ঢাকা ৯ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

বিবিসির বর্ষসেরা ১০০ নারীর তালিকা

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
বিবিসির বর্ষসেরা ১০০ নারীর তালিকা
বিবিসির বর্ষসেরা ১০০ নারী। ছবি: বিবিসি

বিবিসির বর্ষসেরা ১০০ নারীর তালিকায় ২০২৪ সালে স্থান পেয়েছেন যারা-

১। শিরীন আবেদ, ফিলিস্তিন (শিশু বিশেষজ্ঞ)
২। হেবেকা আন্দ্রাজি, ব্রাজিল (জিমন্যাস্ট)
৩। সুনিতা উইলিয়ামস, যুক্তরাষ্ট্র (মহাকাশচারী)
৪। জর্জিনা লং, অস্ট্রেলিয়া (মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ)
৫। দিলোরম ইউলদোশেভা, উজবেকিস্তান (বুননশিল্পী এবং ব্যবসায়ী)
৬। শ্যারন ক্লাইনবাম, যুক্তরাষ্ট্র (ইহুদি পণ্ডিত)
৭। নোয়েলা উইয়ালা এনওয়াদেই, ঘানা (আফ্রো-পপ সঙ্গীতশিল্পী)
৮। রিক্তা আক্তার বানু, বাংলাদেশ (নার্স এবং স্কুল প্রতিষ্ঠাতা)
৯। হিন্দা আবদি মোহাম্মদ, সোমালিয়া (সাংবাদিক)
১০। পূজা শর্মা, ভারত (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনকারী)
১১। ক্রিস্টিনা আসি, লেবানন (ফটোসাংবাদিক)
১২। সিলভানা সান্তোস, ব্রাজিল (জীববিজ্ঞানী)
১৩। ঝানিলসিনজাত তুরগানবায়েভা, কিরগিজস্তান (জাদুঘর পরিচালক)
১৪। লুরদেস বারেতো, ব্রাজিল (যৌনকর্মীদের অধিকার বিষয়ক ক্যাম্পেইনার)
১৫। গার্লিন এম. জোসেফ, হাইতি (অভিবাসন অধিকার কর্মী)
১৬। নাওমি ওয়াতানাবে, জাপান (কমেডিয়ান)
১৭। ইদানিয়া দেল রিও, কিউবা (ফ্যাশন উদ্যোক্তা)
১৮। প্লেসটিয়া আলাকাদ, ফিলিস্তিন (সাংবাদিক ও কবি)
১৯। গ্যাব্রিয়েলা সালাস কাব্রেরা, মেক্সিকো (প্রোগ্রামার এবং ডেটা সায়েন্টিস্ট)
২০। রে, যুক্তরাজ্য (সংগীত শিল্পী)
২১। কিম ইয়েজি, দক্ষিণ কোরিয়া (অলিম্পিক শ্যুটার)
২২। মারিয়া তেরেসা হর্টা, পর্তুগাল (কবি)
২৩। হানা রাউহিতি মাইপি ক্লার্ক, নিউজিল্যান্ড (রাজনীতিবিদ)
২৪। ড্যানিয়েল ক্যান্টর, ইসরায়েল/ফিলিস্তিন (সাংস্কৃতিক কর্মী)
২৫। ইলাহা সরুর, আফগানিস্তান (গায়িকা এবং সুরকার)
২৬। নাদিয়া মুরাদ, ইরাক (নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী)
২৭। সারা বারকাই, যুক্তরাজ্য/ইরিত্রিয়া (ডিআইওয়াই বিজ্ঞান সামগ্রী নির্মাতা)
২৮। ক্যাথরিন মার্টিনেজ, ভেনেজুয়েলা (মানবাধিকার আইনজীবী)
২৯। সিলসিলা আচার্য, নেপাল (টেকসই পরিবেশ উদ্যোক্তা)
৩০। জাকিয়া খুদাদাদি, আফগানিস্তান (তায়কোয়ান্দো প্যারালিম্পিয়ান)
৩১। ঝিয়াং জেং, চিলি (টেবিল টেনিস খেলোয়াড়)
৩২। হামিদা আমান, আফগানিস্তান (শিক্ষা ও যোগাযোগ মাধ্যম উদ্যোক্তা)
৩৩। শুয়ান ফুং, ভিয়েতনাম (চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক, গ্যালারি মালিক)
৩৪। স্বেতলানা আনোখিনা, রাশিয়া (মানবাধিকার কর্মী)
৩৫। ইয়াসমিন মজাল্লি, ফিলিস্তিন (ডিজাইনার)
৩৬। জিসেল পেলিকট, ফ্রান্স (ধর্ষণের পরিস্থিতি পার করে আসা ক্যাম্পেইনার)
৩৭। ট্রেসি এমেন, যুক্তরাজ্য (শিল্পী)
৩৮। শ্যারন স্টোন, যুক্তরাষ্ট্র (অভিনেত্রী)
৩৯। ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজা, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র (লেখক)
৪০। সুবিন পার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া (প্রতিষ্ঠাতা, স্টেয়ার ক্রাশার ক্লাব)
৪১। কাটালিন কারিকো, হাঙ্গেরি (বায়োকেমিস্ট এবং নোবেল পুরস্কারজয়ী)
৪২। বিনেশ ফোগাট, ভারত (কুস্তিগীর)
৪৩। অ্যানি সিনান্দুকু মওয়াঙ্গে, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (খনি শ্রমিক)
৪৪। রক্সি মারে, যুক্তরাজ্য (প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী)
৪৫। শাহরনুশ পারসিপুর, ইরান/যুক্তরাষ্ট্র (লেখক ও অনুবাদক)
৪৬। লিন্ডা ড্রোফন গুনার্সডটির, আইসল্যান্ড (নারী আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক)
৪৭। সু মিন, চীন (রোড ট্রিপার ও ইনফ্লুয়েন্সার)
৪৮। লিলিয়া চানিশেভা (রাশিয়া রাজনৈতিক কর্মী এবং সাবেক বন্দি)
৪৯। ব্রিজিট ব্যাপটিস্টে, কলম্বিয়া (ইকোলজিস্ট)
৫০। ওলগা রুদনিভা, ইউক্রেন (প্রতিষ্ঠাতা, সুপারহিউম্যানস সেন্টার)
৫১। রোজমারি উইডলার-ওয়াল্টি, সুইজারল্যান্ড (শিক্ষক এবং জলবায়ু কর্মী)
৫২। গ্যাবি মোরেনো, গুয়াতেমালা (মিউজিশিয়ান)
৫৩। ম্যাডিসন টেভলিন, কানাডা (টক-শো হোস্ট এবং মডেল)
৫৪। হারবিয়া আল হিমিয়ারি, ইয়েমেন (ঐতিহ্য সংরক্ষণ প্রকৌশলী)
৫৫। মাহেদার হাইলেসেলাসি, ইথিওপিয়া (ফটোগ্রাফার)
৫৬। মার্গারিটা ব্যারিয়েন্টোস, আর্জেন্টিনা (সুপ কিচেন প্রতিষ্ঠাতা)
৫৭। ফেং ইউয়ান, চীন (নারীর অধিকার আন্দোলনকর্মী)
৫৮। ওলগা ওলেফিরেঙ্কো, ইউক্রেন (কৃষক)
৫৯। সাফা আলী, সুদান (প্রসূতিবিদ ও গাইনোকলজি বিশেষজ্ঞ)
৬০। নাওমি চান্ডা, জাম্বিয়া (কৃষক এবং প্রশিক্ষক)
৬১। ক্লোয়ি ঝাও, যুক্তরাজ্য (চলচ্চিত্র পরিচালক)
৬২। আনাত হফম্যান, ইসরায়েল (ধর্মীয় আন্দোলনকারী)
৬৩। অ্যালিসন ফেলিক্স, যুক্তরাষ্ট্র (অ্যাথলেট)
৬৪। লেসলি লোকো, ঘানা/যুক্তরাজ্য (স্থপতি)
৬৫। ট্রেসি অটো, যুক্তরাষ্ট্র (তীরন্দাজ)
৬৬। ফিরদা মারসিয়া কুরনিয়া, ইন্দোনেশিয়া (হেভি মেটাল ব্যান্ড সংগীতশিল্পী)
৬৭। হেলেন মলিনিউ, যুক্তরাজ্য (সহ-প্রতিষ্ঠাতা, মনুমেন্টাল ওয়েলশ উইমেন)
৬৮। কেমি ব্যাডেনক, যুক্তরাজ্য (কনজারভেটিভ পার্টির নেতা)
৬৯। ওলিভিয়া ম্যাক'ভে, যুক্তরাজ্য (মেকআপ আর্টিস্ট)
৭০। হাদিকা কিয়ানি, পাকিস্তান (সংগীতশিল্পী ও গীতিকার)
৭১। আডেনিকে টিটিলোপে ওলাদোসু, নাইজেরিয়া (জলবায়ু আইনজীবী)
৭২। ইউজেনিয়া বোনেত্তি, ইতালি (নান)
৭৩। জোয়ান চেলিমো মেলি, কেনিয়া/রোমানিয়া (দূরপাল্লার দৌড়বিদ)
৭৪। হেন্ড সাবরি, তিউনিসিয়া (অভিনেত্রী)
৭৫। সাশা লুকিওনি, কানাডা (কম্পিউটার সাইন্টিস্ট)
৭৬। আমান্ডা জুরাওস্কি, যুক্তরাষ্ট্র (প্রজনন অধিকার আইনজীবী)
৭৭। জোয়ানা বাহামন, কলোম্বিয়া (সমাজকর্মী)
৭৮। শিন ডেইউ, মায়ানমার (চলচ্চিত্র নির্মাতা)
৭৯। নূর ইমাম, মিশর (ফেম-টেক উদ্যোক্তা)
৮০। হালা আলকারিব, সুদান (যুদ্ধে যৌন সহিংসতা বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট)
৮১। হুয়াং জি, তাইওয়ান (রাজনীতিবিদ)
৮২। এনাস আল-গুল, ফিলিস্তিন (কৃষি প্রকৌশলী)
৮৩। সুসান কলিন্স, যুক্তরাষ্ট্র (সিনেটর)
৮৪। সামিয়া, সিরিয়া (মনোবিজ্ঞানী)
৮৫। রোসা ভাসকেজ এসপিনোজা, পেরু (রাসায়নিক জীববিজ্ঞানী)
৮৬। ফাওজিয়া আল-ওতাইবি, সৌদি আরব/যুক্তরাজ্য (নারীর অধিকার কর্মী)
৮৭। কাশা জ্যাকুলিন নাবাগেসেরা, উগান্ডা (বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির প্রচারক)
৮৮। ইউমি সুজুকি, জাপান (জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের মামলায় বাদী)
৮৯। স্নেহা রেভানুর, যুক্তরাষ্ট্র (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ)
৯০। নেজলা ইশিক, তুরস্ক (গ্রামপ্রধান এবং বন রক্ষার কর্মী)
৯১। ঝিনা মোদারেস গোরজি, ইরান (নারী অধিকার কর্মী)
৯২। এইনাভ জাংগাউকের, ইসরায়েল (বন্দি মুক্তি ক্যাম্পেইনার)
৯৩। রুথ লোপেজ, আমেরিকা (আইনজীবী)
৯৪। লাতিশা ম্যাকক্রুডেন, আয়ারল্যান্ড (আইরিশ ভ্রমণকারী আন্দোলনের কর্মী)
৯৫। অ্যাঞ্জেলা রেনার, যুক্তরাজ্য (উপ-প্রধানমন্ত্রী)
৯৬। মাহরাং বালোচ, পাকিস্তান (চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক কর্মী)
৯৭। অ্যান চুমাপর্ন (ওয়াদ্দাও), থাইল্যান্ড (এলজিবিটিকিউ অধিকার কর্মী)
৯৮। কাউনা মালগউই, নাইজেরিয়া (কনটেন্ট মডারেটরদের ইউনিয়নের নেতা)
৯৯। অরুণা রায়, ভারত (সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট)
১০০। ইনা মোজা, মালি (শিল্পী এবং জলবায়ু কর্মী)

জাহ্নবী

মানুষের জন্য আইরিন খান

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম
আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
মানুষের জন্য আইরিন খান
আইরিন খান। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অরাজনৈতিক, ধর্ম নিরপেক্ষ ও সফল ব্যক্তিত্বের মানবাধিকার কর্মীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই সংস্থাটি মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে রয়েছে শীর্ষ তালিকায়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব পদে যারা বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে একজন বাংলাদেশির নাম। বাংলাদেশি আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী আইরিন খান মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই মানবাধিকার কর্মীকে নিয়ে লিখেছেন তাসনিম তাজিন 

শুরুর জীবন

আইরিন খানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়, ১৯৫৬ সালে। বাবা ছিলেন চিকিৎসক ও মা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই আইরিন ও তার দুই বোনকে বই পড়ার অভ্যাস করিয়েছিলেন মা। বোনেরা মিলে নিয়মিত ব্রিটিশ কাউন্সিলে যেতেন বই সংগ্রহের জন্য। তিনি মনে করেন, বই-ই প্রথম খুলে দিয়েছিল মন ও চিন্তার জগৎ। মায়ের হাত ধরে বই পড়া শুরু না হলে হয়তো তিনি আজকের আইরিন খান হয়ে উঠতে পারতেন না। আইরিনের শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল ঢাকার গ্রিন হেরাল্ড স্কুলে। সেখান থেকে ও লেভেল পাস করেন তিনি। পরে আয়ারল্যান্ডের সেন্ট লুই কলেজ থেকে ও লেভেল সম্পন্ন করেন। সেখান থেকে চলে যান যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার কলেজে, আইন বিষয়ে স্নাতক করতে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলেও ওকালতি পেশার প্রতি তেমন আগ্রহ পাচ্ছিলেন না। শিক্ষাজীবনে পছন্দের বিষয় ছিল ‘আইন ও মানবাধিকার।’ মানুষের অধিকার রক্ষায় সরাসরি সম্পৃক্ত হতে চেয়েছিলেন এই আইনজীবী। এ সময় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার বিষয়ে ফেলোশিপের সুযোগ পান। সেই থেকে শুরু হয় তার মানবাধিকার কর্মী হিসেবে যাত্রা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও কর্মজীবন

১৯৭৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস-এর অধীনে মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আইরিন খান তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮০ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী প্রকল্প বিভাগে যোগ দেন। জাতিসংঘে প্রথমে লিগ্যাল অফিসার ও পরে উপপরিচালক হিসেবে ২০ বছর চাকরি করেন। আইরিন যখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার মহাসচিব হিসেবে যোগ দেন তখন ২০০১ সাল। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হয়েছিল ৯/১১ হামলা। এ ঘটনায় মানবাধিকার ও বিশ্ব পরিস্থিতি পড়ে এক চ্যালেঞ্জের মুখে। তার অধীনে অ্যামনেস্টি রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার, সন্ত্রাস ও সশস্ত্র হামলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ করে।

অ্যামনেস্টির প্রথম নারী মহাসচিবও ছিলেন তিনি। সংস্থা থেকে নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে বৈশ্বিক প্রচারণা চালিয়েছেন আইরিন। ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল অর্গানাইজেশনেও কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন সময় যুক্ত হয়েছেন শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে। অবসর সময়ে আইন, মানবাধিকার নিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে শিক্ষকতাই করতে চান এই মানবাধিকার কর্মী। মানবাধিকার রক্ষায় নারীর প্রতি ন্যায়বিচার, আইনের সুশাসন, তথ্য অধিকার, বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে তার কাজ উল্লেখযোগ্য। 

অর্জন

বিশ্বব্যাপী মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ আইরিন খান ২০০২ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ অর্জন করেন। একই বছর নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতায় কাজ করায় পিলকিংটন ওম্যান অব দ্য ইয়ার পুরস্কার পান। ২০০৬ সালে তিনি সিডনি শান্তি পুরস্কার পান। ২০০৭ সালে গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়। সব অর্জন ছাড়িয়ে আইরিন স্বপ্ন দেখেন একটি বৈষম্যহীন পৃথিবীর।

হাসান

হোম মেড রান্নার জাদুকর

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:০৫ পিএম
আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩১ পিএম
হোম মেড রান্নার জাদুকর
রাফাত আরা ডালিয়া

ঢাকা শহরে অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ, যার মধ্যে মজাদার খাবার তৈরি করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে একটি নাম ‘Taste T Meals by Dalia’। এর পেছনে রয়েছেন নারী উদ্যোক্তা রাফাত আরা ডালিয়া।

রান্নার প্রতি ডালিয়ার অনুরাগ ছোটবেলা থেকে। দক্ষ রাঁধুনীদের কাছ থেকে তার রান্নায় হাতেখড়ি। বিয়ে হয়েছে কুমিল্লার ৪০০ বছরের পুরোনো জমিদার বাড়িতে। শাশুড়ির কাছ থেকে শিখেছেন জমিদারি এমন সব রান্না, যা এখন বিলুপ্তপ্রায়। এমন অনেক আইটেম আছে, যা এখন আর কেউ রান্না করতে পারেন না, সেসব খাবারও তিনি দিব্যি রান্না করেন। বাবা একজন শিপিং কোম্পানির মালিক হওয়ার সুবাদে বিদেশিদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল নিয়মিত। বাড়িতে বিভিন্ন দেশের এক্সপার্ট শেফদের আসা-যাওয়া ছিল। তাদের কাছ থেকে ডালিয়ার মা রান্না শেখেন আর মায়ের কাছ থেকে কন্টিনেন্টাল, ওরিয়েন্টাল, চাইনিজ ফুড রান্না শিখে নেন ডালিয়া। পরিবারের উৎসাহ তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে হোম মেড ফুডের উদ্যোক্তা হতে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে এক বছরের ডিপ্লোমা সম্পন্ন করা ডালিয়া কঠোর পরিশ্রম করতে ভালোবাসেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারি তাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। সবাই যখন ঘরে বসে সুদিনের জন্য অপেক্ষা করছে, ডালিয়া তখন হোম মেড ফুড তৈরি এবং তা বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন। সেই থেকে শুরু। হোম মেড খাবারের জগতে ডালিয়া পরিচিত তার ব্যতিক্রমী স্বাদের জন্য। যেকোনো সাধারণ খাবারেও তিনি অসাধারণ স্বাদ এনে দিতে পারেন। 

উদাহরণ দিতে গিয়ে জানালেন, তার তৈরি কালোজাম মিষ্টির কথা। বাজারের যেকোনো দোকানে কালোজাম কেজিপ্রতি ৩০০-৫০০ টাকা। ডালিয়ার তৈরি কালোজাম ১৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় শুধু তার অসাধারণ স্বাদের জন্য। তার এই স্বাদের জাদুতে মুগ্ধ সবাই। বন্ধুমহলে ডিজার্ট কুইনখ্যাত ডালিয়া যেকোনো ডিজার্ট তৈরি করেন লোভনীয় স্বাদে। এ ছাড়া কন্টিনেন্টাল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্যুজিনে পারদর্শী এই উদ্যোক্তা। স্বপ্ন দেখেন নিজের একটি আউটলেট দেওয়ার। তিনি চান হোম মেড ফুডে পারদর্শী হয়েও যারা এখনো নিজেদের পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন, তারা বাইরে আসুক, মানুষকে নিজেদের হাতের রান্না চেখে দেখার সুযোগ তৈরি করে দিক।

তার ভাষায়, ‘যারা এই সেক্টরে আছেন তারা সাহস করে বেরিয়ে এলে আমরা ভালো খাবার খেতে পারব।’ পেশাটি তার কাছে সম্মান ও মর্যাদার। সবাই এই পেশাকে মর্যাদার চোখে দেখবেন, প্রত্যাশা তার। 

তার এই ব্যতিক্রমী কাজের জন্য হোম মেড ফুডে বিজনেস ইন্ট্রাপ্রেনার অ্যাওয়ার্ডসহ পেয়েছেন বেশ কিছু স্বীকৃতি।

একটি সাধারণ গৃহভিত্তিক উদ্যোগ হিসেবে শুরু হয়ে ডালিয়ার হোম মেড ফুড দ্রুত একটি স্বীকৃত ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এই পরিবর্তনে সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ডালিয়া বলেন, ‘আমি খুব বেশি আশা না করেই ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকে আমার খাবারের ছবি পোস্ট করা শুরু করেছিলাম। দর্শক সাড়া দিয়েছিল অসাধারণভাবে। মিলতে থাকে প্রচুর অর্ডার এবং শিগগিরই তরুণ পেশাদার থেকে শুরু করে ব্যস্ত বাবা-মা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করতে থাকি।’

ডালিয়ার সত্যতার সঙ্গে সৃজনশীলতা মিশ্রিত করার ক্ষমতা ‘Taste T Meals by Dalia’-কে আলাদা করে। সিগনেচার বিরিয়ানি থেকে শুরু করে বিদেশি থাই কারি এবং মজাদার ডেজার্ট, প্রতিটি খাবারই তার বিশদ মনোযোগ এবং গুণমানের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। অনন্য প্যাকেজিং ব্যক্তিগত নোটের সঙ্গে মিলিত হয়ে, খাবারকে শুধু খাবার নয় বরং একটি মজাদার অভিজ্ঞতায় পরিণত করেছেন।

সাফল্যের হাত ধরতে হলে আগে চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গন করতে হয়। তার মতে, রান্না করাকে কেউ মর্যাদার চোখে দেখতে চায় না- এটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কীভাবে কঠোর পরিশ্রম, আবেগ, অধ্যবসায় এবং দূরদৃষ্টি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারে, ডালিয়ার যাত্রা তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

হাসান

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আইকন লুসি স্টোন

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আইকন লুসি স্টোন
লুসি স্টোন। ছবি: সংগৃহীত

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়ন ও সমাজে সব স্তরে সাম্য প্রতিস্থাপন, যা সমাজের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। তেমনই এক স্মরণীয় ইতিহাসের সাক্ষী, লুসি স্টোনের কর্মযজ্ঞ। 

যার অবদানে সমাজে নারীর অবকাঠামো উন্নয়ন বাস্তবায়ন হয়। লুসি স্টোন, যিনি সারা বিশ্বে পরিচিত একজন প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী, বক্তা, নারী অধিকারকর্মী ও বিলোপসাধনকারী হিসেবে। লুসি তার সংগ্রামী জীবনে নারী ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার প্রসারে প্রেরণামূলক অবদান রাখেন।

১৮১৮ সালের ১৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ম‍্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্ট ব্রুকফিল্ডে জন্ম হয় লুসি স্টোনের। কৃষক পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি, যেখানে মেয়েদের শিক্ষালাভের বিষয়টি সীমিত ছিল। তবে পরিবারের আকাঙ্ক্ষায় শিক্ষা লাভে আগ্রহী হয়ে ওঠেন স্টোন।

লুসি স্টোন স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ১৮৪৭ সালে, ওল্ড লেইডি সেন্টার কলেজ থেকে। এ সময় তিনি নারীদের প্রতি বৈষম্য, ভোটাধিকারের অভাব ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন হন। বেছে নেন সংগ্রামী পথ! নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন লড়াকু নারী সৈনিক হিসেবে।

নারী আন্দোলন সংগঠনের অন‍্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী ছিলেন লুসি স্টোন। তিনি তার লেখায় নারী স্বাধীনতার পক্ষে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তাৎপর্যপূর্ণ আওয়াজ তোলেন। সালটা তখন ১৮৪৭, নারী শিক্ষার প্রসার ও নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিমূলক বক্তব্য দেন লুসি স্টোন। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়নের দৃঢ় প্রচেষ্টা ব‍্যাপক বিস্তৃতি পায় স্টোনের হাত ধরেই। সমাজ থেকে দাসপ্রথা উচ্ছেদ করার মধ্য দিয়ে একজন বিলোপসাধনকারী ব‍্যক্তিত্ব হিসেবেও বেশ সমাদৃত অবস্থানে রয়েছেন স্টোন। সমাজ থেকে নারীবৈষম্য দূরীকরণ, সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর উন্নতি সাধন ছিল লুসি স্টোনের দৃঢ় চেতনা।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, নারীদের ভোটাধিকার অর্জনের জন্য ১৮৬৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘American woman suffrage Association’. ফলে তিনি নারী ভোটারদের আন্দোলনের প্রভাবশালী নেত্রী বনে যান। লুসি স্টোনই প্রথম গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন নারীর ভোটাধিকার নিয়ে। নারীদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিরাপদ ভোটাধিকার নিশ্চিত ছিল তার উল্লেখযোগ্য অবদান।

দীর্ঘ সংগ্রাম ও লড়াই শেষে, ১৮৯৩ সালে মারা যান লুসি স্টোন। তার সংগ্রামী প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। যে কারণে ইতিহাসের অধ‍্যায়ে তিনি আজও স্মরণীয়। 

হাসান

সোনিয়া রিফাতের ‘গো গার্লস’

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম
আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩২ পিএম
সোনিয়া রিফাতের ‘গো গার্লস’
সোনিয়া রিফাত

উপস্থাপনা জগতে পরিচিত নাম সোনিয়া রিফাত। অনেক বছর ধরেই কাজ করছেন মিডিয়ায়। কিন্তু এসব কর্মব্যস্ততার বাইরে এবার তিনি ব্যতিক্রমধর্মী একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। ভ্রমণপ্রেমী সোনিয়া নারী পর্যটকদের জন্য শুরু করেছেন একটি ভ্রমণ প্ল্যাটফর্ম ‘গো গার্লস’। অক্টোবর থেকে যাত্রা শুরু করা এই প্ল্যাটফর্মটি ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশে বেশ কিছু ভ্রমণ সম্পন্ন করেছে এবং পরিচিতিও পেয়েছেন ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে। সোনিয়া রিফাতের সঙ্গে কথা বলে গো গার্লস নিয়ে লিখেছেন মোহনা জাহ্নবী

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর ভ্রমণপিপাসু একজন মানুষ। এশিয়া-ইউরোপ ঘুরে বেড়িয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব ভ্রমণের গল্প, ভিডিও, ছবি ইত্যাদি পোস্ট করা হতো। যেহেতু আমি একজন উপস্থাপক, সেই সুবাদে অনেক মানুষ আমাকে চেনে। তারা সেসব গল্প, ভিডিও এবং ছবি দেখে প্রশংসা করতেন। যখন মেয়েদের কমেন্টগুলো দেখতাম, আপু আমারও খুব ঘুরতে যেতে ভালো লাগে, কিন্তু মেয়ে বলে যেতে পারি না, পরিবার পারমিশন দেয় না, তখন তাদের জন্য খারাপ লাগত। এ দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের ভ্রমণের জন্য অনুমতি না পাওয়াটা কিছুটা যৌক্তিকও হয়তো। আমার ছোট বোনও একা ঘুরতে যেতে চাইলে, আমি অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে দুবার ভাবব। কারণ, আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই মনে হলো, ভ্রমণপ্রিয় নারীদের নিয়ে কাজ করব। তারা যেন একটা বিশ্বস্ত জায়গা খুঁজে পায় ভ্রমণের জন্য, তাদের যেন আর ভ্রমণ করতে না পেরে আফসোস করতে না হয়, সেই থেকে গো গার্লসের ভাবনা তৈরি হয়।’ গো গার্লসের কর্ণধার সোনিয়া রিফাত এভাবেই শোনাচ্ছিলেন শুরুর গল্পটা।

নিজের ভেতর স্বপ্নের অঙ্কুর গজানোর পর তিনি কয়েকজনের সঙ্গে তার পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করেন। 

তাদের মধ্যে ঐশি নামের কাছের এক ছোট বোন সোনিয়াকে ভরসা দিয়ে বলেন, আপু চলো একসঙ্গে শুরু করি। সঙ্গী তো জুটে গেল, এবার ট্রাভেল গ্রুপের একটা নাম দরকার। 

ঐশি একটা নামও দেয়- Get set go girls। পরে নামটা বেশ বড় মনে হওয়াতে কয়েকজন মিলে আলাপ করে নাম চূড়ান্ত 
হয় Go Girls। 

নারীদের নিয়ে ভ্রমণ গ্রুপ তৈরি করার পেছনে কোন ব্যাপারটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল? এ প্রশ্নের উত্তরে সোনিয়া বলেন, ‘আমি খুব আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষ। কিন্তু যখন থেকে ভ্রমণ শুরু করেছি, তখন বুঝলাম আমি আগে যা ছিলাম, তা মোটেও যথেষ্ট ছিল না। একজন নারী একটা ভ্রমণের মাধ্যমে কতটা যে আত্মবিশ্বাসী হতে পারে, সেটার প্রমাণ আমি নিজে। তা ছাড়া গো গার্লস শুধু ভ্রমণেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রত্যেক ট্রিপে আমরা চেষ্টা করি নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে। মেডিটেশন, লাইফকোচিং, কনসালটেন্সি এসব থাকে। এ ছাড়া পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিও রাখা হয়, যাতে ভ্রমণপ্রিয় মানুষরা চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আরও সচেতন হন।’

পরিবারের সমর্থন থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই বিন্দু থেকে সিন্ধু গড়ে তোলা যায়। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে কোনো উদ্যোগে পরিবারের সমর্থন পাওয়াটা একটু কঠিন ব্যাপার। আর সেই উদ্যোগ যদি একজন নারী নিয়ে থাকেন, তাহলে তা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। কিন্তু সোনিয়ার এই উদ্যোগে পরিবার তাকে দারুণভাবেই উৎসাহ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো কাজেই পরিবার কখনো বাধা দেয়নি। ছোটবেলা থেকেই এ ব্যাপারে আমি সৌভাগ্যবান বলতে পারেন।’ 

সোনিয়া রিফাত তার ক্যারিয়ারের অন্যান্য কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকেন। কীভাবে এত ব্যস্ততার ভেতর হরেক রকম কাজের ভারসাম্য বজায় রাখেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা কথা বলতে দ্বিধা করি না- আমি সত্যিই ভীষণ পরিশ্রমী। কাজ করতে ভালোবাসি। যদি হাতে কাজ না থাকে, হতাশ হয়ে যাই। একটু অবসর পেলেই আমি কিছু না কিছু শিখি। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করি। এখন আবার ডিজিটাল মার্কেটিং শিখব বলে ভাবছি। উপস্থাপনার ব্যস্ততা তো আছেই। সেই সঙ্গে প্যাশন থাকলে আমার কাছে মনে হয়, কঠিন হলেও অনেক কিছু একসঙ্গে সামলানো যায়।’ 

যেকোনো কাজেই কমবেশি প্রতিবন্ধকতা থাকে। তবে সোনিয়া গো গার্লস নিয়ে একটা হাস্যকর প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘অনেক ছেলে ফোন করে মেয়েদের সঙ্গে ঘুরতে যেতে চায়। এই বিরক্তিগুলো কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।’ 

নারী পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশ কতটুকু অনুকূল বলে মনে করেন? এ প্রশ্নের উত্তরে সোনিয়া বলেন, ‘নারী, পুরুষ কিংবা বিদেশি পর্যটক কারও জন্যই শতভাগ পর্যটকবান্ধব ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠেনি বাংলাদেশে। আমরা সেটা নিয়েই কাজ করতে চাই।’

সুদূরপ্রসারী প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে গেলে স্বপ্নও থাকে সুদূরপ্রসারী। কথায় কথায় গো গার্লস নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানালেন সোনিয়া। তিনি চান, গো গার্লস বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। সঙ্গে বাংলাদেশের নারীরা পাখা মেলবে পুরো দুনিয়া দেখতে। এটাকে তিনি পরিকল্পনা বলতে চান না। তার কাছে এটা লক্ষ্য, যা পূরণ করতেই হবে!

নারী পর্যটকদের উদ্দেশে সোনিয়া রিফাত বলেন, ‘নারী পর্যটকদের নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে হবে। কোথাও যাওয়ার আগে অন্তত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারপরই যাওয়া উচিত। আর একটা তিক্ত সত্যি হলো, অনেকের মধ্যে একটা প্রবণতা আছে, যার কারণে তারা ঘুরতে গিয়ে উপভোগ করতে পারেন না। সেটা হলো, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মন খারাপ করা। ধরুন, কোথাও গিয়েছেন, সেদিন সেখানে হয়তো ওই স্পটটা কোনো জরুরি কারণে বন্ধ। কিংবা কোথাও ঘুরতে গিয়ে সামনের সিটটা পেলেন না! সে মন খারাপ করল। এতে করে কিন্তু সেই মুহূর্তটা উপভোগ করতে পারলেন না। ট্রিপ মানেই হলো এখানে নানা রকম অভিজ্ঞতা হবে এবং সেটাকে উপভোগ করতে হবে। তাহলেই কিন্তু পুরো ট্রিপ উপভোগ করতে পারবেন, নিজের করে নিতে পারবেন। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ থেকে কিন্তু একটা করে গল্প তৈরি হয়। যদি সবকিছু মসৃণই হয়, তাহলে আর ব্যতিক্রম গল্প কী করে তৈরি হবে? শুধু এই মুহূর্ত উপভোগ করার ট্রিক্সটা যদি আমাদের দেশের নারীরা ধরে ফেলতে পারে, তাহলেই ব্যাস, আর কোনো সমস্যা নেই। ওহ হ্যাঁ, এ কারণে গো গার্লসের স্লোগানও কিন্তু ‘Every Step is a Story’।

হাসান

কর্মজীবী নারীর দৈনন্দিন রুটিন যেমন হতে পারে

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭ পিএম
কর্মজীবী নারীর দৈনন্দিন রুটিন যেমন হতে পারে
একজন কর্মব্যস্ত নারী। ছবি: খবরের কাগজ

কর্মজীবী নারীর দৈনন্দিন রুটিন সাধারণত বেশ ব্যস্ত এবং সংগঠিত থাকে, কারণ তাদের অনেক দায়িত্ব থাকে। যেমন কর্মস্থল, পরিবারের যত্ন এবং নিজস্ব সময়ের প্রতি সচেতনতা। কর্মজীবী নারীর দৈনন্দিন রুটিন যেমন হতে পারে:

সকাল

প্রথম কাজ: সকালে উঠে খুব দ্রুত রুটিন শুরু করা, যেমন পানি পান করা, মুখ ধোয়া, ওয়ার্কআউট বা যোগব্যায়াম করা (যদি সময় থাকে)।
সকালের খাবার: পুষ্টিকর নাশতা করা, যাতে দিনের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি থাকে।
পরিবারের দায়িত্ব: পরিবারের সদস্যদের জন্য সকালের খাবার প্রস্তুত করা, সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বা অন্য কোনও দায়িত্ব পালন করা।
পরিচ্ছন্নতা: ঘর সামান্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং অফিসের জন্য প্রস্তুতি নেয়া।

সকাল ৯টা- ১২টা

কর্মস্থলে পৌঁছানো: অফিস বা কাজের জায়গায় পৌঁছানো। যদি অফিসে যেতে না হয়, তবে ঘরে বসে কাজ শুরু করা।
কাজ শুরু: প্রথম কিছু ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ বা জটিল কাজ করার জন্য ব্যবহার করা। এই সময়টা অনেকেই ফোন কল, ইমেইল চেক করে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করেন।

দুপুর

লাঞ্চ ব্রেক: প্রায় ১-১.৫ ঘণ্টা সময় লাঞ্চের জন্য বরাদ্দ থাকে। এই সময়টা সাধারণত স্বল্প বিশ্রাম এবং খাবারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
দ্বিতীয় শিফট: লাঞ্চের পর আবার কাজ শুরু করা, যা সাধারণত কম গুরুত্বপূর্ণ বা সৃজনশীল কাজের জন্য উপযুক্ত সময় হতে পারে।

বিকেল

কাজের শেষ পর্যায়: বিকেলে কাজের শেষ পর্যায়ে এসে সবার সাথে মিটিং বা আলোচনা, প্রজেক্ট ফলোআপ বা দৈনন্দিন কাজের অগ্রগতি নিশ্চিত করা।
পরিবারের সাথে সময়: অফিসের কাজ শেষ করার পর পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো। যদি সন্তানের যত্ন নিতে হয়, তাহলে তাদের সঙ্গে খেলা বা পড়াশোনায় সহায়তা করা।

সন্ধ্যা

শখ বা ব্যক্তিগত সময়: অফিসের কাজের পর কিছু সময় নিজেকে দেওয়া। যেমন পছন্দের বই পড়া, টিভি দেখা বা যে কোনো শখের কাজ করা।
সন্ধ্যার খাবার: পরিবারের সঙ্গে ডিনার করা এবং একে অপরের দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করা।

রাত

পূর্ববর্তী প্রস্তুতি: পরের দিনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। যেমন কাপড় নির্বাচন, অফিসের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত করা।
রাতে বিশ্রাম: দিনের শেষে বিশ্রামের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। যেমন, ফোন বা ইন্টারনেট থেকে বিরতি নেওয়া এবং ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য পরিবেশ প্রস্তুত করা।

কর্মজীবী নারীর দৈনন্দিন রুটিন বেশ ব্যস্ত এবং সময়ের প্রতি একান্ত নজরদারি থাকা প্রয়োজন। তবে পরিবার, স্বাস্থ্য এবং নিজস্ব সময়ের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জাহ্নবী