একজন বিক্রয়কর্মীর অনেক গুণাবলি থাকতে পারে কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কর্মী তার গুণাবলিগুলোকে ব্যবসায় প্রয়োগ করছেন কি না। সফল বিক্রয়কর্মীর মধ্যে সাধারণত এই ৫টি গুণ লক্ষ করা যায়-
১. দৃঢ় প্রত্যয়
এর ফলে আপনি ক্রেতাকে বিরক্ত না করেই একটি সেলসের পরিস্থিতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। যেমন- কোনো এক ক্রেতা তার সিদ্ধান্ত জানাতে দেরি করছে। এমতাবস্থায় তিনটি সাধারণ প্রতিক্রিয়া আপনি দেখাতে পারেন-
পরোক্ষ: যখন আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে যাবে, তখন আপনি কি আমায় একটা ফোন করে তা জানিয়ে দিতে পারবেন?
আক্রমণাত্মক: যদি আপনি এখনই পণ্যটি না কেনেন তাহলে অফারটি আর বলবৎ থাকবে না।
দৃঢ় প্রত্যয়ী: কবে নাগাদ আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, আপনার সিদ্ধান্ত নিতে আমি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি? এ ব্যাপারে আমাকে কি আপনি কোনো আনুমানিক সময়কাল বলতে পারবেন?
পরোক্ষ প্রতিক্রিয়ায় আপনার সেলসটি চিরদিনের জন্য আটকে যাবে, যার ফায়দা আপনার প্রতিযোগী গ্রহণ করতে পারে। আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া চাপ এবং বিরক্তি সৃষ্টি করে, যদিও মাঝে মধ্যে এটি কাজে দেয়, কিন্তু অন্যরা আপনাকে একজন নাছোড়বান্দা সেলসম্যান হিসেবেই ধরে নেবেন। দৃঢ় প্রত্যয়ী প্রতিক্রিয়া সেলসটি সমাপ্ত করতে একটি নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করে দেবে ক্রেতাকে কোনো রকম চাপ দেওয়া ছাড়াই।
২. আত্ম-সচেতনতা
নিজের আবেগ কীভাবে কাজ করে তা জানতে হবে এবং পরে ক্রেতাদের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক তৈরিতে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। এটি করতে হবে চারটি ধাপে-
আপনি যা অনুভব করছেন সেই আবেগগুলোকে চিহ্নিত করুন।
অভিজ্ঞতার আলোকে, ভেবে দেখুন এই আবেগগুলো কীভাবে আপনার পণ্য বিক্রি করার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সেলসকে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে এমন আবেগকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
সেলস বাড়াতে প্রয়োজন এমন ইতিবাচক আবেগকে প্রাধান্য দিন। যেমন- ধরুন কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা আপনাকে কথা শুনিয়ে দিল। আপনার পরবর্তী মিটিংয়ের আগে হয়তো কিছুটা সময় ক্ষেপণ করা উচিত হবে এবং এর আগে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আপনি সফল হয়েছেন সেগুলো সম্পর্কে মনে করতে হবে।
৩. সহমর্মিতা
এর মানে হলো নিজের আচরণকে ক্রেতার মুড ও আবেগ অনুযায়ী খাপ খাইয়ে নেওয়া। ভালোভাবে তাদের কথা শুনুন ও তাদের লক্ষ করুন। ক্রেতা কী অনুভব করছে তা জানাটাই যথেষ্ট নয়। ক্রেতা যা অনুভব করছে আপনাকেও তা অনুভব করার সামর্থ্য থাকতে হবে।ধরুন, একটি সেলস কলের সময় আপনি জানতে পারলেন যে, ক্রেতার ব্যবসা থেকে অনেক কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। আপনি হয়তো এ খবরটি উপেক্ষা করে আপনার
মতো করে সেলস কলটি চালিয়ে গেলেন বা আপনি আপনার সেলসের প্রতি নজর রেখেই আপনার পরিচিত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতে পারেন কর্মী ছাঁটাইয়ের পর এখন ক্রয় বিভাগটি কে সামাল দেবে।
উল্লিখিত দুটি পরিস্থিতিই ব্যবসায়িকভাবে সিদ্ধ কিন্তু আপনি যদি ভালো সম্পর্ক গড়তে চান, তাহলে আপনাকে সহমর্মী হতে হবে এবং যার সঙ্গে কথা বলছেন তার ভয় ও সংশয়কে বুঝতে হবে। এরপর ক্রেতাকে আপনি যেভাবে দেখেছেন সে অনুযায়ী, ঠিক করে নিন ক্রেতাটি আপনার কাছ থেকে দয়া চায় নাকি অভিযোগ করতে চায় বা পরিস্থিতি থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে চায়।
৪. সমস্যা সমাধান
সমস্যা সমাধান করার ইচ্ছাশক্তির ফলে আপনি ক্রেতার চাহিদা পূরণে আর্থিকভাবে বা আবেগীয়ভাবে নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করতে পারবেন। সমস্যা সমাধান একটি চার ধাপের প্রক্রিয়া-
ক্রেতার যা অবস্থা ঠিক সেই অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া (কখনো বুঝে ওঠার আগে কোনো কিছু সমাধান করতে যাবেন না)।
কাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি দৃষ্টিগোচর করাতে ক্রেতাকে সাহায্য করা।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে ক্রেতা যেমন চান সেরকম পরিস্থিতি তৈরি করার পথ ঠিক করুন।
এই পথটি সম্পর্কে ক্রেতাকে এমনভাবে জানানো যাতে সে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে।
পুরোনো সেলস সম্পর্কিত তত্ত্ব হচ্ছে ভালো সেলস স্পিচই পণ্য বিক্রি করাতে সহায়ক। কিন্তু বর্তমানের এই গুণগুলো কিন্তু পুরোনো ধ্যান-ধারণার ঠিক বিপরীত।
৫. আশাবাদ
আপনি যদি আশাবাদী হয়ে থাকেন তাহলে যখন পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় তখনো আপনি সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য দেখতে পাবেন। দৈনন্দিন ঘটনা আপনি কীভাবে দেখছেন তার ওপরেই কিন্তু আপনার আশাবাদের ভিত্তি গড়ে ওঠে। যেমন- দিনের প্রথম সেলস কল যদি শুভ না হয়, তাহলে দিনের পরবর্তী সময়ে আপনার পারফরম্যান্স ভিন্ন হতে পারে যেমন-আপনি ভাবতে পারেন, একটি অসফল সেলস কল মানে হলো আমাকে দিয়ে এটা আর হবে না আর আমার দিনটাই খারাপ যাবে।বা আপনি এটাও ভাবতে পারেন, প্রতিটা সেলস কলই আলাদা, তাই পরেরটা আরও ভালো হতেও পারে।
লক্ষ করুন, দুটি প্রতিক্রিয়াই কিন্তু একই ঘটনার প্রতি আপনার নিজস্ব ভাবনা এবং দুটি কিন্তু বাস্তবসম্মত। তাই আপনি হুট করে যদি দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়া বাদ দিয়ে যদি প্রথম ধারণা নিয়ে বসে থাকেন, তাহলে আপনি খুশি থাকতে পারবেন না।
কলি