টানা তাপপ্রবাহে মাদারীপুরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এক বেডে থাকছে একাধিক রোগী। প্রতিদিন শুধু মাদারীপুর জেলার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শত শত রোগী। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলায় গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। এতে জনজীবনে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
এদিকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যাসংকট। একসঙ্গে একই বেডে দুই থেকে তিনজন এবং পাশাপাশি ফ্লোরেও রোগীরা থাকছে। এতে করে রোগীদের পড়তে হচ্ছে বেশি সমস্যায়। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গাদাগাদি করে থাকতে দেওয়ায় রোগীসহ তাদের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১০৮ জন শিশুকে ভর্তি দেখা যায়। এ ছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ২৫ শিশু। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৪০ শয্যা থাকায় একসঙ্গে এত শিশুকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও নার্সদের। শয্যাসংকট থাকায় এক শয্যায় দুই থেকে তিন শিশুকে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া হাসপাতালের মেঝেতেও রোগীরা মাদুর বিছিয়ে থাকছেন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এভাবে গাদাগাদি করে থাকতেও রোগীসহ অভিভাবকদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের ৪৯ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ জনই শিশু। অতিরিক্ত গরমের জন্যই হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
রোগীর সঙ্গে থাকা অদিতি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। অনেক গরমের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু এক বেডে দুইজন থাকতে হচ্ছে। এতে করে এই গরমের মধ্যে খুব সমস্যা হচ্ছে। বাচ্চার মায়েদের সারা রাত বসে ও দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কি যে একটা অবস্থা, তা বোঝাও যাবে না।’
মনিরা বেগম নামে একজন বলেন, ‘আমার মেয়ের হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর আসে। কয়েকবার বমিও করেছে। প্রচণ্ড গরমে এই অবস্থা হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেছি।’
ফারজানা আক্তার নামে একজন বলেন, ‘আমার বাড়ি মাদারীপুরের রঘুরামপুরে। আমার দুই ছেলেই অসুস্থ। বড়টার বয়স পাঁচ বছর ও ছোটটার বয়স ৭ মাস। বড় ছেলের টাইফয়েড ও ছোট ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। গত ছয় দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। কিন্তু কোনো বেড পাইনি। তাই ফ্লোরেই থাকতে হচ্ছে।’
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিতু বাড়ৈ বলেন, ‘হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১০৮ জন রোগী ভর্তি আছে। গরমের কারণে কয়েকদিন ধরে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন শিশুরোগী ভর্তি হচ্ছে। আবার চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। একসঙ্গে এত রোগী থাকায় মাত্র ৪০ শয্যায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি।’
জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু সফর হাওলাদার বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর থেকে বাঁচতে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি বিশ্রাম নিতে হবে। বাইরে বের হলে সঙ্গে ছাতা ও খাবারের পানি রাখলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে।’
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুনির চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশের মতো মাদারীপুরেও তাপপ্রবাহ বেশি হচ্ছে। এর ফলে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে একটু বেশি। তবে এখন পর্যন্ত এখানে হিট স্টোকে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। গরমের কারণে এখানে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি অসুস্থ হচ্ছে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। তবে বেশি ঠাণ্ডা পানি পান করার প্রয়োজন নেই। যদি রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়, তাহলে কিছুক্ষণ পর পর ছায়ায় বিশ্রাম নিবেন। একটানা রোদের মধ্যে কাজ করা যাবে না।’