
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের চৌমহনায় বৃহস্পতিবার সকালে একটি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়। পরে বিকেলেই আবার তা খুলে ফেলা হয়। মূলত জেলার বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে গাড়িভাড়া বর্ধিত করে সেখানে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বিলবোর্ডটির ঠিক নিচে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল, ‘জেলা পুলিশ, মৌলভীবাজার।’
ওই বোর্ডের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পর্যটনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে পুলিশের পক্ষ থেকে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। এর প্রভাব স্থানীয় পর্যটন খাতে পড়বে। এ জেলায় ধনীদের পাশাপাশি নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাও বেড়াতে আসেন।
তবে দায় স্বীকার করে নিয়ে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেলের এএসপি আনিসুর রহমান বলেছেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই ভাড়ার তালিকা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। সবকিছু প্রস্তুত করার আগেই ভুল করে ব্যানারটি প্রকাশ্যে এসেছে।’ কিন্তু এএসপির কথার সঙ্গে মিল নেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির। সেখানে দাবি করা হয়েছে, এটি মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের সিদ্ধান্ত নয়। সবাইকে ব্যানারটি ফেসবুকে শেয়ার না করতে অনুরোধ জানানো হলো। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকেলে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রীমঙ্গলের চৌমহনা থেকে বিলবোর্ডটি খুলে ফেলা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া বিলবোর্ডটিতে দেখা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক এবং বাইক্কাবিলসহ আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে জিপের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার টাকা। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘোরার জন্য ভাড়া ধরা হয়েছে ছয় হাজার টাকা। একইভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় শ্রীমঙ্গল থেকে গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের ভাড়া ধরা হয়েছে ১৫০ টাকা, লাউয়াছড়ায় যাওয়ার ভাড়া ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। পাশাপাশি বাইক্কাবিলে যাওয়ার জন্য ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা।
ভাড়ার এই হার অগ্রহণযোগ্য ও মাত্রাতিরিক্ত বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটক এবং এই খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
একাধিক নেটিজেন লিখেছেন, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে গ্র্যান্ড সুলতানের ভাড়া সর্বোচ্চ ১০০ টাকা, কিন্তু নতুন নির্ধারিত ভাড়া ১৫০ টাকা। এ ছাড়া চা কন্যা ভাস্কর্যে যেতে ভাড়া লাগে ১৫০ টাকা অথচ তালিকায় ভাড়া ধরা হয়েছে ২৫০ টাকা।
আলোকচিত্রী ও পরিবেশকর্মী খোকন থৌনাজম লিখেছেন, ‘সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ভোরবেলায় শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুণ্ড গিয়ে, সেখানে সারাদিন কাটিয়ে বিকেলে আবার শ্রীমঙ্গলে ফেরার ভাড়া ছিল ২০০০-২২০০ টাকা। এখন শুধু যাওয়ার ভাড়াই ১৫০০ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাপস দাশ বলেন, ‘যথার্থ কারণেই শ্রীমঙ্গলে পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন কমছে। তার ওপর এই ভাড়ার তালিকা কোনোভাবেই পর্যটনবান্ধব নয়। শ্রীমঙ্গলে শুধু উচ্চবিত্তরা পরিবার নিয়ে ভ্রমণে আসেন না, অনেক শিক্ষার্থীও বেড়াতে আসেন। মূলত তাদের সংখ্যাই বেশি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্ট-রেস্টুরেন্ট মালিক ও পরিবহন শ্রমিক-নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়ার তালিকা নির্ধারণ করা উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।’ পর্যটন সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক ও গ্রিনলিফ গেস্ট হাউসের মালিক এসকে সুমন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা শিগগিরই ভাড়ার তালিকা ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের নিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ভাড়ার তালিকা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। সবকিছু প্রস্তুত করার আগেই ভুলক্রমে ব্যানারটি প্রকাশ্যে চলে এসেছে।’ যদিও গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ব্যানারটি তাদের করা নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াতের ভাড়াসংক্রান্ত একটি বিলবোর্ড তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জেলা পুলিশের ব্যানারে স্থাপন করা শ্রীমঙ্গল শহরের ওই বিলবোর্ডটির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা জেলা পুলিশের সিদ্ধান্ত নয়। গাড়ি ভাড়াসংক্রান্ত এই বিলবোর্ডের ছবি ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার না করার অনুরোধ করা হয়।