চট্টগ্রামে সপ্তাহখানেক ধরে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চলছে লোডশেডিং। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। লোডশেডিং বাড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এদিকে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, শোলকবহর, বাকলিয়া, কাজীর দেউড়ি, লাভলেইন, জুবিলী রোড, টেরি বাজার, হাজারী গলি, আন্দরকিল্লা, দেওয়ান বাজার মুন্সি পুকুর পাড়, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, হামজারবাগ, বিবিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে পানিসংকটে পড়েছেন অনেকে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৯০ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে সেদিন বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয় মাত্র ৮৫০ মেগাওয়াট। গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৮৯ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে ১ হাজার ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৯৪৯ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি (গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল) সংকট রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র ও মাতারবাড়ী ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ নম্বর ইউনিট, ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিজেন্ট পাওয়ার ও ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টটিও বন্ধ রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে।
পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম মৃধা জানিয়েছেন, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায়। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম। তাই লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে লোডশেডিং কমে আসবে।
নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘একদিকে গরম, অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ঘুমানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’ নগরের হালিশহর এলাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী শাহানা আক্তার বলেন, ‘গতকাল রাতে ছয়-সাতবার লোডশেডিং হয়েছে। আমার বাচ্চার বয়স আড়াই বছর। বিদ্যুৎ না থাকায় সে ছটফট করে। ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না।’
খুলনায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎনির্ভর কাজ
অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। এদিকে প্রচণ্ড গরমে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎনির্ভর সব কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসা, কম্পিউটার বন্ধ ও শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামের লোডশেডিং আরও বেশি।
বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) সূত্রে জানা গেছে, খুলনাসহ এ অঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার। পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে গড়ে ৬৫০-৬৭০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ মিলছে ৫৪০-৫৭০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং হয় গড়ে ১০০-১১০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শুধু খুলনায় লোডশেডিং হয় ৪০-৪৫ মেগাওয়াট। গতকাল ছুটির দিনে অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও দিনের বেলায় লোডশেডিং হয়েছে।
নগরীর পল্লী মঙ্গল ফিডারের আওতায় শেখপাড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, চার-পাঁচ দিন ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। লেদ মেশিনের কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে সন্ধ্যার পর গরমে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে।
একইভাবে দাকোপ, তেরখাদা, ডুমুরিয়াসহ উপজেলাগুলোতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাত-আটবার লোডশেডিং হচ্ছে। এ কারণে কম্পিউটার, ফটোকপি, লেমিনিটিং মেশিন, বাসাবাড়ির ফ্রিজ, এসি, টিভিসহ বিভিন্ন দামি জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে ইন্টারনেট সেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তেরখাদা সাব জোনাল অফিসের সহকারী ম্যানেজার মো. বিদ্যুৎ মল্লিক জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকের নিচে নেমে আসায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘লোডশেডিং হলে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোল্ডস্টোরেজে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। লোডশেডিং চলাকালে জেনারেটর চালিয়ে রাখতে বাড়তি ব্যয় হয়।
ওজোপাডিকোর কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। ওই কারণে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছেন।