মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। বেশ কয়েক বছর ধরে ঘাড় ও পিঠের ব্যথায় ভুগছেন। পরে চিকিৎসা নিতে যান কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমএমসিএইচ)। চিকিৎসক তার ঘাড় ও পিঠের সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআই মেশিনে পরীক্ষার পরামর্শ দেন। তবে এই হাসপাতালে এমআরআই করার ব্যবস্থা নেই। এমনকি মানিকগঞ্জ শহরের কোনো বেসরকারি ক্লিনিকেও এই পরীক্ষা করা যায় না। বাধ্য হয়ে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান। সেখান থেকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে ওই পরীক্ষা করান। যদি মানিকগঞ্জের সরকারি হাসপাতালে এ সেবাটি পাওয়া যেত তাহলে তার খরচ কমত অন্তত অর্ধেক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ভবনের দ্বিতীয় তলায় চার বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ১৯ কোটি টাকা দামের দুটি ক্যাথল্যাব। ২০২০-২১ অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ট্রেড হাউস’ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এইচটিএমএস নামের প্রতিষ্ঠান দুটি ক্যাথল্যাবগুলো সরবরাহ করে। ক্যাথল্যাবের ওয়াশরুম তৈরি না হওয়া ও দক্ষ জনবলসংকটে এতদিনেও এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং বসানোর এসব মেশিন চালু করা সম্ভব হয়নি। আর ১৮ কোটি টাকা দামের এমআরআই মেশিনটি স্থাপন করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস। কারিগরি ত্রুটির কারণে তিন বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয়ের এই মেশিনটিকে। অন্যদিকে হাসপাতালে থাকা তিনটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দুটি চালু থাকলেও একটি বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের নিচতলায় রয়েছে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগ। এই বিভাগে স্থাপন করে রাখা হয়েছে এমআরআই মেশিনটিকে। অন্যদিকে দ্বিতীয় তলায় কার্ডিওলজি বিভাগে ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। মেশিনগুলো স্থাপন করা হলেও বিভিন্ন কারণে চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অলস পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি। সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার মানুষ। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে অন্য কোথাও রোগীরা সেবা নিচ্ছেন।
সদর উপজেলার জয়রা এলাকার হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা গরির মানুষ। কোনো রোগব্যাধি হলে আমাদের একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল। এখানে অনেক উন্নত মানের মেশিন দিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়। অনেক কম খরচে এখানে সেবা পাওয়া যায়। যদি সব পরীক্ষার ব্যবস্থা এখানে করা যায়, তাহলে বড় রোগের জন্য ঢাকায় ছোটাছুটি করতে হবে না।’
কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ৮০টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ২১ শয্যার সিসিইউ, ১৯ শয্যার পোস্ট সিসিইউ ও ৪০ শয্যার সাধারণ ওয়ার্ড আছে। তবে ৪০ শয্যার সাধারণ ওয়ার্ড চালু না থাকায় ৪০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে পারেন না। আর আমরা চাইলেও শয্যার ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি করতে পারি না। হাসপাতালে ক্যাথল্যাব দুটি চালু হলে এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং বসানোর চিকিৎসা শুরু করা যাবে।’
রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, হাসপাতাল চালুর শুরুর দিকে এমআরআই মেশিনটি সচল ছিল। মেশিন গরম হয়ে যাওয়ার কারণে পরামর্শক টিমের সুপারিশে এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ মেশিন দিয়ে একজন রোগীকেও সেবা দেওয়া যায়নি। অন্যদিকে হাসপাতালের জন্য তিনটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দুটি চালু থাকলেও একটি বন্ধ রয়েছে। এটি চালু থাকলে আরও বেশি পরিমাণ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা সম্ভব হতো।’
কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এই হাসপাতালে পরিচালক পদে যোগদান করেছি। যোগদানের পরই আমি বন্ধ থাকা ক্যাথল্যাব, এমআরআই, আইসিইউ ও একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন চালুর জন্য কাজ শুরু করেছি। আমাদের দুটি ক্যাথল্যাবের একটির ওয়াশরুম তৈরি বাকি রয়েছে। এর জন্য তিনজন নার্স ও দুজন টেকনিশিয়ানকে ঢাকায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার পরই ক্যাথল্যাব দুটি শিগগির চালু করা হবে। এ ছাড়া এমআরআই মেশিনটি কারিগরি ত্রুটির কারণে চালু করা যায়নি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএসকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের টেকনিশিয়ান এসে দেখে গেছেন। আশা করছি তারা এই সমস্যাটা সমাধান করে দিলে আমরা এ সেবাটি দ্রুত চালু করতে পারব।’