিলেন তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ভর্তি পরীক্ষা-সংক্রান্ত কমিটিতে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও ট্রেজারারকে রাখা হয়নি। ইতোমধ্যে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে চাকরিচ্যুত মনপুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনিরুল ইসলামকে রেজিস্ট্রার হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়েছে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অর্থ বণ্টন উপকমিটির আহ্বায়ক ও অর্থসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী মূল কমিটির সদস্য করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মো. আবদুল কাইউমকে। তার স্ত্রী ইসরাত জাহান লিজাকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন করা হয়েছে।
বিসিসির আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুল বাতেন চৌধুরীকে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির (ক্লাস্টার ২) আহ্বায়ক করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. মোহাম্মদ তানভীর কায়ছারকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় গ ইউনিটের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থ দপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেছা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুলতান আহমেদ মৃধার ছেলে মাসুম আতিকুর রহমানকে।
নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমানকে করা হয়েছে উপাচার্যের একান্ত সচিব। শেখ হেলালের সুপারিশে চাকরি পাওয়া সহকারী স্টোর অফিসার জাহাঙ্গির আলম রাহাতকে উপাচার্যের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ডেপুটি রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমানকে যুক্ত করা হয়েছে উপাচার্যের দপ্তরে। বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক কমিটির সাবেক সম্পাদক বনী আমিনকে পদায়ন করা হয়েছে রেজিস্ট্রার দপ্তরে।
গত বছরের ৩০ অক্টোবর উপ-উপাচার্যের হিসেবে অধ্যাপক গোলাম রাব্বানি নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর থেকেই উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, যা গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে আসে। সেদিন অ্যাকাডেমিক অগ্রগতি জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের চেয়ারম্যানদের উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান উপ-উপাচার্য। উপ-উপাচার্যের ডাকা সভা নিয়মবহির্ভূত উল্লেখ করে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সভায় যোগ না দেওয়ার নিদের্শ জানিয়ে উপাচার্য পাল্টা চিঠি দেন।
এ ছাড়া গত বছরের নভেম্বরে বিভিন্ন কমিটিতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে স্থান দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে তাকে সব কমিটি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।