বেশি দামে তরমুজ বিক্রির অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তরমুজ বয়কটের ডাক দিয়েছেন। ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে’ এভাবে নীরব প্রতিবাদ জানাতে হবে উল্লেখ করে তারা ১৫ দিন তরমুজ না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন। এর প্রভাব ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ শহরে পড়তে শুরু করেছে। শহরের বেশির ভাগ জায়গায় তরমুজের দোকানে বিক্রেতাদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। কিছু ক্রেতা তরমুজ কিনলেও তারা দাম বেশি রাখার অভিযোগ করেছেন। অনেকে আবার দরদাম করে ফিরে যাচ্ছেন। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, বয়কটের কারণে এবার তাদের লোকসান হয়েছে। অনেক তরমুজ পচে যাচ্ছে।
সরেজমিনে বিভাগীয় শহরের গাঙ্গিনাড়পাড়, স্টেশন রোড, দুর্গাবাড়ী রোড, নতুন বাজার, মিন্টু কলেজ গেট, চরপাড়াসহ নগরীর শম্ভুগঞ্জ বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে, প্রায় সব বিক্রেতাই কমপক্ষে ৫০ টাকা কেজি ধরে তরমুজ বিক্রি করছেন। এক এক করে ক্রেতা আসলেও কেউ কিনছেন, আবার কেউ দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করায় অনেক ক্রেতা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। তবে বাধ্য হয়েই বিক্রেতাদের নিয়মে কিনছেন তারা। বাজারে যে পরিমাণ তরমুজ উঠেছে তার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম।
নগরের গাঙ্গিনাড়পাড়ের কাঁচাবাজারে তরমুজ নিয়ে বসে ছিলেন বিক্রেতা ফরহাদ মিয়া। আশানুরূপ ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দাম কমানোর জন্য অনেকে ফেসবুকে তরমুজ বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দিন দিন ক্রেতা কমে যাওয়ায় দামও কমেছে। এখন ৫০ টাকা কেজি হিসাবে তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরও ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। ডাকাডাকি করেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। তরমুজ পচে যাচ্ছে। এবার আমাদের লোকসান হচ্ছে।’
নগরীর শম্ভুগঞ্জ বাজারে তরমুজ বিক্রেতা আসাদুল হক বলেন, ‘এখন যথেষ্ট গরম পড়েছে। আবার রমজান মাসও চলছে। ভেবেছিলাম দিন যত যাবে ক্রেতা বাড়বে। কিন্তু এখন উল্টো চিত্র।’ তিনি দাবি করেন, ‘কেজি দরে তরমুজ কিনলে ক্রেতারাই লাভবান হবেন। কারণ পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলে অনেক ক্রেতা ঠকে যায়।’
বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন ফাইজুল মিয়া। তরমুজ কেনা শেষ হলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘একজনও পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করছেন না। কেজি হিসেবে দামও কম না। তবু ছয় কেজি ওজনের একটি তরমুজ ৩০০ টাকায় কিনেছি। ৩০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করলে সব আয়ের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে কিনে খেতে পারবে।’
তরমুজ না কিনে পাশে দাঁড়িয়ে বেচাকেনা দেখছিলেন আবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে কেজি হিসেবে একটি তরমুজ কিনেছিলাম। তখন ওই তরমুজে মিষ্টির ছিটেফোঁটাও ছিল না। ছোট ছোট অনেক অপরিপক্ব তরমুজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে দাম কমাচ্ছে না। দাম না কমলে তরমুজ আর কিনব না।’
রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মধ্যবয়সী মনোয়ার হোসেন। তরমুজ কিনতে এসে দীর্ঘক্ষণ বিক্রেতার সঙ্গে দামাদামি করেন। কিন্তু প্রত্যাশার চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় তিনি শেষ পর্যন্ত কিনতে পারেননি। মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কী আজব বিক্রেতা। অনেকক্ষণ ধরে বলছি ৪০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি করতে। কিন্তু ৫০ টাকার কম দিচ্ছে না। আমাদের মতো গরিব লোকরা তরমুজ খেতে পারছে না। তরমুজ এখন টাকাওয়ালা মানুষের খাবার।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কেজি কিংবা পিস যে হিসেবেই হোক, বিক্রেতাদের একটি নির্দিষ্ট লাভেই তরমুজ বিক্রি করতে হবে। খবর পেয়েছি অনেক বিক্রেতা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে কিনে এনে ক্রেতাদের ঠকিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এজন্য আমরা অভিযান চালাব। কোথাও অতিরিক্ত দামে বিক্রি করলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’