ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
English

নারী অধিকারের পথিকৃৎ এস্টার হোবার্থ মোরিস

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৫১ পিএম
নারী অধিকারের পথিকৃৎ এস্টার হোবার্থ মোরিস
এস্টার হোবার্থ মোরিস।ছবিঃসংগৃহীত।

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এস্টার হোবার্থ মোরিস একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৯ শতকের যুক্তরাষ্ট্রে যখন নারীরা ভোটাধিকারসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করছিলেন, তখন মোরিস এক অগ্রদূত হিসেবে সামনে আসেন। তিনি ছিলেন প্রথম নারী পিস জাস্টিস (Justice of the Peace), যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বের জন্য এক মাইলফলক।

১৮১৪ সালের ৮ আগস্ট নিউইয়র্কের স্প্রিংফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন এস্টার হোবার্থ মোরিস। খুব অল্প বয়সেই তিনি বাবা-মাকে হারান, ফলে তার বেড়ে ওঠা ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবু তিনি আত্মনির্ভরশীল হিসেবে বেড়ে ওঠেন এবং নারীদের অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।
১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং টেরিটরি (Wyoming Territory) নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার দেয়, যা ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি সম্ভব হয়েছিল নারী অধিকার কর্মীদের প্রচেষ্টার কারণে, যার মধ্যে এস্টার হোবার্থ মোরিস ছিলেন অন্যতম।১৮৭০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এস্টার মোরিসকে ওয়াইওমিংয়ের সাউথ পাস সিটিতে পিস জাস্টিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী বিচারিক কর্মকর্তা হিসেবে ইতিহাস গড়েন।

তার বিচারিক কার্যক্রম ছিল সুশৃঙ্খল ও নিরপেক্ষ। এক বছরে ২৬টি মামলা পরিচালনা করেন তিনি, যার মধ্যে বেশির ভাগই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। সেই সময় নারীদের বিচার বিভাগে অংশগ্রহণ ছিল অকল্পনীয়, তাই তার এই ভূমিকা নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার পথে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নারীদের ভোটাধিকারের প্রশ্নে মোরিস ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। ওয়াইওমিং যখন ১৮৬৯ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেয়, তখন তিনি এই আইনের একজন প্রবল সমর্থক ছিলেন। তার প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক প্রভাব নারী ভোটাধিকার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। ১৮৭১ সালে ইউটাহ যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবে নারী ভোটাধিকার আইন পাস করে। ওয়াইওমিংয়ের সফলতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যেখানে মোরিসের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

১৮৭৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি. হেইজ একটি ঐতিহাসিক বিলে স্বাক্ষর করেন, যা নারীদের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেয়। এই আইনের ফলে নারীরা প্রথমবারের মতো উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।

এটি নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার একটি বড় পদক্ষেপ ছিল এবং এই আন্দোলনের পেছনে এস্টার হোবার্থ মোরিসসহ অন্যান্য নারী অধিকার কর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এস্টার হোবার্থ মোরিস শুধু একজন বিচারকই নন, তিনি ছিলেন নারী অধিকারের এক সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। তার প্রচেষ্টা নারীদের ভোটাধিকার, বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ এবং আইন পেশায় নারীদের প্রবেশের পথ সুগম করে। আজ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে অগ্রগতি, তার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন মোরিসের মতো নেত্রীরা।

/ফারজানা ফাহমি

 

সামশাদ সুলতানা খানমের সাহসী সিদ্ধান্ত  ‘মায়ের পরিচয় রক্তের চেয়েও গভীর’

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০৯:০০ এএম
সামশাদ সুলতানা খানমের সাহসী সিদ্ধান্ত 
‘মায়ের পরিচয় রক্তের চেয়েও গভীর’
সামশাদ সুলতানা খানম। ছবিঃ খবরের কাগজ।

বাংলাদেশের সমাজে একজন অবিবাহিত নারীর জীবনে নানা সীমাবদ্ধতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির জাল জড়ানো থাকে। তার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত যেন জনমত যাচাই করে নিতে হয়। কিন্তু এর মাঝেও কিছু মানুষ থাকেন, যারা নিজের হৃদয়ের কথা শুনে সমাজের গণ্ডি ভেঙে সামনে এগিয়ে যান। সামশাদ সুলতানা খানম তেমনই একজন।

বাংলাদেশের কনটেক্সটে একজন অবিবাহিত মুসলিম নারী হিসেবে তার এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই সাহসের একটি ব্যাপার। অথচ আদতে এটা অত আহামরি কোনো ইস্যু না। যদি সদিচ্ছা আর সামর্থ্য থাকে তবে অনাথ, অবহেলিত কিংবা অসহায় যেকোনো শিশুর দায়িত্ব নেওয়া সবার জন্য একান্ত কর্তব্য বলেই তিনি মনে করেছিলেন।

তিনি বিয়ে করেননি। কিন্তু মমতা, স্নেহ আর দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে তাকে একজন শিশুর মা করে তুলেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন জন্ম নয়, ভালোবাসার বন্ধনে গড়ে ওঠা সেই মাতৃত্ব সমাজের চোখে এক নতুন আলো জ্বেলে দেয়।সামশাদ সুলতানা খানম প্রমাণ করেছেন, মায়ের পরিচয় রক্তের চেয়েও গভীর। ভালোবাসা, যত্ন, নিরাপত্তা। এই তিনটি উপাদানই একজন শিশুর সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এই সাহসী নারীর মতো আরও অনেকে যদি এমনভাবে এগিয়ে আসেন, তবে সমাজে অপেক্ষমাণ হাজারো শিশু পাবে আশ্রয়, ভালোবাসা আর ভবিষ্যতের দিশা।

অনেকে ভাবেন, অবিবাহিত নারীরা আইনত অভিভাবকত্ব নিতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট নিয়ম ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে একজন একক নারীও এতিম বা নাম পরিচয়হীন কোনো শিশুর অভিভাবক হতে পারেন। সামশাদ সুলতানা খানম সেই আইনি পথ পেরিয়ে একজন অবিবাহিত কর্মব্যস্ত নারী হয়ে এরকম একটা উদ্যোগ নিতে পেরেছেন। 

আপনার যদি সামর্থ্য থাকে, আপনিও তো একজন শিশুর দায়িত্ব নিয়ে তাকে একটি সুন্দর পরিবার উপহার দিতে পারেন, পূরণ করতে পারেন তার মৌলিক চাহিদা। নিজেদের সন্তান থাকুক কিংবা না থাকুক, এ দেশের প্রতিটি পরিবার যদি একজন করে শিশুর পূর্ণ দায়িত্ব নেয়, তাহলে এসব শিশুর অসহায়ভাবে বেড়ে উঠতে হত না। সমাজেও অপরাধের হার, উদ্বেগ, হতাশা কমে যেত।

যাইহোক, এই গল্প শুধু একজন নারীর মাতৃত্ব গ্রহণের নয়, এটি একটি সামাজিক বার্তা- যে ভালোবাসা জন্মে হৃদয়ে, আইনি স্বীকৃতি তার পথে বাধা নয়, বরং আশার একটি সেতু। আজকের বাংলাদেশে এমন আরও নারীর দরকার, যারা ভালোবাসার টানে একটি শিশুর ভবিষ্যৎ হতে চান। সামশাদ সুলতানা খানম আমাদের সেই পথ দেখাচ্ছেন। নির্ভীক, নীরব এক বিপ্লবের পথপ্রদর্শক সামশাদ সুলতানা খানম। 

/ফারজানা ফাহমি

ডাউন সিনড্রোম নিয়ে আইনজীবী আনা

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০৬:০৯ পিএম
ডাউন সিনড্রোম নিয়ে আইনজীবী আনা
আনা ভিক্টোরিয়া এসপিনো।

আনা ভিক্টোরিয়া এসপিনো হলেন বিশ্বের প্রথম নারী, যিনি ডাউন সিনড্রোম হিসেবে জন্ম নিয়েও হয়েছেন আইনজীবী। মেক্সিকোর জাকাতেকাস শহরে, ১৯৯৯ সালের ৩০ জানুয়ারি এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

বাবা মারিসোল দে সান্তিয়াগো ওচোয়া এবং মা জেসুস এসপিনো জাপাটা। মূলত তাদের হাত ধরেই আনার মধ্যে শিল্প আর শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা গড়ে ওঠে। সাধারণত ডাউন সিনড্রোম থাকলে শিশুর বিকাশ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। স্কুল-কলেজে যেন শারীরিক ও মানসিক বৈষম্যের মুখোমুখি হতে না হয় সে জন্য আনা মাধ্যমিকের পড়া শেষ করেন অনলাইনে। এরপর আইন বিষয়ে ভর্তি হন বেএমেরিতা ইউনিভার্সিদাদ অটোনোমা ডি জাকাতেকাসে। 

অবশ্য আনার পড়াশোনার পথটি তেমন মসৃণ ছিল না। কারণ, তখন উচ্চশিক্ষার কাঠামো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উপযোগী ছিল না। এ সময় তার পাশে দাঁড়ান একজন ‘মায়েস্ত্রা সোমব্রা’ বা ছায়াশিক্ষক যিনি আনাকে পড়াশোনায় সাহায্য করেছিলেন এবং তাকে অনুপ্রেরণাও দিতেন। আইনে ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি আনাকে অনেক সহায়তা করেছিলেন। 

আইন বিষয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই আনা প্রতিবন্ধীদের অধিকার সম্পর্কে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।সেই সময় তিনি বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য দিয়ে দেখিয়ে দেন, ডাউন সিনড্রোম থাকলেই কোনো ব্যক্তির পথচলা থেমে থাকতে পারে না। শুধু দরকার সঠিক সুযোগ ও সমর্থন।সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। 

চিত্রশিল্পী হিসেবেও পরিচিতি আছে আনার। মাত্র কয়েক বছর আগে মেক্সিকো সিটির কংগ্রেস অব দ্য ইউনিয়নের লবিতে অনুষ্ঠিত ‘আমার আকাশ থেকে (Desde mi cielo)’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে তার আঁকা ছবি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ডাউন সিনড্রোম থাকা সত্ত্বেও কেউ যে রংতুলিতে এমন বাস্তব আর প্রাণবন্ত ভুবন সৃষ্টি করতে পারেন, তা দেখে বিস্মিত হয়েছিল অনেকে।

ডাউন সিনড্রোম কোনো রোগ নয়, কোষ বিভাজনের সময় একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোম সংযোজিত হওয়ার কারণে সৃষ্ট এক জিনগত বৈচিত্র্য এটি। মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে। ২১ নম্বর ক্রোমোজোমে আরেকটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোম বিদ্যমান থাকে বিধায় এই সমস্যা দেখা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ৮০০ নবজাতকের মধ্যে গড়ে একজন ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে পারে। বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ ডাউন সিনড্রোম নিয়ে বেঁচে আছে। মূলত কোষ বিভাজনের ত্রুটির কারণে এমনটি ঘটে, যাকে অসুখ হিসেবে না দেখে বৈচিত্র্য হিসেবে দেখাই ভালো।আনা এই বৈচিত্র্যকেই সাফল্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন। শুধু আইনজীবী হয়ে কোর্ট-কাছারিতে থেমে থাকেননি, বরং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে শারীরিক এবং জিনগত প্রতিবন্ধকতায় ভোগা মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

তার এ সাফল্য দেখে স্পেন, পেরু, চিলি প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন সংস্থাও সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে চাকরির বিভিন্ন প্রস্তাব পর্যন্ত এসেছে আনার। ভবিষ্যতে আইনপ্রণেতা হতে চান আনা। বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য সহনশীল ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলাই তার একান্ত ইচ্ছা। 

/ফারজানা ফাহমি

 

ভালো কাজের অলরাউন্ডার জান্নাতুল

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম
ভালো কাজের অলরাউন্ডার জান্নাতুল
শিশুদের সঙ্গে জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবিঃ খবরের কাগজ।

জান্নাতুল ফেরদৌস ঢাকার হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী। যিনি বইয়ের আলোয় মানুষকে আলোকিত করতে নিজ অর্থায়নে দেশের ৭০টি পাঠাগারে বই পাঠিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে এবং একাধিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানুষের সহায়তায় কাজ করছেন। বই মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করেছেন দুর্দিন ম্যাগাজিন বুকশপ। তা নিয়ে এবারের আয়োজন। লিখেছেন ফারজানা ফাহমি

মূলত বাড়িতে বই দেখতে দেখতেই বড় হয়েছেন জান্নাতুল। বাবা-মাকে ছোট থেকেই দেখেছেন সাধ্যমতো মানুষের সহায়তা করতে এবং গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতে। পারিবারিকভাবে সেরকম একটি আবহ ও শিক্ষাই মূলত তাকে মানুষের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাকে ভীষণভাবে নাড়া দিত। সব সময়ই তিনি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাইতেন। সেই মনোভাব থেকেই স্থায়ীভাবে কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে। ২০১৯ সালে তিনি এবং তার কয়েকজন বন্ধু মিলেই সূর্যশিখা ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন।

তিন বছর এ ফাউন্ডেশন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন জান্নাতুল। প্রাথমিকভাবে ঢাকার রমনা পার্কে ছিন্নমূল শিশুদের বিনামূল্যে সপ্তাহে দুদিন পাঠদান ও শিক্ষা সরঞ্জাম বিতরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজের যাত্রা শুরু হয়। এ ছাড়া বিনামূল্যে ব্লাড ক্যাম্পেইন কর্মসূচি, রক্তদাতা খুঁজে দেওয়া, অসহায় পরিবারে ঈদ ও রমজানের সময় বাজার করে দেওয়া, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে শীতবস্ত্র বিতরণ, পথশিশু ও শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ে পিঠা উৎসব, মৌসুমি ফল খাওয়ানোর উৎসব, ছোট পরিসরে কর্মসংস্থানের সুযোগ, অসহায় ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, সে সময় সূর্যশিখা সংগঠন থেকে ফুলের বিনিময়ে আহার নামে একটি প্রকল্প চালু ছিল। রমনা পার্কে ফুল বিক্রি করে যেসব শিশু জীবিকা নির্বাহ করত, সপ্তাহে দুদিন তাদের একটি ফুলের পরিবর্তে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো। করোনাকালীন প্রায় দুই শতাধিক পরিবারে তারা বিনামূল্যে খাবার ও মাসিক বাজার সরবরাহ করেছিলেন। 

এরপর ২০২১ সালের জুনে তিনি সূর্যশিখা সংগঠনের দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এবং বড় পরিসরে মানুষের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরু থেকেই মানুষের জন্য কাজ করার নেশায় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত থেকে কাজ করেছেন জান্নাতুল। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা পথশিশু কল্যাণ ফাউন্ডেশনের খিলগাঁও রেললাইনে অবস্থিত অদম্য স্কুল নং ১৪-এর শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। 
২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকার বিভিন্ন আশ্রম ও বৌদ্ধবিহারে তিনি নিয়মিত শিক্ষা সরঞ্জাম ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। মূলত পাহাড়ে শিক্ষার আলো ও তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যেই তিনি এ কাজ করছেন।

এ ছাড়া শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ অর্থাৎ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে হুইলচেয়ার বিতরণ, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, প্রতি বছর শ্রমজীবীদের নিয়ে পিঠা উৎসব পালন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে এতিমখানাগুলোতে শিক্ষা সরঞ্জাম ও শীতবস্ত্র বিতরণ করে আসছেন তিনি। সেসব স্থানে প্রয়োজনমাফিক ফ্যান-লাইট, কার্পেটের ব্যবস্থা ছাড়াও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন করেছেন।


অসহায় ব্যক্তিদের ছোট পরিসরে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া ও বিভিন্ন সময়ে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বিশেষ করে নারীদের প্রজননকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়েও তিনি  কাজ করে গেছেন এবং তা এখনো চলমান। মূলত নিম্নআয়ের মানুষকে এসব বিষয়ে সচেতন করাই তার মূল লক্ষ্য। 

জান্নাতুলের এ কাজ করার পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজনদের। তাদের সহায়তা ছাড়া তার এতদূর এগোনো কখনোই সম্ভব ছিল না। সঠিক তথ্য ও পরামর্শ দেওয়া, অর্থ দিয়ে সহায়তা করাসহ তারা সবাই জান্নাতুলের পাশে ছিলেন বলেই তিনি এতদূর অগ্রসর হয়েছেন। 
ঢাকার মগবাজারে খুব সাধারণ একটি পরিবারেই বেড়ে উঠেছেন জান্নাতুল। তার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এবং মা গৃহিণী। বাবা-মা এবং তার ছোট ভাইকে নিয়েই তার পরিবার। তার বাবা ভীষণ বইপড়ুয়া একজন মানুষ। এ ছাড়া বাড়িতে কম-বেশি সবাই বই পড়তে ভালোবাসেন। তাই ছেলেবেলা থেকেই বইয়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। 

করোনার সময় তিনি দুইবার কোভিড আক্রান্ত হন। সে সময় বই তাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে অনেক সাহায্য করেছিল। আর ঠিক তখন তার মনে হয়েছিল, তার পড়া এ বইগুলো তিনি সেসব মানুষের কাছে পৌঁছাতে চান যারা বই পড়তে আগ্রহী কিন্তু হয়তো কোনো কারণে পারছেন না।তার বাড়িতে প্রায় ৫ হাজার বই ছিল। সুস্থ হয়ে তিনি ধীরে ধীরে বিভিন্ন পাঠাগারের খোঁজ করতে থাকেন, যেসব পাঠাগারে পাঠক থাকলেও প্রয়োজনীয় বই নেই, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিনামূল্যে তার বাড়ির সংগ্রহে থাকা বইগুলোই পাঠাতে শুরু করেন। আর এভাবেই ২০২১ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন পাঠাগারে বিনামূল্যে বই পাঠানোর যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৭০টি পাঠাগারে বিনামূল্যে বই পাঠিয়েছেন।

বই নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে তার বড় একটি অনুপ্রেরণার জায়গা নিউইয়র্ক প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক, মানবিক ব্যক্তিত্ব ও পাঠাগার আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক শেখ সিরাজুল ইসলাম। যিনি নিজে দেশের বাইরে থাকা সত্ত্বেও সব সময় দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। তরুণ সমাজকে বইমুখী করার জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাকে দেখেই তিনি ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। 

বইয়ের প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকেই ২০২১ সালে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়েই মাত্র ২ হাজার টাকা পুঁজিতে দুর্দিন ম্যাগাজিন বুকশপের যাত্রা শুরু করেন তিনি। সেই থেকে বুকশপের সব কাজ তিনি পরিচালনা করছেন। স্বেচ্ছাসেবী জীবন তথা সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন। বিভিন্ন সময়েই সাহায্যের নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হয়রানি ছিল যার মধ্যে অন্যতম। 

অনেক স্থানেই নিরাপত্তা না থাকার কারণে কাজ করতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে এসেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে কাজের বাইরে ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও অযাচিত মন্তব্য এর শিকার হয়েছেন। তারপরও তার পরিবারের সমর্থন বিশেষ করে তার মায়ের সার্বক্ষণিক সাপোর্ট ছিল বলেই তিনি এতদূর আসতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে জান্নাতুল একজন প্রাণীবিদ এবং গবেষক হিসেবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বৃহত্তর পরিসরে কাজ করতে চান। এ ছাড়া সমাজসেবায় নিয়োজিত থেকে তিনি আমৃত্যু মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চান।

/ফারজানা ফাহমি

 

এক হাতে গিটার, অন্য হাতে সমাজ বদলের নকশা

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
এক হাতে গিটার, অন্য হাতে সমাজ বদলের নকশা
মারিয়া আক্তার। ছবিঃ খবরের কাগজ।

বরগুনার সরু গলির ভেতর দিয়ে ছুটে চলা এক কিশোরী, যার এক হাতে গিটার কেস ও মুখে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি। হতে পারে সে যাচ্ছে নাটকের মহড়ায় কিংবা জলবায়ু সচেতনতা কর্মসূচিতে। হয়তো আবার কলেজের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। এই সাহসী কিশোরীর নাম মারিয়া আক্তার। বয়সে সে তরুণ হলেও চিন্তায় পরিপক্ব। বরগুনা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হয়েও তরুণ বয়সেই তিনি একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় শিল্প-সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, জলবায়ু, শিক্ষা, সমাজসেবা ও নারীর ক্ষমতায়নে।

কথা হলে মারিয়া আক্তার বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি এক অদম্য ভালোবাসা ও গভীর আকর্ষণ অনুভব করছি। কিন্তু এই ভালোবাসাকে অনেক বাধা পেরিয়ে বাস্তবে রূপ দিতে হয়েছে। 

তিনি জানান, একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠেছেন তিনি। যেখানে মঞ্চে মেয়েদের গান গাওয়া সহজভাবে দেখা হতো না। হারমোনিয়াম কিংবা গিটার কিনে অনেকবারই পরিবার থেকে বাধা পেয়েছেন। একাধিকবার তা ভাঙারও চেষ্টা হয়েছে। তবু হাল না ছেড়ে বরগুনা শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি হয়ে শুরু করেন সংগীতচর্চা। কারও সহায়তা ছাড়াই গিটার শেখেন নিজে নিজে। ধীরে ধীরে দুটি বাদ্যযন্ত্র বাজানোতেই হয়ে ওঠেন পারদর্শী এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪-এ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসংগীত এবং হামদ-নাতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

গান ছাড়াও নাটক, আবৃত্তি ও নাচেও সমানভাবে পারদর্শী মারিয়া। বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে মারিয়া ইতোমধ্যে জাতীয় মঞ্চ নাট্য উৎসবে আয়োজিত বকেয়া নামের একটি নাটকে অভিনয় করে হয়েছেন প্রশংসিত। একই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের নাট্য নির্দেশনা কর্মশালা পুতুলের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছেন সফলভাবে। 

শুধু সংস্কৃতিতে নয়, সমাজসেবাতেও মারিয়ার অংশগ্রহণ উজ্জ্বল। তিনি জেলার স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করছেন জেলা স্বাস্থ্য অধিকার যুব ফোরামে। শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন সেফ সংগঠনে। ব্র্যাকের একটি প্রকল্পে মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন দক্ষতা ও মানবিকতা দিয়ে। নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ ইয়ুথ কালচারাল অরগানাইজেশন। যেখানে প্রতিভাবান তরুণ শিল্পী, আবৃত্তিকার, পরিবেশকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা এক প্ল্যাটফর্মে এসে কাজ করতে পারছে।

মারিয়া আরও জানান, খেলাধুলায়ও রয়েছে তার বিস্তৃত পদচারণা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি নিয়মিত ফুটবল, ক্রিকেট ও সাইকেলিংয়ে অংশ নিয়েছেন এবং স্থানীয় প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃতও হয়েছেন। পঞ্চম শ্রেণিতে কাব স্কাউট হিসেবে পেয়েছেন শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি নিজেই বাইক চালানো শিখেছেন। অন্য মেয়েদেরও শিখতে অনুপ্রাণিত করেন। 

মারিয়া বলেন, স্কাউটিংয়ের মধ্য দিয়ে সমাজসেবার প্রতি আমার প্রবল টান তৈরি হয়। যা মানুষের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করছে। খেলাধুলা আমাকে নেতৃত্ব, দলগত কাজের মানসিকতা ও ধৈর্য এনে দিয়েছে। এমনকি আমাকে বাইক চালাতেও সাহস জুগিয়েছে। যদিও জেলা শহরে মেয়েদের বাইক চালানোকে মানুষ ভালো চোখে দেখে না। তবুও আমি মনে করি, মেয়েরা শুধু বাইকের পেছনে কেন বসবে? তারাও চালাবে। নিজেরা নিজেদের গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে পারলে তবেই তাদেরও আত্মনির্ভরতা ও স্বাধীনতা আসবে। 

সবশেষ মারিয়ার জানান, এত প্রতিভা থাকলেও তার স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে তিনি একজন চিকিৎসক হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করবেন। মারিয়া বলেন, আমার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করব। কিন্তু শিল্প আমার আত্মা। তাই আমি চাই দুটিকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগোতে। আর আমি একা নই। আমাদের মতো অনেকেই আছে যারা চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছে। আমি চাই আমাদের গল্পগুলো সামনে আসুক। আমরা সবাই মিলে বদলে দিই এই দেশকে।

বরগুনার তরুণ জলবায়ু সংগঠক গ্রিনপিস সোসাইটির সভাপতি খাইরুল ইসলাম মুন্না বলেন, তারুণ্যের শক্তি কাকে বলে মারিয়া তার একটা প্রমাণ। জলবায়ু আন্দোলনে এমন একজন তারুণ্য শক্তি পাওয়া আমাদের আশার কথা। ওর মধ্যে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেখছি আমরা।
বরগুনা আত্মোন্নয়ন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, মারিয়া সাইকেল চালায়, বাইক চালায়, গিটার বাজিয়ে গান করে, নাটক করে, সমাজ নিয়েও ভাবে। এটাই আসল পরিবর্তন। ও একাই অনেককে সাহস দেয়।

বরগুনা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তানজিলা আক্তার বলেন, মারিয়া অনেকগুলো রঙের সমন্বয়ে তৈরি এক তরুণ প্রতিভা। অনেক দূর এগিয়ে যাক সে। শিল্প সাংস্কৃতিক যেকোনো বিষয়ে বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি তার পাশে আছে।

/ফারজানা ফাহমি 

 

বুকার পুরস্কারে সম্মানিত বানু মুশতাকের ‘হার্ট ল্যাম্প’

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০২:২৬ পিএম
আপডেট: ৩১ মে ২০২৫, ০২:২৭ পিএম
বুকার পুরস্কারে সম্মানিত বানু মুশতাকের ‘হার্ট ল্যাম্প’
বানু মুশতাক।ছবিঃসংগৃহীত।

বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন ‘বুকার পুরস্কার’ পেয়েছেন ভারতীয় লেখিকা বানু মুশতাক। ৭৭ বছর বয়সী এই গুণী সাহিত্যিককে গত ১৯ মে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কন্নড় ভাষায় রচিত তার গল্পসংকলন Heart Lamp-এর জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন দিপা ভাস্তি।

১২টি ছোটগল্পের এই সংকলনে দক্ষিণ ভারতে বসবাসরত মুসলিম নারীদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা দিক, পারিবারিক টানাপোড়েন, সংগ্রাম ও সামাজিক বাস্তবতা সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে। 

কর্ণাটকের ছোট্ট শহর হাসানের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বানু মুশতাকের বেড়ে ওঠা। শৈশবের ভাষা ছিল উর্দু, লেখাপড়ার শুরু মক্তবে। তবে সরকারি কর্মচারী বাবা মেয়ের জন্য চেয়েছিলেন ভিন্ন কিছু। আট বছর বয়সে বানু মুশতাককে ভর্তি করা হয় শিভামজ্ঞার এক কনভেন্ট স্কুলে, যেখানে পড়ানো হতো কন্নড় ভাষায়। শর্ত দেওয়া হলো, ছয় মাসের মধ্যে কন্নড় ভাষা তাকে শিখে নিতে হবে। তবে বেশ দ্রুতই নতুন এ ভাষা রপ্ত করে নেন বানু, পরবর্তী জীবনে এ ভাষাই হয়ে ওঠে তার সাহিত্য চর্চার মাধ্যম।

পুরস্কার গ্রহণের সময় বানু মুশতাক বলেন, ‘একটি বিভাজনময় সময়ে, সাহিত্য আমাদের সেই শেষ আশ্রয় যেখানে আমরা একে অপরের মনোজগতে কিছু সময়ের জন্য হলেও বাস করতে পারি। এই বইয়ের জন্ম সেই বিশ্বাস থেকে যে- কোনো গল্পই ছোট নয়। মানুষের জীবনের বিশাল অভিজ্ঞতার জালে প্রতিটি সুতাই পুরো চিত্র বহন করে।’ পেশাগত জীবনে তিনি একাধারে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী। নারী অধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা ও বৈষম্যবিরোধী আইনি লড়াইয়ের জন্য বানু মুশতাক সুপরিচিত। বানু মুশতাকের এই অর্জন শুধু ভারতীয় সাহিত্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

উল্লেখ্য, বুকার পুরস্কার চালু হয় ১৯৬৯ সালে। প্রথমদিকে এটি শুধু ব্রিটিশ ও কমনওয়েলথ দেশগুলোর লেখকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৯৯৯ সালে তা ইংরেজি ভাষার সাহিত্যিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০০২ সালে এর নাম সংক্ষিপ্ত করে ‘ম্যান বুকার’ রাখা হলেও বর্তমানে এটি পরিচিত হয় ‘বুকার পুরস্কার’ নামে।

/ফারজানা ফাহমি