
চাঁদপুরে দশটি সিনেমা হলের সবকটি এখন বন্ধ। দর্শক সংকটের কারণে একে একে সিনেমা হলগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। ক্যাবল নেটওয়ার্কের পর ইউটিউব ও ফেসবুকের ফলে সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন মানুষ। এদিকে সিনেমা হল না থাকায় বিনোদনের জন্য তরুণ-প্রজন্ম মোবাইল ফোন নির্ভর হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, চাঁদপুর সদরসহ বেশ কিছু উপজেলায় সিনেমা হলগুলো পরিত্যক্ত ও ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে। সিনেমা হলগুলো এখন ব্যবসা-বাণিজের গোডাউন। কোনো কোনোটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আবার কোনোটি ভেঙে নিয়ে গেছে পদ্মা-মেঘনা নদী। এক এক করে দশটি সিনেমা হল এখন বন্ধ।
স্থানীয়দের দাবি, কয়েক বছর আগেও হলগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। প্রতি শোতে ৪-৫ শ টিকিট বিক্রি হতো। জেলাবাসীর প্রত্যাশা অন্তত একটি সিনেমা হল চালু করা হোক।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার আকরাম ও জিসান বলেন, ‘২-৩ বছর আগেও রাজমহল সিনেমাহল জমজমাট ছিল। আমরাও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছবি দেখেছি। কিন্তু লোকসানের মুখে থাকায় হল বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।’
হল কর্তৃপক্ষ জানায়, সিনেমা হলে দর্শক কম হয়। খরচ উঠে আসে না। তাই হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আলমগীর হোসেন নামে এক স্থানীয় বলেন, শহরে চিত্রলেখা ও ছায়াবাণী হল ছিল খুব জনপ্রিয়। মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছবি দেখতে আসত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওইসব ভবন ভেঙে এখন মার্কেটে হয়েছে। পুরানবাজার এলাকায় কোহিনূর সিনেমা হল ছিল। সেখানে বিভিন্ন উপজেলা ও চরাঞ্চলের মানুষ ছবি দেখতে আসত। কিন্তু ফেসবুক ও ইউটিউবের কারণে এখন সিনেমা হলে মানুষ আসে না। এ জন্য সবশেষ কোহিনূর হলও বন্ধ হয়ে গেছে।
চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখা ও ছায়াবাণী এবং সদরের পুরানবাজার এলাকার কোহিনূর, হাজীগঞ্জের সান্ত্বনা ও রনি সিনেমা হল, ফরিদগঞ্জের মনিহার। নদীতে বিলীন হয়েছে হাইমচরের চরভৈরবীর মেঘনা সিনেমাহল ও মৌসুমী হল। আলগী বাজারের রূপালী, মতলবের কাজলী ও রাজমহল সিনেমা হলগুলো এখন অতীত। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চাঁদপুর অনেক উন্নত। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অন্তত একটি হল চালু করার ঘোষণা দিতেন মালিকপক্ষ।
হাজীগঞ্জের সান্ত্বনা ও রনি সিনেমা হলের মালিক আব্দুল মান্নান খান বাচ্চু বলেন, ‘দেশে একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। এমন জমজমাট ব্যবসা আর ছিল না। দেশে আগে সাড়ে ১৪ শ সিনেমা হল ছিল। কিন্তু এখন মাত্র শতাধিক সিনেমা হল আছে। সব বন্ধ হয়েছে গেছে। যার মূল কারণ ফেসবুক ও ইউটিউব। বর্তমানে যেগুলো টিকে আছে, সেগুলো যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের প্রচুর লোকসান হয়েছে। যন্ত্রপাতি ও মেশিসসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।’
নাট্যনির্দেশক ও অভিনেতা শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘নতুন প্রজন্মদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা উচিত। এতে করে সমাজ থেকে মাদক ও ইভটিজিং দূর হবে। সিনেমা হলগুলো বন্ধ থাকায় সুস্থ বিনোদন পাচ্ছে না তারা। এতে করে তারা অপসংস্কৃতি এবং মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে।’ এ সময় তিনি অন্তত একটি সিনেমা হল চালুর দাবি জানান।
জেলা কালচারাল অফিসার দিতি সাহা বলেন, ‘চাঁদপুরে অতীতে অনেক সিনেমা হল ছিল। বর্তমানে একটিও নেই। দেশের সিনেমা হলের কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম এখনো অজ্ঞাত। হল থাকলে সরকারের দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার উদ্যোগ আরও সমৃদ্ধ হতো।’
অআ/