নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার এক বন্ধুর প্রেমিকাকে প্রেমিকসহ ছয় বন্ধু মিলে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে এক স্কুলছাত্রী। পরিবারে সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীকে নিয়ে গিয়েছিল পাশের বড়াইগ্রাম উপজেলার কলেজপড়ুয়া ওই প্রেমিক।
ঘটনার পর প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা করেনি অভিযুক্তের পরিবার। বাধ্য হয়ে ওই ঘটনায় মামলা করেছে ভুক্তভোগীর বাবা।
মামলার আসামিরা হলো- জোয়াড়ি আটঘরিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম কেরাণীর ছেলে এবং দয়ারামপুর কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী পারভেজ (২২), সাগর (২৩), প্রসেনজিত (২২), জিত কুমার (২১), কৃষ্ণ কুমার (২০) ও মহন আলী (২৪)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ছয় মাস ধরে ভুক্তভোগীর সঙ্গে পারভেজের প্রেম চলছিল। ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাগাতিপাড়ার একটি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে (১৫) পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় পারভেজ। এক পর্যায়ে বন্ধুদের ডেকে মেয়েটিকে বড়াইগ্রামের জোয়াড়ি ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামে একটি পেয়ারা বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে অভিযুক্তরা পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। এতে মেয়েটি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে গাড়িতে করে ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মেয়েটির বাড়ির কাছে (বাগাতিপাড়ার দয়ারামপুর ইউনিয়নের চিতলী গ্রামে) কাঁচা রাস্তায় রেখে আসে। রাত ৮টার দিকে স্থানীয়রা রাস্তায় মেয়েটিকে দেখে বাড়িতে খবর দেয়। পরবর্তীতে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রী জানায়, আটঘরিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম কেরাণীর ছেলে কলেজছাত্র পারভেজের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক। ঘটনার দিন সন্ধ্যার একটু আগে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়া শেষে বের হলে পারভেজ জানায়, ‘আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে আব্বার সঙ্গে কথা হয়েছে। আব্বা খুবই অসুস্থ, তাই তিনি তোমাকে দেখতে চেয়েছেন।’
পারভেজের কথায় বিশ্বাস করে তার বাড়ির দিকে রওনা হলে যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পথিমধ্যে পারভেজের বাড়ির অদূরে ফাঁকা রাস্তা পার হওয়ার সময় আকস্মিক পারভেজসহ ছয়জন তাকে মুখ চেপে উঁচু করে ধরে রাস্তার পাশে পেয়ারা বাগানে নিয়ে যায় এবং সেখানে ছয়জন পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
নির্যাতিতা ওই স্কুলছাত্রীর দিনমজুর বাবা জানান, মেয়েটিকে তারা অজ্ঞান ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি তার মেয়েকে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে ছয় বন্ধু।
তিনি আরও জানান, এই ঘটনার বিচার চেয়ে জোয়াড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী, দয়ারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুর ইসলাম মিঠুর কাছে গিয়েছি। কিন্তু ওয়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী ও প্রধান আসামি পারভেজের মামা ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান এ ঘটনা ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য প্রভাবশালী লোকজন চেষ্টা করছে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শফিউল আযম খাঁন জানান, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেনি।
ভুক্তভোগীর বাবার দাবি, আদালতে মামলা করার পর ঘটনাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নাটোর কার্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে ১১ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা তদন্তের জন্য আসেনি।
এ ব্যাপারে পিবিআই নাটোরের পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘৪ মার্চ পর্যন্ত আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আমাদের দপ্তরে পৌঁছায়নি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় সব দায়িত্ব পালন করব।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের জেলা আহ্বায়ক ও বড়াইগ্রাম কেন্দ্রীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি অমর ডি কস্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়ে এবং স্কুলছাত্রী গ্যাংরেপ হবে আর তার আইনি কার্যক্রম এভাবে বাধাগ্রস্ত বা দীর্ঘসূত্রিতা ঘটবে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ প্রশাসন দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।
কামাল মৃধা/জোবাইদা/অমিয়/