ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শত বছরের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করলেন তরুণী বিজ্ঞানী

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম
আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ০২:১০ পিএম
শত বছরের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করলেন তরুণী বিজ্ঞানী
দিব্যা ত্যাগি। ছবিঃসংগৃহীত।

শতাব্দীপ্রাচীন একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির তরুণী বিজ্ঞানী দিব্যা ত্যাগি। এক শতাব্দী আগে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হারমান গ্লাউয়ার্টের প্রবর্তিত এরোডাইনামিক সমীকরণের নতুন রূপ প্রকাশ করে তিনি শুধু গাণিতিক জগতকেই নয়, বরং বায়ুশক্তির ভবিষ্যৎকেও নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছেন।

১০০ বছরেরও বেশি আগে গ্লাউয়ার্ট একটি সমীকরণ প্রণয়ন করেন, যার মাধ্যমে বায়ুশক্তির সর্বোচ্চ শক্তির ধারণা পাওয়া যায়। তবে তার সমীকরণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক শক্তি, যেমন ডাউনউইন্ড থ্রাস্ট ও রুট বেন্ডিং মোমেন্টের হিসাব ছিল না, যা বাস্তব জগতের টারবাইনের কার্যক্ষমতায় বিপুল প্রভাব ফেলতে পারে। এই সীমাবদ্ধতা আরাধ্য ছিল, তবে এক তরুণী বিজ্ঞানী তার শক্তি আর সৃজনশীলতার দ্বারা সেই সমস্যা সমাধান করেছেন।

পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক পড়ার সময়ই দিব্যা ত্যাগি এই গবেষণা শুরু করেন। তিনি ভেরিয়েশনের ক্যালকুলাসের সাহায্যে একটি আধুনিক কাঠামো তৈরি করেছেন যা টারবাইনের আদর্শ প্রবাহের শর্ত নির্ধারণ করে, এর শক্তি উৎপাদনের সক্ষমতাকে বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়। এর মাধ্যমে এখন প্রকৌশলীরা টারবাইনের ব্লেডের কাঠামোগত চাপের হিসাব রেখে, আরও শক্তিশালী এবং কার্যকরী ডিজাইন করতে সক্ষম হবেন।

দিব্যার এই নতুন সমীকরণটি ইতিমধ্যেই “উইন্ড এনার্জি সায়েন্স” সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে, এবং বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের মাঝে তা ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। এটি শুধু গাণিতিক এবং তাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, বাস্তব দুনিয়াতেও কার্যকরী প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে বায়ুশক্তির মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, এই সমীকরণটি বায়ু টারবাইনের উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে, ফলে টেকসই শক্তির উৎপাদন ও পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহারে একটি নতুন যুগের সূচনা হবে।

বর্তমানে দিব্যা ত্যাগি মাস্টার্স পর্যায়ে কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিকস (সিএফডি) নিয়ে গবেষণা করছেন এবং  ভবিষ্যতে তার লক্ষ্য বায়ু শক্তি প্রযুক্তির আরও উন্নয়ন ঘটানো। তার এই অসাধারণ আবিষ্কারটি প্রমাণ করেছে, মেধা এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে কোন সমস্যা সমাধান কঠিন বিষয় নয়। বিশ্বকে টেকসই শক্তি ব্যবহারের এক নতুন দিগন্ত দেখাতে তিনি আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

দিব্যার কাজ শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়াতেই নয়, আগামী দিনে পৃথিবীকে সবুজ ও শক্তি সাশ্রয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে, যা আমাদের সবার জন্য আশার নতুন আলো নিয়ে এসেছে।

/ফারজানা ফাহমি

 

এক হাতে গিটার, অন্য হাতে সমাজ বদলের নকশা

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
এক হাতে গিটার, অন্য হাতে সমাজ বদলের নকশা
মারিয়া আক্তার। ছবিঃ খবরের কাগজ।

বরগুনার সরু গলির ভেতর দিয়ে ছুটে চলা এক কিশোরী, যার এক হাতে গিটার কেস ও মুখে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি। হতে পারে সে যাচ্ছে নাটকের মহড়ায় কিংবা জলবায়ু সচেতনতা কর্মসূচিতে। হয়তো আবার কলেজের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। এই সাহসী কিশোরীর নাম মারিয়া আক্তার। বয়সে সে তরুণ হলেও চিন্তায় পরিপক্ব। বরগুনা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হয়েও তরুণ বয়সেই তিনি একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় শিল্প-সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, জলবায়ু, শিক্ষা, সমাজসেবা ও নারীর ক্ষমতায়নে।

কথা হলে মারিয়া আক্তার বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি এক অদম্য ভালোবাসা ও গভীর আকর্ষণ অনুভব করছি। কিন্তু এই ভালোবাসাকে অনেক বাধা পেরিয়ে বাস্তবে রূপ দিতে হয়েছে। 

তিনি জানান, একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠেছেন তিনি। যেখানে মঞ্চে মেয়েদের গান গাওয়া সহজভাবে দেখা হতো না। হারমোনিয়াম কিংবা গিটার কিনে অনেকবারই পরিবার থেকে বাধা পেয়েছেন। একাধিকবার তা ভাঙারও চেষ্টা হয়েছে। তবু হাল না ছেড়ে বরগুনা শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি হয়ে শুরু করেন সংগীতচর্চা। কারও সহায়তা ছাড়াই গিটার শেখেন নিজে নিজে। ধীরে ধীরে দুটি বাদ্যযন্ত্র বাজানোতেই হয়ে ওঠেন পারদর্শী এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪-এ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসংগীত এবং হামদ-নাতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

গান ছাড়াও নাটক, আবৃত্তি ও নাচেও সমানভাবে পারদর্শী মারিয়া। বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে মারিয়া ইতোমধ্যে জাতীয় মঞ্চ নাট্য উৎসবে আয়োজিত বকেয়া নামের একটি নাটকে অভিনয় করে হয়েছেন প্রশংসিত। একই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের নাট্য নির্দেশনা কর্মশালা পুতুলের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছেন সফলভাবে। 

শুধু সংস্কৃতিতে নয়, সমাজসেবাতেও মারিয়ার অংশগ্রহণ উজ্জ্বল। তিনি জেলার স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করছেন জেলা স্বাস্থ্য অধিকার যুব ফোরামে। শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন সেফ সংগঠনে। ব্র্যাকের একটি প্রকল্পে মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন দক্ষতা ও মানবিকতা দিয়ে। নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ ইয়ুথ কালচারাল অরগানাইজেশন। যেখানে প্রতিভাবান তরুণ শিল্পী, আবৃত্তিকার, পরিবেশকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা এক প্ল্যাটফর্মে এসে কাজ করতে পারছে।

মারিয়া আরও জানান, খেলাধুলায়ও রয়েছে তার বিস্তৃত পদচারণা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি নিয়মিত ফুটবল, ক্রিকেট ও সাইকেলিংয়ে অংশ নিয়েছেন এবং স্থানীয় প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃতও হয়েছেন। পঞ্চম শ্রেণিতে কাব স্কাউট হিসেবে পেয়েছেন শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া তিনি নিজেই বাইক চালানো শিখেছেন। অন্য মেয়েদেরও শিখতে অনুপ্রাণিত করেন। 

মারিয়া বলেন, স্কাউটিংয়ের মধ্য দিয়ে সমাজসেবার প্রতি আমার প্রবল টান তৈরি হয়। যা মানুষের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করছে। খেলাধুলা আমাকে নেতৃত্ব, দলগত কাজের মানসিকতা ও ধৈর্য এনে দিয়েছে। এমনকি আমাকে বাইক চালাতেও সাহস জুগিয়েছে। যদিও জেলা শহরে মেয়েদের বাইক চালানোকে মানুষ ভালো চোখে দেখে না। তবুও আমি মনে করি, মেয়েরা শুধু বাইকের পেছনে কেন বসবে? তারাও চালাবে। নিজেরা নিজেদের গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে পারলে তবেই তাদেরও আত্মনির্ভরতা ও স্বাধীনতা আসবে। 

সবশেষ মারিয়ার জানান, এত প্রতিভা থাকলেও তার স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে তিনি একজন চিকিৎসক হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করবেন। মারিয়া বলেন, আমার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করব। কিন্তু শিল্প আমার আত্মা। তাই আমি চাই দুটিকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগোতে। আর আমি একা নই। আমাদের মতো অনেকেই আছে যারা চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছে। আমি চাই আমাদের গল্পগুলো সামনে আসুক। আমরা সবাই মিলে বদলে দিই এই দেশকে।

বরগুনার তরুণ জলবায়ু সংগঠক গ্রিনপিস সোসাইটির সভাপতি খাইরুল ইসলাম মুন্না বলেন, তারুণ্যের শক্তি কাকে বলে মারিয়া তার একটা প্রমাণ। জলবায়ু আন্দোলনে এমন একজন তারুণ্য শক্তি পাওয়া আমাদের আশার কথা। ওর মধ্যে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেখছি আমরা।
বরগুনা আত্মোন্নয়ন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, মারিয়া সাইকেল চালায়, বাইক চালায়, গিটার বাজিয়ে গান করে, নাটক করে, সমাজ নিয়েও ভাবে। এটাই আসল পরিবর্তন। ও একাই অনেককে সাহস দেয়।

বরগুনা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তানজিলা আক্তার বলেন, মারিয়া অনেকগুলো রঙের সমন্বয়ে তৈরি এক তরুণ প্রতিভা। অনেক দূর এগিয়ে যাক সে। শিল্প সাংস্কৃতিক যেকোনো বিষয়ে বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি তার পাশে আছে।

/ফারজানা ফাহমি 

 

বুকার পুরস্কারে সম্মানিত বানু মুশতাকের ‘হার্ট ল্যাম্প’

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০২:২৬ পিএম
আপডেট: ৩১ মে ২০২৫, ০২:২৭ পিএম
বুকার পুরস্কারে সম্মানিত বানু মুশতাকের ‘হার্ট ল্যাম্প’
বানু মুশতাক।ছবিঃসংগৃহীত।

বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন ‘বুকার পুরস্কার’ পেয়েছেন ভারতীয় লেখিকা বানু মুশতাক। ৭৭ বছর বয়সী এই গুণী সাহিত্যিককে গত ১৯ মে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কন্নড় ভাষায় রচিত তার গল্পসংকলন Heart Lamp-এর জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন দিপা ভাস্তি।

১২টি ছোটগল্পের এই সংকলনে দক্ষিণ ভারতে বসবাসরত মুসলিম নারীদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা দিক, পারিবারিক টানাপোড়েন, সংগ্রাম ও সামাজিক বাস্তবতা সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে। 

কর্ণাটকের ছোট্ট শহর হাসানের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বানু মুশতাকের বেড়ে ওঠা। শৈশবের ভাষা ছিল উর্দু, লেখাপড়ার শুরু মক্তবে। তবে সরকারি কর্মচারী বাবা মেয়ের জন্য চেয়েছিলেন ভিন্ন কিছু। আট বছর বয়সে বানু মুশতাককে ভর্তি করা হয় শিভামজ্ঞার এক কনভেন্ট স্কুলে, যেখানে পড়ানো হতো কন্নড় ভাষায়। শর্ত দেওয়া হলো, ছয় মাসের মধ্যে কন্নড় ভাষা তাকে শিখে নিতে হবে। তবে বেশ দ্রুতই নতুন এ ভাষা রপ্ত করে নেন বানু, পরবর্তী জীবনে এ ভাষাই হয়ে ওঠে তার সাহিত্য চর্চার মাধ্যম।

পুরস্কার গ্রহণের সময় বানু মুশতাক বলেন, ‘একটি বিভাজনময় সময়ে, সাহিত্য আমাদের সেই শেষ আশ্রয় যেখানে আমরা একে অপরের মনোজগতে কিছু সময়ের জন্য হলেও বাস করতে পারি। এই বইয়ের জন্ম সেই বিশ্বাস থেকে যে- কোনো গল্পই ছোট নয়। মানুষের জীবনের বিশাল অভিজ্ঞতার জালে প্রতিটি সুতাই পুরো চিত্র বহন করে।’ পেশাগত জীবনে তিনি একাধারে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী। নারী অধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা ও বৈষম্যবিরোধী আইনি লড়াইয়ের জন্য বানু মুশতাক সুপরিচিত। বানু মুশতাকের এই অর্জন শুধু ভারতীয় সাহিত্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।

উল্লেখ্য, বুকার পুরস্কার চালু হয় ১৯৬৯ সালে। প্রথমদিকে এটি শুধু ব্রিটিশ ও কমনওয়েলথ দেশগুলোর লেখকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৯৯৯ সালে তা ইংরেজি ভাষার সাহিত্যিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০০২ সালে এর নাম সংক্ষিপ্ত করে ‘ম্যান বুকার’ রাখা হলেও বর্তমানে এটি পরিচিত হয় ‘বুকার পুরস্কার’ নামে।

/ফারজানা ফাহমি

বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস পিরিয়ড নিয়ে প্রয়োজন সচেতনতা

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০২:১৩ পিএম
আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ০২:১৭ পিএম
বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস পিরিয়ড নিয়ে প্রয়োজন সচেতনতা
বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস।ছবিঃছবি সংগৃহীত।

বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস আজ। পিরিয়ড, মাসিক বা ঋতুস্রাব প্রত্যেক নারীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ সময়কালের মধ্যে নারীর সন্তান ধারণের সক্ষমতা থাকে। তাই এই বিশেষ সময়ে নারীদের সচেতন থাকা প্রয়োজন। তা নিয়ে এবারের আয়োজন। লিখেছেন ফারজানা ফাহমি 

২০১৪ সালে জার্মানিভিত্তিক এনজিও ওয়াশ ইউনাইটেড  বিশ্বব্যাপী কন্যাশিশু ও নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে চালু করেছিল এই দিবসের। ঋতুচক্র গড়ে প্রতি ২৮ দিন পরপর ঘটার ফলে ২৮ তারিখটিকে গ্রহণ করা হয় দিবসটি পালনের জন্য। ঋতুস্রাব বা মাসিকের কারণে কোনো নারী যেন তার স্বাভাবিক জীবনে পিছিয়ে না পড়েন তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ প্রতিপাদ্যটি ঠিক করা হয়েছে। মাসিক ও মাসিকের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর মে মাসের ২৮ তারিখ সারা বিশ্বে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস পালন করা হয়। মাসিক স্বাস্থ্যবিধি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অর্থাৎ সামগ্রিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নারীর প্রজনন জীবনে বিশাল ভূমিকা পালন করে। তাই দিবসটির উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে ঋতুস্রাব, মাসিক বা পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় এবং পিরিয়ডের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাসিক নারীদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে। সাধারণত ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সেই মেয়েদের মাসিক শুরু হয়। গড়ে ২৮ দিন পরপর এটা হয়ে থাকে। এ মাসিক চক্রটা কারও কারও ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ২১ বা ৩৫ দিন পরও হতে পারে। তবে ৫০ থেকে ৫২ বছর বয়সে নারীদের মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যায়। শারীরিক গঠন বা বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে কারও ক্ষেত্রে এই সময়ের তারতম্য হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে এখনো মাসিককে একটি লজ্জা বা ভয়ের বিষয় হিসেবে ধরা হয়। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ বয়সী মেয়েদের জন্য মাসিকের প্রথম অভিজ্ঞতা বেশ ভয়াবহ ও বিব্রতকর হয়ে থাকে। পিরিয়ডের সময় অনেকেই ভয় ও লজ্জায় কাউকে কিছু জানায় না। এটি পরবর্তী সময়ে কিশোরীর মানসিক ও শারীরিক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

নারীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ পিরিয়ড। এর সঙ্গে সন্তান ধারণের সক্ষমতা সম্পর্কিত। এই স্বাভাবিক এই বিষয়টি এখনো বাংলাদেশে স্বাভাবিক আলোচনার বিষয় নয়। এখনো এ বিষয়গুলোকে গোপনীয়, একান্ত মেয়েলি বলে গণ্য করা হয়। মাসিক নিয়ে অনেক কুসংস্কার সমাজে প্রচলিত আছে। যেহেতু পিরিয়ড সময়কালের মধ্যে নারীর সন্তান ধারণের সক্ষমতা থাকে। তাই এই বিশেষ সময়ে নারীদের সচেতন থাকা প্রয়োজন। 

কেন মাসিক চলাকালীন পরিচ্ছন্নতা গুরুত্বপূর্ণ?
সংক্রমণ প্রতিরোধ: মাসিক চলাকালীন যোনিপথের pH লেভেল পরিবর্তিত হয় এবং এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
অস্বস্তি কমানো: পরিচ্ছন্ন না থাকলে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং দুর্গন্ধের সমস্যা হতে পারে।
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: পরিচ্ছন্ন থাকলে মানসিকভাবে আরামদায়ক অনুভূতি হয় এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

পিরিয়ডকালীন শারীরিক স্বাস্থ্য সচেতনতা 
বেশির ভাগ নারী ও কিশোরী মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এখনো জনসমক্ষে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন ফলোআপ সার্ভে ২০১৮ (প্রকাশিত ডিসেম্বর, ২০২০) অনুযায়ী বাংলাদেশে মাত্র ৫৩ শতাংশ স্কুলছাত্রী মাসিকের ব্যাপারে জানে। ৩০ শতাংশ ছাত্রী মাসিক চলাকালে স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। ৩৪ শতাংশ কিশোরী স্কুলে মাসিকের সময় পুরোনো কাপড় ব্যবহার করে। মাত্র ৬২ শতাংশ কিশোরী স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড ব্যবহার করে। স্কুল না থাকলে কিংবা বাসায় থাকলে পুরোনো কাপড়ের ব্যবহার বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ৩৯ শতাংশ কিশোরী পুরোনো কাপড় এবং ৫৬ শতাংশ কিশোরী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে বলে জরিপে জানা যায়। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশ কিশোরী ভালো পানি ও সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে কাপড়গুলো পুনরায় ব্যবহার করে। মাত্র ২১ শতাংশ কিশোরী এ কাপড়গুলো বাড়ির বাইরে রোদে শুকাতে পারে। এই জরিপ থেকে বোঝা যায় মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় আমাদের নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে। 

পিরিয়ডকালীন শারীরিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আসমা-উল-হুসনা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তার পরামর্শগুলো হলো- 
১।পিরিয়ডের সময় কাপড় ব্যবহার না করে স্যানিটারি ন্যাপকিন (ওয়ানটাইম কটন প্যাড) ব্যবহার করা অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। বিশেষ করে কিশোরীরা প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তন করবে। এমনকি বাসার বাইরে স্কুল বা কলেজে থাকলেও এ কাজটি করতে হবে। অধিক সময় ন্যাপকিন পরিবর্তন না করলে জরায়ু মুখে ইনফেকশন হতে পারে। আমরা কিশোরী/অবিবাহিত নারীদের মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করি। কাপ ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি না জানা থাকলে ক্ষতির কারণ হতে পারে। তা ছাড়া কাপ ব্যবহারে দরকার সঠিক স্যানিটেশন। ঘরের বাইরে থাকলে কাপ খুলে পরিষ্কার করা কষ্টসাধ্য। সব সময় কাপ ব্যবহারের পরে ফুটন্ত গরম পানিতে ফুটিয়ে রাখতে হবে। পরিষ্কার করে হাত ধুয়ে কাপটি ধরতে হবে। সেজন্য বাইরে থাকলে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা উচিত নয়। 

২।মাসিক চলাকালীন নিয়মিত গোসল করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। কোনো ধরনের সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ বেশির ভাগ সাবান ক্ষারীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি। ক্ষারীয় পদার্থ ভ্যাজাইনাল এরিয়ার অ্যাসিডিক পরিবেশকে ধ্বংস করে দেয়, ফলে ইনফেকশনের ভয় থাকে। 

৩। মাসিকের সময় প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে কিশোরীদের খাওয়া-দাওয়ায় পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় নারীদের অনেক রক্তক্ষরণ হয়, হরমোনাল ইমব্যালেন্স হয়, মানসিক অবস্থার বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। পেটে ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, মানসিক অবসাদ, বিরক্তি দেখা দিতে পারে। তাই এ সময়ে খাওয়া-দাওয়ার বাড়তি যত্ন নেওয়াটা প্রয়োজন। মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম, তরল খাবার বেশি খেতে হবে, ফলমূল খেতে হবে। যাতে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে পাশাপাশি শারীরিক পুষ্টি নিশ্চিত হয়। 

৪। পিরিয়ডের সময়ে হালকা ব্যায়াম, সাধারণ গতিতে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট হাঁটা খুব দরকার। ফলে পিরিয়ডের সময়ে ভারী রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা, ব্যাক পেইন ইত্যাদি কমে যাবে। আবার যাদের কম রক্তপাত হয় তাদের ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক রক্তপাত হবে। কারণ হাঁটার ফলে শরীরে একটা হরমোনাল রিসাইক্লিং হয়, মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন হরমোন বের হয়, যেটি আমাদের মধ্যে একধরনের সুখানুভূতি তৈরি করে যা শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে, মানসিক অবসাদ কাটাতে সাহায্য করে। তবে এ সময় ভারী ব্যায়াম, সাঁতার, সাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে। 


৫। মাসিক চলাকালীন অনেকের প্রচণ্ড তলপেট ব্যথা, কোমর ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। এ ছাড়া হট কম্প্রেশনও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। 


৬।অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত রক্তপাত অথবা তীব্র ব্যথাসহ যেকোনো জটিলতায় অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 
মাসিক চলাকালীন নারী শরীরের হরমোনাল পরিবর্তন হয়। এই হরমোনটির নাম ইস্ট্রোজেন হরমোন, এটি প্রধানত স্ত্রী হরমোন। একটি মাসিক চক্র শেষ হলে ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। ১৪-১৫ দিনের মাথায় তা পৌঁছে যায় সর্বোচ্চ মাত্রায়, যাকে বলে ওভুল্যাশন। এরপর দ্রুত কমতে থাকে ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ। আবার পরের মাসিকের শুরুর পর থেকে অল্প অল্প করে নিঃসরণ বাড়ে। ইস্ট্রোজেনের এই উত্থান-পতনই মেয়েদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন বা মুড সুইংয়ের জন্য দায়ী। এটি প্রি-মিনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম সংক্ষেপে পিএমএস Premenstrual Syndrome (PMS) নামে পরিচিত।


এ বিষয়ে এ সময় মুড সুইং হয়। তবে গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিবর্তন খুব বেশি হয়। এমনকি সন্তান প্রসবের পরেও ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে মুড সুইং দেখা যায়। নিয়মিত মাসিক চলাকালীনও ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিবর্তনের কারণেই মুড সুইং হয়। প্রি-মিনস্ট্রুয়াল সিনড্রোমের মধ্যে অবসাদ, হঠাৎ রেগে যাওয়া, উদ্বেগ, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া, অস্থিরতা, হতাশা ইত্যাদি লক্ষণগুলো রয়েছে। বেশির ভাগ নারীর ক্ষেত্রেই এ ধরনের সমস্যাগুলো কম-বেশি দেখা যায় এবং এ বিষয়গুলো মাসিক চক্রাকারে চলতে থাকে। প্রতি মাসে মাসিক শুরুর এক সপ্তাহ আগ থেকেই অর্থাৎ মাসিকচক্রের ১৪ থেকে ২৮ দিনের মধ্যেই পিএমএস হয়। এ সময় যে শুধু মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয় তা নয় বরং শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয় যেমন মাইগ্রেন বা মাথা ধরা, খাবার অনিচ্ছা, বমি হওয়া, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি। তাই এ সময় নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য তথা সার্বিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। 


মাসিক হলো একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া তাই এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সম্ভব। মাসিক সম্পর্কে কোনো ধরনের লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করা উচিত নয়। মাসিক চলাকালীন পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

এ সময়ে পরিবার ও কাছের মানুষগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে পিরিয়ডের কথা জানানোর এবং রিল্যাক্স করার পরিবেশ থাকলে নারী অনেকটাই সুস্থ বোধ করবে। এ সময় যদি অন্তত এক সপ্তাহের জন্য একজন নারীর কাজের চাপ তার সংসারে এবং কর্মক্ষেত্রে কমানো যায় সে ক্ষেত্রে সে অনেকটাই চাপমুক্ত থাকতে পারে। সেজন্য চারপাশের মানুষের সহযোগিতা ছাড়া এর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য মাসিক যে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এই সময় যে নারীর শরীরে এ ধরনের স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো হয় সে সম্পর্কে অধিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

/ফারজানা ফাহমি 

সম্পূর্ণা অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
সম্পূর্ণা অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান
অনুষ্ঠানের একটি মুহূর্ত। ছবি : সংগৃহীত

সমাজের এগিয়ে যাওয়া নারীদেরকে উৎসাহিত করতে তৃতীয়বারের মতো গ্রীন-ই সম্পূর্ণা অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে  
প্রধান অতিথি ছিলেন মানবাধিকার কর্মী শাহিন আনাম। 

অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর। এছাড়াও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী, সংগীতশিল্পী কোনাল, মডেল প্রিয়া জান্নাতুল, মালেকা চৌধুরীসহ অনেকেই। 

সম্পূর্ণা বাংলাদেশ এর সভাপতি স্বর্ণলতা দেবনাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা শেষে সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেন অতিথিরা। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সম্পূর্ণা বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সুব্রত দে এবং সম্পূর্ণা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা আহমেদ রোজিসহ সংগঠনের অন্য সদস্যরা।

সফল উদ্যোক্তা জেসিকা

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম
আপডেট: ২১ মে ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম
সফল উদ্যোক্তা জেসিকা
ইফ্ফাত আলম জেসিকা।ছবিঃসংগৃহীত।

‘সর্বজয়ার’ স্বত্বাধিকারী ইফ্ফাত আলম জেসিকা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। যিনি নিজস্ব ডিজাইনে পোশাককে আরও নান্দনিক করে তোলেন। কেমন ছিল তার উদ্যোক্তা হওয়ার পথ। তা নিয়ে এবারের আয়োজন। লিখেছেন ফারজানা ফাহমি

ছোটবেলা থেকেই রং নিয়ে খেলা তাকে আকর্ষণ করত। খাতা-কলম পেলেই তিনি আঁকতে শুরু করতেন। কখনো দৃশ্যপট, আবার কখনো নিজের কল্পনার জিনিস। সময়ের সঙ্গে বুঝতে পারেন, এটা শুধু শখ নয়, বরং এখানেই তার সব ভালো লাগা, কাজের স্বাধীনতা।ডিজাইন তার কাছে শুধু নান্দনিকতা নয়, এটা গল্প তৈরির মাধ্যম। তাই ধীরে ধীরে আঁকাআঁকি ও ডিজাইনকে পেশাগতভাবে নেওয়ার কথা ভাবেন জেসিকা। যেখানে তিনি তার সৃজনশীলতা ব্যবহার করে সবার মন জয় করতে পারবেন। তাই সবকিছু বিবেচনা করেই তিনি ব্যবসার পথে আসার সাহস করেন।


মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বড় হয়েছেন জেসিকা। যেখানে শৃঙ্খলা, পরিশ্রম ও দায়িত্ববোধ, সততা এবং কীভাবে সীমিত আয়েও শৌখিনতার চর্চা করা যায় এগুলো পরিবার থেকেই শিখেছিলেন তিনি। ছোটবেলায় বাবা ঈদের জামা হিসেবে সাধারণ গজ কাপড় কিনে দিতেন। সেটিকে তিনি নিজ হাতে লেইস-পুঁতি বসিয়ে ডিজাইন করে বানিয়ে পরতেন। এ কাজ করার জন্য পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের কাছে বেশ প্রশংসা পেতেন। আঁকাআঁকি, ডিজাইন করা, কিছু নতুন তৈরি করা এগুলো তার অবসরে সময় কাটানোর অনুষঙ্গ ছিল। 

আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের মতোই মা-বাবার স্বপ্ন ছিল, মেয়ে পড়াশোনা করে চাকরি করবে। স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনা শেষ করে ছোটখাটো একটা চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সব সময় নিজের কিছু করার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার স্বাধীনতা খুঁজে বেড়াতেন তিনি।

তাই তিনি তার সহকর্মীকে তার করা কিছু কুশন কাভার দেখালে তিনি সেগুলো খুবই পছন্দ করেন। অনেকটা আবেগের বশেই  ও সহকর্মীর উৎসাহে ফেসবুকে তার করা কিছু কাজ আপলোড করেন। এরপর তিনি তার বাসার জন্য কিছু কুশন কাভার বানিয়ে দিতে বলেন। সেটাই ছিল তার প্রথম কিছু বিক্রি। তার হাজারখানেক টাকা লাভ হয়, তা দিয়ে আরও কিছু গজ কাপড় কিনেছিলেন। 

কুশন কাভার দিয়ে শুরুটা ছিল তার। এখন তিনি প্রতিদিন গড়ে ১২-১৫ পিস ব্লাউজের অর্ডার নেন, সঙ্গে শাড়ির কাজও করেন। তার সিগনেচার প্রোডাক্ট  ব্লাউজের জন্যই বিশেষ করে সর্বজয়ার পরিচিতি। শূন্য থেকে শুরু করে এখন তার সেল হয় মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা।
এখন  প্রতিনিয়ত প্রশংসা এবং অনুপ্রেরণা পেয়ে যাচ্ছেন তার ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে। তাই তিনি প্রতিদিন চেষ্টা করেন অনুপ্রেরণাগুলোকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করতে এবং শিখতে। 

শুরুটা ছিল খুব ছোট, শুধু একটা স্বপ্ন আর অল্প কিছু উপকরণ নিয়ে। কিন্তু ছিল অগাধ ইচ্ছাশক্তি। প্রথমে আঁকাআঁকি আর সেলাইয়ের কাজগুলো শুধু নিজের জন্য করতেন, পরে ধীরে ধীরে বন্ধুবান্ধব পরিচিত মহলে অর্ডার পেতে শুরু করেন। সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।

এখন সর্বজয়া প্রায় ৩০-৩২ জনের টিম। রেগুলার তার ওয়ার্কশপে সাত থেকে আটজন কাজ করেন। আর বাকিরা বাসায় বসে সবাই হাতের কাজ করেন। আর সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে তার টিমে সবাই নারী। কেউ পড়াশোনা আর কেউ সংসারের কাজ সামলে অবসরে তার এখানে কাজ করছেন।

নারী হিসেবে কাজটা শুরু করা এতটা সহজ ছিল না। শুরুতে তাকে শুনতে হতো ‘মেয়েদের জন্য এসব না, ব্যবসা করা ছেলেদের কাজ।’ পরিবার থেকে বলত পড়াশোনা করেছ কি কাপড় বেচতে বা ‘এটা তো শখ, পেশা হিসেবে কতটা টিকবে? চাকরি ছেড়ে ভুল করেছ’ এমনকি এটাও বলতো ‘বিয়ে হলে আর কতটা সময় থাকবে এসবের জন্য?’-এ লড়াইটা সহজ ছিল না তার। তাকে প্রতিদিন নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হতো।

একসময় যখন কাজের প্রশংসা আসতে শুরু করল, ক্লায়েন্টরা তার ওপর আস্থা রাখতে শুরু করল, তখন তিনি বুঝলেন তিনি শুধু সেই পর্দাটাকে সরাইনি, বরং অন্যদের জন্যও দেখিয়ে দিয়েছেন যে, নারীর স্বপ্নেও শক্তি আছে, তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার সাহস আছে।তার মতে, এই সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে, নারীরা ডিজাইন এবং ক্রিয়েটিভ কাজে পারদর্শী হলেও পেশা হিসেবে নেওয়ার সাহস করে কম।

 তার সর্বজয়া টিমে সবাই নারী এবং সবাই সংসার ও পড়ালেখা সামলে কাজ করছেন। অনেকে তার এখানে কাজ শিখে নিজের উদ্যোগে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। সমাজ, পরিবার নারীদের পাশে দাঁড়ালে তারা সাহস হারাবে না বলে মনে করেন জেসিকা। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘এই সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ আগামী দিনে আরও বাড়বে। কারণ, এখন নারীরা শুধু আয় নয়, নিজেকে নিয়েও ভাবছেন।’ 

জেসিকার চান তার সর্বজয়া একদিন হয়ে উঠুক একটি স্বীকৃত ব্র্যান্ড, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাবে আন্তর্জাতিক বাজারে। আর সেই ব্র্যান্ডের প্রতিটি সেলাই বাঁধা থাকবে একেকটি নারীর গল্প, সংগ্রাম আর বিজয়ের চিহ্ন।

/ফারজানা ফাহমি