
বিশাল স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ তরুণ উদ্ভাবক। গত ২৫ মে টিম ভয়েজার্স যখন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে সেটা ছিল স্বপ্নপূরণের পথে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আমন্ত্রণে তারা এখন সেখানে আছেন। আর এই গৌরবজনক সম্মান তারা অর্জন করেছেন ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩’-এ ‘বেস্ট স্টোরিটেলিং’ ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল উইনার হয়ে। প্রথমবারের মতো বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো টিম এভাবে নাসার আমন্ত্রণে বিদেশে গেল। এই গর্বিত টিমের সদস্যরা হলেন- খালিদ সাকিব (দলনেতা), আবদুল মালেক, সাখাওয়াত হোসেন, ফাহমিদা আক্তার, মো. আতিক। টিমের সবাই বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী।
হোঁচটের পর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
২০২৩ সালের স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে শুরুর দিকে আশাব্যঞ্জক কিছুই ছিল না টিম ভয়েজার্সের। দেশের সেরা ৫০টি দলের মধ্যেও জায়গা হয়নি তাদের। সেই ধাক্কা সহজ ছিল না। হতাশাও গ্রাস করেছিল টিমের সবার মধ্যে। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি তারা। বরং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নাসার মানদণ্ড অনুযায়ী নতুন করে প্রজেক্ট সাজানো শুরু করে টিম ভয়েজার্স। পরিশ্রমের ফল আসে দ্রুতই। অক্টোবর ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ৩৬ ঘণ্টার ম্যারাথন হ্যাকাথনে ১৫২টি দেশের ৮,৭১৫টি দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রাজশাহী রিজিয়নে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম ভয়েজার্স। গ্লোবাল নমিনেশন পর্যন্ত গিয়ে অবশেষে ‘বেস্ট স্টোরিটেলিং’ বিভাগে তারা বিশ্বসেরা নির্বাচিত হন।
গল্প বলার ভিন্ন ভঙ্গি
টিম ভয়েজার্সের প্রজেক্টের নাম ‘অ্যাকুয়া এক্সপ্লোরার’। জলবায়ু পরিবর্তন ও নিরাপদ পানির গুরুত্বকে তারা এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যা বিজ্ঞান ও কল্পনার মেলবন্ধন ঘটায়। পৃথিবীর ৩৭০ কুইন্টিলিয়ন গ্যালন পানির মধ্যে মাত্র ০.০১% পানি নিরাপদ ও ব্যবহারযোগ্য। পানি নানাভাবে জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য ও বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
এসব বিষয় গল্প বলার মাধ্যমে এবং গেমিং পদ্ধতিতে উপস্থাপন করেন তারা। উপস্থাপনার এই সহজ পদ্ধতিই তাদের সবার চেয়ে এগিয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছে।
গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে গ্লোবাল সেলিব্রেশন
নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে আজ বুধবার আয়োজিত হবে গ্লোবাল উইনার্স সেলিব্রেশন। সেখানে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হবেন টিম ভয়েজার্সের সদস্যরা। এই সফরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণাগার পরিদর্শনের পাশাপাশি বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগও পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা
দেশের সেরা ৫০ দলের মধ্যে জায়গা না পাওয়ার পর খুবই খারাপ লেগেছিল বলে জানান দলনেতা খালিদ সাকিব। কিন্তু তারা হার না মেনে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। সময়ের সঙ্গে ধাপে ধাপে প্রজেক্টটিকে এমনভাবে গড়ে তুলেছেন, যাতে নাসার চাহিদা পূরণ করে। শেষ পর্যন্ত সেই প্রচেষ্টারই ফল পেয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খালিদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যাত্রার যাবতীয় খরচ বহন করেছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের সহায়তা ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব হতো না।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের প্রধান সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিশ্বের ৫৮ হাজার শিক্ষার্থী, ৮ হাজার ৭১৫টি দলের প্রতিযোগিতায় আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বসেরা হয়েছে। এটা শুধু বরেন্দ্র নয়, পুরো দেশের জন্য গর্বের। নাসার এই সফর তাদের আরও বড় স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করবে।’
টিম ভয়েজার্স দেখিয়ে দিয়েছে, স্বপ্ন দেখতে জানতে হয়। আর তাকে বাস্তবে রূপ দিতে হয় সাহস আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। রাজশাহীর এই তরুণরা আজ কেবল নিজেদের নয়, গোটা দেশের তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। তাদের যাত্রা যেন থেমে না থাকে এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
/রিয়াজ