ঢাকা ১০ চৈত্র ১৪৩১, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
English

দিন দিন বাড়ছে নারী লেখকের সংখ্যা

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৮ পিএম
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম
দিন দিন বাড়ছে নারী লেখকের সংখ্যা
নারী লেখকদের বই। ছবিঃসংগৃহীত

জমে উঠেছে অমর একুশে বইমেলা যা নিয়ে বইপ্রেমীদের আগ্রহ তুঙ্গে বিশেষ করে লেখকদের কাছে সেই আগ্রহের মাত্রা আরও বেশি এবারের বইমেলায় তেমনই কয়েকজন লেখককে নিয়ে এক আনন্দ আড্ডার আয়োজন করে খবরের কাগজ-এর নারী পাতামমতাময়ী সেই আড্ডায় লেখকদের কথোপকথন তুলে ধরেছেন ফারজানা ফাহমি।

 

কথাসাহিত্যিক শাহনাজ মুন্নী

একাধারে সাংবাদিক, কবি কথাসাহিত্যিক ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে লেখালেখি করে চলেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাসের পাশাপাশি লিখেছেন সংবাদ গবেষণা প্রতিবেদন শাহনাজ মুন্নীর জন্ম ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পর পেশা হিসেবে বেছে নেন টেলিভিশন সাংবাদিকতা পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩০ উল্লেখযোগ্য বই হলো- এল করুদ্ধ অন্ধকার, বাদুড় ব্র্যান্ডি, তৃতীয় ঘণ্টা পড়ার আগেই, পান সুন্দরী, নির্বাচিত গল্প: আমি আর আমিন যখন আজিমপুরে থাকতাম এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৫- কথা প্রকাশ থেকে প্রকাশ হচ্ছে তার গল্পের বইপ্রিজন ডিলাক্স ট্যুর

বইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রিজম ডিলাক্স ট্যুরএবারের বইমেলায় প্রকাশিত আমার গল্পের বই গত দুই বছরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা গল্পগুলোকে একত্রিত করে নতুন গল্পের বই সংকলন করা হয়েছে এখানে বিভিন্ন বিষয়ের গল্প আছে যেমন- প্রেমের গল্প, রাজনীতির গল্প, বিদ্রোহের গল্প ইত্যাদি যদি কোনো পাঠক বইটি পড়েন, তবে ১৭ ধরনের লেখা সম্পর্কে ধারণা পাবেন

দেওয়ার মতো অনেক পরিচয় থাকলেও সব ছাপিয়ে লেখক শাহনাজ মুন্নী পরিচয়টাই বড় হয়ে উঠল কীভাবে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাংবাদিকতা পেশায় আসার আগে থেকেই আমি লিখতাম লেখাটা আমার জীবনে অন্তঃসলিলার মতো বয়ে গেছে কষ্ট পেলাম, দুই লাইন লিখলাম; মন ভালো হলো, তখনো দুই লাইন লিখলাম এক দিন না লিখলে মনে হয় কী যেন করিনি মনে হয় এই আনন্দ পাওয়ার জন্যই সব যন্ত্রণা বাদ দিয়ে লেখক হয়েছি, লিখছি বা লিখে যাচ্ছি অনেক ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটলেও লেখালেখির জন্য আমি শিডিউল করে নিই যাতে লেখালেখি থেকে কখনো বিরত না থাকি

তরুণ প্রজন্মের লেখকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সমাজকে বুঝতে হবে, রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বোঝা, মানুষের মনকে বোঝা এবং ভাষার যে একটা ধারাবাহিকতা আছে তা মেনে চলতে হবে সঠিক বাক্য লিখা, শব্দ চয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে তাহলে একজন তরুণ লেখক ভালো লেখক হিসেবে গড়ে উঠবে

 

থ্রিলার লেখক ডা. মালিহা তাবাসসুম

তৃতীয় শ্রেণি থেকে তার লেখালেখি শুরু ছোটবেলা থেকেই ভারী ভারী শব্দের প্রতি আকর্ষণ ছিল তার বাংলা সাহিত্যের অনেক রাশভারী সাহিত্যিকের বই ছোটবেলা থেকে পড়তেন তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় একটা গোয়েন্দাধর্মী নাটক দেখে এই জনরার প্রতি অদম্য আকর্ষণ জন্মায় থ্রিলার পড়ার শুরুও সেখান থেকে ফেলুদা, ব্যোমকেশ হয়ে শার্লক, অগাথা ক্রিস্টি, সঙ্গে প্যারালালি ডিরেকশনের প্রতিও আকর্ষণ

বইমেলায় প্রথম বই পাবলিশ করা হয় ২০১৯ সাল থেকে প্রথম বই ছিল স্পাই থ্রিলার বৃত্তবন্দি এটি পাঠকপ্রিয়তা পায় ২০২০ সালে ভিন্নধর্মী পুরুষ দেহ ব্যবসায়ীদের নিয়েজিগোলোনামে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বের হয় এটি বইমেলার একুশে সংকলনে সেরা ১০ বইয়ের একটি হিসেবে মর্যাদা পায়

২০২১- বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ফরেনসিক এক্সামাইনার চরিত্রআবরার ফাহাদকে ইন্ট্রোডিউস করা হয়ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সনামের মেডিকেল থ্রিলার দিয়ে ২০২১ রকমারি বেস্টসেলার অ্যাওয়ার্ড পান তিনি এরপর ২০২২ সালে মেডিকেল এক্সামাইনার আবরার ফাহাদ সিরিজের দ্বিতীয় বইঅ্যাকিলিসের টেন্ডনআরও জনপ্রিয়তা অর্জন করে থ্রিলার এবং সেরা ফিকশন দুই ক্যাটাগরিতেই সেরা বই হয়

বছর ২০২৫ সালে তার ষষ্ঠ একক বই এবং ক্রিমিনাল সাইকিয়াট্রি সিরিজের দ্বিতীয় নন-ফিকশনাল প্রকাশিত হয়েছে পাওয়া যাচ্ছে অনন্যা প্রকাশনী, প্যাভিলিয়ন-২৭-

তিনি একজন চিকিৎসক শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে সাইকিয়াট্রি বিষয়ে বিদেশের উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবারের মেলায় যে বই বের হয়েছে সেটা ক্রিমিনাল সাইকিয়াট্রি সিরিজের দ্বিতীয় বই এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে দারুণ প্রাসঙ্গিক বাংলাদেশের পতিত স্বৈরাচার এবং তারই মতো পৃথিবীর ইতিহাসের বিভিন্ন স্বৈরাচারের মনোজগতে কী চলে, একজন চিকিৎসক হিসেবে সেই মনোবিশ্লেষণ সহজ উপায়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ২০২৫ সালে প্রকাশ পাওয়া তার নতুন বই- ‘মনোবিশ্লেষণ: সমান্তরালে স্বৈরশাসক এবং স্যাডিজম-

ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড কল্পনাবিলাসী এমন সব ফ্যান্টাসি তার মাথায় ঘুরত, যা যেকোনো মানুষের পক্ষে হজম করা বেশ কষ্টসাধ্য বড় হতে হতে গোয়েন্দা কাহিনি, বিশেষত স্পাইবিষয়ক গোয়েন্দা কাহিনি হতে পারে নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা সাহিত্য সবকিছু নিয়ে অবসেশন কাজ করত সিডনি শেলডনের নারী চরিত্রগুলো অসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই চরিত্রগুলোর মাঝে তিনি নিজেকে খুঁজে পেতেন লেখালেখির অন্যতম অনুপ্রেরণা এই নারী চরিত্রগুলো নাথিং লাস্টস ফরএভার মেডিকেল থ্রিলার পড়ার পর দীর্ঘদিন ঘোর থেকে বের হতে পারিনি ছাড়া ছোটবেলায় একটা বাংলা থ্রিলার নাটকও তার গল্প লেখা নির্দেশনার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির আরেক অনুপ্রেরণা

সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা পরিবার জীবনে কোনো প্রকার বাধার মুখোমুখি না হয়ে, আর্থিক কষ্টের সম্মুখীন না হয়ে কেবল নিজের পড়াশোনা আর স্বপ্ন পূরণের পেছনে ছুটতে পেরেছেন

 

কবি আতিকা রহমান

আতিকা রহমানের জন্ম ১৯৮৯ সালের আগস্ট নাটোর জেলায় অর্থনীতিতে অনার্স, মাস্টার্স করেছেন এবারের বইমেলায় তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসংলাপহীন শূন্যতা পেশায় সাংবাদিক বর্তমানে টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছে লেখার পাশাপাশি গল্প সমসাময়িক বিষয় প্রবন্ধ লিখেন একজন শিশু অধিকারকর্মী কাজ করেন নারী শিশু অধিকার, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর জন্য লেখালেখির শুরুটা শৈশবকাল থেকে সংস্কৃতি জগতে রয়েছে বিচরণ লেখক হিসেবে কাজ করেছেন জনপ্রিয় শিশুতোষ ধারাবাহিক অনুষ্ঠান ১২৩ সিসিমপুরে

ক্লাস থ্রিতে যখন পড়েন তখন তিনি প্রথম কবিতা লিখেন সেটি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় ছোটবেলা থেকেই নাটোরের স্থানীয় পত্রিকা, সাহিত্য পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন জাতীয় দৈনিকে কবিতা লিখেছেন তিনি অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন

বই সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংলাপহীন শূন্যতা কাব্যগ্রন্থে বেশির ভাগ কবিতাগুলো লেখা হয়েছে প্রেম, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি, নিস্তব্ধতা, একাকিত্ব, বিষণ্নতা প্রকৃতি নিয়ে কবিতায় প্রকৃতি প্রেমের দারুণ রসায়ন প্রকাশ পেয়েছে আমার কিছু কবিতা আছে প্রকৃতির প্রেম বন্দনা কিছু আছে মানুষের প্রেম নিয়ে কিছু কবিতায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ঘৃণার অভিব্যক্তি কবিতাগুলো আধুনিক সময়ের প্রতিচ্ছবি বনলতা প্রেম ছায়াবাজির কারসাজিতে ফিনিক্স পাখির মতো কূল হারিয়েছে কৃষ্ণগহ্বরে ডুবে গেছে বইয়ের কবিতায় প্রকটভাবে ওঠে এসেছে যুগ্মতার ভাষা আমি ভীষণ পছন্দ করি নিসর্গ, নিস্তব্ধতা নিঃসঙ্গতা নিয়ে ভাবতে দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কবিতার পঙ্ক্তিমালা প্লাবনের জলধারা সঞ্চয় করে ছুটে গেছে পলিজ  মোহনায় নিস্তব্ধতা শূন্যতায় প্রশান্তি খুঁজে ফিরেছে

লেখালেখি আমার পেশা নয় আমার মূল পেশা সাংবাদিকতা লেখালেখি আমার নেশা আমার চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ কবিতার পাশাপাশি আমি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখি, কারণ আমার ভেতরের যে বোধ-চিন্তা কাজ করে তা প্রকাশ করতে চাই আমার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন

লেখক হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা কে ছিলেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার পছন্দের লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ হুমায়ুন আহমেদ তাদের লেখা পড়ে লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছি এবং মনের মধ্যে লেখক হওয়ার স্পৃহা, ইচ্ছা তৈরি করেছি

 

শিশু সাহিত্যিক সারমিন ইসলাম রত্না

শিশু সাহিত্যিক সারমিন ইসলাম রত্না জন্মগ্রহণ করেছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় পড়াশোনা করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে ছোটবেলা থেকে তার পেশা নেশা লেখালেখি তিনি ২০০৩ সাল থেকে সাহিত্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বহু প্রতিকূলতার মধ্যে তিনি এগিয়ে গেছেন ধৈর্যশক্তি আর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে

লেখালেখি শুরুর কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে বই পড়ার অভ্যাস ছিল সেখান থেকেই লেখালেখির প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠেন শিশুদের অনেক ভালোবাসেন এবং তাদের নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন সেখান থেকেই তার শিশু সাহিত্যিক হওয়ার পথচলা শুরু হয়

তার প্রথম গল্প ২০০৩ সালের জুলাই ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসরে প্রকাশিত হয় সরকারি বেসরকারি পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত তার লেখা প্রকাশিত হয় ইত্তেফাক, বাংলাদেশ প্রতিদিন, নয়া দিগন্ত, সমকাল, প্রথম আলো ইত্যাদি সরকারি পত্রিকা চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত মাসিক সংকলননবারুণ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত মাসিক সংকলনশিশু তা ছাড়া তিনি একজন বাচিক শিল্পী রেডিও-টিভি বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন বর্তমানে শিশু সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি শখের বসে গান লিখেছেন সুর করেছেন

এবারের বইমেলায় তার রংতুলিতে ছুটির দিন প্রকাশিত হয়েছে প্রকাশনী শিশুবেলা থেকে বইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উড়ন্ত-দুরন্ত মনের কিশোর-কিশোরী রিশা, রাফি ওরা ভাই-বোন ওরা গাছ লাগাতে পছন্দ করে আবৃত্তি করতে পছন্দ করে ওরা বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করে ওরা গ্রামের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে চায় কিন্তু বাবা-মা ওদের সব কাজেই বাধা দেন কখনো কখনো ওরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় কখনো কখনো বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তকেই ওদের কাছে সঠিক মনে হয় ওদের জন্য কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ বুঝতে পারে না এভাবেই এগিয়েছে প্রতিটি গল্প কিশোর- কিশোরীরা গল্পে গল্পে খুঁজে পাবে ওদের মনের কথা ওদের আবেগ-অনুভূতি বাবা-মা গল্পে গল্পে খুঁজে পাবেন তাদের কখন, কী করণীয়

ছাড়া তার প্রকাশিত ভূতের উপহার বইটিও শিশুদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে ভূতের গল্প মানে ভয়ংকর কিছু, এমন ভাবনাকে পালটে দিয়েছেন তিনি ভূত কাঁধে মাথায় মমতার পরশ বুলিয়ে দেয় এবং ভূত হাতে হাত রাখে গল্পগুলো ছোটদের আনন্দ দেয় শিক্ষামূলক বার্তা দেয়ভূতের উপহারহিসেবে

তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত বইগুলো হলো- পাথর রাজ্যের রাজকন্যা (শিশু প্রকাশ), সোনার পায়রা (মুক্তধারা), তাহিয়ানের যত মজার কাণ্ড (সাতভাই চম্পা প্রকাশনী), সবুজ বনের খরগোশ (পঙ্খিরাজ), ভূতের উপহার (শিশুগ্রন্থ কুটির), রংতুলিতে ছুটির দিন (শিশুবেলা)

/ফারজানা ফাহমি

 

নারী অধিকারের পথিকৃৎ এস্টার হোবার্থ মোরিস

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫১ পিএম
নারী অধিকারের পথিকৃৎ এস্টার হোবার্থ মোরিস
এস্টার হোবার্থ মোরিস।ছবিঃসংগৃহীত।

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এস্টার হোবার্থ মোরিস একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৯ শতকের যুক্তরাষ্ট্রে যখন নারীরা ভোটাধিকারসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করছিলেন, তখন মোরিস এক অগ্রদূত হিসেবে সামনে আসেন। তিনি ছিলেন প্রথম নারী পিস জাস্টিস (Justice of the Peace), যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বের জন্য এক মাইলফলক।

১৮১৪ সালের ৮ আগস্ট নিউইয়র্কের স্প্রিংফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন এস্টার হোবার্থ মোরিস। খুব অল্প বয়সেই তিনি বাবা-মাকে হারান, ফলে তার বেড়ে ওঠা ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবু তিনি আত্মনির্ভরশীল হিসেবে বেড়ে ওঠেন এবং নারীদের অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।
১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং টেরিটরি (Wyoming Territory) নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার দেয়, যা ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি সম্ভব হয়েছিল নারী অধিকার কর্মীদের প্রচেষ্টার কারণে, যার মধ্যে এস্টার হোবার্থ মোরিস ছিলেন অন্যতম।১৮৭০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এস্টার মোরিসকে ওয়াইওমিংয়ের সাউথ পাস সিটিতে পিস জাস্টিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী বিচারিক কর্মকর্তা হিসেবে ইতিহাস গড়েন।

তার বিচারিক কার্যক্রম ছিল সুশৃঙ্খল ও নিরপেক্ষ। এক বছরে ২৬টি মামলা পরিচালনা করেন তিনি, যার মধ্যে বেশির ভাগই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। সেই সময় নারীদের বিচার বিভাগে অংশগ্রহণ ছিল অকল্পনীয়, তাই তার এই ভূমিকা নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার পথে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নারীদের ভোটাধিকারের প্রশ্নে মোরিস ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। ওয়াইওমিং যখন ১৮৬৯ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেয়, তখন তিনি এই আইনের একজন প্রবল সমর্থক ছিলেন। তার প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক প্রভাব নারী ভোটাধিকার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। ১৮৭১ সালে ইউটাহ যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবে নারী ভোটাধিকার আইন পাস করে। ওয়াইওমিংয়ের সফলতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যেখানে মোরিসের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

১৮৭৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি. হেইজ একটি ঐতিহাসিক বিলে স্বাক্ষর করেন, যা নারীদের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেয়। এই আইনের ফলে নারীরা প্রথমবারের মতো উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।

এটি নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার একটি বড় পদক্ষেপ ছিল এবং এই আন্দোলনের পেছনে এস্টার হোবার্থ মোরিসসহ অন্যান্য নারী অধিকার কর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এস্টার হোবার্থ মোরিস শুধু একজন বিচারকই নন, তিনি ছিলেন নারী অধিকারের এক সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। তার প্রচেষ্টা নারীদের ভোটাধিকার, বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ এবং আইন পেশায় নারীদের প্রবেশের পথ সুগম করে। আজ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে অগ্রগতি, তার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন মোরিসের মতো নেত্রীরা।

/ফারজানা ফাহমি

 

৫০ বছর ধরে পাতা তোলেন চা-শ্রমিক টুনি

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম
৫০ বছর ধরে পাতা তোলেন চা-শ্রমিক টুনি
চা-শ্রমিক টুনি দাস। ছবিঃ মামুন হোসেন।

চা-শ্রমিকদের জীবন মানেই সংগ্রামের জীবন। দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে শিশু বয়স পার করে কৈশোরে পা দেওয়া মানেই তাদের জীবনসংগ্রাম শুরু। এরকমই একজন সংগ্রামী নারী সিলেটের দলদলি চা-বাগানের শ্রমিক টুনি দাস (৬০)।

মাত্র ১০ বছর বয়সে বাগানে পাতা তোলার কাজ শুরু করেন টুনি। বড় চা-গাছের পাতা তুলে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। তখন আকারে টুনি অনেক খাটো হওয়ায় বড় চা-গাছে উঠে ঝুলে ঝুলে পাতা তুলতেন। চা-পাতা তোলার এই স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে খানিকটা মুচকি হাসি দিলেন টুনি। কিন্তু পরক্ষণেই আবার তার মুখের হাসি উধাও হয়ে যায়।

টুনি তার জীবনসংগ্রামের বর্ণনা দিয়ে খবরের কাগজকে বলেন, আমার বাবা দুঃখিধন দাশ ও মা মারঞ্চনা দাস। আমার মাও এই দলদলি বাগানে পাতা তুলতেন। মায়ের পথ অনুসরণ করে ১০ বছর বয়স থেকে আমি বাগানে পাতা তোলা শুরু করি। আমার যখন ২০ বছর বয়স তখন আমার বিয়ে হয় দলদলি বাগানের বিনেশ দাসের সঙ্গে। বিয়ের পর কোনো সন্তানাদি হয়নি আমার। ২৫ বছর হয়ে গেছে আমার স্বামীও মারা গেছেন। তাই নিজের পেট চালাতে এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও পাতা তুলি।

পাঁচ বোন ও এক ভাই নিয়ে ছিল টুনিদের সংসার। বিয়ে করে সবাই সবার মতো আলাদা থাকছেন। পাঁচ বোনের মধ্যে তার এক বোন মারা গেছেন। এক বোনের বিয়ে হয়েছে লাক্কাতুরা বাগানে। টুনিসহ তার বড় দুই বোন সুকুমারী দাস (৬২) ও আলুতি দাসের (৫৪) বিয়ে হয়েছে দলদলি চা-বাগানে বাবার বাড়ির পাশে। তাই এখন তার সুখ-দুঃখের সাথি এই দুই বোন ও মারা যাওয়া বোনের এক মেয়ে। সকালে তিন বোন মিলে গল্প করে বাগানে আসেন কাজ করতে। দুপুরে তিন বোনসহ বাগানে কাজ করতে আসা অন্য নারীদের নিয়ে লবণ চা পান করেন। কাজ শেষে আবার একসঙ্গে চলে যান বাড়িতে। এই নিয়মেই চলে টুনি দাসের জীবন।

টুনি বলেন, ‘তিন বইন এক সাথে আছি। কিন্তু তারার ঘর আলগ (আলাদা) আমার ঘর আলগ। কিন্তু বইনেরা মিলে সারা দিন এক সাথে পাতা তুলি, সব সময় তারার মুখ দেখি এইটা তো আমার শান্তি।’ এই চা-বাগানের বাইরে মানুষ বা পরিবেশ প্রকৃতি সম্পর্কে টুনি খুব একটা ধারণা নেই। তিনি নিজের জীবন থেকে উপলব্ধি করেছেন নারীদের জীবন হয় সংগ্রামের।

টুনি দাস বলেন, ‘নারীজীবন সংগ্রামের জীবন। বাবার বাড়ি কষ্ট করেছি, স্বামীর বাড়িও কষ্ট। এখন বুড়াকালেও কষ্ট। ৬০ বছর বয়সেও কাজ করছি। কাজ না করলে ভাত দিব কে। এই পাতা তুলতে গিয়ে কত ব্যথা পেয়েছি। তবু কাজ করছি বাগানে। নিজের টাকা দিয়ে ওষুধ পানি কিনা লাগে। বইনের পুরির ঘরের পুরিরে আমি পালি (লালন-পালন করেন)। আমার অনেক কষ্ট-দুঃখ আছে। আমি কাউকে বলি না। কাকে বলব মা নাই বাবা নাই, স্বামী নাই বাচ্চাকাচ্চা নাই।’

/ফারজানা ফাহমি

সবুজ বিপ্লবে সাহসী উদ্যোগ

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম
সবুজ বিপ্লবে সাহসী উদ্যোগ
জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবিঃ আদিব আহমেদ।

রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে একটি দালানের দ্বিতীয় তলার ছাদের দিকে চোখ গেল গাছপালায় ঘেরা, সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল আছে একটি ক্যাফে। এর নাম ওরেন্ডা অ্যান্ড বিন্স। এটিকে শুধু খাবারের জায়গা ভাবলে ভুল হবে; বরং একে বলা চলে নতুন ধারার প্রতিচিত্র। রেস্টুরেন্টটির ছাদে বসানো হয়েছে সোলার সিস্টেম। এর নবায়নযোগ্য শক্তি কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক মডেলের এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস।

বাংলাদেশে যেখানে অধিকাংশ রেস্তোরাঁ গ্যাস ও বিদ্যুৎনির্ভর, সেখানে তিনি বেছে নিয়েছেন সৌরশক্তিকে। তার ক্যাফের ৫০ শতাংশ কাজ যেমন রান্নাঘর, আলোকসজ্জা, এমনকি কফি মেশিন চলে সৌরবিদ্যুতের ওপর। এতে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে, তেমনি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের নজির গড়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। শুধু শক্তি ব্যবহারে নয়, ক্যাফের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাতেও রাখা হয়েছে প্রাকৃতিক উপকরণের ছোঁয়া। প্লাস্টিকের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কাগজের সামগ্রী। এ ছাড়া খাবার পরিবেশনের জন্য নেওয়া হয়েছে পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং উপকরণ। এসব উদ্যোগ ক্যাফেটিকে শুধু পরিবেশবান্ধব নয় বরং সচেতন নাগরিকদের জন্য এক অনুপ্রেরণার জায়গায় পরিণত করেছে।

জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ‘ওরেন্ডা অ্যান্ড বিন্স’-এর লভ্যাংশের একটি অংশ তারা বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে ব্যয় করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোগের পেছনে তার বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তার বড় ভাই, লন্ডন প্রবাসী মঞ্জুর মিয়া। বিদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার দেখে তিনিই তাকে এ বিষয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর নানা পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাস্তবে রূপ নেয় ‘ওরেন্ডা অ্যান্ড বিন্স’। কিন্তু তার লক্ষ্য শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তিনি চান,  আরও বেশি নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক, নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। ভবিষ্যতে তিনি একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে নারীরা পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্পর্কে শিখতে পারবেন। 

ভবিষ্যতে জান্নাতুল ফেরদৌস আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে চান। তিনি চান, তার মতো আরও অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এগিয়ে আসুক, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গড়ে তুলুক। তার স্বপ্ন, একদিন বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে একটি রোল মডেল হয়ে উঠবে এবং ‘ওরেন্ডা অ্যান্ড বিন্স’-এর মতো উদ্যোগগুলো দেশের সবখানে বিস্তৃত হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। তার মতে, পরিবেশ রক্ষার জন্য শুধু বৃক্ষরোপণ নয়, বরং টেকসই ও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, প্লাস্টিক বর্জন এবং সচেতন জীবনধারার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশকেন্দ্রিক বিষয়গুলো ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সংকটময় সময়ে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনা মহামারির সময়ও তিনি কাজ করেছেন, অসহায় মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন। সাম্প্রতিক বন্যার সময়ও দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। শুধু দুর্যোগকালেই নয়, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় মানুষদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা নিশ্চিত করতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে এবং অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করছেন।

তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-তে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে দ্বিতীয় মাস্টার্স করছেন। তার লক্ষ্য, কীভাবে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলো টেকসইভাবে পরিচালনা এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করা যায়। তবে জান্নাতুল ফেরদৌস শুধু একজন উদ্যোক্তা নন, তিনি একজন সমাজকর্মীও। গত ১০ বছর ধরে তিনি দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে ব্যবসায়ের পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। বিশেষ করে অনাথ শিশু ও শেল্টার হোমগুলোর কল্যাণে কাজ করা তার অন্যতম প্রধান উদ্যোগ।

/ফারজানা ফাহমি

মূলধন ছাড়াই লাখ টাকা উপার্জন

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০২:৫১ পিএম
মূলধন ছাড়াই লাখ টাকা উপার্জন
ভিকি রাউলিনস ও তার মেয়ে ব্রুক রাউলিনস ।ছবিঃসিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের ভিকি রাউলিনস ও তার মেয়ে ব্রুক রাউলিনস পেশায় ‘বোটানিক্যাল আর্টিস্ট’। যারা নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দাঁড় করেছেন শূন্য মূলধনে। তাদের গল্প জানাচ্ছেন ফারজানা ফাহমি

ভিকি রাউলিনস ও তার মেয়ে ব্রুক রাউলিনস বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে। তারা গাছের নিচে পড়ে থাকা বিভিন্ন ফুল, ফল, পাতা, ডাল, শুকনো কাঠসহ প্রকৃতির নানা উপাদান দিয়ে আর্টপিস তৈরি করেন। তবে এই মা-মেয়ের ‘আর্ট’ একটু আলাদা। তারা আর্ট বা শিল্পকর্ম তৈরি করে কুড়িয়ে আনা জিনিসগুলো আবার প্রকৃতিতেই ফিরিয়ে দেন। 

সময়টা ২০১১ সাল যখন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন ভিকি। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। চরম হতাশায় দিন কাটছিল তার। একদিন হুট করে চোখ পড়ল তার বারান্দার পাশের বাগানে গাছের নিচে পড়ে থাকা ডাল ও ফুলের দিকে। কুড়িয়ে আনা পাতা ও ফুল দিয়ে ঝটপট তার ও তার মেয়ের একটা পোর্ট্রেট তৈরি করে ফেললেন এবং সেটার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার পর বেশ সাড়াও পেয়েছিলেন।

ছবিঃসিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে

এভাবেই তার ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়, যদিও শুরুতে তাদের উদ্দেশ্য ছিল না তারা এভাবে টাকা আয় করেন। মূলত সময় কাটানোর জন্য ভিকি ছবি আঁকা শুরু করেন। পরে তারা সিস্টার গোল্ডেন নামের একটি শপ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা শুরু করেন এবং এখান থেকে বর্তমানে কোনো ধরনের মূলধন ছাড়াই লাখ লাখ টাকা আয় করেন।

দুজনেই প্রতিদিন আশপাশের বাগান, রাস্তা বা পার্কে পড়ে থাকা লতাপাতা, ফুল, ফল, বীজ, ডাল কুড়িয়ে আনেন। তারপর প্রায় আলাদা কোনো উপকরণ ছাড়াই (ছুরি, কাঁচি, রং, তুলি, পেনসিল) ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন শিল্পকর্ম। তারপর মুঠোফোনে সেই শিল্পকর্মের ছবি তুলে জুম করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন কম্পোজিশন, অনুপাত বা অন্য সবকিছু ঠিক আছে কি না।

শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ হলে ক্যামেরায় সেসবের ছবি তোলেন। তারপর সব উপকরণ আবার প্রকৃতিতেই ফিরিয়ে দেন। কেননা তারা ফ্রেমের সঙ্গে কিছুই আঠা দিয়ে লাগান না বা সেলাই করেন না।

শুধু কিছুক্ষণের জন্য পাশাপাশি বা একটার ওপর আরেকটা সাজিয়ে রাখেন। এই শিল্পকর্ম তৈরির সময় দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখেন তারা। যাতে হাওয়ায় উড়ে না যায়। তাদের শিল্পকর্মে মূলত প্রকৃতি, নারীর মুখ, ফুল, বিভিন্ন রং ও ঘর সাজানোর আইডিয়া আসে। 

যেসব ছবি তোলেন, সেসব দিয়ে ক্যালেন্ডার; ভিউকার্ড; দেয়ালে ঝোলানোর জন্য ছবি; ভিন্টেজ পোস্টার; কাপড়, পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন ও টাইলসে প্রিন্টসহ নানাভাবে ব্যবহার করেন। অনেকে ওয়েবসাইট থেকে এসব ছবি কিনে নিজেদের মতো ব্যবহার করেন। এসব ছবি বইয়ের প্রচ্ছদেও ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া বানানো হয় আর্টবুক। এসব কনসেপচুয়াল আর্টকে অনেকে ব্যবহার করেন পেইন্টিংয়ের অনুপ্রেরণা হিসেবে। এভাবেই তারা আয় করেন।

মূলত মা ভিকি রাউলিনসই শিল্পকর্ম তৈরি করেন। মেয়ে ব্রুক রাউলিনস মাকে সাহায্য করেন। ছবি তোলা, মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টসহ ব্যবসার নানা খুঁটিনাটি দিক সামলান।

বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতিগুলো কুড়িয়ে আনা নানা উপকরণে তৈরি করেন ভিকি। শেরিলিন, ভ্যান গগ, অড্রে হেপবার্ন, ফ্রিদা কাহলো থেকে শুরু করে বাদ যাননি ডায়ানা রস ও আলবার্ট আইনস্টাইন ও টেলর সুইফট।

ভিকি তার শিল্পকর্মগুলোতে একত্রে করে একটি বই বের করেছেন যার নাম ‘দ্য পাওয়ার অব ফ্লাওয়ারস’। যেখানে ১০০টি পেজ রয়েছে এবং আর্টগুলো কোন কনসেপ্টে তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর বর্ণনা দেওয়া আছে, যা একজন পাঠককে তার শিল্প কর্মগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেবে।

১৯৭০ দশকের জনপ্রিয় গান ‘সিস্টার গোল্ডেন হেয়ার’-এর অনুকরণে মা-মেয়ে তাদের অনলাইন শপের নাম রেখেছেন ‘সিস্টার গোল্ডেন শপ’। এ শপ থেকে সহজেই যে কেউ তাদের পেইন্ট কিংবা কাস্টমাইজ গ্রিটিং কার্ড তৈরি করে নিতে পারেন। যদিও ফুলেল শিল্পকর্ম তাদের ট্রেডমার্ক। সিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে এভাবে কোনো মূলধন ছাড়াই লাখ লাখ টাকা আয় করেন। সূত্রঃসিস্টার গোল্ডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে।

/ফারজানা ফাহমি

জনহিতৈষী মেরি গ্যারেট

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০২:১০ পিএম
জনহিতৈষী মেরি গ্যারেট
মেরি গ্যারেট। ছবিঃসংগৃহীত।

নারীদের উন্নয়নে উদার হাতে অর্থ দান করার জন্য সুপরিচিত ছিলেন এক আমেরিকান নারী। তার নাম মেরি গ্যারেট। তিনি ১৮৯৩ সালে শর্ত দিয়ে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুলকে অর্থ দান করেছিলেন। তার শর্ত ছিল, এই প্রতিষ্ঠানকে নারী শিক্ষার্থীদের ঠিক একই শিক্ষা দিতে হবে, যা পুরুষ শিক্ষার্থীরা পান। 

মেরি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৫৪ সালের ৫ মার্চ। তিনি জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের জন্য মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক উন্মোচন করেছিলেন। তার এই অবদান নারীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ ও অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছিল। মেরি গ্যারেটের এই উদ্যোগ নারীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।

ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার জন ডব্লিউ গ্যারেটের একমাত্র মেয়ে ছিলেন মেরি গ্যারেট। মা-বাবা ও দাদা-দাদি জনহিতকর কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে ছেলেবেলা থেকেই গ্যারেটের দাতব্য কাজ সম্পর্কে ধারণা ছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদ ব্যবহার করে গ্যারেট বাল্টিমোরে ব্রাইন মাওর স্কুল ফর গার্লস প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে সহায়তা করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের সবচেয়ে বেশি আন্দোলন করতে হয়েছিল ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য। এই দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ে শামিল ছিলেন মেরি গ্যারেট। তিনি বিভিন্ন সময় অর্থ ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছেন নারীদের উপকারে। ১৯১৫ সালের ৩ এপ্রিল মারা যান মেরি গ্যারেট।

/ফারজানা ফাহমি