ঢাকা ২২ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

‘বাংলাদেশিরা এতটা ঐক্যবদ্ধ তা এই প্রথম অনুভব করলাম’

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম
আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ পিএম
‘বাংলাদেশিরা এতটা ঐক্যবদ্ধ তা এই প্রথম অনুভব করলাম’
হোসনে আরা প্রাপ্তি, সামিয়া আক্তার ও সুমাইয়া সাইনা

দেশে যে দুর্যোগই হোক না কেন, পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সবসময় সেসব দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এবার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হলো বাংলাদেশ। এই আকস্মিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে সবাই যেন এক নতুন বাংলাদেশকে দেখতে পেল। নারী-পুরুষ, তরুণ-বৃদ্ধ সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একতার যে অনন্য সেতুবন্ধন তৈরি করেছে, তা মুগ্ধ করেছে সর্বস্তরের মানুষকে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় অবিশ্রান্ত কাজ করে যাচ্ছেন, এমন কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন মোহনা জাহ্নবী

সামিয়া আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। বন্যার্তদের জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্যার্তদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবার প্রথম। এর আগে আমি এ ধরনের কোনো কাজ করিনি। অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার কারণে যখন আমার দেশ ও দেশের মানুষের জীবন বিপন্ন, তখন বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে, সহযোগিতা প্রদানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘গণত্রাণ সংগ্রহ’ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় এবং আমি সেই কর্মসূচিতে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। আমরা প্রতিদিন টিএসসি বুথে বানভাসি মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসা মানুষদের থেকে নগদ অর্থ, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় মেডিসিন, শিশুখাদ্য, পোশাক, স্যালাইন, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বিশুদ্ধ পানি গ্রহণ করে থাকি। এই সংগ্রহ করা অর্থ ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন যেসব ত্রাণসামগ্রী সংগৃহীত হয়, তা সারা দিন ব্যাপক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে প্যাকেজিং করা হয়। প্যাকেজিং শেষে সেগুলোকে ট্রাক, পিকআপ এবং সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ার কার্গোতে করে প্রয়োজনের ভিত্তিতে বন্যাকবলিতে এলাকাগুলোয় সরবরাহ করা হয়। আমার অভিজ্ঞতা মূলত ত্রাণ সংগ্রহ নিয়ে। আর এ ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আমি বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই, যা আমাকে সত্যিই অভিভূত করে। এই গণত্রাণ কার্যক্রমে সারা দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ কার্যক্রমকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। একজন রিকশাচালক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, আইনজীবী, স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, শিশু- সবার অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরাও অর্থ প্রদানের মাধ্যমে আমাদের এই ত্রাণ সংগ্রহে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেক আপু যাদের কাছে নগদ অর্থ ছিল না, তারা তাদের স্বর্ণালংকার যেমন- চুড়ি, কানের দুল, চেইন, আংটি দিয়ে গেছেন আমাদের কাছে এসে, যা দেখে সত্যিই আমি আবেগাপ্লুত হই। একটা জাতীয় সংকটে আমরা সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবার ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণে তা মোকাবিলা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা যে জাতি হিসেবে কতটা ঐক্যবদ্ধ, এই ঘটনা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসে আমাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিয়ে যায় বন্যার্তদের জন্য। শিগগিরই আমরা এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।’

স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে আমি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হইনি। আমার প্রতি অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক ভাই ও বোনদের পূর্ণ সহযোগিতা ও সম্মান ছিল এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো সমস্যায় পড়লে সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসে তা সমাধান করার জন্য।’

এই সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে তার প্রতি পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি বা অনুভূতি সম্পর্কে সামিয়া বলেন, ‘আমার এসব কাজে পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক। তারা আমাকে নিয়ে খুবই খুশি এবং আমার এই সামাজিক কাজে তাদের পূর্ণ সমর্থন ও দোয়া রয়েছে। আমি দেশ ও দেশের মানুষের সহায়তায় কিছু করতে পারছি ভেবেই তারা আমায় নিয়ে খুবই আনন্দিত।’

হোসনে আরা প্রাপ্তি, সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী। বন্যার্তদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবু অনেক নারী হাসিমুখে এসব কাজ করে যাচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশ যে বন্যার মুখোমুখি হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং পার্শ্ববর্তী দেশের আমাদের প্রতি অবহেলার ফল। কেউ ভেসে যাচ্ছে স্রোতে কিংবা কারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের মানুষ কিংবা প্রবাসী তারা কেউ পরিবার আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এমন আরও হাজারও দুঃখ ভরা সংবাদ আমরা শুনতে পাচ্ছি। এই বিষয়গুলো আমাদের ভাবাচ্ছে। সাঁতার জানা নেই তাই বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় যেতে পারিনি। তবে ত্রাণ সংগ্রহ এবং প্যাকেজিংসহ যারা বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় যাচ্ছে তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আমরা টিএসসিতে কাজ করছি মানুষের জন্য। ছেলেমেয়ে, ছোট-বড়, এমনকি আমাদের মা-বাবার বয়সের মানুষদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছি। নতুন করে শিখছি অনেক কিছু। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুকনো খাবার, জামাকাপড়, খাবার স্যালাইনসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য প্যাকেজিং করছি। আলহামদুলিল্লাহ। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই অনুভূতি জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতির একটি হয়ে থাকবে।’

বন্যার্তদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নানাবিধ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন প্রাপ্তি। তিনি বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি যা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, তা হলো একতা। আমরা বাংলাদেশিরা এতটা ঐক্যবদ্ধ তা এই প্রথম অনুভব করলাম। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষক, রিকশাচালক কিংবা সমাজের উচ্চবিত্ত সব স্তরের মানুষ এক হয়ে গেছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এই যে একতা এটা আমাকে চমৎকারভাবে প্রভাবিত করেছে। আমরা টিএসসি প্রাঙ্গণে দেখেছি কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাদের জন্য বাধা হতে পারেনি। তারা সব বাধা জয় করে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে।’

কাজ করতে গিয়ে নারী হিসেবে আলাদা করে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করছি। বানভাসি মানুষগুলো অনাহারে আছে, শিশুরা আশ্রয় খুঁজছে, একটু উষ্ণতা আর খাদ্য তাদের প্রশান্তি দিতে পারে। তাদের জন্য আমরা নারী-পুরুষ সবাই এক হয়ে কাজ করছি। এই কাজে নারী-পুরুষ একসঙ্গে একে অপরকে সহযোগিতা করছি। নারী হিসেবে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়িনি। বরং কাজের ক্ষেত্রে ছাত্ররা আমাদের সহযোগিতা করছে। বেশি ভারী কাজগুলো ছেলেরা করছে। প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে যারা ত্রাণ দিচ্ছে তাদের বেশির ভাগই ছাত্র কিংবা পুরুষ। তারা নারী, শিশু, বৃদ্ধদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। নারী হিসেবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো আমরা সহজেই করতে পারি না। আমরা ত্রাণ সংগ্রহ করছি, প্যাকেজিং করছি, সেই কাজেও আমাদের সঙ্গে ছেলেরা সহযোগিতা করছে। সর্বোপরি আমরা নারী-পুরুষ একত্রে একটা দল হয়ে আমাদের মানুষদের, শিশুদের নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছি।’

সুমাইয়া সাইনা, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী। তার কাছে জানতে চাইলাম, এই যে বন্যার্তদের নিয়ে কাজ করছেন এসব কাজে তো সবাই আগ্রহ প্রকাশ করে না, এই মানবিক বা সামাজিক কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ তৈরি হলো কীভাবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন ধরে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। হাজার হাজার মানুষের ঘর ভেসে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দেখছি পর্যাপ্ত খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানির অভাব। বৃদ্ধ নারী ও শিশুরা পড়েছে চরম বিপাকে। মৃত ব্যক্তির লাশকে ভাসিয়ে দিতে হচ্ছে জলে, কারণ দাফন দেওয়ার মতো স্থান নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। এমতাবস্থায় একজন মানুষ হিসেবে ঘরে বসে থাকা আসলেই সম্ভব নয়। সেই জায়গা থেকেই বন্যার্তদের সহযোগিতা এগিয়ে আসা।’

তার কাছে আরও জানতে চাইলাম, সবাই বলছে বাংলাদেশের এই ঐক্য আগে কখনো দেখেনি। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের এই ঐক্যটা গড়ে উঠেছে। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যখন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালানো শুরু হয়, তখন সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছে। এদিকে গণ-অভ্যুত্থান সফল হতে না হতেই ভারত বাঁধ খুলে দেওয়ায় আকস্মিকভাবে বন্যা শুরু হলো। এমতাবস্থায় ভারতের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এত বড় ত্যাগ ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, তা রক্ষা করার জন্য মানুষ পুনরায় এক হয়েছে। চরম অবক্ষয় এবং ব্যক্তি স্বার্থের যুগে এমন ঐক্যবদ্ধতা প্রমাণ করে মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও সহনশীলতা এখনো ফুরিয়ে যায়নি।’

বন্যা প্রতিরোধে আমাদের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন? এ প্রশ্নের জবাবে সুমাইয়া বলেন, ‘যেহেতু প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে আমরা অনেকগুলো নদী ভাগাভাগি করছি ফলে ভারতকে আন্তর্জাতিক নদী আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। তিস্তাসহ সব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাঁধগুলো নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক নদী আইন মানতে হবে। সব অসম চুক্তি মূল্যায়নের মাধ্যমে পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার করতে হবে। বন্যাসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণগুলো চিহ্নিত করে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসের যে প্রকল্পগুলো রয়েছে সেগুলো অবিলম্বে বাতিল করে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে।’

জাহ্নবী

পর্যটন খাত হোক নারীবান্ধব

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২২ পিএম
পর্যটন খাত হোক নারীবান্ধব
নারীরাও স্বাধীনতা নিয়ে আকাশ দেখুক। ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণ মানে শুধু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরতে যাওয়া নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু। ভ্রমণ নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে শেখায়, প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করে, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চমৎকার লেনদেনের সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার বাধার কারণে ভ্রমণ— বিশেষ করে একাকী কোথাও ঘুরে আসা একটি অপূরণীয় স্বপ্নের মতো। ভ্রমণে নারীদের নানাবিধ ব্যাপার নিয়ে লিখেছেন রাজিয়া সুলতানা

বাংলাদেশ বৈশ্বিক পর্যটনে একটি ক্রমবর্ধমান গন্তব্য হিসেবে অবস্থান করছে, এখন সময় এসেছে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার এবং ভ্রমণকে নারীদের জন্য আরও সহজলভ্য ও নিরাপদ করে তোলার। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে স্বতন্ত্রভাবে বেশকিছু শুধু নারীদের নিয়ে ট্যুর গ্রুপ তৈরি হয়েছে। পর্যটক ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহীর সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশে নারীদের ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা, বাধা এবং করণীয় সম্পর্কে। তার মতে, ‘ভ্রমণ শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের দেশে পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে ভ্রমণের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলা হয় না। ভ্রমণ একটি শিল্প। ভ্রমণ যেমন ব্যক্তির জন্য দরকারি, তেমনি এটি রাষ্ট্রীয় পর্যটনশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয়। বিশ্বব্যাপী পর্যটন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, পর্যটনের মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে, পর্যটন অর্থনীতির চাকা সচল করার মাধ্যমে একটি গোটা রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প অনেক অবহেলিত। নারীর স্বাবলম্বী হওয়া, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা, স্বাধীনভাবে চিন্তা করা, নিজেকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভ্রমণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রমণ দেশের বাইরে হতে হবে এমন নয়, নিজের জেলা, নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি জানার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।’

এলিজা বিনতে এলাহী ঘুরেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলার আনাচে-কানাচে। তিনি মনে করেন, ‘দেশকে পর্যটনবান্ধব রাখা ও নারীবান্ধব করে তোলার জন্য নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে। গণপরিবহনগুলো নারীবান্ধব নয়। আবাসনের সমস্যাও প্রকট।’ তিনি আরও জানান, ‘ভ্রমণের সঙ্গে পোশাকের একটা সম্পর্ক রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণবান্ধব পোশাকের ক্ষেত্রে নারীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়ে সচেতনতা প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন দরকার।’ 

নারীদের ভ্রমণে সাধারণত যেসব বাধা আসে তার মধ্যে রয়েছে-

সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং সামাজিক প্রত্যাশা
বাংলাদেশের কিছু নিয়মিত পর্যটন এলাকা যেমন- কক্সবাজার, তিন পার্বত্য জেলার ফোকাসড কিছু লোকেশন, সিলেট ইত্যাদি ছাড়া বেশির ভাগ এলাকায় ভ্রমণে নারীদের জন্য রয়েছে নানাবিধ প্রতিকূলতা। কিছু কিছু স্থানে নারীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে অলিখিত বাধা। একজন নারী একা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের বিষয়টি সন্দেহ, সংশয় বা সম্পূর্ণ অস্বীকৃতির সঙ্গে দেখা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে সমাজ প্রত্যাশা করে যে, নারীরা তাদের পরিবারের কাছে থাকবেন, ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণ, অচেনা-অজানার অন্বেষণ অথবা কেবল অবসরের জন্য একাকী বাইরে বের হওয়ার পরিবর্তে ঘরোয়া দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেবেন।

নিরাপত্তার উদ্বেগ
নারী পর্যটক জিনাত হাকিম নিরাপত্তাটাকেই সবার ওপরে রাখতে চান। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে কোথাও যেতে ভ্রমণে একদমই ভাবতে হয় না। কিন্তু দেশের ভেতরে ভ্রমণে নিরাপত্তার কথাই সবার আগে ভাবতে হয়। আমাদের সমাজ মনে করে, একটি মেয়ে একা কেন ভ্রমণে যাবে- এই চিন্তাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধটা সমাজের আগে শুরু হয় পরিবারের সঙ্গে।’ বাংলাদেশে নারীদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে হয়রানির গল্প, নিরাপদ আবাসস্থলের স্বল্পতা, রাত্রিকালীন ভ্রমণ সংশয়, পাবলিক স্পেসে অনিরাপত্তা- ভ্রমণ পরিকল্পনায় নারীর জন্য এসবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। পরিবার থেকে নারী যে বাধা পায়, তা মূলত নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে তৈরি হয়। 

অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা
নারীর জন্য ভ্রমণকে সাধারণত একটি বিলাসিতা হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বিবেচনায় আর্থিক লেনদেন আছে, এমন সিদ্ধান্তের জন্য তাদের পরিবার বা স্বামীর ওপর নির্ভর করতে হয়। এমনকি যেসব নারীর আর্থিক সংগতি বা সম্পদ রয়েছে, তারাও ভ্রমণের মতো ব্যক্তিগত ইচ্ছার চেয়ে পারিবারিক চাহিদাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।

অবকাঠামোর অভাব
নারী পর্যটক আরিফা রহমানের কাছে নারীবান্ধব টয়লেটের অভাব এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অপ্রাপ্যতাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে হয়। বাংলাদেশের পর্যটন অবকাঠামো এখনো উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে, বিশেষত নারীবান্ধব অবকাঠামোয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দূরদৃষ্টি, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে। নারীবান্ধব পরিষ্কার বিশ্রামাগার, নিরাপদ বাসস্থান, টয়লেট এবং নিরাপদ পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মতো সুবিধার অভাব অনুভব করেন ভ্রমণপিপাসী নারী পর্যটকরা। অবকাঠামোর অপ্রতুলতা নারীদের ভ্রমণকে কঠিন করে তোলে- বিশেষ করে যারা একা ভ্রমণ করতে চান। ভ্রমণের সময় আরাম এবং নিরাপদ বোধ করা অনেক জরুরি। 

পারিবারিক এবং সামাজিক চাপ
বাংলাদেশের অনেক নারীর জন্য পুরুষের সাহচর্য ছাড়া ভ্রমণকে অনুপযুক্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। ‘মানুষ কী বলবে’ তার ভয় একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা, বিশেষ করে রক্ষণশীল এলাকাগুলোয়। এমনকি বিবাহিত নারীরাও ভ্রমণের মতো বিষয় নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন। পারিবারিক দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি সামাজিক চাপ সবসময়ই থাকে। 

নারীদের ভ্রমণে উৎসাহী হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

নারীর ক্ষমতায়ন এবং আস্থা তৈরিতে 
ভ্রমণ নারীদের চিরাচরিত কমফোর্ট জোনের বাইরে পা রাখার, নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার এবং ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয়। হোক সেটি একটি ভিনদেশি শহর, একটি নতুন ভাষা শেখা বা নিজের দেশের প্রকৃতিতে কেবল শান্তি খুঁজে পাওয়া, এই অভিজ্ঞতাগুলো ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং ক্ষমতায়নে অবদান রাখে। অনেক নারীর জন্য, ভ্রমণ হলো তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং সামাজিক প্রত্যাশা থেকে মুক্ত হওয়ার একটি মাধ্যম।

সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচন 
ভ্রমণ নারীদের বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধারণা এবং জীবনধারার সঙ্গে পরিচিত করে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে। ভ্রমণ আপনাকে আরও উন্মুক্ত মানসিকতা, সহনশীলতা এবং বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটি এমন একটি গুণ, যা ক্রমবর্ধমান বিশ্বে আপনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তিন পার্বত্য জেলার উপজাতীয় সম্প্রদায় থেকে কক্সবাজারের উপকূলীয় জীবন, হাওর কিংবা চা-বাগান, পাহাড় কিংবা সমুদ্র- আপনার ব্যক্তিগত জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে।

মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিতে
ভ্রমণ প্রাত্যহিক জীবনের ছকে বাঁধা রুটিন থেকে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিরতি দেয়। প্রতিদিনের কাজ, পরিবার এবং সামাজিক প্রত্যাশার চাপ থেকে অব্যাহতি দেয়, যা নারীকে মানসিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করে। আরও আত্মবিশ্বাসী এবং উন্নত মানসিকতার করে তোলে এবং মনের পাশাপাশি শরীরও ভালো অনুভব করে।

অর্থনীতিতে অবদান
যত বেশি নারী পর্যটক ভ্রমণে যুক্ত হবেন, তত বেশি তারা স্থানীয় অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখতে পারবেন। ছোট ব্যবসা, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং পর্যটনশিল্প আরও সমৃদ্ধি অর্জন করবে। নারীদের ভ্রমণে উৎসাহিত করা স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশেষ করে বাংলাদেশের অনুন্নত অঞ্চলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের পর্যটন খাত হওয়া চাই নারীবান্ধব 

পর্যটনকে নারীদের জন্য একটি কার্যকর ও আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে নারী ভ্রমণকারীদের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিরাপদ করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি 
সরকারের উচিত সব পর্যটক বিশেষ করে নারীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। পর্যটন এলাকায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত রাখা, যেকোনো হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আবাসিক হোটেলগুলোয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, টয়লেট এবং খাবারের ব্যাপারে স্বাস্থ্যসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি জরুরি।

নারী পর্যটক জিনাত হাকিম মনে করেন, ‘নারীবান্ধব পর্যটনশিল্প নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ এবং কাজ করার অনেক জায়গা রয়েছে।’ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এত বাধা কিংবা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, নারীর ভালো থাকায় ভ্রমণও যুক্ত হোক। সব বাধা পেরিয়ে নারীর জন্য ভ্রমণ হোক নিরাপদ ও আনন্দের। উন্মুক্ত হোক প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বদ্ধ দুয়ার।

জাহ্নবী

ভয়েস অব আমেরিকার দিলারা হাশেম

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০০ এএম
ভয়েস অব আমেরিকার দিলারা হাশেম
দিলারা হাশেম। ছবি: সংগৃহীত

আশির দশকে ভয়েস অব আমেরিকার এক অনবদ্য কণ্ঠ ছিলেন দিলারা হাশেম। যশোরের মেয়ে দিলারা হাশেম নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। নিয়মিত রাত ১০টায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রচারিত ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগের তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরিচিত এক কণ্ঠস্বর। আশির দশকে সংবাদ পাঠিকা দিলারা হাশেমকে চিনত না, এমন মানুষ কমই ছিল। স্পষ্ট উচ্চারণ, অপূর্ব বাচনভঙ্গি ও অসাধারণ কণ্ঠস্বর নিয়ে তিনি সংবাদ পড়তেন। বিশ্বসংবাদ মাধ্যমে বাংলা ভাষার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের অসাধারণ উৎস হয়ে কাজ করেছিলেন তিনি।

দিলারা হাশেমের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৫ আগস্ট, যশোর জেলার মনিরামপুর থানাধীন মশ্বিমনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে। কথাসাহিত্যিক দিলারা হাশেম ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি যোগ দেন তদানীন্তন রেডিও পাকিস্তানে। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন বাংলা খবর পাঠ করেছেন। পরে ঢাকা বেতার ও টেলিভিশনেও সংবাদ পাঠ করেছেন তিনি।

তার লেখার মূল উপজীব্য ছিল নগর জীবন ও বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজের সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশার গল্প। তার প্রথম উপন্যাস ‘ঘর মন জানালা’ ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। মধ্যবিত্ত সমাজে নাগরিক জীবনের সংগ্রামী এক নারীর সব বাধা আর ঘুরে দাঁড়ানোর জীবন আখ্যানকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাস তুমুল সাড়া ফেলেছিল পাঠকমহলে। ১৯৭৩ সালে তা চলচ্চিত্র হয়ে মুক্তি পায়। এমনকি উপন্যাসটি রুশ ও চীনা ভাষায় অনূদিত হয়। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় তার নারীবাদী উপন্যাস ‘আমলকীর মৌ’। সেটিও পাঠকমহলে খুব সাড়া পায়। তার আরও কিছু উপন্যাস হলো- একদা এবং অনন্ত (১৯৭৫), স্তব্ধতার কানে কানে (১৯৭৭), বাদামী বিকেলের গল্প (১৯৮৩), কাকতালীয় (১৯৮৫), ম্যুরাল (১৯৮৬), শঙ্খ করাত (১৯৯৫), অনুক্ত পদাবলী (১৯৯৮), সদর অন্দর (১৯৯৮), সেতু (২০০০) এবং মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসসমূহ (২০১১)। তার কিছু গল্পগ্রন্থ হলো- হলদে পাখির কান্না (১৯৭০), সিন্ধু পারের উপাখ্যান (১৯৮৮) এবং নায়ক (১৯৮৯)। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয় তার কাব্যগন্থ ‘ফেরারি’।

১৯৭২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন এবং ওয়াশিংটনে বসবাস ও কর্মজীবন শুরু করেন। বিবিসি বাংলা ও ভয়েস অব আমেরিকায় খণ্ডকালীন বেতার সম্প্রচারক হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে পূর্ণকালীন মেয়াদে ভয়েস অব আমেরিকায় বেতার সম্প্রচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন দিলারা হাশেম এবং লেখালেখির চর্চাটাও চালিয়ে যেতে থাকেন।

ইতালি, ফ্রান্স, হল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, জার্মানি, চেকোস্লোভাকিয়াসহ ইউরোপের বহু দেশ ভ্রমণ করেন দিলারা। এমনকি চীন, জাপান ও কমিউনিস্ট শাসনামলে সোভিয়েত ইউনিয়নও ভ্রমণ করেন।

উপন্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়া শঙ্খচিল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), উত্তর শিকাগো ‘কালচারাল অ্যান্ড লিটারারি ইংক’ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭), অলক্ত পুরস্কার (২০০৪ এবং) মুক্তধারা জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯) এ-ও ভূষিত হন দিলারা হাশেম।

১৯৭৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েস অব আমেরিকায় কাজ করেন। অবসরে যান ২০১১ সালে। ২০২২ সালের ২০ মার্চ ৮৬ বছর বয়সে ওয়াশিংটনের নিজ বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রখ্যাত এই লেখক ও সুকণ্ঠী সংবাদ পাঠিকা দিলারা হাশেম।

জাহ্নবী

টেক বিশ্বের আলোকিত নাম শের ওয়াং

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
টেক বিশ্বের আলোকিত নাম শের ওয়াং
শের ওয়াং। ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক বিশ্বে সবকিছুর পাশাপাশি প্রযুক্তির দিকেও এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। প্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে রয়েছে তাদের অবাধ বিচরণ। বিভিন্ন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার তৈরির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কাজ করছেন নারীরা, রয়েছেন বিভিন্ন উচ্চপদে। তেমনই একজন তাইওয়ানের শের ওয়াং। যিনি তাইওয়ানের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটার নির্মাতা হাইটেক কম্পিউটার (এইচটিসি) করপোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।

শের ওয়াং টেক বিশ্বে সেরা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ পরিচিত। তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাইওয়ানের তাইপেইতে। তার বাবা ওয়াং ইয়ুং চিং ছিলেন প্লাস্টিক ও পেট্রোকেমিক্যালস সমষ্টি ফর্মোসা প্লাস্টিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। শের ওয়াংয়ের শিক্ষাজীবনের সূচনা ক্যালিফোর্নিয়ার দ্য কলেজ প্রিপারেটরি স্কুল ইন অকল্যান্ডে। এরপর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।

ওয়াং এবং কয়েকজন মিলে ১৯৮৭ সালে VIA এবং ১৯৯৭ সালে HTC নামের দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই দুটি কোম্পানিই ছিল মূলত স্মার্টফোন তৈরির প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালে স্মার্টফোনের মোটামুটি প্রাথমিক মডেল তৈরি করে বেশ হইচই ফেলে দেন তিনি। বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’ শের ওয়াংয়ের স্বামী ওয়েন চি চেনের সঙ্গে শের ওয়াংকে যৌথভাবে ২০১১ সালের মে মাসে তাইওয়ানের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে। এমনকি ২০১২ সাল থেকে ফোর্বস এর ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকাতেও ধারাবাহিকভাবে অবস্থান পেয়ে আসছেন শের ওয়াং। ফোর্বসের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৫ সালে এইচটিসি কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার।

নিত্যনতুন লক্ষ্য নিয়ে এইচটিসিকে প্রযুক্তি দুনিয়ায় শীর্ষে নিয়ে যেতে চান ওয়াং। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বুদ্ধি আর দক্ষতার সঙ্গে এইচটিসি ব্র্যান্ড পণ্যের নানা উন্নয়ন কার্যক্রম দেখাশোনা করে আসছেন ওয়াং। এমনকি ব্যবসার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার ব্যাপারে বেশ সুনাম আছে তার। শুধু তাই নয়, তাইওয়ানে রাজনীতির সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত আছেন শের ওয়াং। বর্তমানে তার স্বামী ‘ভিআইএ’ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কাজ করছেন।

বিশ্ব আইসিটির মঞ্চে সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে ওয়াং নিজের যোগ্যতা আর দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। বর্তমানে তার বয়স ৬৬ বছর হলেও পরিশ্রম করতে কোনো অনীহার ছাপ দেখেন না তার সহকর্মীরা। স্মার্টফোনের বাজারে আধিপত্য ও মুনাফা বাড়াতে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে এসেছিল এইচটিসি। এ প্রসঙ্গে ওয়াং বলেছিলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোয় স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু এইচটিসি অনেক দিন শুধু দামি স্মার্টফোন তৈরিতেই আগ্রহী ছিল। এই কৌশলগত ভুলের কারণে বহু লোকসান গুনেছে এইচটিসি। এ ক্ষতি সামলে নিতেই কম দামি স্মার্টফোন তৈরিতে এইচটিসি এখন জোরালোভাবে কাজ করছে।’ স্মার্ট ব্যবসার দুনিয়ার এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে উদাহরণ তৈরি করেছেন ওয়াং। এখন সবচেয়ে স্মার্ট গ্যাজেট হিসেবে স্মার্ট হাতঘড়ি তারুণ্যের জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে। বিশ্বের প্রায় সব প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই স্মার্ট হাতঘড়ি বাজারে নিয়ে আসতে কাজ করছে। এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে এইচটিসি। এক সাক্ষাৎকারে এইচটিসি চেয়ারম্যান শের ওয়াং বলেন, ‘এইচটিসি পরিধানযোগ্য ডিভাইস উৎপাদন ও মানোন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাবে। স্মার্ট দুনিয়ার উন্নয়নে এখন সবসময়ই নিত্যনতুন চাহিদার আর্বিভাব হয়ে থাকে। ইন্টারনেটের ব্যাপকতা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা আজ অন্ধকারে থাকার শামিল। তাই প্রযুক্তি দুনিয়ায় মানোন্নয়নের প্রতিযোগিতাও এখন কঠিন থেকে চরম পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।’

জাহ্নবী

নারী এবং পুরুষ উভয়ই সমান অলিম্পে দে গোজেস

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পিএম
আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১২ পিএম
নারী এবং পুরুষ উভয়ই সমান অলিম্পে দে গোজেস
অলিম্পে দে গোজেস (ছবি:সংগৃহীত)

অনেকেই তাকে বিশ্বের প্রথম নারীবাদীদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি সেই নারী যিনি ফরাসি বিপ্লবে ঘোষণা করেছিলেন যে, নারী এবং পুরুষ উভয়ই সমান। বলছিলাম ফরাসি সমাজ সংস্কারক এবং লেখক অলিম্পে দে গোজেসের কথা। তিনি একজন নাগরিক হিসেবে নারীর ভূমিকাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রচলিত মতামতকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

অলিম্পের জন্ম ১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মে ফ্রান্সের মন্টাউবানের এক ধনী পরিবারে। যদিও তার মা ব্যক্তিগতভাবে তার শিক্ষক ছিলেন কিন্তু তার নিজের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে লুই অব্রি নামে একজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার স্বামী এক বছর পরে মারা যান। অলিম্পে তার আধা-আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ Memories-এ বলেন, ‘আমি এমন একজনকে বিয়ে করেছি যাকে আমি ভালোবাসিনি এবং যিনি ধনী বা ভালো পরিবারে জন্মগ্রহণকারীও ছিলেন না।’

পরবর্তী সময়ে দে গোজেস ১৭৭০ সালে প্যারিসে চলে যান এবং সেখানে একটি থিয়েটার কোম্পানি শুরু করেন এবং ক্রমবর্ধমান বিলোপবাদী আন্দোলনে জড়িত হন। একজন নাট্যকার হিসেবে তিনি সমসাময়িক রাজনৈতিক বিতর্কে অভিযুক্ত হন। প্যারিসের থিয়েটার সম্প্রদায়ে যোগদানের পর গোজেস দাসত্ব, নারী-পুরুষ সম্পর্ক, শিশুদের অধিকার এবং বেকারত্বের মতো বিষয়গুলো নিয়ে নাটক লিখতে শুরু করেন। ১৭৮৪ সালে তিনি একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন।

তার কাজগুলো প্রায়ই পুরুষশাসিত সাহিত্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিকূল সমালোচনা এবং উপহাসের সম্মুখীন হতো। এমনকি কিছু সমালোচক প্রশ্ন তুলেছেন যে, তিনি যে রচনাগুলোয় তার নাম স্বাক্ষর করতেন তার প্রকৃত লেখক তিনিই ছিলেন কি না। অলিম্পে সর্বাধিক পরিচিত তার ‘নারী ও নারী নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ এবং ‘নারীর অধিকার ও বিলোপবাদ’ এই দুটি কাজের জন্য। ‘নারী ও নারী নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ এটি প্রকাশনার ফলে গোজেসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। অলিম্পে দে গোজেস ফরাসি বিপ্লবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর যখন তিনি দেখলেন যে, পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের সমান অধিকার প্রসারিত করা হয়নি তখন তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।

নারী অধিকারের বিষয়ে নীরব থাকতে অস্বীকার করা, গিরোন্ডিস্টদের সঙ্গে যুক্ত থাকা, জ্যাকবিনদের সমালোচনা করা এবং বিপ্লবে নতুন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার জন্য অলিম্পে দে গোজেসকে বিপ্লবের চার বছর পর ১৭৯৩ সালের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই বছরেরই ৩ নভেম্বর গিলোটিনে শিরশ্ছেদ করে তাকে হত্যা করা হয়।

 কলি

 

সাফিয়া ফিরোজির আকাশ জয়

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
সাফিয়া ফিরোজির আকাশ জয়
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় নারী পাইলট সাফিয়া ফিরোজির।(ছবি সংগৃহীত)

‘নারী হিসেবে আপনি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু সেসব সমস্যাকে যেকোনো উপায়ে আপনাকে কাটিয়ে উঠতে হবে।’ এ কথাটি আফগানিস্তানের দ্বিতীয় নারী পাইলট সাফিয়া ফিরোজির। গত শতকের নব্বই দশকের কথা। আফগানিস্তানে তখন তালিবানি শাসন বা ঔদ্ধত্যের রমরমা। বাচ্চা কি বুড়ো নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়। তখন ফিরোজি ছিলেন শিশু। ওই সময় আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজ নেতারা গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হন। এ সময় ফিরোজির পরিবার কাবুলের বাড়ি ছেড়ে পালায়।তারা চলে যান পাকিস্তানে। সেখানে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করেন তারা। শরণার্থী শিবিরের জীবনের সঙ্গে সবাই মানিয়ে নিতে বা ভাগ্যকে সবাই মেনে নিতে পারলেও পারল না শুধু সেই ছোট্ট মেয়েটি।

সে কোনো নিয়ম মানতে চাইত না। নিজের জেদই বজায় রাখত সবসময়। সেই জেদ আর একাগ্রতাই পরবর্তী সময়ে তাকে নিয়ে যায় অনেকদূর। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে তালেবান শাসনের ইতি ঘটে ওই দেশটিতে। তখন উদ্বাস্তু হিসেবেই পাকিস্তান থেকে ফিরে আসেন সাফিয়া। এসে স্কুলে ভর্তি হন। একসময় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি টেলিভিশন চ্যানেলে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পান।

তাতে নারীদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হচ্ছিল। আর তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন ফিরোজি। তিনি কমিউনিকেশন অফিসার হওয়ার জন্য পড়াশোনা করতে থাকেন। তারপর যোগ দেন মিলিটারি একাডেমিতে। কিন্তু যে মেয়ের শৈশব কেটেছে শরণার্থী হিসেবে ভাগ্য তার জন্য যে মুক্ত আকাশে ওড়ার ইতিহাস লিখে রেখেছিল, তা কে জানত। একপর্যায়ে ওই একাডেমিতে ঘোষণা দেওয়া হয় পাইলট হওয়ার জন্য নারীদের খুঁজছে বিমানবাহিনী। এ ঘোষণায় ফিরোজি ও অন্য ১২ জন মেয়ে আবেদন করেন। তবে পরীক্ষায় টিকে যান শুধু একজন। তিনি হলেন সাফিয়া ফিরোজি।

আরো পড়ুন: https://www.khaborerkagoj.com/compassionate/826738

পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ হেরাতে তিনি যখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় পাইলট ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ হাওয়াদ নাহাফির সঙ্গে। পরে তারা দুজনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রীর পাইলট হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সমর্থন দিয়েছেন পাইলট নাহাফি। পাইলট হওয়ার পর তার নামের আগে যুক্ত হয় ক্যাপ্টেন। তিনি হয়ে ওঠেন ক্যাপ্টেন সাফিয়া ফিরোজি। তারপর সংসার আর নিজের কর্মক্ষেত্র সামলাতে থাকেন সুনিপুণ দক্ষতায়।

আফগানিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশে তিনি দেশটির দ্বিতীয় নারী পাইলট। ২০১৩ সালে আফগানিস্তানে প্রথম নারী পাইলট হিসেবে যোগ দেন ক্যাপ্টেন নিলুফার রহমানি। তার পরের রেকর্ড ফিরোজির। ফিরোজি যে বিমানটি চালান তা হলো সি-২০৮। তিনি বলেন, ‘যখন আমি সেনাবাহিনীর পোশাক পরি প্রকৃতপক্ষেই তখন নিজেকে একজন নারী ভাবতে গর্ব অনুভব করি।’

যদিও এখনো আফগানিস্তানের নারীদের সামনে প্রচণ্ড রক্ষণশীল সমাজের প্রতিবন্ধকতা, তবুও দেশটির নারীরা সমাজ, পার্লামেন্ট, সরকার ও সেনাবাহিনীতে ক্রমবর্ধমান হারে তাদের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেছেন। নারীদের এই বন্ধুর যাত্রাপথে সাফিয়া ফিরোজিরা সবসময় আলোর মশাল হয়ে থাকবেন।

 কলি