কুষ্টিয়া শহরের একটি ভাড়া বাসা থেকে বাবা-ছেলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে নিহত রেজাউল করিম মধুর স্ত্রী শেফালী খাতুন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিকেলে দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। একটি হত্যা মামলা, আরেকটি অপমৃত্যুর অভিযোগে মামলা। ছেলে মুগ্ধকে হত্যার অভিযোগে তার মা শেফালী খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেজাউল তার ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে পারছিলেন না। তাই তাকে কোনো স্কুলেও ভর্তি করানো যায়নি। ছেলের জন্মনিবন্ধন করাতে কালক্ষেপণ হওয়ায় তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। এ কারণেই তাকে (ছেলে) হত্যার পর তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। রেজাউল এলাকায় ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত।’
গত শনিবার বিকেলে কুষ্টিয়া শহরের মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে রেজাউল করিম ওরফে মধু (৩৮) ও তার ৭ বছর বয়সী ছেলে মুগ্ধ হোসাইনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ছেলেকে হত্যার পর রশিতে ঝুলে তার বাবা আত্মহত্যা করেছেন। লাশ দুটির ময়নাতদন্ত করে গতকাল দুপুরে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বিকেলে বাবা-ছেলের জানাজা শেষে কুষ্টিয়া পৌর গোরস্তানে দাফন সম্পন্ন হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রেজাউল করিম শহরের আলফা মোড় এলাকার বাসিন্দা। আট বছর আগে ধর্মান্তরিত হয়ে মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের শেফালী খাতুনকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তার নাম ছিল মধুসূদন রায়। রেজাউলের ছেলে মুগ্ধ হোসাইন। মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় রেজাউলের গয়না তৈরির ছোট একটি দোকান ছিল। সর্বশেষ তিনি এক বন্ধুর দোকানে কাজ করতেন।
মধুর শাশুড়ি বিলকিচ খাতুন বলেন, ‘মেয়ে শেফালী খাতুন অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তার বাড়িতেই ছিল। মেয়ের জামাই খুবই ভালো মানুষ। তার কাছে কেউ কোনো টাকা-পয়সাও পায় না বরং সে টাকা পেতে পারে।’ শনিবার দুপুরে মুগ্ধকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন রেজাউল। ছেলেকে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন বলে স্ত্রীকে জানান। দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও ছেলেকে নিয়ে ফিরে না আসায় শেফালী তাদের ভাড়া বাসায় যান। ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে তিনি ডাকাডাকি করেন। এরপর সাড়া-শব্দ না পেয়ে জানালার ছিদ্র দিয়ে স্বামী-সন্তানকে রশিতে ঝুলতে দেখেন। তখন তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বাবা-ছেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।’