ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

একা মায়ের বন্ধুর পথ

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
একা মায়ের বন্ধুর পথ
মডেল: তমা ও তার ছেলে ধ্রুব। ছবি: আদিব

আমাদের সমাজে সবসময় সন্তানসন্ততিসহ সুখী যুগল জীবন দেখা যায় না। কিছু ব্যতিক্রমও আছে। এমন অনেক মা আছেন, যারা একাই সন্তানকে মানুষ করেন, একই সঙ্গে মা এবং বাবার ভূমিকা পালন করেন। আমরা তাদের ‘সিঙ্গেল মাদার’ বলি।

সিঙ্গেল মাদার হওয়ার কারণ

অনেক সময় স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক এত তিক্ত হয়ে যায় যে, মায়েরা সংসার ছেড়ে আসতে বাধ্য হন। তখন একাই তাকে সন্তানের দায়িত্ব নিতে হয়। কখনো আবার স্বামী মারা গেলে মা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন না, সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে জীবন পার করে দেন। কিছু কিছু নারী সন্তান দত্তক নিয়ে একাই লালনপালন করেন। এসব ক্ষেত্রে তারা সিঙ্গেল মাদারের ভূমিকা পালন করে থাকেন।

একা মাকে যেসব সমস্যা পোহাতে হয়

মায়েদের জার্নিটা বরাবরই কঠিন। আর একা মায়েদের জীবনযাত্রা আরও বেশি কঠিন। আমাদের সমাজে একা মায়েদের ভালো চোখে দেখা হয় না। সংসার ভাঙার জন্য মেয়েদেরই সাধারণত দায়ী করা হয়। সমাজ প্রত্যাশা করে, সাংসারিক জীবনে যত অশান্তিই হোক না কেন মেয়েরা সব মেনে নিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখবে। মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার যেই থিওরি প্রচলিত, তা যেন শুধু মেয়েদের জন্যই তৈরি। বেশির ভাগ মানুষ এও মনে করেন, একা মায়েদের চরিত্র ভালো হয় না। কিছু মানুষ মনে করেন, একা মায়েদের পুনরায় বিয়ে করা উচিত, নাহলে চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে। কিছু মানুষ ভাবেন, যে মা সন্তানের মঙ্গল কামনা করে সে কখনো দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারে না। সমাজ সাধারণত একা মায়েদের ওপর সহনশীল হয় না। প্রতিনিয়ত তাদের স্রোতের প্রতিকূলে সমাজের অনেক কটু কথা শুনে টিকে থাকতে হয়।

আয়েশা রহমান (ছদ্মনাম) নামের একজন একা মা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার নেশা ও পেশা ছিল একজন লেখক হওয়া। নিয়মিত লেখালিখি করতাম, বই প্রকাশ করতাম। প্রেম করে বিয়ে করার পরও জীবন ভালোই চলছিল। একটা ছেলেসন্তান হলো আমাদের। তারপর ধীরে ধীরে সন্তানের বাবা বদলে যেতে লাগল। তবু সন্তানের কথা ভেবে মেনে নিলাম। দিনের পর দিন দেখতে থাকলাম, সংসার আর সন্তানের প্রতি সে উদাসীন হয়ে পড়ছে। সন্তানের দুধ থেকে শুরু করে কোনো প্রয়োজনীয় জিনিসই সে কিনে দিত না। এদিকে একটা স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি হলো আমার। নিজেই যতটা সম্ভব সব খরচ চালাতে থাকলাম। সন্তানকে নিয়ে কষ্ট করে চাকরি আর সংসার এ ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করলাম। খুব খারাপ লাগত, সন্তানের প্রতি তার অবহেলা দেখে। সে ঠিকই সবসময় ব্র্যান্ডের ঘড়ি, পোশাক পরত এবং আমাদের সন্তান টানাপড়েনের ভেতর জীবন কাটাত। একপর্যায়ে জানতে পারি, তার অন্যত্র সম্পর্ক রয়েছে এবং সে সেই নারীর সঙ্গে জীবন কাটাতে চায়। তারপর সেই সংসার ছেড়ে চলে এলাম মায়ের বাড়িতে। মায়ের পরিবার খুব সাপোর্ট করেছে সবসময়, নাহলে আমার পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হতো। আমার ভাই থাকে ফিনল্যান্ডে। সে আমাকে আর আমার ছেলেকে ফিনল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার সব বন্দোবস্ত করলো। ফিনল্যান্ডে এসে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করালাম আর আমি একটা কাজ জোগাড় করলাম। তিন বছর হলো ফিনল্যান্ডে আছি। এখন বেশ ভালোই আছি।’

দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন, দেশে থেকেও তো সন্তানকে মানুষ করা যেত- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একা মায়েদের জন্য আমাদের দেশটা ঠিক সহজ নয়। সমাজের বাঁকা চোখ, লোকের নিন্দা শুনে জীবন পার করা কঠিন হতো। আর তাছাড়া আমার ছেলের জীবনটাও দুর্বিষহ হয়ে উঠত, তাই দেশ ছেড়ে আসা। উন্নত দেশগুলোয় একা মায়ের চিত্র খুব নরমাল। এখানে অন্তত সমাজের সঙ্গে কোনো লড়াই করতে হয় না।’

একা মায়ের সন্তানদের ওপর প্রভাব

একটা সুখী যুগল পরিবারে সন্তানদের বেড়ে ওঠা আর একা মায়ের পরিবারে বড় হওয়া সন্তানদের জীবনযাপনে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। এটা ঠিক, সব পরিবার সুখী নয়। সেক্ষেত্রে একটা অসুখী পরিবারে সন্তানকে বড় করার চেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। নাহলে সেই অসুখী পরিবারের প্রভাব সন্তানের পুরো জীবনের ওপর পড়ে। তবে, সন্তানের ওপর মা এবং বাবা উভয়ের ছায়া থাকাই সবচেয়ে সুন্দর এবং নিরাপদ। কিন্তু যখন মা একা সন্তানকে লালনপালন করতে বাধ্য হন, তখন সন্তানের ওপর তার প্রভাব কেমন হয়?

সাধারণভাবে যদি দেখা হয়, সন্তানের জীবনের বড় একটা অপূর্ণতা থেকে যায়। সে বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়। সে যখন অন্যদের দেখে বাবারা তাদের সন্তানদের ভালোবাসছে, তখন তার ভেতরে এক অবর্ণনীয় কষ্ট দানা বাঁধে। দিনের পর দিন সেই কষ্ট তার মনোজগতের ওপর প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া বাবা নেই বলে সমাজ তাকে যেই কটাক্ষ করে সবসময়, বিভিন্ন জায়গায় হেয় হতে হয় বা নেতিবাচক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, এটা আরও বেশি ক্ষতিকর। সন্তানটি ভাবতে থাকে, অন্য আট দশ জনের মতো তার জীবন কেন সহজ স্বাভাবিক নয়, কেন তার বাবা নেই। কখনো কখনো সে মাকেও দোষারোপ করে ফেলে। কারণ, সমাজ তার মাথায় এই ধারণা ঢুকিয়ে দেয় যে, এসবের জন্য তার মা-ই দায়ী।

তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। জেসমিন আক্তার নামের একজন নারীর দুই সন্তান- একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে তিনি সংসার ছেড়ে আসতে বাধ্য হন। একাই মানুষ করতে থাকেন দুই সন্তানকে। একপর্যায়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান সন্তানদের নিয়ে।

সন্তানদের তিনি মানুষের মতো মানুষ করে তোলেন। এখন দুটি সন্তানই কর্মজীবী। এমনকি তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তখন তারা নিজ দায়িত্বে মাকে আবার বিয়ে দেন। যেন মা জীবনের শেষ দিনগুলো একাকিত্বে না ভোগেন। একজন ভালো বন্ধু পান।

একা মায়ের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত

যেহেতু একা মায়ের সংগ্রাম কঠিন, তাই সমাজের মানুষের উচিত তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, সহযোগী মনোভাব পোষণ করা। তাদের দোষারাপ করে, কটাক্ষ করে তাদের চলার পথ অমসৃণ করে না তুলে বরং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আর সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দরকার মা-বাবার পরিবারের। বেশির ভাগ মেয়ে এমন পরিস্থিতিতে মা-বাবার পরিবার থেকে সহযোগিতা পান না। ফলে, তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

জেসমিন আক্তারের কথাই বলা যাক, তার বাবা তাকে বিয়ের দিন বলেছিলেন, ‘যদি কখনো শ্বশুরবাড়িতে এমন কিছু ঘটে যা তোমার সম্মানে আঘাত করে, তাহলে দ্বিতীয়বার না ভেবেই আমাদের কাছে চলে এসো। এ বাড়ির দরজা তোমার জন্য চিরকাল খোলাই থাকবে।’ প্রতিটি মা-বাবা যদি এমনভাবে পাশে থাকেন, তাহলে একা মায়েরা সমাজের বিপরীতে দাঁড়িয়েও সংগ্রাম করে যেতে পারবেন, টিকে থাকতে পারবেন।

জাহ্নবী

নারীর পছন্দের উপহার

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
নারীর পছন্দের উপহার
নারীর ব্যক্তিগত পছন্দের প্রতি মনোযোগ দিয়ে উপহার দিন। ছবি: সংগৃহীত

নারীরা উপহার পেতে সাধারণত নানা ধরনের জিনিস পছন্দ করেন, তবে তাদের পছন্দ ব্যক্তিগত আগ্রহ, জীবনধারা এবং রুচির ওপর নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ উপহার যা নারীরা বেশী পছন্দ করেন, তা হল:

জুয়েলারি: সোনা বা রুপার গহনা, অথবা নেকলেস, ব্রেসলেট, চুড়ি, আংটি। এসব অনেক নারীর জন্য বিশেষ অর্থ বহন করে।

ফ্যাশন পণ্য: সুন্দর পোশাক, পারফিউম, ব্যাগ বা পছন্দের ব্র্যান্ডের শু।

ঘর সাজানোর উপকরণ: আধুনিক বা স্টাইলিশ ঘর সাজানোর সামগ্রী যেমন ক্যান্ডেল হোল্ডার, ওয়াল ডেকোর বা কুশন।

ব্যক্তিগত যত্নের সামগ্রী: স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস, মেকআপ, স্পা সেট, এই ধরনের উপহার নারীরা অনেক পছন্দ করেন।

বই: যদি নারী পড়তে পছন্দ করেন, তবে তার প্রিয় কোনো বই উপহার দিতে পারেন—গল্প, জীবনী, কিংবা প্রেরণামূলক বই।

অভিজ্ঞতা উপহার: একটি স্পা ডে, ফ্যাশন শো, কনসার্টের টিকিট বা রেস্টুরেন্টে একটি বিশেষ ডিনার।

টেক গ্যাজেট: স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ইয়ারফোন বা ওয়াচ—এসব অনেক নারী পছন্দ করেন, বিশেষ করে যারা প্রযুক্তিতে আগ্রহী।

ক্রাফট এবং আর্ট: নিজের হাতে তৈরি কিছু যেমন পেইন্টিং বা হস্তশিল্প, যা নারীদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে।

ফুল: প্রাকৃতিক ফুল বা চকলেটের সাথে ফুল উপহার পেতে নারীরা পছন্দ করেন।

স্মৃতি সম্বলিত উপহার: একসাথে কাটানো সময় বা স্মৃতির চিত্র, ছবি অ্যালবাম বা ব্যক্তিগত কোনো কিছু যা তাদের মন স্পর্শ করতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল উপহারটি যদি নারীর ব্যক্তিগত পছন্দের প্রতি মনোযোগ দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা আরও বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে।

জাহ্নবী

গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে নারীর সতর্কতা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে নারীর সতর্কতা
গণপরিবহন ব্যবহারের সময় সাহসীভাবে সমস্যার মুখোমুখি হওয়া উচিত। ছবি: সংগৃহীত

গণপরিবহনে চলার সময় নারীদের কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যাতে তারা নিরাপদ এবং আরামদায়কভাবে যাতায়াত করতে পারে। যেমন-

নিরাপত্তা

•    গণপরিবহন ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে নারীদের অচেনা বা সন্দেহজনক যাত্রীদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
স্বচ্ছন্দে থাকা
•    বেশিরভাগ বাস বা ট্রেনে অনেক ভীড় থাকে। সেক্ষেত্রে যতটা সম্ভব নিজের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।
•    শরীরের কিছু অংশ যেন অপরিচিত বা অস্বস্তিকরভাবে স্পর্শ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

ফোন ব্যবহার

•    ফোনে খুব বেশি সময় ব্যস্ত না হয়ে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সতর্ক থাকতে হবে। ফোনে বেশি মনোযোগ দিলে নিজের পরিবেশ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
•    প্রয়োজনীয় জিনিস এমনভাবে রাখুন, যেন সেটি সহজেই চুরি হতে না পারে।

আলাপ-আলোচনা

•    অচেনা ব্যক্তির সাথে বেশি আলাপ আলোচনা না করাই ভালো, বিশেষ করে যদি তাদের অস্বস্তিকর মনে হয়।
•    যদি কেউ বিরক্তিকর বা উত্ত্যক্ত করে, তাহলে শান্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করুন, অথবা অন্য যাত্রীদের সহযোগিতা নিন।

ভিড়ের সময় সতর্কতা

•    ভিড়ের সময় সতর্ক থাকা জরুরি। এমন অবস্থায় শারীরিকভাবে খুব কাছাকাছি আসা সহজ, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে নিজের সীমানা বজায় রাখা উচিত।
•    গণপরিবহন ব্যবহারের সময় সাহসীভাবে সমস্যার মুখোমুখি হওয়া উচিত।

প্রবেশ ও বাহির হওয়া

•    গাড়িতে উঠার এবং নামার সময় সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে জনবহুল পরিবহনে।

বিশ্বাসযোগ্য পরিবহন মাধ্যম নির্বাচন

•    সর্বদা বিশ্বাসযোগ্য এবং নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করা উচিত। যদি অচেনা পরিবহন ব্যবস্থায় চলাচল করতে হয়, তবে তা সম্পর্কে আগেই জানুন এবং যাচাই করে নিন।

জাহ্নবী

আমিরাহ আল-তাউইল এক মানবিক রাজকন্যা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৮ পিএম
এক মানবিক রাজকন্যা

বিলাসবহুল জীবনের ভেতর জন্মেছেন সৌদি আরবের রাজকন্যা আমিরাহ আল-তাউইল। নানা কারণে খ্যাতি রয়েছে এই সুন্দরী রাজকন্যার। রাজপরিবারের মেয়েদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা তার জীবনবোধ কিংবা জীবনযাপন।

প্রিন্সেস আমিরার জন্ম ১৯৮৩ সালের ৬ নভেম্বর। তার স্বামী প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালাল। এই রাজকন্যা বিশ্বের অন্যতম ধনী নারীর একজন।
অল্প বয়সেই প্রবল মনের জোর, অদমনীয় সাহস আর তীব্র ইচ্ছাশক্তির সুবাদে দেশে-বিদেশে সাড়া জাগিয়েছেন এই সৌদি রাজকন্যা। গোটা বিশ্বে মানবাধিকারের স্বার্থে লড়াই করছেন তিনি। পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরেছেন বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। সমাধান করেছেন মানবাধিকার সংক্রান্ত বেশ কিছু সমস্যার।

দরিদ্র ও দুর্গত মানুষের জন্য লড়াই করেন আমিরা। বিশ্বের বেশ কয়েকটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। বন্যা কবলিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের সাহায্য, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলা বা সোমালিয়ায় দুর্গতদের সেবায় ত্রাণ উদ্যোগ- সর্বত্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত এই রাজকন্যা।

কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও তিনি সরব। পোশাক থেকে শুরু করে সবকিছুতে সমাজে নারীদের নিয়ে যে গোঁড়ামি, তার ব্যপারে তিনি উচ্চকন্ঠী সবসময়। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডিগ্রিও তিনি নিজের দখলে নিয়েছেন। আমিরা চান, তাঁর দেশের সব নারীই স্বাধীন ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক। 

জাহ্নবী

ইসলামি চেতনায় তেজোদীপ্ত নারীকণ্ঠ বেগম রোকেয়া

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৭ পিএম
ইসলামি চেতনায় তেজোদীপ্ত নারীকণ্ঠ বেগম রোকেয়া
বেগম রোকেয়া। আঁকা: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

ঊনবিংশ শতকে ইসলামের মূল শিক্ষার আলোকযাত্রা ভারতীয় উপমহাদেশে যিনি শুরু করেছিলেন, তিনি বেগম রোকেয়া। এই শতাব্দীতে ইরান ও মিসরের ইসলামি ভাবধারার নারীমুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে রোকেয়ার চিন্তাধারার একটি বড় মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

তৎকালীন ভাবধারায় রোকেয়া যে সাহসী ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তা সত্যিই অকল্পনীয়। স্রোতের বিপরীতে থেকে প্রথাবিরোধী কর্মকাণ্ডের মূলে কুঠারাঘাত করতে সক্ষম নারী তিনি। তার সবচেয়ে বড় অবদান মুসলিম নারীদের কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে আলোর পথে টেনে আনা। সমসাময়িক সমাজে ধর্মের নামে যে গোঁড়ামি বাসা বেঁধেছিল, সেই সঙ্গে কুসংস্কার গ্রাস করে রেখেছিল গোটা সমাজকে; মূলত বেগম রোকেয়ার সংগ্রাম ছিল তার বিরুদ্ধেই। যুগে যুগে বহু সাহসী নারী ইসলামি জ্ঞান প্রচার ও প্রসারে অবদান রেখে গেছেন, তার মধ্যে বেগম রোকেয়া অন্যতম। ইসলামি দৃষ্টিতে বিচার করলে আমরা তাকে একজন ইসলামি চিন্তাবিদ এবং ধার্মিক নারী বলতে পারি। বেগম রোকেয়ার অনেক সৃষ্টির মূলে নিহিত রয়েছে আল্লাহ ও নবিপ্রেম। তিনি চরম বিপদে মহান আল্লাহকে স্মরণ করেছেন। নারী-পুরুষকে ইসলামের মূল ধারার দিকে ধাবিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ধর্মকে ‘Code of life’ বা জীবনবিধান করে হৃদয়ে ধারণ এবং মাথার তাজ করে নিয়েছিলেন। ‘অবরোধবাসিনীতে’ বিভিন্ন জায়গায় তাই তো তিনি  মহান রাব্বুল আলামিনকে অত্যন্ত সম্মানজনক ভাষায় স্মরণ করেছেন। দুর্দশাগ্রস্ত, নিপীড়িত, অবহেলিত নারী সমাজের মুক্তির দূত হিসেবে তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য কামনা করেছেন। ইনশাআল্লাহ বলা, কারও মৃত্যুতে দোয়া পড়া, সুবহানাল্লাহ বলা এগুলো তার বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি অসাধারণ প্রেম থেকে তিনি বলেন- 

     ‘তামাম জাহান যদি হয় একদিকে, 
      কী করিতে পারে তার আল্লাহ যদি থাকে।’

ড. মাহবুবা রহমান, ইসলামে নারী ও বেগম রোকেয়া গ্রন্থে (ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ১৫) লিখেছেন, আমাদের সমাজে বেগম রোকেয়াকে নিয়ে দুই ধরনের ভুল বোঝাবুঝি বিদ্যমান। প্রথমত, যারা ইসলাম ও ইসলামি পুনর্জাগরণকে সহ্য করতে পারেন না, তারা রোকেয়াকে ইসলাম ও ইসলামি হিজাবের বিরুদ্ধে একটি প্রতীক হিসেবে দাঁড় করাতে চান। তারা ভুলে যান যে, বেগম রোকেয়ার আন্দোলন ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, বরং তিনি সারা জীবন ইসলামের পক্ষে কাজ করে গেছেন এবং ইসলামকে ঘিরে যেসব কুসংস্কার ও বাড়াবাড়ি বিদ্যমান ছিল, সেগুলো দূর করার চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয় ভুল বোঝাবুঝিটা হলো, বেগম রোকেয়াকে ঘিরে ব্যাপক অপপ্রচার। তাকে অনেক সময় নারীবাদী রমণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তার লেখাকে ইসলামবিদ্বেষী বলে প্রচার করা হয়, যা একেবারেই অসত্য। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলে বেগম রোকেয়ার ছবিতে কালি দিয়ে মুখ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারেও কেউ কেউ কথা বলছেন; যা আমাদের দৈন্যের পরিচয় বহন করে। আমরা আজও তাকে কেন উপলব্ধি করতে পারিনি! এটা আফসোস ও লজ্জার বিষয় আমাদের জন্য, নারী সমাজের জন্য।

বেগম রোকেয়া ইসলামের ইতিহাসে একজন সম্মানিত নারী। তিনি সারা জীবন শালীনতা বজায় রেখে চলাফেরা করেছেন। তার বলিষ্ঠ কণ্ঠ ছিল শালীনতার পক্ষে। বোরকাকে অনেকে বিরক্তিকর ভারী পোশাক হিসেবে অভিযোগ উত্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ‘অনেকে বোরকাকে ভারী বলিয়া আপত্তি করেন। কিন্তু তুলনায় দেখা গেছে ইংরেজ মহিলাদের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড হ্যাট অপেক্ষা আমাদের বোরকা অধিক ভারী নহে’ (বোরকা, মতিচুর প্রথম খণ্ড)।

বেগম শামসুননাহার মাহমুদ বেগম রোকেয়ার অত্যন্ত প্রিয় একজন ছাত্রী ছিলেন। তিনি তার ‘রোকেয়া জীবনীগ্রন্থে’ লিখেছেন, ‘বেগম রোকেয়া বলিতেন, নারিকেলের চমৎকার স্বাদ তাহার দুর্ভেদ্য আবরণের ভিতরে আবদ্ধ। অন্ধ মানুষ সেই কঠিন আবরণ ভেদ করিবার চেষ্টা না করিয়া সারা জীবন শুধু ত্বকের উপরিভাগটাই লেহন করিয়া মরিল।’

ইসলামি চেতনায় তেজোদীপ্ত নারী কণ্ঠ বেগম রোকেয়া। নৈতিক ও সামাজিক অধঃপতন থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য ধর্মশিক্ষা অপরিহার্য বলে মনে করতেন বেগম রোকেয়া। বঙ্গীয় নারী শিক্ষা সমিতির সভানেত্রীর অভিভাষণে তিনি বলেন, ‘মুসলমান বালিকাদের প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে কোরান শিক্ষাদান করা সর্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজন।’ ইসলামে নারীর উত্তরাধিকার নিয়ে যা বলা আছে সেটি বাস্তবায়নে তিনি সোচ্চার ছিলেন। নামাজ, রোজা, জাকাতের ব্যাপারেও তিনি কোরআনের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। যা তার অনেক লেখায় উঠে এসেছে। মেয়েদের কোরআন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি ‘ধ্বংসের পথে বঙ্গীয় মুসলিম’ প্রবন্ধে মন্তব্য করেন, ‘ছেলেবেলায় মা’র মুখে শুনতম কোরান শরীফ ঢাল হয়ে আমাদের রক্ষা করবে। সে কথা অতি সত্য, অবশ্য তার মানে এ নয় যে, খুব বড় আকারের সুন্দর জেলদ বাঁধা কোরানখানা আমার পিঠে ঢালের মতো করে বেঁধে নিতে হবে। বরং আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে এই বুঝি যে, কোরান শরীফের সর্বজনীন শিক্ষা আমাদের নানা প্রকার কুসংস্কারের বিপদ থেকে রক্ষা করবে। কোরান শরীফের বিধান অনুযায়ী ধর্ম-কর্ম আমাদের নৈতিক ও সামাজিক অধঃপতন থেকে রক্ষা করবে।’

বর্তমান সমাজের অবস্থা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, নৈতিকতার অভাবে সমাজে অস্থিতিশীলতা, বিশৃঙ্খলা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা বেড়েই চলেছে। সমাজও অধঃপতনের দিকে ছুটছে। দেশের ক্রান্তিকালে জাতিকে নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান হওয়াটা জরুরি। সেই ১০০ বছর আগের তৎকালীন সমাজ নিয়ে বেগম রোকেয়ার দর্শন, যা উপলব্ধি করলে আজও বিস্মিত হতে হয়। তিনি কতটা এগিয়েছিলেন তা আধুনিক সময়ে এসেও অনুধাবন করতে হয়। পশ্চাৎপদ সমাজে স্রোতের বিপরীতে চলার সাহস ও গরিমা দেখানোর স্পর্ধা বেগম রোকেয়া দেখাতে পেরেছিলেন। বেগম রোকেয়া দুর্নিবার হয়ে জেগে থাকুক প্রত্যেক নারীর হৃদয়ে।

লেখক: সহকারী সম্পাদক, খবরের কাগজ
বেগম রোকেয়া পদক ২০২১ প্রাপ্ত এবং স্থানীয় সরকার গবেষক

জাহ্নবী

 

খালেদার ‘ফুড ফ্লেভার্স’

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
খালেদার ‘ফুড ফ্লেভার্স’
খালেদা খানম তার তৈরি কেক হাতে। ছবি: সংগৃহীত

যেকোনো মানুষের সফল হওয়ার পেছনে প্রথম শর্ত হলো পরিশ্রমী হতে হবে। একজন পরিশ্রমী মানুষের ইচ্ছাশক্তি এবং মনোবল তাকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজকের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন বহুদূর। তেমনি একজন এগিয়ে যাওয়া নারীর গল্প বলব আজ; যিনি গৃহিণী পরিচয়ের পাশাপাশি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছেন।

বলছি ‘ফুড ফ্লেভার্স’-এর মালিক খালেদা খানমের কথা। খালেদা খানম মূলত তার পেজ ‘ফুড ফ্লেভার্স’-এ হোমমেড কেক নিয়ে কাজ করেন। তিনি জানান, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে কেক বানানোর কাজ শুরু করেন। প্রথমে শখ থেকে এই কাজ শুরু করেন তিনি। কাজের শুরুতে কোনো পেশাদার প্রশিক্ষণ নেননি, তবে পরে অনলাইন এ কিছু কোর্স করেছিলেন ও ইউটিউব থেকে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে নিজেই শিখেছেন।

খালেদা খানম সামাজিকবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি করেছেন। সংসার এবং সন্তান সামলাতে গিয়ে পড়াশোনা আর চালিয়ে যেতে পারেননি। এমনকি কোনো চাকরিও করতে পারেননি। কিছু একটা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার মনে। শখ থেকে শুরু হওয়া কেক বানানোর যাত্রা তাকে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে সহযোগিতা করেছে। শুরুর দিকে বাসা থেকে এই কেক বানানোকে পেশা হিসেবে নেওয়ার বিষয়ে তেমন সাপোর্ট না করলেও ধীরে ধীরে সবাই খালেদাকে সমর্থন করেছেন। বর্তমানে তার কাজের প্রতি পরিবার পুরোপুরি সহানুভূতিশীল। স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সুখী পরিবার খালেদার আর পরিবারের সবাই তাকে কেক বানানোর কাজে সহযোগিতা করেন এবং উৎসাহ দেন।

যদিও হোমমেড কেকের কদর এখন বেশ বেড়েছে কিন্তু এই কেক ডেলিভারির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অক্ষত অবস্থায় সময়মতো পৌঁছে দেওয়া। কেক খুব সেনসিটিভ জিনিস। তাই অক্ষত অবস্থায় পৌঁছানো বেশ কঠিন বিষয়। এ ছাড়া বৃষ্টি বা যানজটের কারণে অনেক সময় ডেলিভারি দিতে দেরি হয়। এ ব্যবসায় আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কেক ডিজাইন ও ভিন্ন স্বাদের কেক তৈরি করতে হয়, যা সময় ও সৃজনশীলতা দাবি করে। এ ছাড়া কেকের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং ক্রেতার প্রত্যাশা মেটানোর চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হয়। তবু প্রতিনিয়ত এই হোমমেড কেকের ব্যবসার প্রতি নারীদের আগ্রহ বাড়ছে।

খালেদা খানমের ভাষ্যমতে, ‘নতুন উদ্যোক্তাদের কিছু বিষয় খেয়াল রেখেই এ পথে পা বাড়াতে হবে। যেমন- আপনাদের ব্যবসা শুরু করার আগে কাজের প্রতি ভালোবাসা ও সংকল্প থাকতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য এবং দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিযোগিতা এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও, মনোবল হারানো যাবে না। আর যে বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, ক্রেতার চাহিদা বুঝে কাজ করতে হবে এবং কেকের মান বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। সবশেষ, লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করতে হবে। ব্যবসার শুরুতে হোঁচট খেলেও হতাশ হওয়া যাবে না বরং হতাশা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে আবার শুরু করতে হবে এবং সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। নিজের সন্তানের মতো করে এই কাজের প্রতিও যত্নশীল হতে হবে। এত প্রতিযোগিতার ভিড়েও মান বজায় রেখে একজন নারী উদ্যোক্তা হোমমেড কেক বানিয়ে মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।’

জাহ্নবী