ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:০০ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:৪৭ এএম
ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের ভাঙন প্রতিরোধে ফেলা জিওটিউব ও ব্যাগ। ছবি : খবরের কাগজ

অব্যাহত ভাঙনে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা। অথচ ভাঙন প্রতিরোধে গত চার বছরে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এত উন্নয়ন-কর্মকাণ্ডের পরও ঠেকানো যায়নি সৈকতের ভাঙন। উল্টো সাগরে বিলীনের পথে সৈকতের জিরো পয়েন্ট। এমন অবস্থায় ভাঙন প্রতিরোধে পাইলটিং-কাজ ছাড়াই ৬৮টি গ্রোয়েন বাঁধ ও বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণসহ আবারও ৭৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে পাউবো। তবে এসব উন্নয়ন-কর্মকাণ্ড কতটুকু বাস্তবসম্মত এবং টেকসই হবে, সে বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সৈকতের বালু দিয়ে সৈকত উন্নয়নসহ নানা অভিযোগ উঠেছে পাউবোর বিরুদ্ধে। 

স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০০ সালে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে সমুদ্রসৈকতের দূরত্ব ৪০০ মিটার থাকলেও বর্তমানে সেই দূরত্ব নেমে এসেছে প্রায় ২০০ মিটারে। 

সরেজমিন দেখা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বঙ্গোপসাগরের তাণ্ডব ও অব্যাহত বালুক্ষয়ে দীর্ঘ প্রায় ১২ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হওয়া অংশে ছিল দর্শনীয় স্থান নারিকেল বাগান ও জাতীয় উদ্যান। বর্তমানে ভাঙনের মুখে রয়েছে সৈকতের ট্যুরিজম পার্ক, ইসলামিয়া মাদ্রাসা পয়েন্ট, বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন স্পট। 

এদিকে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে গাছের মূল থেকে বালু সরে যাওয়ায় বনাঞ্চলের পাশে অসংখ্য গাছ উপড়ে গেছে। এ ছাড়া সৈকত চলে এসেছে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের ২০০ মিটারের মধ্যে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, গত চার বছর জিরো পয়েন্টের দুই পাশে কোটি টাকা ব্যয়ে জিওব্যাগে সৈকতের বালি দিয়ে তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার এলাকায় জিওটিউব এবং জিওব্যাগ স্থাপন করা হয়, যা কিছুদিন পরেই সমুদ্রে ভেসে যায়। এ ছাড়া ২০২১ সালে ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সৈকতের দেড় কিলোমিটারে জিওটিউব ও জিওব্যাগ স্থাপন করা হয়। বিগত বছরের তুলনায় কম জায়গায় দ্বিগুণ ব্যয়ে স্থাপন করা হলেও এখন তা দৃশ্যমান নয়। এ ছাড়া ২০২২ সালে সৈকতের দুই কিলোমিটার এলাকায় ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জিওব্যাগ ও জিওটিউব স্থাপন করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরে ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ১০০ মিটার জিওব্যাগ ও জিওটিউব স্থাপনের কাজ চলমান আছে। তবে সেটি পর্যটকদের জন্য এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব জিওব্যাগ সৈকতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় সেখানে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে বড় বড় কুয়া তৈরি হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই ও আগস্ট পর্যন্ত জিওটিউব ও জিওব্যাগের ফাঁকের কুয়ার পানিতে ডুবে মারা যায় ঢাকার বংশাল থেকে আসা নাহিয়ান মাহাদী নাফী (১৫) নামে এক কিশোর। এ ছাড়া সৈকতে গোসল করতে নেমে জিওটিউব ও জিওব্যাগের সঙ্গে ঢেউয়ের ঝাপটায় আঘাত পেয়ে আহত হয়েছেন শতাধিক পর্যটক। কেউ কেউ মৃত্যুর দুয়ার থেকেও ফিরে এসেছেন।

পাউবোর হাতে ৭৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প

কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙন প্রতিরোধে ২০২০ সালে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) জরিপ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন এবং সুপারিশ অনুযায়ী পাউবো ৯৪৯ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করলেও ২০২০ সালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম সরেজমিন কুয়াকাটা এলে পরে এই প্রকল্প ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করা হয়। এতে সৈকতের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় ১৪০ মিটার পরপর ৭০ মিটার দীর্ঘ ৬৮টি গ্রোয়েন বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেগুলো পাড় থেকে সাগরের দিকে করা হবে বলে জানা যায়। এ ছাড়া বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। তবে সর্বশেষ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা থেকে আবারও ৭৫৯ কোটি টাকা করা হয়েছে এ প্রকল্পটি। প্রকল্প তৈরির কাজ চলমান থাকলেও সেটি আদৌ কুয়াকাটার সৌন্দর্য রক্ষা করে ভাঙন প্রতিরোধ করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে কোনো পাইলটিং কাজ করা হয়নি। ফলে এর সফলতা ও বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালিদ বিন অলীদ বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় ইতোমধ্যে আমাদের বড় একটি প্রকল্প পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রকল্পটির আওতায় ৭৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সৈকতের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় ১৪০ মিটার পরপর ৭০ মিটার দীর্ঘ ৬৮টি গ্রোয়েন বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু আধুনিক স্থাপনাও নির্মাণ হবে। আশা করছি, প্রকল্পটি শিগগিরই পাস হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে কুয়াকাটা সৈকত তার হারানো রূপ ফিরে পাবে।’

এমএ/

নবীনগরে বিধবাকে গণধর্ষণ, ছড়ানো হয় অশালীন ভিডিও

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম
নবীনগরে বিধবাকে গণধর্ষণ, ছড়ানো হয় অশালীন ভিডিও
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে এক বিধবা নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গোটা এলাকায় নেমে এসেছে স্তব্ধতা, আর শিউরে উঠেছে মানবিকতা। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সাহস করে মামলা করতেই উল্টো তাকে খুনের হুমকি, সামাজিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা ও বিকৃত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল রাতে নবীনগর উপজেলার জিনোদপুর ইউনিয়নের বাঙ্গরা নয়া পাড়ায় একা থাকার সুযোগে ওই বিধবা নারীর ঘরে হানা দেয় স্থানীয় তিন দুর্বৃত্ত-মুসা মিয়া, কামাল মিয়া ও হৃদয় মিয়া। তারা মিলে নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। নারীর চিৎকারে ছুটে আসেন আশপাশের মানুষ, তবে এর আগেই পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা।

পরবর্তী সময়ে আহত অবস্থায় ওই নারীকে ভর্তি করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে। তারপর ১০ এপ্রিল সকল ভয়-লজ্জা জয় করে ভুক্তভোগী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত নবীনগর থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়, মামলা করার পর শুরু হয় হুমকি-ধমকি আর ভয়ভীতি। ভুক্তভোগী নারীর কণ্ঠে কাঁপা স্বর, ‘আমাকে এবং আমার ছেলেকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমরা এখন জীবন বাঁচাতে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি’।

আশ্চর্যজনকভাবে, মামলার পরদিনই অভিযুক্ত মুসা মিয়ার পরিবার ‘মানববন্ধন’ নামক এক নাটক মঞ্চস্থ করে-যেখানে ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দেওয়া হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় একটি বিভ্রান্তিকর ভিডিও, যাতে দেখা যায় এক নগ্ন পুরুষ ভুক্তভোগীর ঘরে অবস্থান করছেন এবং এক নারী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে সেই দৃশ্য ধারণ করছেন।

তবে ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার নারী আতঙ্কিত অবস্থায় সবার কাছে আকুতি জানাচ্ছেন-‘আমাকে বাঁচান।’

নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খান জাহান আলী চৌধুরী/মাহফুজ 

 

ঝিকরগাছায় পানিতে ডুবে চাচাতো ভাইবোনের মৃত্যু

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০১ পিএম
ঝিকরগাছায় পানিতে ডুবে চাচাতো ভাইবোনের মৃত্যু
ছবি: খবরের কাগজ

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত দুই শিশু সম্পর্কে চাচাতো ভাইবোন। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহতরা হলো- ঝিকরগাছা উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বাচ্চুর ছেলে তিন বছরের শাফিন এবং বাচ্চুর ভাই জহির উদ্দিনের মেয়ে একই বয়সের মেহেরিনি। 

নিহত শাফিনের পিতা সাইফুল ইসলাম বাচ্চু জানান, শাফিন ও মেহেরিন সকাল ১১টার দিকে বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। হঠাৎ তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আশেপাশের বাড়িতেও তাদের খোঁজা হয়। সর্বশেষ সন্দেহবশত বাড়ির পাশের পুকুরে নেমে তল্লাশি করা হয়। এসময় ডুবন্ত অবস্থায় তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। 

তিনি আরও জানান, নিষ্পাপ দুটি শিশুর অকাল মৃত্যুতে তাদের পরিবারের লোকজন শোকে ভেঙে পড়েছেন।

ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। 

এইচ আর তুহিন/মাহফুজ

 

বাংলাদেশি জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে ২টি নৌকা নিয়ে গেছে বিএসএফ

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৮ পিএম
বাংলাদেশি জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে ২টি নৌকা নিয়ে গেছে বিএসএফ
সীমান্তবর্তী কৈখালীর পাঁচ নদীর মোহনা। ছবি: খবরের কাগজ

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৈখালী সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে একদল জেলেকে মারধর করে নৌকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে। 
  
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্তবর্তী কৈখালীর কালিন্দি নদীর বয়ারসিং সংলগ্ন উলোখালীর চর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এসময় জেলেদের মারধর করে তাদের দু’টি নৌকা বিএসএফ সদস্যরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা। 

হামলার সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া জেলেরা সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে লোকালয়ের উদ্দেশে রওনা হন বলে দাবি তাদের স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির।

বিএসএফের হামলার শিকার জেলেরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে রমজান আলী, শাহাজান আলী, ফরেজ গাজীর ছেলে শাহাদাৎ হোসেন, শাহাজান গাজী, আতাউর রহমান, সৈয়দ গাজীর ছেলে আব্দুল রহমান, মানিকপুর গ্রামের কেরামত আলী ও কৈখালীর নুর মোহাম্মদ। 

ঘটনার শিকার শাহাদাৎ হোসেন জানান, পশ্চিম সুন্দরবনের কৈখালী ষ্টেশন থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে চারদিন আগে তারা সুন্দরবনে যান। তিনটি নৌকার ১২ জন জেলে দু’দিন ধরে বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত উলোখালীর চরে পাটা জাল পেতে মাছ ধরছিলেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দু’টি স্পিডবোট নিয়ে বিএসএফ সদস্যরা আকস্মিকভাবে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের মারধর শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, এসময় তারা পেতে রাখা জাল ও সেখানে থাকা নৌকা ফেলে বনের মধ্যে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। এসময় জাল একইভাবে পাতা থাকলেও নৌকা দু’টি নিয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত বিএসএফ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। বর্ডার এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়ার কারণে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে জানান এই জেলে।

স্থানীয় রমজাননগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ লাল্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিএসএফের মারধরের শিকার আট জেলের মধ্যে ছয়জন তার এলাকার। বিএসএফ নৌকা নিয়ে উলোখালীর চর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় তারা উপায়ন্তর না পেয়ে পায়ে হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে ও নদী সাঁতরে লোকালয়ে ফিরছেন। ভারতীয় বিএসএফ অন্যায়ভাবে তাদের ওপর এ কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি এই জনপ্রতিনিধির।

পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) আব্দুস সালাম বলেন, অনুমতিপত্র নিয়ে জেলেরা পাটা জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন। সেখান থেকে বিএসএফ দুইটি নৌকা নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। জেলেদের অফিসে আসতে বলা হয়েছে। আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।

এ বিষয়ে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. মশিউর রহমান জানান, এ বিষয়ে এখনো কেউ তাদের অবহিত করেনি। খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এ ঘটনায় বিজিবি কৈখালী ক্যাম্পের সুবেদার আবু বক্কার জানান, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বিষয়টি তাদের অবহিত করেছেন। ঘটনাটি বয়ারসিং এলাকার হওয়ায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ জানাতে সেখানকার বিজিবি (রিভারাইন) ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, এ বিষয় নিয়ে সীমান্তবর্তী কৈখালী, রমজাননগর ও টেংরাখালী এলাকার কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতীয় অবৈধ পণ্য চোরাচালানের অন্যতম রুটের একটি অংশ সীমান্তবর্তী কৈখালীর সুন্দরবনের ওই (কালিন্দি নদীর বয়ারসিং) এলাকা। কালিন্দি নদী পাড়ি দিয়ে মাদক, ভারতীয় গরু, ক্যান্সার প্রতিরোধক কেমোসহ ভারতীয় অবৈধ পণ্যের চালান এ রুট হয়ে দেশে ঢোকার পর সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের হাতে বড় বড় পণ্যের চালান ধরা পড়তো। তবে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কখনো কখনো ছোট ছোট চালান ধরা পড়লেও বড় চালানের হদিস মিলছে না। কারণ মাদক ও চোরাকারবারীরা কৌশল পাল্টে ফেলেছে। তারা জেলেদের ছদ্মবেশে এসব পণ্য চোরাচালান করছে। কালিন্দি নদী ও সুন্দরবনে মাছ ধরার অজুহাতে মাদক ও চোরাকারবারীরা অবৈধভাবে ভারত থেকে ভারতীয় গরু, মাদক, ক্যান্সার প্রতিরোধক কেমোসহ বিভিন্ন ভারতীয় অবৈধ পণ্য বাংলাদেশ নিয়ে আসছে। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ পথে ধুড় (মানুষ) ও বিভিন্ন পণ্য পার করছে।

সুলতান শাহাজান/মাহফুজ


 

 

ইটনায় ‘সমন্বয়কের’ চাপে ওসি বদলি, পুনর্বহালের দাবিতে থানা ঘেরাও

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৯ পিএম
ইটনায় ‘সমন্বয়কের’ চাপে ওসি বদলি, পুনর্বহালের দাবিতে থানা ঘেরাও
ছবি : খবরের কাগজ

কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মি‌ছিল ও থানা ঘেরাও করেছে স্থানীয় লোকজন।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে এ কর্মসূ‌চিতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। 

দুপুরে ইটনা মধ্যবাজার থেকে বিক্ষোভ মি‌ছিল‌টি শুরু হয়। পরে থানা ঘেরাও করেন নেতা-কর্মীরা। সেখানে আধাঘণ্টা ঘেরাও কর্মসূ‌চি চলে। সেখান থেকে মি‌ছিল‌টি উপজেলা প‌রিষদের সামনে গিয়ে অবস্থান করে। 

বেলা ২টার দিকে মু‌ক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে সমাবেশ অনু‌ষ্ঠিত হয়।

ইটনার বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ বিক্ষোভ অনু‌ষ্ঠিত হলেও এতে উপজেলা বিএন‌পি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বে‌শি ছিল।

সেখা‌নে বক্তব্য রাখেন, ইটনা উপজেলা বিএন‌পির সভাপ‌তি এসএম কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সি‌দ্দিকুজ্জামান ঠাকুর স্বপন, জয়‌সি‌দ্ধি ইউপি চেয়ারম্যান ম‌নি‌র উদ্দিন, ইটনা উপজেলা বিএন‌পির যুগ্ম সম্পাদক পলাশ রহমান ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজাদুর রহমান সুমন।

জানা গেছে, সম্প্রতি ওসি ও স্থানীয় এক ‘সমন্বয়কের’ ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইটনা থানার ওসি মনোয়ার হোসেনকে বদলি করেন পুলিশ সুপার। ওই ফোনালাপে সমন্বয়কের কাছে ওসি পাবলিককে জিলাপি খাওয়ানোর আবদার করতে শোনা যায়।

বিক্ষোভকারীদের অ‌ভিযোগ, ‘আওয়ামী লীগ ও এর দোসরদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ষড়যন্ত্রে ও‌সিকে বদলি করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে প‌রি‌চিত ছাত্রলীগ করা ক‌থিত এক সমম্বয়কের ষড়যন্ত্র ও প‌রিক‌ল্পিত ফোনালাপের অ‌ডিও সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস করে ও‌সিকে বদ‌লি ক‌রা হয়। তাকে দ্রুতপুনর্বহাল করতে হবে।

ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম কামাল উদ্দিন বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ওসি হিসেবে ইটনা থানায় যোগ দেন মনোয়ার হোসেন। এর পর থেকে তিনি নানা অপরাধে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে তৎপর হন। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেন। এসব কারণে আওয়ামী লীগের লোকজন কথিত সমন্বয়ক শান্তর মাধ্যমে ওসিকে সরানোর ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। ওসির ফোনালাপের অডিও ফাঁস করা এই ষড়যন্ত্রেরই অংশ।’

জয়সিদ্ধি ইউপি চেয়ারম্যান ম‌নির উদ্দিন বলেন, ‘১২৮ বস্তা ভিজিএফের চাল উদ্ধারের ঘটনায় গত ২০ মার্চ রাতে ইটনা উপজেলার বাদলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আদিলুজ্জামান ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেন। তার এই গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী দোসররা ইটনা থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেনকে সরাতে নানাভাবে তৎপর হয়ে ওঠে। এই তৎপরতার অংশ হিসেবে সমন্বয়ক দাবিদার আফজাল হোসেন শান্ত নিজে থেকে ওসি মনোয়ার হোসেনকে ফোন করে কলরেকর্ড ফাঁসের নাটক সাজান। আমরা ইটনা থানায় এই ওসির পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে ওসি মনোয়ার বলেন, ‘সরকারি চাকরি বদলির চাকরি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বদলির আদেশ দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। আমি ইটনাতে থাকা অবস্থায় চেষ্টা করেছি মানুষকে সেবা দিতে। কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হইনি।’

তাসলিমা আক্তার/অমিয়/

রংপুরে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম
রংপুরে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতি বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ছবি: খবরের কাগজ

জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতি বাতিলসহ ৬ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জড়ো হতে থাকেন। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরে গিয়ে জমায়েত হয়।সেখানে দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা।

এ সময় রংপুরের ইমেজ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রিট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, আইইটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রংপুরের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

তাদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো-

হাইকোর্টের রায়ে অবৈধভাবে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পাওয়া ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের রায় বাতিল করতে হবে। সেইসঙ্গে পদবি পরিবর্তন ও মামলার সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে।

ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করে উন্নতমানের চার বছর মেয়াদি কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে তা সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিচু পদে নিয়োগ বন্ধ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবলকে নিষিদ্ধ করে পরিচালক, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বিভিন্ন পদে কারিগরি শিক্ষিত জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

পৃথক ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা ও কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

টেকনিকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।

পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রমিজ আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলার আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও অন্যান্য সমন্বয়কদের আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ফারহান নাজিব বলেন, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, না মানলে আমরা পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনে যাব। রংপুরে যত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে সবাই একসঙ্গে এই আন্দোলন গড়ে তুলেছি। এই ক্ষোভ আমাদের দীর্ঘদিনের। 

রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জান্নাতুল বলেন, ‘ যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি আদায় না হয় ততক্ষণ রাজপথে থাকব আমরা।’ 

সেলিম/পপি/