চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা সাধারণ কিছু দক্ষতা চান। যেগুলোকে ‘সফট স্কিল’ বলা হয়। বাংলায় চাকরির দক্ষতা বলা যায় একে। এ দক্ষতাগুলো আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে। চাকরির এ দক্ষতাগুলো অবশ্য অনেক সময় বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকে না। তবে এগুলো প্রায় সব কাজের ক্ষেত্রেই দরকার হয়। সেজন্য আপনি চাকরির আবেদনের আগে একটু ভাবুন। দেখুন তো, কী কী দক্ষতা আছে আপনার মধ্যে? কোনোটি না থাকলে তা অর্জন করুন। কমতি থাকলে তা বৃদ্ধি করুন।
টিমওয়ার্ক বা দলগত কাজ
অন্য মানুষের সঙ্গে কাজ করার সক্ষমতাকেই টিমওয়ার্ক বা দলগত কাজ বলে। টিমওয়ার্কের দক্ষতা অর্জন বা তা বাড়ানোর জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে- ক্লাস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট করা, সামাজিক সংস্থাগুলোর ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করা, কর্মক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে কীভাবে সুন্দরভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা, কোনো স্পোর্টস টিমে অংশ নেওয়া, পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের নিয়ে প্রতিবেশীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা পাড়ামহল্লায় কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা।
সমস্যা সমাধান বা প্রবলেম সলভিং
প্রবলেম সলভিং স্কিল বা সমস্যা সমাধানের দক্ষতার মানে হলো- আপনি যখন কোনো বিরূপ পরিস্থিতি বা অসুবিধার সম্মুখীন হন, তখন সমাধান খুঁজে বের করতে পারা। এ দক্ষতা মূলত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যৌক্তিক ও বৈধ পদ্ধতি ব্যবহার করার সক্ষমতা।
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন বা বাড়ানোর কিছু উপায় হচ্ছে- লেখাপড়ার অংশ হিসেবে গবেষণামূলক অ্যাসাইনমেন্ট করা, কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিযোগ নিষ্পত্তিতে অংশ নেওয়া, প্রবলেম সলভিং স্কিল-সংক্রান্ত কোনো কোর্সে অংশ নেওয়া, যারা বিভিন্ন সময় সমস্যা সমাধান করেছেন এমন লোকদের সঙ্গে কথা বলা, পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা নিজেই সমাধান করতে চেষ্টা করা, বিভিন্ন ধাঁধাকৌশলী প্রশ্নের উত্তর বের করা ও ঘরের টুকটাক জিনিসপত্র ইউটিউব দেখে নিজেই মেরামত করতে চেষ্টা করা।
যোগাযোগ
বিভিন্ন সময় যোগাযোগের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে মূল কথা হচ্ছে- আপনি যখন কিছু বলেন বা লেখেন, তখন এর দ্বারা আপনি কী বোঝাতে বা অর্জন করতে চাচ্ছেন, সেটা পরিষ্কার হওয়া। অপরদিকে অন্য পক্ষের কেউ কিছু বললে সেটা শুনে বুঝতে পারাও যোগাযোগদক্ষতার অন্তর্ভুক্ত।
অ-মৌখিক ভাষাও এই যোগাযোগদক্ষতার মধ্যে পড়ে। যেমন- শারীরিক ভাষা বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- হাত বা চোখ দিয়ে ইশারায় কাউকে কাছে ডাকা।
যোগাযোগদক্ষতা বাড়ানোর কিছু উপায় হচ্ছে- লেখাপড়ার অংশ হিসেবে অ্যাসাইনমেন্ট বা রিপোর্ট লেখা, ব্লগিং বা সামাজিকমাধ্যমে লেখালেখি করা, ক্লাসকার্যক্রমের অংশ হিসেবে মৌখিক উপস্থাপনা করা, যেকোনো বিষয়ে মতামতধর্মী ভিডিও রেকর্ড করে তা ইউটিউব বা ফেসবুক টাইমলাইনে প্রকাশ করা, গ্রাহকসেবা বা ফ্রন্ট ডেস্কে কাজ করা, কোনো ক্লাব বা সংগঠনে যুক্ত হওয়া ও নিজের শারীরিক ভাষার প্রতি খেয়াল রাখা।
উদ্যোগ ও এন্টারপ্রাইজ
এ দক্ষতার মানে হচ্ছে- যে কাজগুলো করা দরকার, তা খুঁজে বের করা এবং কাউকে জিজ্ঞেস না করেই শুরু করে দেওয়া। এ ছাড়া কোনো কাজ যে পদ্ধতিতে করা হচ্ছে, সৃজনশীলতার সঙ্গে সে পদ্ধতির উন্নতি সাধনও এ দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত। এই দক্ষতা তৈরি বা বাড়ানোর কিছু উপায় হচ্ছে- কোনো সামাজিক বা ব্যবসায়িক সংস্থায় ইন্টার্নশিপ করা, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার মতো সামাজিক উদ্যোগ নেওয়া, সামাজিক কোনো তহবিল স্থাপন করা, নিজে উদ্যোগী হয়ে সামাজিক জরুরি কোনো কাজ সম্পন্ন করা, আপনার টিমের কাজকে আরও সুন্দর করার জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা এবং কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই ঘরের প্রয়োজনীয় কিছু কাজ করে ফেলা।
পরিকল্পনা ও সংগঠন
পরিকল্পনা ও সংগঠনদক্ষতা হচ্ছে- আপনার করা দরকার এমন কাজগুলো চিহ্নিত এবং সেগুলো কীভাবে করবেন তার একটি রূপরেখা তৈরি করা। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজটি শেষ করাও এ দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত। পরিকল্পনা ও সংগঠনদক্ষতা অর্জন ও বৃদ্ধির কিছু উপায় হচ্ছে- পড়াশোনা বা দৈনন্দিন কাজের একটি সময়সূচি তৈরি ও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা, নিজে নিজে আপনার পাশের শহর বা জেলা কিংবা দেশের কোনো পর্যটন এলাকা ভ্রমণ, আপনার কাজ, পড়াশোনা ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনের সময় ব্যবস্থাপনা, সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনে সাহায্য করা ও পারিবারিক গেট-টুগেদারের আয়োজন করা।
আত্ম-ব্যবস্থাপনা
কারও তদারকি ছাড়াই আপনার কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হওয়াকেই আত্ম-ব্যবস্থাপনা বলে। আত্ম-ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অর্জন ও বৃদ্ধির কিছু উপায় হচ্ছে নিজের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারা, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনে অন্যকে কাজটি হস্তান্তর করা, ইন্টার্নশিপ বা অস্থায়ী চাকরির মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন, কর্মস্থলে নতুন কোনো দায়িত্ব চাওয়া ও তা পালন করা, পড়াশোনার একটি সময়সূচি তৈরি ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় যোগ দেওয়া ও নিজের রুম বা ঘর গোছাল ও পরিপাটি রাখা।
শিখন
নতুন কিছু জানা ও বোঝা এবং তা দ্রুত আত্মস্থ করতে চাওয়াকেই সাধারণ অর্থে শিখনদক্ষতা বলে। এছাড়া নতুন কাজ নেওয়া ও পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খেয়ে চলতে সক্ষমতাও এ দক্ষতার মধ্যে পড়ে। শিখনদক্ষতা অর্জন করতে হলে বেশকিছু কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। এগুলো হলো- কোনো শর্ট কোর্স বা অনলাইন কোর্স করা, রান্নাবান্নার মতো যেকোনো নতুন দক্ষতা নিজে নিজে অর্জনের চেষ্টা করা, যে দক্ষতা অর্জন বা কোর্স করতে চান, তা নিয়ে গবেষণা বা অনুসন্ধান চালানো, নতুন কোনো শখ বাছাই ও ক্রীড়া বা স্বেচ্ছাসেবা দলে অংশ নেওয়া।
প্রযুক্তি
প্রযুক্তিদক্ষতা বলতে কম্পিউটার, ট্যাব বা স্মার্টফোন ব্যবহারের সক্ষমতাকে বোঝায়। কম্পিউটারে এমএস ওয়ার্ডে লেখালেখি, এক্সেলের মাধ্যমে ডেটা প্রসেসিং, পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে পারা জরুরি। তাছাড়া বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ভিডিও সম্পাদনার মৌলিক দক্ষতা আপনাকে অন্য সবার চেয়ে চাকরিক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে নিঃসন্দেহে।
ফটোকপিয়ারের মতো অফিস যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে পারাও প্রযুক্তিদক্ষতার মধ্যে পড়ে। প্রযুক্তিদক্ষতা অর্জন ও তা বৃদ্ধির কিছু উপায় হচ্ছে- শর্ট কোর্স বা অনলাইন কোর্স করা, ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও আছে, সেগুলো দেখে নিজে নিজে শেখা, অফিস কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম আয়োজনের অনুরোধ করা, আপনার দৈনন্দিন জীবনে ইতোমধ্যে ব্যবহার করেছেন এমন প্রযুক্তিগুলোর একটি তালিকা তৈরি, আপনার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রযুক্তিগুলো খুঁজে বের করা এবং তার ব্যবহার সম্পর্কে জানা।
চাকরির দক্ষতা অর্জনের জন্য ছাত্রজীবন থেকেই চেষ্টা করা উচিত। শুধু পড়াশোনার ভেতরে না কাটিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনে কোনো ধরনের সম্মানী বা বেতন ছাড়াই কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। কোর্স করুন, দক্ষতা অর্জন করুন। এর পর চাকরি খুঁজুন, দেখবেন চাকরিই আপনাকে খুঁজছে। আর চাকরি না করতে চাইলে, অর্জিত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠুন উদ্যোক্তা।
কলি