ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকে মুখর হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির দর্শনীয়স্থানগুলো। পর্যটকদের ঘিরে রাঙ্গামাটি শহর, সাজেক ও কাপ্তাই এই তিন পরর্যটনকেন্দ্রে ব্যস্ততা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের । আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টে-কটেজে এরইমধ্যে ৮০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত বুকিং হয়েছে।
বিশেষ করে রাঙ্গামাটি শহরে পর্যটন ঝুলন্ত সেতু, কাপ্তাই হ্রদে নীল জলরাশিতে নৌভ্রমণ, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, সুবলং, আসামবস্তি কাপ্তাই সড়ক, সাজেক ও কাপ্তাইয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। রাঙ্গামাটির পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু সড়ক, দিগন্তবিস্তৃত সবুজ অরণ্য আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপ্তাই লেক পর্যটকদের কাছে সারা বছরই আকর্ষণীয়।
তবে রাঙ্গামাটি পর্যটনের আইকন ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘের ঝুলন্ত সেতুকে ঘিরেই দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণ। আজও সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে পর্যটকদের বিপুল উপস্থিতি। অনেকেই দল বেধে ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া করে নৌভ্রমণ করছেন। ঝুলন্ত সেতুতে নিজেদের আনন্দের মুহূর্তকে অনেকেই সেলফিবন্দি করে রাখছেন। কেউ বা ছায়ায় বসে খোশগল্পে মেতে উঠেছেন পরিবার পরিজনের সঙ্গে।
সেখানে কথা হলে পর্যটকরা জানাচ্ছিলেন নিজেদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। এই যেমন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন আব্দুর রহিম সুমন। বললেন-‘রাঙ্গামাটি খুবই সুন্দর। আমি সবাইকে বলব পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটিতে ভ্রমণে আসতে। এতে আমাদের দেশের টাকা দেশেই থাকবে। আমাদের পর্যটন খাত আরও সুন্দর হবে।’
কুমিল্লা থেকে মোটরসাইকেলে বন্ধুর সঙ্গে ভ্রমণে আসা আরেক সাইফুল ইসলাম বলেন- ‘রাঙ্গামাটিতে আসার সড়কের জার্নিটাকেই বেশি উপভোগ করেছি। কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত সেতু আগেও দেখেছি। খুবই সুন্দর। ভালো লেগেছে। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দরকার পর্যটন খাতের উন্নয়নে।’
কুমিল্লার তিতাস থেকে আসা সজল ভূঁইয়া বলছিলেন-‘যারা গ্রামে থাকি-পাহাড় পর্বত দেখতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কাপ্তাই লেক ভিউ খুবই অনুভব করি। বিশেষ করে ঝুলন্ত সেতু দেখার খুব আগ্রহ ছিল। তাই ঈদের ছুটিতে ঘুরতে চলে আসলাম।’
বরিশাল বাকেরগঞ্জ থেকে আসা তরুণ মো. ইব্রহিম বললেন-‘বাংলাদেশের অনেক প্রান্তেই আমি ঘুরে আসছি। কিন্তু রাঙ্গামাটিতে আসা হয় নাই। আমি শুনেছি বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য নাকি রাঙ্গামাটিতে আছে। আজ জাস্ট দেখার জন্য আসলাম। দারুণ অপরূপ সৌন্দর্য। অসাধারণ।’
নোয়াখালী থেকে আসা আরেক তরুণ পর্যটক রাশেদ রিয়াদ বলছিলেন-‘মূল হচ্ছে কাপ্তাই লেক আর ঝুলন্ত সেতু। এই দুটোর জন্যই আমাদের এখানে আসা। বান্দরবান বা অন্যান্য প্লেসে গেলে কয়েকদিন সময় লাগে। মিনিমাম তিনদিন দিতে হয়। সে হিসেবে রাঙ্গামাটিতে একদিন দিলে আমাদের যথেষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে চাকরিজীবী, পেশাজীবী বা অন্যান্য কর্মজীবীদের জন্য একদিন হিসেবে সবচেয়ে বেটার রাঙ্গামাটি।’
রাঙ্গামাটি শহরে ৫৬টি আবাসিক হোটেল, ১৭টি রিসোর্ট ও সাজেকে ৯৮টি হোটেল রিসোর্ট এবং কাপ্তাইয়ে বেশ কয়েকটি হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। তবে সবমিলিয়ে ১৫ হাজার পর্যটকের রাত্রি যাপনের ব্যবস্হা রয়েছে এই তিন পর্যটনকেন্দ্রে। এই ঈদের টানা ছুটিতে সবমিলিয়ে অন্তত ২০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা খাত সংশ্লিষ্টদের।
রাঙ্গামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন- ‘আমরা এই ঈদে পর্যটকদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। এরইমধ্যে ৮০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত আগাম বুকিং হয়েছে ১৪ জুন পর্যন্ত।’
বছরে কয়েক লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসেন। সাধারণত ছুটির দিনগুলোতে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার পর্যটকের উপস্থিতি থাকে রাঙ্গামাটির তিন পর্যটনকেন্দ্রে। আবার বিশেষ দিনগুলোতে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৭০ হাজারে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন -এবারের ঈদে ১০ দিনের টানা ছুটি মিলেছে। পরর্যটকরাও ভ্রমণে আসছেন। আমাদের ৮০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে। আশা করছি শতভাগ বুকিং হয়ে যাবে। প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের রেকর্ড পরিমাণ আয় হবে বলে আশা করছি।
জিয়াউর রহমান জুয়েল/মাহফুজ