অনেকদিন ধরে মার্কেটপ্লেসে কাজ করেও অনেকেই আশানুরূপ সাফল্য পান না এবং কিছুদিন পর নানা কারণে হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকেই বুঝতে পারেন না তাকে আসলে কী করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এই মার্কেটপ্লেসে নিজের অবস্থান আরও শক্ত এবং দৃঢ় করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে, যা তার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারকে করবে আরও মজবুত এবং মসৃণ। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কীভাবে বেশি বেশি কাজ পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ইন্টারনেট অবলম্বনে বিস্তারিত জানাচ্ছেন গাজী তাহির
মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান এবং সুস্পষ্ট ধারণা
মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে হলে মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা রাখতে হবে। একেক মার্কেটপ্লেসে কাজের ধরন একেক রকম। কেউ প্রজেক্ট বেসিস আপনাকে নিযুক্ত করতে পারেন আবার কেউ মাসিক বা ঘণ্টায় চুক্তি করতে পারেন। আবার আপওয়ার্ক ফ্রিল্যান্সারের মতো মার্কেটপ্লেসে বায়ার জব পোস্ট করেন সেখান থেকে আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতা অনুযায়ী নির্বাচন করতে হয়। আবার ফাইভারের মতো মার্কেটপ্লেসে বায়ার স্বয়ং নিজে আপনার পোর্টফোলিও এবং সার্ভিস ধরন অনুযায়ী আপনাকে কাজের অর্ডার প্লেস করবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী আপনি কাস্টম সার্ভিস অফার করতে পারেন। যদিও সব মার্কেটপ্লেসে নিয়মনীতি একই আবার পলিসির ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এসব বুঝে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
প্রোফাইল অপটিমাইজেশন
শুধু নতুন একটা অ্যাকাউন্ট খুললেই আপনি সেই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারবেন না। সেই সঙ্গে প্রয়োজন প্রোফাইল অপটিমাইজেশন। অর্থাৎ যে টেকনিক এবং স্ট্র্যাটেজি অবলম্বনের মাধ্যমে আপনার প্রোফাইল ক্লায়েন্ট বা বায়ারের সম্মুখে আসবে সেই বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে এবং সময়ের সঙ্গে তা আপগ্রেড করতে হবে।
পোর্টফোলিও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে হবে
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রিল্যান্সাররা এ ব্যাপারে খুব উদাসীন থাকেন এবং সময়ের সঙ্গে নিজের পোর্টফোলিও আপডেট করেন না। ফলে তার অ্যাডভান্সড স্কিলগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন হয় না। সেক্ষেত্রে আপনি সেই দক্ষতা অর্জন করতে পারলেও এবং আপনার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বায়ার আপনার কাজের ক্ষেত্রে দ্বিধা-সংশয় প্রকাশ করেন। আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনি ভলান্টারি ভিত্তিতে কিছু কাজ করে প্রোফাইল ভারী করতে থাকেন। আর যদি দীর্ঘদিন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে থাকেন তাহলে মাস শেষে এমন সময় রাখুন যেখানে আপনি নিয়মিত প্রোফাইল আপডেট করতে পারবেন। সেই সঙ্গে সৃজনশীলভাবে আপনার পোর্টফোলিওকে আরও সুন্দর এবং আকর্ষণীয় কীভাবে করা যায় তার ওপর গুরুত্বারোপ করুন।
মার্কেটপ্লেসে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ রক্ষা করুন
দৈনিক আপনাকে অবশ্যই মার্কেটপ্লেসে সময় দিতে হয় এবং সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এমন পদ্ধতি অনুসরণ করুন যেখানে আপনি মার্কেটপ্লেসে নিরবচ্ছিন সংযোগ রক্ষা করতে পারবেন। কারণ, কাজের জন্য নতুন হোক পুরোনো, বায়ার আপনাকে খুঁজতে পারে। সেক্ষেত্রে জরুরি মুহূর্তে আপনি তাকে সাড়া দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন বায়ারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে যেখানে তিনি দ্রুত সাড়া দেওয়াকে খুব পজিটিভলি দেখেন এবং অন্যের কাছে কাজ হস্তান্তরের ঝুঁকিও কম থাকে।
প্রতিযোগীদের ওপর নজর রাখুন
মার্কেটপ্লেসে আপনার মতো অনেকেই একই সার্ভিস দিয়ে থাকেন। তারা কোন কোন বিষয়ে বিশেষভাবে দক্ষ এবং তারা কীভাবে ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দিয়ে আসছে সে সংক্রান্ত বিষয়গুলো আপনার নজরে রাখুন। কী কী সার্ভিস দিলে পরে বায়ার আপনার থেকে বেনিফিটেড হবেন এবং আলাদা ভ্যালু অ্যাড করবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ক্লায়েন্টকে অবহিত করুন।
বায়ারের সঙ্গে কমিউনিকেশন রক্ষা করুন
ক্লায়েন্টের সঙ্গে কীভাবে কমিউনিকেশন করবেন? কীভাবে তার সঙ্গে কথোপকথন শুরু করবেন? তাকে কীভাবে আপনার কাজ এবং কথা দ্বারা ইম্প্রেস করবেন? তার নানা টিপস এবং ট্রিকস সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। নিয়মিত কাজ সম্পর্কে আপনার বায়ারকে অবহিত করুন। এতে তিনি অনেকটা চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন।
নিজের দক্ষতা প্রচার করুন
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে মার্কেটিং এবং সেলস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা দিনরাত সোশ্যাল মিডিয়াসহ অনেক প্ল্যাটফর্মে নিজের সার্ভিস প্রমোশন করে বেড়ান কিন্তু যে জায়গায় তাকে অ্যাপ্লাই করা উচিত সেই সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞান নেই।
সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কাজ করতে হবে। আপনার কার্যকরী কৌশল এবং সঠিক সিদ্ধান্তই পারবেন আপনার বিক্রয়ের নিশ্চিত করবে।
বায়ার এবং কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা
অনেকেই কাজ সম্পর্কে না জেনে, না বুঝে সেই কাজে আবেদন করা শুরু করে দেন। আবার কাজ শুরুর পরে বুঝে উঠতে পারেন না। আবার কাজ শুরুর সময় যে যে বিষয় বায়ার থেকে জানতে হবে তা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে সংশয় প্রকাশ করেন।
আবার অনেকেই বায়ার এবং তার কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখেন না, যার ফলে কাজের সময় একজন ফ্রিল্যান্সারকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
কাজের সময়সীমা নির্ধারণ এবং কমিটমেন্ট রক্ষা করা
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে গেলে অবশ্যই ডেডলাইন নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। কোনোভাবেই এই ডেডলাইন মিস করা যাবে না। যদি কখনো মিস হয় ক্লায়েন্টকে সেই ব্যাপারে আগেভাগে অবহিত করুন। একবার ডেডলাইন মিস হয়ে গেলে আপনার জন্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আপনার থেকে বায়ার কী কী পাবেন তা নিশ্চিত করুন। অনেকেই শুধু একটি মার্কেটপ্লেসের ওপর নির্ভরশীল। তাই উচিত হবে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনটি মার্কেটপ্লেসে একসঙ্গে কাজ করা। এক্ষেত্রে একটি মার্কেটপ্লেস থেকে কম অর্ডার আসলেও বাকি অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে আপনি ব্যালেন্স রাখতে পারবেন।
কলি