কোনো বড় সমস্যা সমাধান করার জন্য যে ব্যবসা শুরু করা হয় তাকেই সাধারণত স্টার্টআপ বলা হয়ে থাকে। যেমন- লিংকডইন, ফেসবুক, উবার এবং বিকাশ ইত্যাদি। এরা সবাই কোনো না কোনো বড় সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছেন কাস্টমারের জীবনের জন্য। স্টার্টআপ নেতাদের কমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। সেগুলো হলো-
লক্ষ্য
লক্ষ্য থাকা একজন স্টার্টআপ নেতার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে আসল পরীক্ষা হলো সেই লক্ষ্যকে বাস্তবে এমনভাবে রূপ দেওয়া, যাতে আপনার আশপাশের লোকরাও আপনার লক্ষ্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেন। একটি সংগতিপূর্ণ বার্তা ও প্রতিনিয়ত নবশক্তি নিয়ে এগিয়ে গেলে অন্যরাও আপনার স্বপ্নকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
বিনয়
প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়লে তার দায়িত্ব নেতার ওপরও বর্তায়। প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে কর্মচারীদেরও অবদান থাকে। কর্মচারীদের আপনি আপনার ইগোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন না। যদি আপনি কোনো প্রতিষ্ঠান চালান, তাহলে আপনার কর্মচারীরা আপনার গ্রাহক হিসেবেই বিবেচিত হবে এবং আপনার উচিত হবে নিজের চাহিদার পরিবর্তে তাদের চাহিদা পূরণে সাহায্য করা।
নমনীয়তা
স্টার্টআপ নেতাদের নমনীয় হওয়া উচিত। কারণ, তাদের ব্যবসা এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পরিকল্পনা পরিমার্জন (বা বর্জন) করা লাগতে পারে। এটা করতে গিয়ে তারা যদি রাগ করেন ও অপমানিতও বোধ করেন তাহলে স্টার্টআপ সামনের এগিয়ে নেওয়া কষ্টকর হবে। নেতা যদি এমন আবেগ দেখান তা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
ফোকাস
নেতা হিসেবে আপনাকে বিনিয়োগ, সময় ও শক্তি- সবকিছুর সামাল দিতে হবে। এসব সামাল দিতে গিয়ে আপনি হিমশিম খাবেন এটাই স্বাভাবিক। আপনি হয়তো ব্যবসা-সংক্রান্ত সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চাইবেন। আর সবকিছুর জন্যই ফোকাস থাকা অত্যাবশ্যক। যেসব কাজ আপনার বিজনেসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোয় আপনার বেশি সময় ও শক্তি ব্যয় করা উচিত। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো নির্ধারণ করে সেগুলোতেই মনোনিবেশ করাটাই শ্রেয়।
সিদ্ধান্ত নেওয়া
যারা স্টার্টআপ নেতা হিসেবে সফল তারা জানেন যে, প্রতিদিন তাদের ব্যবসা-সংক্রান্ত যে শত শত সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা হয় তার সবগুলো বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই। এর পরিবর্তে তাদের কাজ হলো পর্যাপ্ত তথ্য জোগাড় করা এবং তার ভিত্তিতে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া, যা তাদের ব্যবসাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এর মধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত হয়তো ভালো হবে না কিন্তু ওইসব ভুল সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে পুনরায় চেষ্টা করতে হবে। সিদ্ধান্তহীনতার চেয়ে এটাই করা উত্তম।
একাগ্রতা
সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে নতুন প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো। যেকোনো উদ্যোক্তাই কঠিন সময়েও কাজ করে যাওয়ার প্রবল মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যান এবং মাঝে মধ্যে তিনি বড় কিছু করে ফেলেন। যারা সিরিয়াস উদ্যোক্তারা যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকে। একটি বিষয়ে তারা ধাপে ধাপে এগিয়ে যান, তারা কখনো একসঙ্গে সবকিছু করতে গিয়ে ঝামেলা তৈরি করেন না।
ভয়ের ভারসাম্য
প্রতিটি স্টার্টআপ নেতাই ভিন্ন, তাই একটি নির্দিষ্ট গুণাবলি হয়তো সবার জন্য প্রযোজ্য হবে না। সবার মাঝেই কোনো না কোনো ভয় কাজ করে, ব্যর্থ হওয়ার ভয়। তারপরও ভয় এবং আত্মবিশ্বাসের ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। নেতাদের সবসময় সজাগ ও বাস্তবসম্মত থাকতে হবে একই সঙ্গে তাদের লক্ষ্য সঠিক হবে কি না, সে ব্যাপারেও ধারণা রাখতে হবে।
চাপ নিয়ন্ত্রণ
যেকোনো ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো নেতারা উদ্ভূত পরিস্থিতিকে তাদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেয় না। এ ধরনের নেতারা মনে করেন তাদের সাফল্য তাদের হাতে এবং পারিপার্শ্বিক চাপগুলো তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। যখন কোনো কিছু তাদের পেছনে ঠেলে দেয়, ভালো নেতারা ধৈর্য ধারণ করেন এবং ওই পরিস্থিতিকে নিজের করে নিয়ে তা জয় করেন।
ইতিবাচকতা
ভালো নেতাদের একটি ইতিবাচক মনোভাব থাকে। যদি আপনার মধ্যে ইতিবাচকতা না থাকে তাহলে আপনি উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। বিজনেসে চড়াই-উতরাই থাকবেই, যদি বিজনেসের নেতা সদা ইতিবাচক থাকে, তাহলে সে তার সঙ্গে থাকা অন্যদের মাঝেও সেই ইতিবাচক মনোভাব বিস্তার করতে পারবেন।
আত্মসচেতনা
ভালো নেতারা তাদের নিজেদের ব্যাপারে সবসময় সচেতন, তারা তাদের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত থাকেন। ভালো স্টার্টআপ নেতা ব্যবসা গ্রোথের বিষয়ে সৎ থাকার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী থাকে। যখন আপনি জানবেন কোনো ক্ষেত্রে আপনার সাহায্য দরকার তখন আপনি বুঝবেন কোন ধরনের কর্মচারীকে আপনার টিমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং কোন ধরনের কৌশলগত অংশীদার থাকলে আপনার বিজনেসের জন্য ভালো হবে।
শোনার ক্ষমতা
বেশির ভাগ ব্যবসা প্রেক্ষাপটে মনোযোগ দিয়ে কথা শোনাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে যার গলার জোর বেশি তার কথাই বেশির ভাগ সময়ে শুনতে পাওয়া যায়। তবে ফিডব্যাক দেওয়া এবং শোনা কথাকে কাজে লাগানোর মাঝেই একজন ভালো নেতা উঠে আসেন। আপনার কর্মচারীরা আপনার প্রশংসা করবে কারণ আপনি তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং আপনার অংশীদাররাও আপনার ওপর আস্থা রাখতে শুরু করবেন।
সেলসম্যানশিপ
এর অর্থ হলো নেটওয়ার্কিং করা এবং পণ্য বিক্রি করার সক্ষমতা থাকা। ভালো স্টার্টআপ নেতারা তাদের সবসময় সেলসের মাঝেই থাকে। কর্মচারীরা যাতে তাদের জন্য কাজ করেন, বিনিয়োগকারীরা যাতে তাদের পণ্যে বিনিয়োগ করেন, অন্যরা যাতে তাদের সঙ্গে অংশীদারত্বে আসেন, গ্রাহকরা যাতে তাদের পণ্য কেনেন- এসব কিছু নিয়েই তারা সদা ব্যস্ত থাকেন।
তারেক