
আধুনিক বিশ্বে কেউ এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে চাইলে বিমানে চেপে বসে। সেটা যদি চীন থেকে যুক্তরাজ্য হয়, তা হলে তো কথাই নেই। কিন্তু ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইউকুন তাও বিরল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গাড়ি চালিয়ে তিনি চীন থেকে ১১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছেন। এ জন্য তার ২৬ দিন লেগেছে। পাড়ি দিয়েছেন সাতটি দেশ- কাজাখস্তান, রাশিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস। উদ্দেশ্য ছিল শুধু স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানো। কিন্তু তার এই যাত্রা হয়ে উঠেছে সাহস, সংকল্প ও আত্মবিশ্বাসের এক অনন্য গল্প।
ইউকুন তাও বর্তমানে হংকং পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। তার এই পরিকল্পনার কথা তার মা-বাবাকে জানালে তারা মাসের পর মাস ধরে তাকে এই পাগলামি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। তবে তিনি থামেননি।
ভ্রমণ নিয়ে ইউকুন তাও বলেন, ‘আমি ওইসব দেশে আগে কখনো যাইনি। বস্তুত ১০ বছর ধরে বিদেশে যাওয়া হয়নি আমার। এই সিদ্ধান্ত নিতে মানসিক শক্তি আর সাহসের দরকার ছিল। অজানার মুখোমুখি হতে আসলেই সাহস লাগে।’
এই অজানা যাত্রার প্রস্তুতি নিতে সময় লেগেছিল প্রায় ছয় মাস। গাড়ি, রুট প্ল্যান, ভিসা ইত্যাদি সবকিছু নিয়ে ভাবতে হয়েছে ইউকুন তাওকে।
ভ্রমণটা সহজ ছিল না ইউকুন তাও-এর। ১ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করার কিছুদিন পরই চীন-কাজাখস্তান সীমান্তের কাছে এসে তার গাড়ির ইঞ্জিনে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। তাও-এর হাতে সময় কম ছিল। ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশ ছাড়তে না পারলে পুরো যাত্রা থেমে যেত। পরে এক বন্ধুর সহায়তায় স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে রাত-দিন কাজ করে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই গাড়ি ঠিক করে ফেলেন মিস্ত্রিরা।
২৬ সেপ্টেম্বর, দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তাও পৌঁছান ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জোসেফিন বাটলার কলেজে। গাড়ির পেছনে ঝোলানো ছিল তার প্রিয় মাউন্টেন বাইক। কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিনিধি তাকে স্বাগত জানায়। তাও অবাক হন। এত ভালোবাসা আর এত সম্মান পাবেন, সেটা তিনি আঁচ করতে পারেননি। সূত্র: বিবিসি
/রিয়াজ