সরকারের ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৩টি জেলা ম্যালেরিয়াপ্রবণ। তার মধ্যে উচ্চঝুঁকিতে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান। দেশের মোট ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ৯০ শতাংশেরও বেশি তিন পার্বত্য জেলায় ঘটছে।
খাগড়াছড়িতে আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা এবং লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
২০২২ সালে খাগড়াছড়িতে ১৫৭ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে সে বছর কেউ মারা যাননি। ২০২৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১৭ জনে। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে মৃত্যু হয় একজন রোগীর। ২০১৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সর্বমোট মারা গেছেন পাঁচজন।
মাঝেমধ্যে কমলেও কোনো কোনো বছর আবার আকস্মিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রকোপ বৃদ্ধির পেছনে তিনটি বিশেষ কারণ রয়েছে বলে মনে করেন মাঠপর্যায়ের চিকিৎসক ও গবেষকরা। প্রকৃতি, মশা ও মানুষের আচরণে পরিবর্তন, সীমান্তবর্তী এলাকায় সংক্রমণ বেশি হওয়ার পরও প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে নজরদারির অভাব রয়েছে। কীটনাশকযুক্ত মশারি মশা প্রতিরোধে কাজ করছে না।
তারা মনে করেন, পাহাড়ে ম্যালেরিয়া ছড়াতে বাইমাই নামের একটি অ্যানোফিলিস মশার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এরা আগে গভীর রাতে কামড়াত। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে অনেক সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বৃষ্টির গতিপ্রকৃতি মশার বংশবৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে। কয়েক বছর ধরেই বর্ষার আগে ও পরে বেশি বৃষ্টিপাত এবং অস্বাভাবিক তাপমাত্রাও পাহাড়ে মশা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
গত বছরের ডিসেম্বরে সাজেকের সীমান্ত সড়কের নির্মাণকাজ করতে গিয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী যুবক মো. ফয়সাল।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাবের জানান, অসচেতনতার কারণে ওই একজনের মৃত্যু হয়েছে। সাজেক সীমান্ত সড়কে নির্মাণকাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময় তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। সেখানে চার-পাঁচ দিন জ্বরে ভোগার পরও সঠিক চিকিৎসা নেননি। এরপর ওই শ্রমিক ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা না করেই দীঘিনালায় এসে গ্রামের একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ সেবন করেন। ফলে তার অবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়ে। এরপর তিনি সিভিয়ার ম্যালেরিয়া নিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তবে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করার আগেই মৃত্যু হয় তার।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাবের আরও বলেন, ‘মূলত অবহেলা ও অসচেতনতার কারণেই ওই একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাই জ্বর হলে কিংবা ম্যালেরিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আসতে হবে। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করা হয় এবং পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। এসব কাজে ব্র্যাক আমাদের সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত মশারিও বিতরণ করা হয়।’