ঢাকা ৩০ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

প্রথম নারী ভাস্কর নভেরা

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:২০ এএম
প্রথম নারী ভাস্কর নভেরা
ছবি : সংগৃহীত

সময়ের চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে থাকা একজন আলোকমানবীর নাম নভেরা আহমেদ। একবুক অভিমান নিয়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে সুদূর প্যারিস চলে গেলেও তিনি বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্যশিল্পের অন্যতম অগ্রদূত এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম বাংলাদেশি আধুনিক ভাস্কর ছিলেন।

নভেরা আহমেদের ভাস্কর্য তৈরির প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল নারীর প্রতিমূর্তি। সাধারণত ভাস্কর্যশিল্পে আমরা নারীর যে প্রেমময় রূপ দেখি নভেরার সৃষ্টি সেখানে অনেক বেশি দৃঢ় ও ঋজু। তার চরিত্রের স্পষ্টতাই বারংবার প্রকাশ পেয়েছে তার নির্মাণে। তার সমকালীন পুরুষশিল্পীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী ভাস্কর। কাজ করতে করতে একসময় নভেরা বুঝতে পারেন তার কাজ বা যোগ্যতার চেয়ে তার নারী পরিচয়টাই প্রাধান্য পাচ্ছে সবখানে। তখন থেকেই নভেরা তার সম্পর্কে যেকোনো আগ্রহকেই অনধিকার চর্চা ভাবতেন। অনেকটা অন্তরালে থেকেই কোনো প্রত্যাশা বা স্বীকৃতি আশা না করে নিজের মনে কাজ করে গেছেন। সে কারণেই ইতিহাসে নভেরা আহমেদ একজন রহস্যে ঘেরা অধরা শিল্পী।

নভেরার জন্ম বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে ২৯ মার্চ, ১৯৩৯ সালে। বাবার চাকরি সূত্রে ছোটবেলা কেটেছে কলকাতায়। নাচ আর গানের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই মাটি দিয়ে মূর্তি  গড়তেন। ১৯৫০ সালে আইনশিক্ষার জন্য লন্ডনে গিয়ে ভাস্কর্যশিল্পের প্রতি প্রেম বাড়তে থাকে তার। এরপর ১৯৫১ সালে নভেরা ভর্তি হন লন্ডনের ‘ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস’ এর ‘মডেলিং ও স্কাল্পচার’ কোর্সে। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৬ সালে জুন মাসে দেশে ফিরে আসেন। সে সময় ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ চলছিল। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তার স্নেহধন্য দুই শিষ্য হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদকে শহীদ মিনারের ডিজাইনের দায়িত্ব দেন। সেই নকশা নভেরা এবং হামিদুর রহমান দুজনে মিলেই করেছিলেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে শহীদ মিনারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেই কাজ শেষ হলেও মূল নকশা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এবং দুঃখজনকভাবে স্থপতি হিসেবে শহীদ মিনারের প্রাথমিক দুই নকশাকারের একজন নভেরা আহমেদের নাম ইতিহাস থেকে বাদ পড়ে যায়। এর কিছুদিন পরেই নিজ ভূমি, স্বজন সব পেছনে ফেলে ফ্রান্স চলে যান তিনি। জীবদ্দশায় কখনো আর দেশের মাটিতে পা রাখেননি। বাংলার দর্শক নভেরাকে আর কোনো দিন দেখেনি। এমনকি সচেতনভাবে দেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধ করে দেন।

১৯৬১ সালে ভাস্কর হিসেবে জাতীয়পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন নিজের অস্থিত্ব জানান দিয়েছিলেন দৃঢ়চেতা এই নারী। ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব পেইন্টিং স্কাল্পচার অ্যান্ড গ্রাফিক আর্টস শিরোনামে এই প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া নভেরার ছয়টি ভাস্কর্যের মধ্যে চাইল্ড ফিলোসফার নামে একটি ভাস্কর্য বেস্ট স্কাল্পচারে পুরস্কৃত হয়। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার নভেরা আহমেদকে একুশে পদক দিলেও তিনি গ্রহণ করেননি। দেশের প্রতি তার অভিমানের পাহাড় এতই বড় ছিল যে, দেশ ত্যাগের পর তার জীবদ্দশায় তিনি দেশের কোনো মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার বা তার কাজ নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। তবে, ১৯৯৯ সালে প্যারিসে প্রধানমন্ত্রী তাকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে একুশে পদক প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর কথা বললে অবশ্য তিনি রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু এর পরই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তা আর হয়ে ওঠেনি। ২০১৫ সালে প্যারিসের ওথ ইল শহরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সরকারিভাবে আজ পর্যন্ত ভাস্কর নভেরা আহমেদের প্রাপ্য একুশে পদক তাকে বা তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

নভেরা আহমেদের কাজের বেশকিছু সংগ্রহ রয়েছে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে। এ ছাড়া প্যারিসে তার স্বামী গ্রেগরি দ্য ব্রুনোর স্টুডিওতে ৯টি ভাস্কর্য ও ৪৩টি অঙ্কিত চিত্র রয়েছে। বর্তমানে বাংলা একাডেমির একটি হলের নাম নভেরা হল।

মোহনা জাহ্নবী

চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:০১ পিএম
চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে
বারডেম হসপিটালে একজন নারী ডায়াবেটিস পরীক্ষা করছেন।ছবিঃ আদিব আহমেদ।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে অর্ধেকই নারী। ডায়াবেটিস আছে, এমন অর্ধেকেরও বেশি নারী জানেই না যে, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা ডায়াবেটিস কন্ট্রোল কীভাবে করবেন তা নিয়ে এবারের আয়োজন। লিখেছেন ফারজানা ফাহমি

ডায়াবেটিস হলো শরীরের এমন একটি গুরুতর অবস্থা, যখন আমাদের শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে রক্তে শর্করার বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়।আমরা খাবার খেলে শরীরে সেই খাদ্যের শর্করা ভেঙে চিনি বা গ্লুকোজে পরিণত হয়। অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়, যার মাধ্যমে শরীরের কোষগুলো গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে এবং গ্লুকোজ থেকে আমাদের শরীর শক্তি উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু কোনো কারণে এই ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হতে না পারে, প্রয়োজনের তুলনায় কম তৈরি হয় বা ইনসুলিন তৈরি হয় ঠিকই কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখনই আমাদের ওই গ্লুকোজ কোষে না ঢুকে রক্তে জমা হতে থাকে। এভাবেই ডায়াবেটিস শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিস আছে। যেমন- টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু। টাইপ ওয়ানে ডায়াবেটিস রোগীর অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন একেবারেই উৎপাদিত হয় না, ফলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। অটো ইমিউনিটি (শরীরের নিজস্ব কোষের বিরুদ্ধে নিজেরই প্রতিরোধ তৈরি হওয়া), জিনগত সমস্যা বা অগ্ন্যাশয়ে ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো নষ্ট হয়েও এ রোগ হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ১০ শতাংশ এই টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত। শৈশব থেকেই এই ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। সঠিক নিয়ন্ত্রণ না থাকলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হয় না, হলেও তা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রোগীই টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। মাঝবয়সী বা বৃদ্ধ ব্যক্তিদেরই এই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।ডায়াবেটিসের অন্যান্য ধরনের মধ্যে রয়েছে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস। এ ছাড়া অন্যান্য হরমোন, রোগ ও কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন সেবনে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ডায়াবেটিস শনাক্ত করার কিছু উপসর্গ থাকলেও, অর্ধেকের বেশি রোগীর কোনো লক্ষণই থাকে না। অন্য কোনো রোগের চিকিৎসায় বা অস্ত্রোপচারের আগে রুটিন চেকআপের সময় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। 

উপসর্গগুলোর মধ্যে ঘন ঘন পিপাসা, অতিরিক্ত ক্ষুধা ও ক্লান্তি, ঘন ঘন ও অধিক পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া, উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই শরীরের ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া, বারবার ইনফেকশন, ফোঁড়া, বিচি–পাঁচড়া ও অন্যান্য চর্মরোগ হওয়া, শরীরের কোনো কাটাছেঁড়া বা ঘা শুকাতে দেরি হওয়া, নারীদের সাদাস্রাব, চুলকানি, বারবার বাচ্চা নষ্ট হওয়া বা বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণও হতে পারে ডায়াবেটিস।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এমনকি গর্ভের শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার অনেক এমন ও নারী আছে যারা জানেই না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা চল্লিশোর্ধ্ব তাদের মধ্যে এ রোগের প্রভাব বেশি দেখা যায়। অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে জেনে বিষন্নতায় ভোগেন। চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা ডায়াবেটিস কীভাবে কন্ট্রোল করবেন এ বিষয়ে ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. ফিরোজ আমিন বলেন, ডায়াবেটিস হয়েছে জেনে দুর্ভাবনার কিছু নেই। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পরিবর্তিত জীবনপ্রণালি এবং নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব কিছু নয়।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর বয়স, উচ্চতা, বর্তমান ওজন ও প্রাত্যহিক পরিশ্রমের ধরন বুঝে নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা প্রণয়ন করা হয়, যা তার মেনে চলা উচিত। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মধ্যম মাত্রার শারীরিক পরিশ্রম, যেমন হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন হাঁটবেন, তবে লক্ষ রাখতে হবে, পরপর দুই দিন হাঁটা বা ব্যায়াম থেকে যেন বিরত থাকা না হয়। চিনি বা গুড় দিয়ে তৈরি খাবার, প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি খাবার ও কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। সাদা আটার পরিবর্তে ভুসিওয়ালা লাল আটাই উত্তম। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাবেন। এক বেলা খাবার বাদ দিয়ে পরের বেলা পেট ভরে খাওয়া বা এক বেলা পেট ভরে খেয়ে দীর্ঘক্ষণ বিরতি দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস ঠিক না। বিরতি দিয়ে অল্প করে খাবার খেতে হবে। একবারের বেশি খাওয়া যাবে না। আমাদের দৈনিক খাদ্যাভ্যাসের মূল খাবার, যেমন সকালের নাশতা, দুপুরের ও রাতের খাবারের পাশাপাশি সকালের একটি হালকা নাশতা, যা সকাল ও দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে এবং বিকেলের হালকা নাশতা, যা দুপুর ও রাতের খাবারের মাঝামাঝি সময়ে করতে হবে। অর্থাৎ একজন ডায়াবেটিসের রোগীকে দিনে পাঁচবার খেতে হবে। কিন্তু তা হতে হবে পরিমিত। 

ইনসুলিন প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি জানা জরুরি। ইনসুলিন যখন অপরিহার্য, তখন সময়মতো ইনসুলিন না নিলে, ডায়াবেটিসের জটিল অবস্থা তৈরি হওয়ার ও দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা থাকে। তাই ইনসুলিনকে ভয় পাবেন না। বাজারে এখন অত্যাধুনিক ইনসুলিন ও তা প্রয়োগের পেন, নিডেল পাওয়া যায়, যাতে ব্যথা তুলনামূলকভাবে কম হয় এবং সহজেই যে কেউ এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিস চিকিৎসায় শুধু চিকিৎসকের পক্ষে ওষুধ ও পরামর্শ দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না রোগী নিজে সঠিক নিয়ম না মেনে চলবেন। 

বারডেম একাডেমি পরিচালক ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান বলেন, দেশের ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিসের রোগী রোগ সম্পর্কে জানেন না, এই রোগ প্রায়ই তখন ধরা পড়ে যখন এটি গুরুতর জটিলতার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা।যেসব নারী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও শারীরিক পরিশ্রমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যারা ইতোমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে যাতে জটিলতা সৃষ্টি না হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশন (আইডিএফ) তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি। ফলে এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে ২০৪৫ সালে এ সংখ্যা প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। আইডিএফের ধারণা, বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। একবার হলে তা কখনো সারে না। তবে এটি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেই না যে তাদের রোগটি আছে। ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম ও নিয়মিত শরীরচর্চা না করা এবং ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি তৈরি হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা জরুরি। আক্রান্তরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ এবং শৃঙ্খল জীবনযাপনে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। 

/ফারজানা ফাহমি

 

চাকরিজীবী নারীরা ফিট থাকবেন যেভাবে

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম
চাকরিজীবী নারীরা ফিট থাকবেন যেভাবে
ছবিঃ সংগৃহীত

বর্তমানে নারীরা সব ক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছেন। কর্মক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং নারীদের পুরুষদের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। কারণ, তাদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে কাজ করে ঘরে এসে আবার করতে হয় রান্নাবান্না, ছেলেমেয়েদের সামলানোসহ সংসারের আরও যাবতীয় কাজ। চাকরিজীবী নারীদের ফিট থাকা খুব বেশি প্রয়োজন এ ক্ষেত্রে। চাকরিজীবী নারীদের ফিট থাকা নিশ্চিত করতে ১০টি টিপস নিয়ে লিখেছেন নাফিসা তাবাসসুম।

কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা
প্রথমেই যেটি দরকার সেটি হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বানিয়ে নেওয়া। যা আপনাকে করতে হবে অফিস ও ঘরের কাজের মধ্যে সমন্বয় রেখে।

সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে। সময়টি এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে সংসারের যাবতীয় কাজ শেষ করে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় থাকে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান
কাজের চাপে চাকরিজীবী নারীরা অনেক সময় পানি পান করতে ভুলে যান, যা তাদের পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে। শুধু তাই নয়, এটি ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। তাই অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা খুবই জরুরি। প্রয়োজনে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন।

ব্যায়াম
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। হালকা ও মুক্ত হাতে ব্যায়াম করুন। এতে সারা দিন আপনার শরীর ও মন সজীব ও চাঙা থাকবে। অফিস থেকে ফিরে আসার পরও নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।

সুষম খাদ্য গ্রহণ
বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। আবার খাবার অতিরিক্ত কমও খাওয়া যাবে না। কারণ, এতে আপনার শরীর ‍দুর্বল হয়ে যাবে। খাবারের মধ্যে বৈচিত্র্য নিয়ে আসুন। খেয়াল রাখবেন আপনার খাবার তালিকায় ফল ও সবজি যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। নিয়মিত সুষম খাদ্যাভ্যাস আপনাকে সুস্থ ও সবল রাখবে।

হাঁটাহাঁটির অভ্যাস
অফিসে একটানা বসে কাজ না করে কাজের ফাঁকে একটু হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস করুন। দাঁড়িয়ে কাজ করার অভ্যাসও করতে পারেন। এটি আপনার শরীরকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করবে।

সঙ্গে হালকা খাবার রাখুন
অফিসে দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকা যাবে না। কারণ, তা আপনার শরীরের অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। সব সময় নিজের সঙ্গে করে হালকা খাবার নিয়ে যাবেন। বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও বিস্কুট জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।

নিয়ম করে ডাক্তার দেখান
ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে অনেক কর্মজীবী নারীরা ছোটখাটো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাকে অবহেলা করেন। এই ছোটখাটো স্বাস্থ্য সমস্যাই পরে বড় আকার নিতে পারে। তাই অবহেলা করবেন না। নিয়ম করে ডাক্তার দেখান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।

বিনোদন
সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনটিতে পরিবার নিয়ে বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন করুন। যেমন নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া, প্রিয় কারও সঙ্গে দেখা করা ও আড্ডা মারা। বড় ছুটি পেলে দূরে কোথাও ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে পারেন। এটি কাজে একঘেয়েমি দূর করে নতুন উদ্যমে কাজ করার শক্তি জোগাবে।

হাসিখুশি থাকুন
কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচকতার চর্চা যেমন সহকর্মীদের সঙ্গে পরচর্চায়, পরনিন্দায়, হতাশার কথায় অংশ নেবেন না। সম্ভব হলে এগুলোকে নিরুৎসাহিত করবেন। নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা একান্ত বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করুন অথবা কোনো মনোবিদের সহায়তা নিন। সবসময় হাসিখুশি থাকুন ও নিজের কাজকে উপভোগ করুন।

আসলে ব্যস্ততা এতটাই অবসন্ন করে রাখে যে, এই ব্যাপারগুলো না চাইতেও খেয়ালের বাইরে চলে যায়। তবু নিজের খেয়ালটা কিন্তু নিজেকেই রাখতে হবে। নিউট্রিশন আর ফিটনেসে গরমিলটা এড়ানো গেলে কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবনটাও উপভোগ্য হয়ে উঠবে। তাই চাকরিজীবী নারীদের ফিট থাকা নিশ্চিত করতে এই টিপসগুলো মেনে চলাটা জরুরি।

/ফারজানা ফাহমি

 

থ্রি মিনিট থিসিস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি আতিয়া

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৫ পিএম
থ্রি মিনিট থিসিস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি আতিয়া
থ্রি মিনিট থিসিস প্রতিযোগিতায় আতিয়া বিনতে আমিন। ছবিঃসংগৃহীত

মাত্র তিন মিনিটে কালাজ্বরের কার্যকর ওষুধ তৈরির সম্ভাবনার কথা শুনিয়ে ‘থ্রি মিনিট থিসিস (থ্রিএমটি)’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করলেন বাংলাদেশের মেয়ে আতিয়া বিনতে আমিন। 

কানাডার মনট্রিলে অবস্থিত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবদেহের জিনতত্ত্বের ওপর পিএইচডি করছেন আতিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘নর্থ আমেরিকান ফাইনাল’ নামে এই প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে কানাডার প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয় করলেন আতিয়া। প্রথম বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি এই পুরস্কার জয় করেছেন।

তিন বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে আতিয়া বড়। আতিয়া ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুল থেকে এসএসসি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে। পরে মাস্টার্স করতে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।মাস্টার্স ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের মধ্যে থ্রিএমটি প্রতিযোগিতাটি খুব জনপ্রিয়। বিশ্বের প্রায় ৮৫টি দেশে প্রতি বছর এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

আতিয়াদের ছয়জনের দল গবেষণায় দেখিয়েছে, কালাজ্বর সৃষ্টিকারী পরজীবী কীভাবে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।গবেষণার ফলাফল শুধু কালাজ্বরের কার্যকর ওষুধ তৈরিতেই নয়, ক্যানসারের জন্য নতুন ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারেও ভূমিকা রাখবে। 

এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আতিয়া বলেছেন, গবেষণার মাধ্যমে কালাজ্বরের কার্যকর ওষুধ তৈরি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।

সন্দেহের রোগ ওথেলো সিনড্রোম

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
সন্দেহের রোগ ওথেলো সিনড্রোম
ছবিঃ সংগৃহীত

পারিবারিকভাবে ব্যাংক কর্মকর্তা খায়রুলের সঙ্গে বিয়ে হয় নাহারের। বাসর রাতে স্বামী যখন তাকে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে এবং কথিত প্রেমিকের পরিচয় প্রকাশের জন্য তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে, সে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ে। দিন দিন স্বামীর সন্দেহের মাত্রা বাড়তে থাকে। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে নাহার তার অনুপস্থিতিতে গোপনে তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল এ অভিযোগ তুলে তাকে গালিগালাজ করে। অফিস থেকে মধ্য দুপুরে না জানিয়ে হঠাৎ করে বাড়ি ফেরে প্রেমিককে হাতেনাতে ধরবে বলে।কোনো প্রমাণ না পেলেও সন্দেহ দূর হয় না স্বামীর।

আরও কিছুদিন পেরোলে নাহারের গায়ে হাত তোলা শুরু করে সে। সন্ধ্যায় বা রাতে নাহারের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ঘরের বাইরে ঘোরাফেরা করে, উদ্দেশ্য- শাড়ি দেখে সেই ‘প্রেমিক’ তাকে নাহার বলে ভুল করে কাছে আসবে আর সে তাকে হাতেনাতে ধরতে পারবে। মাঝে মধ্যে সারা দিন অফিস না গিয়ে ঘরে বসে থাকে বা অফিস শেষে ফিরে রাত জেগে বসে থাকে প্রমাণের আশায়। নাহারকে কোনো পুরুষ আত্মীয় বা প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলতে দেয় না। সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানেও তাকে নিয়ে যায় না। কিন্তু এত সন্দেহ আর অবিশ্বাস সত্ত্বেও সে স্ত্রীকে ত্যাগ করতে রাজি হয় না। স্ত্রীকে এক রাতের জন্যও তার বাবার বাড়িতে রেখে আসতে নারাজ সে।

খায়রুল মূলত ভুগছিল সন্দেহ আর ভ্রান্ত বিশ্বাসে মোড়া এক ধরনের মানসিক রোগে। তার অবস্থাটি কেবল প্রেম বা বিবাহ-সম্পর্কের মধ্যে বহুল চর্চিত স্বাভাবিক ঈর্ষা বা অধিকারবোধের বাড়াবাড়ি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। খায়রুলের অবস্থাটিকে প্যাথলজিক্যাল জেলাসি, মরবিড জেলাসি, সেক্সুয়াল জেলাসি বা ডিল্যুশন অব ইনফিডেলিটি বলা হয়। জগদ্বিখ্যাত ইংরেজ লেখক, কবি ও নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়ারের অন্যতম জনপ্রিয় ট্র্যাজেডি ‘ওথেলো’-এর মূল চরিত্রের নামানুসারে এই রোগকে ‘ওথেলো সিনড্রোম’ও বলা হয়। ওথেলো নানা ঘটনায় তার স্ত্রী ডেসডিমনাকে সন্দেহ করে যে সে পরকীয়ায় জড়িত। এ বদ্ধমূল বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে সে তার স্ত্রীকে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, তার সন্দেহ অমূলক ছিল।

নারীদের তুলনায় পুরুষরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা হন ভুক্তভোগী। আক্রান্ত ব্যক্তির নানা আচরণ ও কথায় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সঙ্গী/সঙ্গিনীর বিশ্বস্ততা ও আচরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে তা নিয়ে বারংবার জেরা করেন। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপস ব্যবহারে বাধা দেন অথবা পাসওয়ার্ড দাবি করেন। মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটে মেসেজ চেক করেন বা দেখাতে বাধ্য করেন। অনেকে সঙ্গীকে গোপনে অনুসরণ করেন, আগে থেকে না বলে তার কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হন, কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার পর সঙ্গীর কাপড় ও শরীর নানাভাবে পরীক্ষা করেন পরকীয়ার প্রমাণ খুঁজতে।

সঙ্গীর স্বাভাবিক সামাজিক আচরণকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেন। অন্যের সঙ্গে মিশতে এমনকি বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গে কথা বলতেও বাধা দেন বা বলতে দেখলে সন্দেহ করেন। অনেকে সঙ্গীর গায়ে আঘাত করেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সঙ্গীকে হত্যাচেষ্টা বা হত্যার ঘটনা যেমন ঘটে, তেমনি আক্রান্ত ব্যক্তিরও আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির সন্তান থাকলে সে-ও ব্যক্তি দ্বারা যে কোনো বিপদের ঝুঁকিতে থাকে।

কোনো কোনো ব্যক্তি কেবল ওথেলো সিনড্রোম বা প্যাথলজিক্যাল জেলাসিতে ভুগতে পারেন। আবার কোনো ক্ষেত্রে, সিজোফ্রেনিয়া, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্ব বৈকল্য, যৌন-সমস্যা প্রভৃতির লক্ষণ হিসেবে এ সমস্যাটিকে অঙ্গাঙ্গিভাবে দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে মূল রোগের চিকিৎসা জরুরি। মূল রোগের ধরন ভেদে চিকিৎসা ওষুধ সেবন ও সাইকোথেরাপি দুভাবেই করা যায়। সন্দেহের কারণে ব্যক্তি নিজের বা সঙ্গীর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ালে কখনো কখনো তাকে হাসপাতালে ভর্তি করারও দরকার হতে পারে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি ও সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

/ফারজানা ফাহমি

প্রকৃতিকে ভালোবেসে হয়েছেন এশিয়ার সেরা জলবায়ু বিজ্ঞানী

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
প্রকৃতিকে ভালোবেসে হয়েছেন এশিয়ার সেরা জলবায়ু বিজ্ঞানী
জলবায়ু বিজ্ঞানী গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। ছবিঃসংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিজ্ঞানী গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। প্লাস্টিকের দূষণ এবং প্রকৃতি ও মানুষের জীবনে এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে একাধিক গবেষণা রয়েছে তার। ২০২৩ সালে এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি। তার বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার গল্প শোনাচ্ছেন ফারজানা ফাহমি।


ঢাকার কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। ছোটবেলা থেকেই তার পড়তে ভালো লাগত। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার কিছুদিন আগেই তার বাবা বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হন। যেহেতু তার জীবনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ও আদর্শের মানুষটি ছিল তার বাবা, এ কারণে তিনি মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েন। পরবর্তী সময়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল হয়নি। সব মিলিয়ে এ সময় কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ওই সময় কয়েকজন বন্ধু তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বলেন। অনেকটা তাদের অনুরোধেই তিনি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই গবেষণায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। প্রাণিবিজ্ঞানের ছাত্রী হিসেবে দিনের বড় সময়ই ব্যয় করতেন বই পড়ে ও ল্যাবরেটরিতে। শিক্ষকতায় যুক্ত হওয়ার পর তার গবেষণার পরিধি আরও বেড়ে যায়। কমনওয়েলথ একাডেমিক স্টাফ স্কলারশিপের অধীনে ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ থেকে পিএইচডি করেন ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। গবেষণায় যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে এ অধ্যাপক বলেন, ‘ছোটবেলায় বইয়ে যখন বিভিন্ন বিজ্ঞানীর কথা পড়তাম তখন মনে হতো আমিও যদি তাদের মতো হতে পারতাম, আমিও যদি তাদের মতো কিছু আবিষ্কার করতে পারতাম! এ ছাড়া মানুষের জন্য, দেশের জন্য কাজ করার একটি ইচ্ছা তো সব সময়ই ছিল। এসব বিষয়ই মূলত গবেষণায় আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে।’

ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন তিনি। স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন; দেশের জন্য কাজ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের প্রথম দিনই সিদ্ধান্ত নেন, শিক্ষকতা ও গবেষণার মাধ্যমে মানুষের সেবা করবেন তিনি। জলজ পরিবেশবিদ গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিপন্ন জলাশয় ও প্রাণিকুল নিয়ে গবেষণা করছেন। সম্প্রতি তিনি প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা ও এর ঝুঁকি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।

ছেলেবেলার গল্প করতে গিয়ে ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মনে হতো, আমি এমন কিছু করব, যার মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারব, মানুষের জন্য কাজ করতে পারব। এ কারণে একসময় স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হব। কিন্তু যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন মনে হলো আমি একজন ভালো শিক্ষক হব। কারণ, শিক্ষকতার মাধ্যমে সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা যায়।’ 


এশিয়ান সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর একজন আপনি। এই স্বীকৃতি পেয়ে কেমন লেগেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার জীবনে কষ্ট, স্বীকৃতি—একটার পর একটা ছিলই। এ রকম স্বীকৃতি পেয়ে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমার অনেক ভালো লেগেছে যখন জানতে পেরেছি আমার নাম এসেছে।তখন মনে হয়েছে, দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। যে কাজ করছি, তা আরও ভালো ও সুন্দরভাবে করার অন্যতম অনুপ্রেরণা এটি। 


গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী জলজ পরিবেশ ও জলজ বিপন্ন প্রাণীদের সুরক্ষা ২০১৯-২০২৩ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রকল্পে কাজ করেছেন। এটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির সবচেয়ে বড় নারী নেতৃত্বাধীন প্রকল্প। এ ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উপকূলীয় নারীদের কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিকের ক্ষতির কথা আমরা কম-বেশি প্রায় সবাই জানি। এ প্লাস্টিক কীভাবে গঙ্গা থেকে সাগর পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে, মাছসহ পরিবেশের ক্ষতি করছে, সেসব বিষয়ে আমরা একটি আন্তর্জাতিক টিম নিয়ে কাজ করেছি।এরই ধারাবাহিকতায় প্লাস্টিক দূষণ কমিয়ে আনার বিষয়ে কাজ করেছি। 

এ ছাড়া কক্সবাজার ও চরফ্যাশন এলাকায় আমরা গবেষণার কাজে গিয়ে দেখতে পেয়েছি, পরিত্যক্ত জালে ব্যবহৃত নাইলনের তন্তু এলাকার পরিবেশে বেশ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। আমরা মাছ ধরার এ পরিত্যক্ত জাল থেকে কার্পেট বা এ ধরনের পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে উপকূলীয় নারীদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি। এতে একদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও হবে, আবার এসব নারীর বিকল্প কর্মসংস্থানও তৈরি হবে। এ ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করছি। এতে ছোটবেলা থেকেই একজন শিশু প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শিখতে পারবে এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে।’

নারী হিসেবে অনেক চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হয়েছে গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরীকে। তিনি বলেন, “বেশকিছু জায়গায়ই এমন হয়েছে যে নারী হওয়ায় কোনো কাজের ক্ষেত্রে আমাকে ‘না’ শুনতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যেত এভাবে বলা হতো যে তুমি এখনো জুনিয়র, এটা পারবে না, আরও সিনিয়র হও তারপর করো। অথচ সেই একই কাজ হয়তো আমার চেয়ে কম অভিজ্ঞ কোনো পুরুষ সদস্যকে করতে দেওয়া হতো। তবে আমি কখনো থেমে যাইনি। যেখানেই ‘না’ শুনেছি সেখানেই ‘না’ শব্দটি ‘হ্যাঁ’তে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করেছি।

 
একজন নারীর সামনে এগিয়ে যেতে পরিবারের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া নারীকে অবশ্যই তার নিজের সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এবং সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন বিষয়টি তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ একসঙ্গে অনেক কিছু করতে গিয়ে অনেক বেশি মানসিক চাপের মুখোমুখি হয় এবং কাজের ক্ষেত্রেও জটিলতা বাড়ে। এসব ক্ষেত্রে সে যদি অগ্রাধিকার বিবেচনায় বিষয়গুলো সমন্বয় করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাহলে সফলতা অর্জন অনেক সহজ হবে।’


ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা মনে করেন, নারীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়লে এবং যারা বর্তমানে নারীবিজ্ঞানী বা গবেষক আছেন, তাদের যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদা নিশ্চিত হলে বিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। এ ছাড়া যেসব নারী ভালো কাজ করছেন, তাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। যখন সমাজের মানুষ দেখবে বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নারীরা সম্মানের স্তরে পৌঁছাচ্ছেন, তখন আরও অনেকেই উৎসাহিত হবেন। 


তরুণদের প্রতি এ গবেষকের পরামর্শ হলো সৎ, আত্মবিশ্বাসী ও পরিশ্রমী হতে হবে; দেশকে নিয়ে ভাবতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস ও যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে। বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনার পেছনে না ছুটে গবেষণায় মনোযোগ বাড়াতে হবে। তিনি মনে করেন দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি বিষয়ে থিসিস রাখার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীরা গবেষণামূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে পারবে।

/ফারজানা ফাহমি