ঢাকা ২২ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

নতুন মায়ের মানসিক জটিলতা ‘মম ব্রেইন’

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০১:০১ পিএম
নতুন মায়ের মানসিক জটিলতা ‘মম ব্রেইন’
মডেল: মারিয়া জাহান ও তার নবজাতক সন্তান

‘মম ব্রেইন’ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন এবং ন্যূনতম প্রচারিত শব্দ। ‘মম ব্রেইন’ মূলত আমাদের একজন ভুলে যাওয়া মায়ের ছবি মনে করিয়ে দেয়, যে মা কলার খোসা হাতে রেখে কলাটাই ঝুড়িতে ফেলে দেন, তরকারিতে লবণ একাধিকবার দিলেও মনে হয় লবণ দেওয়াই হয়নি, কথার মাঝখানে কারও নাম অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মনে করতে পারেন না। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যা নিয়ে অনেকে রসিকতা করেন, কিন্তু যারা এই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যান তাদের জন্য এই ‘মা মস্তিষ্কের’ বাস্তবতা বিস্ময়কর, একইভাবে হতাশাজনক। স্মৃতিশক্তির এই হঠাৎ পতনের পরিবর্তে ‘মম ব্রেইন’ পর্যায়ে ভালো কিছুও হতে পারে, যা মায়েদের আরও সচেতন করে তোলে। বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এবং ব্যক্তিগত অনুসন্ধান থেকে ‘মম ব্রেইন’ সম্পর্কে জানাচ্ছেন রাজিয়া সুলতানা

রোকসানা (ছদ্মনাম) তার কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত চৌকস এবং চমৎকার টিম প্লেয়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একজন নারী ব্যবস্থাপক হিসেবে তিনি একাধিক প্রজেক্ট, টাইট ডেডলাইন এবং ১০ জনের একটি টিমকে সাবলীলভাবে পরিচালনা করেছেন। কিন্তু প্রথম সন্তান হওয়ার পর তার সবকিছু বদলে যায়। প্রসবোত্তর প্রথম কয়েক সপ্তাহে তিনি লক্ষ করেন যে, তিনি সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন। তিনি তার ফোনটি ভুল জায়গায় রাখছেন, সবজি ওয়াশিং মেশিনে রাখছেন, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের শিডিউল ভুলে যাচ্ছেন। এমন সব ঘটনা যা সন্তান জন্মদানের আগে ঘটত না বললেই চলে।

প্রথমে রোকসানা এই ভুলে যাওয়াকে নিছক ক্লান্তি হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি খুব অল্প ঘুমাতেন এবং নবজাতকের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি বুঝতে পারেন যে তার মস্তিষ্ক আগের মতো কাজ করছে না।

তার ভাষায়, ‘আমার মনে হচ্ছিল আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আমি সাধারণ জিনিসগুলো মনে রাখতে পারছিলাম না, যেমন আজকে সপ্তাহের কী বার, আমি সকালে দাঁত ব্রাশ করেছি কি না, খেয়েছি কি না। মনে হচ্ছিল আমার মস্তিষ্ক সবসময় এক ধাপ পিছিয়ে ছিল।’

রোকসানার মতো অনেক নতুন মা প্রসবোত্তর সময়কালে এমন মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে থাকেন।

‘মম ব্রেইন’-এর পেছনের বিজ্ঞান
মম ব্রেইন কী? এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডা. তামান্না বেগম (বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল, সিলেট) বলেন, ‘গর্ভকালীন এবং সন্তান প্রসব পরবর্তী (পোস্ট-পার্টাম) সময়ের অনেকগুলো জটিলতার অন্যতম হলো ‘মম ব্রেইন’। নতুন মায়েদের এ সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে। ‘মম ব্রেইন’ বলতে আমরা বুঝি মস্তিষ্কের অস্পষ্টতা এবং ভুলে যাওয়া। গর্ভকালীন মস্তিষ্ক ও শরীরে ব্যাপক হরমোনাল পরিবর্তন হয়ে থাকে বিশেষত অক্সিটোসিন লেভেল অনেক গুণ বেড়ে যায়। ব্রেইনের গ্রে ম্যাটার তুলনামূলকভাবে কমে যায়। তাছাড়া ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন, পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং জীবন ধারণ পদ্ধতিও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।’

তিনি আরও বলেন, ‘হরমোনাল এবং মস্তিষ্কের এই গ্রে ম্যাটারে পরিবর্তনগুলোর প্রভাবে একজন মায়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- ভুলে যাওয়া, অন্যমনষ্ক হওয়া, বাচ্চার প্রতি অমনোযোগিতা, স্ট্রেসফুল থাকা, ঘুমের অভাব, আশপাশের সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা ইত্যাদি।’

এমন রোগীর পরিবারের প্রতি তার পরামর্শ- মম ব্রেইনে আক্রান্ত রোগী তার এই হঠাৎ পরিবর্তনে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন না। তাই তারা এ সময় অতিরিক্ত যত্ন ও মনোযোগ খোঁজে। সবার আগে পরিবারের সবাইকে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার দূর করে বুঝতে হবে এটা একটা অসুখ, যার চিকিৎসা রয়েছে। রোগীর পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাবার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাকে তার প্রিয় বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে গল্পগুজব করার সুযোগ করে দিতে হবে। আগে মম ব্রেইন রোগে আক্রান্ত ছিল এমন কেউ অথবা আরও বেশি ছোট বাচ্চার মায়েদের সঙ্গে কথা বলে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা, শারীরিক ব্যায়াম ও সিনেমা দেখা এক্ষেত্রে খুব উপকারী হিসেবে কাজ করে।

গর্ভাবস্থায় মায়ের মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন
নেচার নিউরোসায়েন্সে (২০১৬) প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে বিস্ময়কর কিছু ফলাফল দেখতে পাওয়া যায়। গবেষণাটি দেখিয়েছে যে, গর্ভাবস্থা একজন নারীর মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন ঘটায়। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু অংশে ধূসর পদার্থের (গ্রে ম্যাটার) পরিমাণ কমে যায়, যা বিশেষত সামাজিক জ্ঞান এবং অন্যের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারার ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত। গবেষণায় দেখা গেছে, এই পরিবর্তনগুলো প্রসব পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত দৃশ্যমান ছিল।

যদিও ধূসর পদার্থের (গ্রে ম্যাটার) পরিমাণ কমে যাওয়াকে উদ্বেগজনক মনে হতে পারে, তবে এটা জানা জরুরি যে এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হারানোর মতো কোনো বিষয় নয়। বরং এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই পরিবর্তনগুলো সিনাপটিক ছাঁটাই নামক একটি প্রক্রিয়াকে প্রতিফলিত করে, যেখানে মস্তিষ্ক অপ্রয়োজনীয় স্নায়ু সংযোগগুলোকে দূর করে আরও দক্ষ হয়ে ওঠে। এই স্ট্রিমলাইনিং প্রক্রিয়াটি মূলত নতুন মায়েদের তাদের শিশুর চাহিদার ওপর ফোকাস করতে সাহায্য করে, তাদের শিশুর ইঙ্গিতগুলোয় সঠিকভাবে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতাকে তীক্ষ্ণ করে তোলে।

গর্ভাবস্থায় মায়ের স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ
নারীর গর্ভাবস্থা এবং মাতৃত্ব দ্বারা প্রভাবিত আরেকটি মূল ক্ষেত্র হলো তার স্মৃতিশক্তি। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল নিউরোসাইকোলজি (২০০৯) এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং নতুন মা তাদের স্মৃতি এবং মনোসংযোগের অসুবিধা নিয়ে কমপ্লেইন করেছেন, যা ‘গর্ভাবস্থার মস্তিষ্ক’ বা ‘মোমনেসিয়া’ হিসেবে পরিচিত। এই সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে এই পরিবর্তনগুলো মায়ের মস্তিষ্কে বর্ধিত চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে কারণ তিনি একটি নবজাতকের যত্ন নেওয়ার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে চলেছেন। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে, স্মৃতি এবং মনোযোগের পরিবর্তনগুলো অস্থায়ী হতে পারে, যা প্রায়শই প্রসবোত্তর প্রথম বছরের পরেই ফিরে আসে। অন্যান্য গবেষণা ইঙ্গিত করে যে, মায়েরা নির্দিষ্ট ধরনের কিছু স্মৃতিতে ঘাটতি অনুভব করতে পারেন, যেমন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা জরুরি কাজগুলো মনে রাখা। এ ছাড়া তারা আবেগীয় স্মৃতিতে দক্ষতা অর্জন করেন- যা তাদের সন্তানের সঙ্গে বন্ধন এবং লালনপালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মায়ের শরীরে হরমোনের নিরন্তর ওঠানামার খেলা 
অক্সিটোসিন, যাকে ‘প্রেমের হরমোন’ বলা হয়, গর্ভাবস্থায় বৃদ্ধি পায় এবং সন্তান প্রসবের পর তা সর্বোচ্চ হয়। এই হরমোন মা এবং শিশুর মধ্যে বন্ধন, ভালোবাসা এবং কানেকশন তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে অক্সিটোসিন সহানুভূতি এবং সামাজিক জ্ঞানের সঙ্গে জড়িত মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলোকেও প্রভাবিত করে, যা দ্বারা বোঝা যায় কেন মায়েরা তাদের শিশুর চাহিদা এবং মানসিক অবস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যেতে পারে। অন্যদিকে, গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবোত্তর সময়কালে কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোনও বৃদ্ধি পায়। যদিও মাঝারি মাত্রার কর্টিসল নতুন মাতৃত্বের চাহিদা মোকাবিলা করার জন্য অপরিহার্য, তবে দীর্ঘস্থায়ী চাপ স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। হরমোনগুলোর এই দ্বৈত ভূমিকা ‘মম ব্রেইন’-এর জটিলতা এবং নতুন মায়েদের অভিজ্ঞতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সন্তান লালন-পালনের চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখে।

মায়ের প্রতি অভিযোগ নয়, প্রয়োজন যত্ন ও সচেতনতা 
মায়েদের এইরকম মানসিক স্বাস্থ্যে মম ব্রেইনের প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এর জনস্বাস্থ্যবিষয়ক টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট ডাক্তার মাকফিরাতুর রহমান তৃপ্তি। তার মতে, ‘এই সময় মা সবকিছু ভুলে যান, মায়ের কাছে মনে হয় সে যেখানে থাকার কথা সে সেখানে নেই, বর্তমানের সঙ্গে তার নিজেকে কানেক্ট করতে কষ্ট হয়। সে সবসময় এক ধরনের ভুলে যাওয়া, ধোঁয়াশা বা ঘোর লাগা, বিক্ষিপ্ত মানসিক অবস্থায় থাকেন, যা একটি সত্যিকারের অসুস্থতা। এ সময় মায়েদের মধ্যে ডিফেন্স মনোভাব লক্ষ করা যায়।’

অভিজ্ঞতায় দেখা যায় মা সারা রাত শিশুর দেখাশোনা করছে, ব্রেস্টফিডিং করাচ্ছে এরপর সকালবেলাও তাকেই আবার বাচ্চাকে দেখাশোনা করতে হচ্ছে। তার না আছে ঘুম, না খাওয়া, না গোসল, এ সময় তার মস্তিষ্ক আর কাজ করে না, সে অনেক লো ফিল করে। কোনো কিছুই তার ফেভারে থাকে না। পাশাপাশি তার ইলেক্ট্রোলাইট অনেক কম থাকে, অনেকের হিমোগ্লোবিন কম থাকে, ব্যক্তিভেদে অনেকের প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ আরও স্বাস্থ্যগত ইস্যু থাকে। ইমোশনাল ইমব্যালান্স তো থাকেই।

প্রি-পারটাম, অ্যান্টি পারটাম এবং পোস্ট পারটাম- এই তিনটি যে গর্ভকালীন সময়কাল থাকে সেগুলোয় মাকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, তাকে শারীরিক- মানসিকভাবে সাপোর্ট করা, তার বিশ্রামের ব্যবস্থা করা, ঘুমের ব্যবস্থা করা, সর্বোপরি মায়ের যত্ন নেওয়াটা জরুরি। এটি পরিবারের সদস্যের এগিয়ে আসার মাধ্যমেই সম্ভব।

বিশেষভাবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সব মায়ের অভিজ্ঞতা একই রকম নয়। মম ব্রেইন এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে যখন প্রেগন্যান্সি হরমোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশন, ডিপ্রেশন, বিশ্রামের অভাব- এই তিনটি একই সঙ্গে উপস্থিত থাকে তখন খুবই কম কিছু উদাহরণ আছে যে মা পাগলও হয়ে যেতে পারেন। মা তার শিশুকে মেরে ফেলার মতো স্টেপ নিতে পারেন, নিজেও আত্মহত্যা করে ফেলতে পারেন। এরকম লক্ষণ থাকলে পরিবারকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে, মা ও শিশুর প্রটেকশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পারিবারিক-সামাজিক সচেতনতা একজন নারীকে তার মাতৃত্বকালীন মানসিক জটিলতা সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।’

জাহ্নবী

 

পর্যটন খাত হোক নারীবান্ধব

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২২ পিএম
পর্যটন খাত হোক নারীবান্ধব
নারীরাও স্বাধীনতা নিয়ে আকাশ দেখুক। ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণ মানে শুধু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরতে যাওয়া নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু। ভ্রমণ নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে শেখায়, প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করে, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চমৎকার লেনদেনের সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার বাধার কারণে ভ্রমণ— বিশেষ করে একাকী কোথাও ঘুরে আসা একটি অপূরণীয় স্বপ্নের মতো। ভ্রমণে নারীদের নানাবিধ ব্যাপার নিয়ে লিখেছেন রাজিয়া সুলতানা

বাংলাদেশ বৈশ্বিক পর্যটনে একটি ক্রমবর্ধমান গন্তব্য হিসেবে অবস্থান করছে, এখন সময় এসেছে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার এবং ভ্রমণকে নারীদের জন্য আরও সহজলভ্য ও নিরাপদ করে তোলার। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে স্বতন্ত্রভাবে বেশকিছু শুধু নারীদের নিয়ে ট্যুর গ্রুপ তৈরি হয়েছে। পর্যটক ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহীর সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশে নারীদের ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা, বাধা এবং করণীয় সম্পর্কে। তার মতে, ‘ভ্রমণ শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের দেশে পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে ভ্রমণের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলা হয় না। ভ্রমণ একটি শিল্প। ভ্রমণ যেমন ব্যক্তির জন্য দরকারি, তেমনি এটি রাষ্ট্রীয় পর্যটনশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয়। বিশ্বব্যাপী পর্যটন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, পর্যটনের মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে, পর্যটন অর্থনীতির চাকা সচল করার মাধ্যমে একটি গোটা রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প অনেক অবহেলিত। নারীর স্বাবলম্বী হওয়া, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা, স্বাধীনভাবে চিন্তা করা, নিজেকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভ্রমণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রমণ দেশের বাইরে হতে হবে এমন নয়, নিজের জেলা, নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি জানার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।’

এলিজা বিনতে এলাহী ঘুরেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলার আনাচে-কানাচে। তিনি মনে করেন, ‘দেশকে পর্যটনবান্ধব রাখা ও নারীবান্ধব করে তোলার জন্য নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে। গণপরিবহনগুলো নারীবান্ধব নয়। আবাসনের সমস্যাও প্রকট।’ তিনি আরও জানান, ‘ভ্রমণের সঙ্গে পোশাকের একটা সম্পর্ক রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণবান্ধব পোশাকের ক্ষেত্রে নারীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়ে সচেতনতা প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন দরকার।’ 

নারীদের ভ্রমণে সাধারণত যেসব বাধা আসে তার মধ্যে রয়েছে-

সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং সামাজিক প্রত্যাশা
বাংলাদেশের কিছু নিয়মিত পর্যটন এলাকা যেমন- কক্সবাজার, তিন পার্বত্য জেলার ফোকাসড কিছু লোকেশন, সিলেট ইত্যাদি ছাড়া বেশির ভাগ এলাকায় ভ্রমণে নারীদের জন্য রয়েছে নানাবিধ প্রতিকূলতা। কিছু কিছু স্থানে নারীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে অলিখিত বাধা। একজন নারী একা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের বিষয়টি সন্দেহ, সংশয় বা সম্পূর্ণ অস্বীকৃতির সঙ্গে দেখা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে সমাজ প্রত্যাশা করে যে, নারীরা তাদের পরিবারের কাছে থাকবেন, ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণ, অচেনা-অজানার অন্বেষণ অথবা কেবল অবসরের জন্য একাকী বাইরে বের হওয়ার পরিবর্তে ঘরোয়া দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেবেন।

নিরাপত্তার উদ্বেগ
নারী পর্যটক জিনাত হাকিম নিরাপত্তাটাকেই সবার ওপরে রাখতে চান। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে কোথাও যেতে ভ্রমণে একদমই ভাবতে হয় না। কিন্তু দেশের ভেতরে ভ্রমণে নিরাপত্তার কথাই সবার আগে ভাবতে হয়। আমাদের সমাজ মনে করে, একটি মেয়ে একা কেন ভ্রমণে যাবে- এই চিন্তাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধটা সমাজের আগে শুরু হয় পরিবারের সঙ্গে।’ বাংলাদেশে নারীদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে হয়রানির গল্প, নিরাপদ আবাসস্থলের স্বল্পতা, রাত্রিকালীন ভ্রমণ সংশয়, পাবলিক স্পেসে অনিরাপত্তা- ভ্রমণ পরিকল্পনায় নারীর জন্য এসবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। পরিবার থেকে নারী যে বাধা পায়, তা মূলত নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে তৈরি হয়। 

অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা
নারীর জন্য ভ্রমণকে সাধারণত একটি বিলাসিতা হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বিবেচনায় আর্থিক লেনদেন আছে, এমন সিদ্ধান্তের জন্য তাদের পরিবার বা স্বামীর ওপর নির্ভর করতে হয়। এমনকি যেসব নারীর আর্থিক সংগতি বা সম্পদ রয়েছে, তারাও ভ্রমণের মতো ব্যক্তিগত ইচ্ছার চেয়ে পারিবারিক চাহিদাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।

অবকাঠামোর অভাব
নারী পর্যটক আরিফা রহমানের কাছে নারীবান্ধব টয়লেটের অভাব এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অপ্রাপ্যতাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে হয়। বাংলাদেশের পর্যটন অবকাঠামো এখনো উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে, বিশেষত নারীবান্ধব অবকাঠামোয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দূরদৃষ্টি, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে। নারীবান্ধব পরিষ্কার বিশ্রামাগার, নিরাপদ বাসস্থান, টয়লেট এবং নিরাপদ পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মতো সুবিধার অভাব অনুভব করেন ভ্রমণপিপাসী নারী পর্যটকরা। অবকাঠামোর অপ্রতুলতা নারীদের ভ্রমণকে কঠিন করে তোলে- বিশেষ করে যারা একা ভ্রমণ করতে চান। ভ্রমণের সময় আরাম এবং নিরাপদ বোধ করা অনেক জরুরি। 

পারিবারিক এবং সামাজিক চাপ
বাংলাদেশের অনেক নারীর জন্য পুরুষের সাহচর্য ছাড়া ভ্রমণকে অনুপযুক্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। ‘মানুষ কী বলবে’ তার ভয় একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা, বিশেষ করে রক্ষণশীল এলাকাগুলোয়। এমনকি বিবাহিত নারীরাও ভ্রমণের মতো বিষয় নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন। পারিবারিক দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি সামাজিক চাপ সবসময়ই থাকে। 

নারীদের ভ্রমণে উৎসাহী হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

নারীর ক্ষমতায়ন এবং আস্থা তৈরিতে 
ভ্রমণ নারীদের চিরাচরিত কমফোর্ট জোনের বাইরে পা রাখার, নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার এবং ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয়। হোক সেটি একটি ভিনদেশি শহর, একটি নতুন ভাষা শেখা বা নিজের দেশের প্রকৃতিতে কেবল শান্তি খুঁজে পাওয়া, এই অভিজ্ঞতাগুলো ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং ক্ষমতায়নে অবদান রাখে। অনেক নারীর জন্য, ভ্রমণ হলো তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং সামাজিক প্রত্যাশা থেকে মুক্ত হওয়ার একটি মাধ্যম।

সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচন 
ভ্রমণ নারীদের বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধারণা এবং জীবনধারার সঙ্গে পরিচিত করে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে। ভ্রমণ আপনাকে আরও উন্মুক্ত মানসিকতা, সহনশীলতা এবং বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটি এমন একটি গুণ, যা ক্রমবর্ধমান বিশ্বে আপনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তিন পার্বত্য জেলার উপজাতীয় সম্প্রদায় থেকে কক্সবাজারের উপকূলীয় জীবন, হাওর কিংবা চা-বাগান, পাহাড় কিংবা সমুদ্র- আপনার ব্যক্তিগত জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে।

মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিতে
ভ্রমণ প্রাত্যহিক জীবনের ছকে বাঁধা রুটিন থেকে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিরতি দেয়। প্রতিদিনের কাজ, পরিবার এবং সামাজিক প্রত্যাশার চাপ থেকে অব্যাহতি দেয়, যা নারীকে মানসিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করে। আরও আত্মবিশ্বাসী এবং উন্নত মানসিকতার করে তোলে এবং মনের পাশাপাশি শরীরও ভালো অনুভব করে।

অর্থনীতিতে অবদান
যত বেশি নারী পর্যটক ভ্রমণে যুক্ত হবেন, তত বেশি তারা স্থানীয় অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখতে পারবেন। ছোট ব্যবসা, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং পর্যটনশিল্প আরও সমৃদ্ধি অর্জন করবে। নারীদের ভ্রমণে উৎসাহিত করা স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশেষ করে বাংলাদেশের অনুন্নত অঞ্চলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের পর্যটন খাত হওয়া চাই নারীবান্ধব 

পর্যটনকে নারীদের জন্য একটি কার্যকর ও আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে নারী ভ্রমণকারীদের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিরাপদ করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি 
সরকারের উচিত সব পর্যটক বিশেষ করে নারীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। পর্যটন এলাকায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত রাখা, যেকোনো হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আবাসিক হোটেলগুলোয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, টয়লেট এবং খাবারের ব্যাপারে স্বাস্থ্যসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি জরুরি।

নারী পর্যটক জিনাত হাকিম মনে করেন, ‘নারীবান্ধব পর্যটনশিল্প নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ এবং কাজ করার অনেক জায়গা রয়েছে।’ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এত বাধা কিংবা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, নারীর ভালো থাকায় ভ্রমণও যুক্ত হোক। সব বাধা পেরিয়ে নারীর জন্য ভ্রমণ হোক নিরাপদ ও আনন্দের। উন্মুক্ত হোক প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বদ্ধ দুয়ার।

জাহ্নবী

ভয়েস অব আমেরিকার দিলারা হাশেম

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০০ এএম
ভয়েস অব আমেরিকার দিলারা হাশেম
দিলারা হাশেম। ছবি: সংগৃহীত

আশির দশকে ভয়েস অব আমেরিকার এক অনবদ্য কণ্ঠ ছিলেন দিলারা হাশেম। যশোরের মেয়ে দিলারা হাশেম নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। নিয়মিত রাত ১০টায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রচারিত ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগের তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরিচিত এক কণ্ঠস্বর। আশির দশকে সংবাদ পাঠিকা দিলারা হাশেমকে চিনত না, এমন মানুষ কমই ছিল। স্পষ্ট উচ্চারণ, অপূর্ব বাচনভঙ্গি ও অসাধারণ কণ্ঠস্বর নিয়ে তিনি সংবাদ পড়তেন। বিশ্বসংবাদ মাধ্যমে বাংলা ভাষার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের অসাধারণ উৎস হয়ে কাজ করেছিলেন তিনি।

দিলারা হাশেমের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৫ আগস্ট, যশোর জেলার মনিরামপুর থানাধীন মশ্বিমনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে। কথাসাহিত্যিক দিলারা হাশেম ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি যোগ দেন তদানীন্তন রেডিও পাকিস্তানে। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন বাংলা খবর পাঠ করেছেন। পরে ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনেও সংবাদ পাঠ করেছেন তিনি।

তার লেখার মূল উপজীব্য ছিল নগর জীবন ও বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজের সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশার গল্প। তার প্রথম উপন্যাস ‘ঘর মন জানালা’ ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। মধ্যবিত্ত সমাজে নাগরিক জীবনের সংগ্রামী এক নারীর সব বাধা আর ঘুরে দাঁড়ানোর জীবন আখ্যানকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাস তুমুল সাড়া ফেলেছিল পাঠকমহলে। ১৯৭৩ সালে তা চলচ্চিত্র হয়ে মুক্তি পায়। এমনকি উপন্যাসটি রুশ ও চীনা ভাষায় অনূদিত হয়। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় তার নারীবাদী উপন্যাস ‘আমলকীর মৌ’। সেটিও পাঠকমহলে খুব সাড়া পায়। তার আরও কিছু উপন্যাস হলো- একদা এবং অনন্ত (১৯৭৫), স্তব্ধতার কানে কানে (১৯৭৭), বাদামী বিকেলের গল্প (১৯৮৩), কাকতালীয় (১৯৮৫), ম্যুরাল (১৯৮৬), শঙ্খ করাত (১৯৯৫), অনুক্ত পদাবলী (১৯৯৮), সদর অন্দর (১৯৯৮), সেতু (২০০০) এবং মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসসমূহ (২০১১)। তার কিছু গল্পগ্রন্থ হলো- হলদে পাখির কান্না (১৯৭০), সিন্ধু পারের উপাখ্যান (১৯৮৮) এবং নায়ক (১৯৮৯)। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয় তার কাব্যগন্থ ‘ফেরারি’।

১৯৭২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন এবং ওয়াশিংটনে বসবাস ও কর্মজীবন শুরু করেন। বিবিসি বাংলা ও ভয়েস অব আমেরিকায় খণ্ডকালীন বেতার সম্প্রচারক হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে পূর্ণকালীন মেয়াদে ভয়েস অব আমেরিকায় বেতার সম্প্রচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন দিলারা হাশেম এবং লেখালেখির চর্চাটাও চালিয়ে যেতে থাকেন।

ইতালি, ফ্রান্স, হল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, জার্মানি, চেকোস্লোভাকিয়াসহ ইউরোপের বহু দেশ ভ্রমণ করেন দিলারা। এমনকি চীন, জাপান ও কমিউনিস্ট শাসনামলে সোভিয়েত ইউনিয়নও ভ্রমণ করেন।

উপন্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়া শঙ্খচিল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), উত্তর শিকাগো ‘কালচারাল অ্যান্ড লিটারারি ইংক’ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭), অলক্ত পুরস্কার (২০০৪ এবং) মুক্তধারা জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯) এ-ও ভূষিত হন দিলারা হাশেম।

১৯৭৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েস অব আমেরিকায় কাজ করেন। অবসরে যান ২০১১ সালে। ২০২২ সালের ২০ মার্চ ৮৬ বছর বয়সে ওয়াশিংটনের নিজ বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত এই লেখক ও সুকণ্ঠী সংবাদ পাঠিকা দিলারা হাশেম।

জাহ্নবী

টেক বিশ্বের আলোকিত নাম শের ওয়াং

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
টেক বিশ্বের আলোকিত নাম শের ওয়াং
শের ওয়াং। ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক বিশ্বে সবকিছুর পাশাপাশি প্রযুক্তির দিকেও এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। প্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে রয়েছে তাদের অবাধ বিচরণ। বিভিন্ন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার তৈরির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কাজ করছেন নারীরা, রয়েছেন বিভিন্ন উচ্চপদে। তেমনই একজন তাইওয়ানের শের ওয়াং। যিনি তাইওয়ানের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটার নির্মাতা হাইটেক কম্পিউটার (এইচটিসি) করপোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।

শের ওয়াং টেক বিশ্বে সেরা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ পরিচিত। তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাইওয়ানের তাইপেইতে। তার বাবা ওয়াং ইয়ুং চিং ছিলেন প্লাস্টিক ও পেট্রোকেমিক্যালস সমষ্টি ফর্মোসা প্লাস্টিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। শের ওয়াংয়ের শিক্ষাজীবনের সূচনা ক্যালিফোর্নিয়ার দ্য কলেজ প্রিপারেটরি স্কুল ইন অকল্যান্ডে। এরপর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।

ওয়াং এবং কয়েকজন মিলে ১৯৮৭ সালে VIA এবং ১৯৯৭ সালে HTC নামের দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুটি কোম্পানিই ছিল মূলত স্মার্টফোন তৈরির প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালে স্মার্টফোনের মোটামুটি প্রাথমিক মডেল তৈরি করে বেশ হইচই ফেলে দেন তিনি। বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’ শের ওয়াংয়ের স্বামী ওয়েন চি চেনের সঙ্গে শের ওয়াংকে যৌথভাবে ২০১১ সালের মে মাসে তাইওয়ানের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে। এমনকি ২০১২ সাল থেকে ফোর্বস এর ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকাতেও ধারাবাহিকভাবে অবস্থান পেয়ে আসছেন শের ওয়াং। ফোর্বসের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৫ সালে এইচটিসি কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার।

নিত্যনতুন লক্ষ্য নিয়ে এইচটিসিকে প্রযুক্তি দুনিয়ায় শীর্ষে নিয়ে যেতে চান ওয়াং। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বুদ্ধি আর দক্ষতার সঙ্গে এইচটিসি ব্র্যান্ড পণ্যের নানা উন্নয়ন কার্যক্রম দেখাশোনা করে আসছেন ওয়াং। এমনকি ব্যবসার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার ব্যাপারে বেশ সুনাম আছে তার। শুধু তাই নয়, তাইওয়ানে রাজনীতির সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত আছেন শের ওয়াং। বর্তমানে তার স্বামী ‘ভিআইএ’ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কাজ করছেন।

বিশ্ব আইসিটির মঞ্চে সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে ওয়াং নিজের যোগ্যতা আর দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। বর্তমানে তার বয়স ৬৬ বছর হলেও পরিশ্রম করতে কোনো অনীহার ছাপ দেখেন না তার সহকর্মীরা। স্মার্টফোনের বাজারে আধিপত্য ও মুনাফা বাড়াতে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে এসেছিল এইচটিসি। এ প্রসঙ্গে ওয়াং বলেছিলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোয় স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু এইচটিসি অনেক দিন শুধু দামি স্মার্টফোন তৈরিতেই আগ্রহী ছিল। এই কৌশলগত ভুলের কারণে বহু লোকসান গুনেছে এইচটিসি। এ ক্ষতি সামলে নিতেই কম দামি স্মার্টফোন তৈরিতে এইচটিসি এখন জোরালোভাবে কাজ করছে।’ স্মার্ট ব্যবসার দুনিয়ার এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে উদাহরণ তৈরি করেছেন ওয়াং। এখন সবচেয়ে স্মার্ট গ্যাজেট হিসেবে স্মার্ট হাতঘড়ি তারুণ্যের জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই স্মার্ট হাতঘড়ি বাজারে নিয়ে আসতে কাজ করছে। এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে এইচটিসি। এক সাক্ষাৎকারে এইচটিসি চেয়ারম্যান শের ওয়াং বলেন, ‘এইচটিসি পরিধানযোগ্য ডিভাইস উৎপাদন ও মানোন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাবে। স্মার্ট দুনিয়ার উন্নয়নে এখন সবসময়ই নিত্যনতুন চাহিদার আর্বিভাব হয়ে থাকে। ইন্টারনেটের ব্যাপকতা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা আজ অন্ধকারে থাকার শামিল। তাই প্রযুক্তি দুনিয়ায় মানোন্নয়নের প্রতিযোগিতাও এখন কঠিন থেকে চরম পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।’

জাহ্নবী

নারী এবং পুরুষ উভয়ই সমান অলিম্পে দে গোজেস

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পিএম
আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১২ পিএম
নারী এবং পুরুষ উভয়ই সমান অলিম্পে দে গোজেস
অলিম্পে দে গোজেস (ছবি:সংগৃহীত)

অনেকেই তাকে বিশ্বের প্রথম নারীবাদীদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি সেই নারী যিনি ফরাসি বিপ্লবে ঘোষণা করেছিলেন যে, নারী এবং পুরুষ উভয়ই সমান। বলছিলাম ফরাসি সমাজ সংস্কারক এবং লেখক অলিম্পে দে গোজেসের কথা। তিনি একজন নাগরিক হিসেবে নারীর ভূমিকাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রচলিত মতামতকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

অলিম্পের জন্ম ১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মে ফ্রান্সের মন্টাউবানের এক ধনী পরিবারে। যদিও তার মা ব্যক্তিগতভাবে তার শিক্ষক ছিলেন কিন্তু তার নিজের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে লুই অব্রি নামে একজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার স্বামী এক বছর পরে মারা যান। অলিম্পে তার আধা-আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ Memories-এ বলেন, ‘আমি এমন একজনকে বিয়ে করেছি যাকে আমি ভালোবাসিনি এবং যিনি ধনী বা ভালো পরিবারে জন্মগ্রহণকারীও ছিলেন না।’

পরবর্তী সময়ে দে গোজেস ১৭৭০ সালে প্যারিসে চলে যান এবং সেখানে একটি থিয়েটার কোম্পানি শুরু করেন এবং ক্রমবর্ধমান বিলোপবাদী আন্দোলনে জড়িত হন। একজন নাট্যকার হিসেবে তিনি সমসাময়িক রাজনৈতিক বিতর্কে অভিযুক্ত হন। প্যারিসের থিয়েটার সম্প্রদায়ে যোগদানের পর গোজেস দাসত্ব, নারী-পুরুষ সম্পর্ক, শিশুদের অধিকার এবং বেকারত্বের মতো বিষয়গুলো নিয়ে নাটক লিখতে শুরু করেন। ১৭৮৪ সালে তিনি একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন।

তার কাজগুলো প্রায়ই পুরুষশাসিত সাহিত্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিকূল সমালোচনা এবং উপহাসের সম্মুখীন হতো। এমনকি কিছু সমালোচক প্রশ্ন তুলেছেন যে, তিনি যে রচনাগুলোয় তার নাম স্বাক্ষর করতেন তার প্রকৃত লেখক তিনিই ছিলেন কি না। অলিম্পে সর্বাধিক পরিচিত তার ‘নারী ও নারী নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ এবং ‘নারীর অধিকার ও বিলোপবাদ’ এই দুটি কাজের জন্য। ‘নারী ও নারী নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ এটি প্রকাশনার ফলে গোজেসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। অলিম্পে দে গোজেস ফরাসি বিপ্লবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর যখন তিনি দেখলেন যে, পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের সমান অধিকার প্রসারিত করা হয়নি তখন তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।

নারী অধিকারের বিষয়ে নীরব থাকতে অস্বীকার করা, গিরোন্ডিস্টদের সঙ্গে যুক্ত থাকা, জ্যাকবিনদের সমালোচনা করা এবং বিপ্লবে নতুন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার জন্য অলিম্পে দে গোজেসকে বিপ্লবের চার বছর পর ১৭৯৩ সালের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই বছরেরই ৩ নভেম্বর গিলোটিনে শিরশ্ছেদ করে তাকে হত্যা করা হয়।

 কলি

 

সাফিয়া ফিরোজির আকাশ জয়

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
সাফিয়া ফিরোজির আকাশ জয়
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় নারী পাইলট সাফিয়া ফিরোজির।(ছবি সংগৃহীত)

‘নারী হিসেবে আপনি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু সেসব সমস্যাকে যেকোনো উপায়ে আপনাকে কাটিয়ে উঠতে হবে।’ এ কথাটি আফগানিস্তানের দ্বিতীয় নারী পাইলট সাফিয়া ফিরোজির। গত শতকের নব্বই দশকের কথা। আফগানিস্তানে তখন তালিবানি শাসন বা ঔদ্ধত্যের রমরমা। বাচ্চা কি বুড়ো নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়। তখন ফিরোজি ছিলেন শিশু। ওই সময় আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজ নেতারা গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হন। এ সময় ফিরোজির পরিবার কাবুলের বাড়ি ছেড়ে পালায়।তারা চলে যান পাকিস্তানে। সেখানে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করেন তারা। শরণার্থী শিবিরের জীবনের সঙ্গে সবাই মানিয়ে নিতে বা ভাগ্যকে সবাই মেনে নিতে পারলেও পারল না শুধু সেই ছোট্ট মেয়েটি।

সে কোনো নিয়ম মানতে চাইত না। নিজের জেদই বজায় রাখত সবসময়। সেই জেদ আর একাগ্রতাই পরবর্তী সময়ে তাকে নিয়ে যায় অনেকদূর। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে তালেবান শাসনের ইতি ঘটে ওই দেশটিতে। তখন উদ্বাস্তু হিসেবেই পাকিস্তান থেকে ফিরে আসেন সাফিয়া। এসে স্কুলে ভর্তি হন। একসময় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি টেলিভিশন চ্যানেলে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পান।

তাতে নারীদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হচ্ছিল। আর তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন ফিরোজি। তিনি কমিউনিকেশন অফিসার হওয়ার জন্য পড়াশোনা করতে থাকেন। তারপর যোগ দেন মিলিটারি একাডেমিতে। কিন্তু যে মেয়ের শৈশব কেটেছে শরণার্থী হিসেবে ভাগ্য তার জন্য যে মুক্ত আকাশে ওড়ার ইতিহাস লিখে রেখেছিল, তা কে জানত। একপর্যায়ে ওই একাডেমিতে ঘোষণা দেওয়া হয় পাইলট হওয়ার জন্য নারীদের খুঁজছে বিমানবাহিনী। এ ঘোষণায় ফিরোজি ও অন্য ১২ জন মেয়ে আবেদন করেন। তবে পরীক্ষায় টিকে যান শুধু একজন। তিনি হলেন সাফিয়া ফিরোজি।

আরো পড়ুন: https://www.khaborerkagoj.com/compassionate/826738

পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ হেরাতে তিনি যখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় পাইলট ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ হাওয়াদ নাহাফির সঙ্গে। পরে তারা দুজনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রীর পাইলট হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সমর্থন দিয়েছেন পাইলট নাহাফি। পাইলট হওয়ার পর তার নামের আগে যুক্ত হয় ক্যাপ্টেন। তিনি হয়ে ওঠেন ক্যাপ্টেন সাফিয়া ফিরোজি। তারপর সংসার আর নিজের কর্মক্ষেত্র সামলাতে থাকেন সুনিপুণ দক্ষতায়।

আফগানিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশে তিনি দেশটির দ্বিতীয় নারী পাইলট। ২০১৩ সালে আফগানিস্তানে প্রথম নারী পাইলট হিসেবে যোগ দেন ক্যাপ্টেন নিলুফার রহমানি। তার পরের রেকর্ড ফিরোজির। ফিরোজি যে বিমানটি চালান তা হলো সি-২০৮। তিনি বলেন, ‘যখন আমি সেনাবাহিনীর পোশাক পরি প্রকৃতপক্ষেই তখন নিজেকে একজন নারী ভাবতে গর্ব অনুভব করি।’

যদিও এখনো আফগানিস্তানের নারীদের সামনে প্রচণ্ড রক্ষণশীল সমাজের প্রতিবন্ধকতা, তবুও দেশটির নারীরা সমাজ, পার্লামেন্ট, সরকার ও সেনাবাহিনীতে ক্রমবর্ধমান হারে তাদের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেছেন। নারীদের এই বন্ধুর যাত্রাপথে সাফিয়া ফিরোজিরা সবসময় আলোর মশাল হয়ে থাকবেন।

 কলি