
প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ। নানা দেশের তরুণ মেধাবীরা বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির জ্ঞান গ্রহণে দেশটিতে যায়। বাংলাদেশি তিন তরুণ সেখানেই দেখিয়ে দিলেন তাদের শক্তিশালী উদ্ভাবনী চিন্তা আর আত্মবিশ্বাস। ‘বাংলা নেক্সাস টিম’ নামে গঠিত এই দলের অসাধারণ উদ্ভাবন হলো ‘জাবায়ো’ অ্যাপ। দক্ষিণ কোরিয়ায় আন্তর্জাতিক অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট প্রতিযোগিতায় তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের নাম পৌঁছে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। যা দেশের জন্য গর্বের এবং একই সঙ্গে এনে দিয়েছে সম্মান।
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান ইন্টারন্যাশনাল কলেজ আয়োজিত আন্তর্জাতিক অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট প্রতিযোগিতায় সাতটি দেশের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিলেন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা নেক্সাস টিম। তাদের তৈরি অ্যাপ ‘জাবায়ো’ মূলত একটি চাকরি খোঁজার প্ল্যাটফর্ম। তবে এর বিশেষত্ব হলো- এটি ভাষা নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যার সমাধান দেয়।
ব্যাপারটা একটু বিস্তারিত বলা যাক। দক্ষিণ কোরিয়ার অভিবাসী শিক্ষার্থীরা সাধারণত কোরিয়ান ভাষায় দুর্বল থাকায় চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই জাবায়ো অ্যাপ তৈরি করেছেন নাহিদ হাসান, আল আমিন ও সোলাইমান সাগর। যাদের মধ্যে দুইজন বর্তমানে দেশটির টোংমিয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। অ্যাপটিতে ভাষার দক্ষতা অনুযায়ী চাকরি খোঁজার সুযোগ থাকায় এটি অভিবাসীদের জন্য সহজ সমাধান হতে পারে।
জাবায়ো শুধু চাকরি খোঁজার কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি সমাজ গড়ে তোলার প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আইডিয়া শেয়ারিং, পুরস্কার প্রতিযোগিতা, ইন্টার্নশিপের সুযোগ, এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসার পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা ও আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির পথ সুগম হবে।
প্রতিযোগিতা শেষে বুসান ইন্টারন্যাশনাল কলেজের কালচার অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের প্রধান ইয়িওকইয়ং নাটালিয়া বলেন, 'এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্সে আমি সত্যিই অভিভূত। বিজয়ী দলের তিনজন সদস্যই বাংলাদেশি। এটি শুধু একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং আমাদের কলেজ এবং গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটির গর্ব।'
কলেজের ডিন বায়ং ইক জং-এর ভাষায়, 'বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, মেধা ও নিষ্ঠা থাকলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফল হওয়া সম্ভব। ভবিষ্যতে আরও মেধাবী শিক্ষার্থীর কোরিয়ায় এসে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত।'
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলো ছড়ানোর বিষয়টি নতুন নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, গণিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন খাতে তরুণদের সাফল্য ক্রমাগত বিশ্ববাসীর নজর কাড়ছে। ‘বাংলা নেক্সাস টিম’-এর এই বিজয় তারই আরেক উজ্জ্বল উদাহরণ।
সফলতা সম্পর্কে দলের সদস্য সোলাইমান সাগর বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, এই অর্জন কেবল আমাদের নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের।' ‘জাবায়ো’ শুধু একটি অ্যাপ নয়, এটি অভিবাসী তরুণদের আত্মনির্ভরশীলতার পথে সহযাত্রী। এই তরুণদের গল্প শুধু অনুপ্রেরণা নয়, আগামী দিনের প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিও বটে।
/রিয়াজ