ঢাকা ১৭ কার্তিক ১৪৩১, শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

রাজশাহীতে ভরা মৌসুমেও মুকুল কম, হতাশ আমচাষিরা

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৩:১১ পিএম
রাজশাহীতে ভরা মৌসুমেও মুকুল কম, হতাশ আমচাষিরা
রাজশাহী অঞ্চলে এবার আমের মুকুল কম আশায় চাষিদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। রাজশাহীর বাঘা-শায়েস্তা এলাকা থেকে সম্প্রতি তোলা। ছবি : খবরের কাগজ

রাজশাহী অঞ্চলে এবার ভরা মৌসুমেও বাগানে আশানুরূপ মুকুল না আসায় চাষিদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তন, শীতকাল দীর্ঘস্থায়ী হওয়া, দীর্ঘমেয়াদি শৈত্যপ্রবাহ, অতিরিক্ত শীত ও অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় আমের মুকুলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তবে ভালো ফলন পেতে আমপ্রধান এই অঞ্চলের মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে গাছ ও মুকুলের যত্ন-আত্তি নিয়ে। তাই তারা শেষ সময়ে বাগানগুলোতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। গাছের গোড়ায় সেচ দিচ্ছেন। এদিকে এবার গাছে মুকুল কম আসায় আমের দাম ভালো পাওয়ার আশা করছেন বাগান মালিকরা। 

কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোরে আমের উৎপাদন পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৭ টন। গত বছর এই চার জেলায় উৎপাদিত ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আমের বাজারমূল্য ছিল সাত হাজার কোটি টাকার বেশি। 

চলতি বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৫ টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৮ টন; নওগাঁয় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টরে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন এবং নাটোরে ৫ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৭ হাজার ১৮৪ টন।  

আমচাষিরা বলছেন, এবার রাজশাহী অঞ্চলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বিরতি দিয়ে কখনো মাঝারি আবার কখনো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ছিল। টানা দুই সপ্তাহ রাজশাহী অঞ্চলে সূর্যের আলো পড়েনি। সঙ্গে ছিল উত্তর থেকে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া। স্বাভাবিক নিয়মে আম বাগানে মুকুল আসার জন্য যে পরিমাণ তাপমাত্রার দরকার হয়, তা এবার ছিল না। ফলে আমগাছে পর্যাপ্ত মুকুল না আসায় চলতি মৌসুমে আমের ফলন নিয়ে চাষিরা হতাশ। অনেক মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলার ধর্মহাটা গ্রামের আমচাষি ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘অনেক বছর ধরে শুনে আসছি আমের ‘অন ইয়ার’ ও ‘অফ ইয়ার’ হয়। কিন্তু কৃষিবিজ্ঞানী ও চাষিদের সচেতনতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে ‘’অফ ইয়ার’ এবং ‘অন ইয়ার’ দেখা যায়নি। এখন প্রতিবছরই আমের ভালো ফলন হচ্ছে। কিন্তু এ বছর ভরা মৌসুমেও আমগাছে মুকুল অনেক কম।’’

রাজশাহীর বাঘা এলাকার আমচাষি সাজেদুর রহমান বলেন, ‘গত বছর গাছে প্রচুর মুকুল এলেও ঝরে গেছে। এবার অর্ধেক গাছে মুকুল আসেনি। অল্প এই মুকুল গতবারের মতো ঝরে গেলে পথে বসে যাব। তাই গাছ ও মুকুলের যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছি। পাশাপাশি আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে বাকি গাছগুলোতেও মুকুল আসবে।’

আম উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, সাধারণত ফেব্রুয়ারিতেও আমের সব মুকুল ফোটে। তবে এবার মার্চ মাসের মাঝামাঝিতেও বাগানে মুকুল কম। 

ফলন কম হলেও এবার দাম ভালো পাওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর আমের প্রতি সারা দেশের মানুষের চাহিদা থাকে। কিন্তু যে বছর আমের উৎপাদন বেশি হয় সে বছর দাম কম হয়। ফলে এবার ফলন কম হলে দাম বেশি পাওয়া যাবে।’ 

আমের মুকুল কম আসার বিষয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ফল গবেষক ড. আলীম উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর বাগানগুলোতে মুকুল কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। তবে এখনো মুকুল ফুটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গাছে মুকুল আসতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। রাজশাহীতে এবার শীত কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। তবে এখনো সময় আছে। এরই মধ্যে রাজশাহীর আম বাগানগুলোতে ৫০ শতাংশ মুকুল এসে গেছে। এ অবস্থায় এই ফলন ধরে রাখতে গাছের যত্ন নিতে হবে।’ 

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং পরিবহন, রপ্তানিসহ বাজারজাত করলে কৃষকরা লাভবান হবেন। এজন্য চাষিদের যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ 

সিলেট সীমান্তে কাশ্মীরি শালসহ ৩ কোটি টাকার পণ্য জব্দ

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
সিলেট সীমান্তে কাশ্মীরি শালসহ ৩ কোটি টাকার পণ্য জব্দ
জব্দ করা চোরাই পণ্য। ছবি: খবরের কাগজ

সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় কাশ্মীরি শালসহ প্রায় তিন কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিজিবির সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে ও বুধবার রাতে পৃথক দুটি অভিযানে এক কোটি ১৭ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়।

বিজিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালায়। পৃথক পৃথক অভিযানে ১২১ পিস কাশ্মীরি শাল, ৭৯৮ পিস ভারতীয় শাড়ি, ৮১টি থ্রিপিস, ৪৫৬ পিস কসমেটিক সামগ্রী, ২৫৪ দশমিক ৪০ মিটার মখমল সোফার কভারসহ দুটি নৌকা জব্দ করে।

বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী জব্দ করা পণ্যের মূল্য প্রায় এক কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার ২৮০ টাকা।

আর বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতে আরেক অভিযানে সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্ত থেকে ২০৪ পিস ভারতীয় শাড়ি, এক হাজার ৮০০টি সানগ্লাস, ৬৩০ পিস নিভিয়া ক্রিম, ৩১ কেজি সার্ফএক্সেল, ৯৬ বোতল মদ, তিনটি মোটরসাইকেল, দুই হাজার ২০০ কেজি বাংলাদেশি রসুনসহ ১২টি নৌকা জব্দ করে।
 
এগুলোর বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী মূল্য প্রায় এক কোটি ৩৪ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ টাকা।

চোরাচালানবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, জব্দ করা মালামাল বিধি মোতাবেক কাস্টমসে হস্তান্তর করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুমন/অমিয়/

চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ ধরায় ১২ জেলের শাস্তি

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ ধরায় ১২ জেলের শাস্তি
চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ ধরায় গ্রেপ্তার জেলেরা। ছবি: খবরের কাগজ

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরায় ১২ জেলেকে গ্রেপ্তার করেছে নৌ-পুলিশ। এদের মধ্যে চারজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা, পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা এবং তিনজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাত ১০টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম ইকবাল।

দণ্ডপ্রাপ্ত জেলেরা হলেন- একরাম মোল্লা, নাজমুল হাসান, শহর আলী ও জুম্মান হাওলাদার। 

নিয়মিত মামলার আসামিরা হলেন- রাজু সৈয়াল, মো. মাইনুদ্দিন, মো. কাশেম বকাউল, মো. আলমগীর গাজী, মো. মুছা কালিমুল্লাহ।

মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া কিশোর জেলেরা হলো- মো. সাকিব সৈয়াল, মো. হাবিব ছৈয়াল ও মো. নাইম হোসেন।

নৌ-পুলিশ জানায়, টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সকাল (৩১ অক্টোবর) থেকে  শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অভয়াশ্রম এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় দেড় লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ৪২ কেজি মা ইলিশ ও তিনটি কাঠের নৌকা জব্দ করা হয়।

চাঁদপুর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম ইকবাল বলেন, জব্দ করা নৌকা ও কারেন্ট জাল মামলার আলামত হিসেবে রাখা হয়েছে। জব্দ করা ইলিশ গরিব ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

ফয়েজ আহমেদ/সুমন/অমিয়/

রূপগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণে আরও এক নারীর মৃত্যু

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১ এএম
রূপগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণে আরও এক নারীর মৃত্যু
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় শেলী (৩৫) নামে দগ্ধ আরও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে একই পরিবারের ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, দুপুরের দিকে শেলী ৩০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মারা যান। বর্তমানে ওই পরিবারের মুন্নি ২০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

এর আগে মঙ্গলবার ভোরের দিকে দুই সন্তান সোহেল ও ইসমাইল এবং একই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়ে তাসলিমা এবং গত  বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে শেলীর স্বামী বাবুল আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

চট্টগ্রাম-খুলনায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
চট্টগ্রাম-খুলনায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে সপ্তাহখানেক ধরে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চলছে লোডশেডিং। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। লোডশেডিং বাড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এদিকে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, শোলকবহর, বাকলিয়া, কাজীর দেউড়ি, লাভলেইন, জুবিলী রোড, টেরি বাজার, হাজারী গলি, আন্দরকিল্লা, দেওয়ান বাজার মুন্সি পুকুর পাড়, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, হামজারবাগ, বিবিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে পানিসংকটে পড়েছেন অনেকে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৯০ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে সেদিন বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয় মাত্র ৮৫০ মেগাওয়াট। গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৮৯ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে ১ হাজার ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৯৪৯ মেগাওয়াট। 

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি (গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল) সংকট রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র ও মাতারবাড়ী ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ নম্বর ইউনিট, ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিজেন্ট পাওয়ার ও ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টটিও বন্ধ রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। 

পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম মৃধা জানিয়েছেন, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায়। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম। তাই লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে লোডশেডিং কমে আসবে। 

নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘একদিকে গরম, অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ঘুমানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’ নগরের হালিশহর এলাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী শাহানা আক্তার বলেন, ‘গতকাল রাতে ছয়-সাতবার লোডশেডিং হয়েছে। আমার বাচ্চার বয়স আড়াই বছর। বিদ্যুৎ না থাকায় সে ছটফট করে। ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না।’ 

খুলনায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎনির্ভর কাজ 
অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। এদিকে প্রচণ্ড গরমে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎনির্ভর সব কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসা, কম্পিউটার বন্ধ ও শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামের লোডশেডিং আরও বেশি।

বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) সূত্রে জানা গেছে, খুলনাসহ এ অঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার। পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে গড়ে ৬৫০-৬৭০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ মিলছে ৫৪০-৫৭০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং হয় গড়ে ১০০-১১০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শুধু খুলনায় লোডশেডিং হয় ৪০-৪৫ মেগাওয়াট। গতকাল ছুটির দিনে অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও দিনের বেলায় লোডশেডিং হয়েছে।

নগরীর পল্লী মঙ্গল ফিডারের আওতায় শেখপাড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, চার-পাঁচ দিন ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। লেদ মেশিনের কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে সন্ধ্যার পর গরমে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। 

একইভাবে দাকোপ, তেরখাদা, ডুমুরিয়াসহ উপজেলাগুলোতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাত-আটবার লোডশেডিং হচ্ছে। এ কারণে কম্পিউটার, ফটোকপি, লেমিনিটিং মেশিন, বাসাবাড়ির ফ্রিজ, এসি, টিভিসহ বিভিন্ন দামি জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে ইন্টারনেট সেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তেরখাদা সাব জোনাল অফিসের সহকারী ম্যানেজার মো. বিদ্যুৎ মল্লিক জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকের নিচে নেমে আসায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘লোডশেডিং হলে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোল্ডস্টোরেজে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। লোডশেডিং চলাকালে জেনারেটর চালিয়ে রাখতে বাড়তি ব্যয় হয়।

ওজোপাডিকোর কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। ওই কারণে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছেন।

দিনাজপুর সীমান্তে মাদক-গুলির শব্দে আতঙ্কে বসবাস

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ এএম
দিনাজপুর সীমান্তে মাদক-গুলির শব্দে আতঙ্কে বসবাস
দিনাজপুর সীমান্ত

দিনাজপুরের সাতটি উপজেলা বোচাগঞ্জ, বিরল, দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর এবং হাকিমপুরের সঙ্গে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার এলাকাঘেঁষা ভারতীয় সীমান্ত। কিন্তু সীমান্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মাদক ও থেকে থেকে গুলির শব্দ। ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে সীমান্তবর্তী মানুষকে। পাশাপাশি মাদকের ছোবলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশের অংশে ঢুকে পড়েন। কারণ ভারতীয় অংশে কাঁটাতারের বাইরেও ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ আন্তর্জাতিক রেখা অনুযায়ী ১৫০ ফুট এলাকা রয়েছে। সেই অংশে মাঝেমধ্যেই অনেক বাংলাদেশি এবং গ্রামের গরু, ছাগল ঢুকে পড়ে। বাংলাদেশের অংশে কাঁটাতারের বেড়া না থাকার কারণে অনেকটা অনিরাপদ বলে মনে করছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। 

কামদেবপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোরসালিন ইসলাম বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই ভারতীয় সীমান্তে গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এতে করে আমরা অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ২০২৪ সালের এপ্রিলের দিকে বিএসএফের গুলিতে নিহত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া গিয়েছিল এখানে।’

একই এলাকার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে গুলির শব্দে অনেক সময় রাতে ঘুম ভেঙে যায়। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান।’ 

দিনাজপুরের বিরলের ধর্মপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত আর পুনর্ভবা নদীঘেঁষা কামদেবপুর এলাকার দুই কিলোমিটারজুড়েই মাদকের ভয়াল থাবা পড়েছে। এই গ্রামে গত দুই বছরে মাদকাসক্ত হয়ে বেশ কয়েকজন অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। আবার কেউ কেউ বাপ-দাদার জমিজমা বিক্রি করে এখন সর্বস্বান্ত। মাদক সেবনের আগে যিনি ১০-১৫ বিঘা জমির মালিক ছিলেন, আজকে তারা অনেকেই একেবারে পথের ফকির। মাদকের ছোবলে পড়ে নিজের ভিটাবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন কেউ কেউ। 

কামদেবপুর গ্রামে চিহ্নিত চার থেকে পাঁচজন মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। যারা একসময়ে দিনমজুরের কাজ করতেন। আজকে তারা শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে গ্রামবাসী জানান। এই মাদক ব্যবসায়ীদের নাম প্রশাসনসহ অনেকেই জানেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তবে নিরাপত্তাহীনতার কারণে সংবাদকর্মীদের কাছে এসব মাদক ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ করতে চাননি গ্রামবাসী।

দিনাজপুর শহর থেকে কামদেবপুর গ্রামে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উঠতি বয়সী যুবকদের আনাগোনা দেখা যায়। জানা যায়, কামদেবপুর গ্রামের পাশেই গৌরীপুরের পুনর্ভবা নদীর ওপর স্লুইসগেটটিকে অনেকেই মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয় মনে করছে। প্রতিদিন দিনাজপুর শহর থেকে মোটরসাইকেলযোগে বেশ কিছু উঠতি বয়সী যুবককে কানদেবপুর গ্রামে যেতে দেখা যায়। 
কামদেবপুর গ্রামের স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে শিক্ষক পর্যন্ত অনেকেই মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কামদেবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিমের অফিসে বসেই ফেনসিডিল সেবনের দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় প্রশাসন কামদেবপুর উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। 

কামদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক হোসেন বলেন, ‘রাত হলেই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল নিয়ে আসছে। ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক আমাদের এই এলাকার যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’ 

একই গ্রামের যুবক হাসনাত মুহিত বলেন, ‘মাদক শুধু একটি পরিবার নয়, একটি গ্রামকে নয়, পুরো একটি ইউনিয়নকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান কাউকে মানছে না। দিনশেষে মাদকের টাকা জোগাড়ে সে বাবা-মায়ের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করছে।’

বিজিবির দিনাজপুর ২২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আহসান উল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিজিবি আরও কঠোরভাবে সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময় দিনাজপুরের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মাদকের ক্ষেত্রে বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। তবে মাঝেমধ্যে বিএসএফ অস্ত্র ব্যবহার করে। বিশেষ করে তারা নন-নিথার (অস্ত্র) ব্যবহার করেন, তবে সেটি প্রাণঘাতী নয়। এই শব্দে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’