বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকার একটি বাসা থেকে বাবা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা বঁটি উদ্ধার করা হয়েছে।
পারিবারিক কলহের জেরে মেয়েকে হত্যার পরে বাবা আত্মহত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন- নাঈম হাওলাদার (৩৫) ও নাঈমের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রাবেয়া বশরী রোজা। নাঈম জেলার উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে।
বরিশালের একটি ওষুধ কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন নাঈম। তবে ঘটনার কিছুদিন আগে তার চাকরি চলে যায়। তিনি নগরীর দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া পানি ট্যাংকসংলগ্ন স্বপ্ন বিলাস নামক ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে মা-বাবা, মেয়ে ও বোনকে নিয়ে থাকতেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. সারোয়োর হোসেন জানান, চার রুমের ওই বাসার একটি কক্ষের খাটের নিচ থেকে নাঈমের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অপর একটি কক্ষে তার মেয়ের মরদেহ পড়ে ছিল। নাঈম ছাড়াও ওই ফ্লাটে তার মা-বাবা, বোন ও মেয়ে ছিল। অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা।
তিনি বলেন, ‘বাবা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছি। পুলিশ ক্রাইম সিন ও সিআইডি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। এ বিষয়ে নাঈমের মা-বাবা ও বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’
নাঈমের মা নাছিমা বেগম জানান, তিনি অসুস্থ থাকায় বাসার সামনের রুমে শুয়ে ছিলেন। সকালে নাঈমকে তার বোন ডেকে তুলতে গিয়ে ওই রুমে তাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এ ঘটনা কীভাবে ঘটেছে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারছেন না।
নাঈমের বাবা শাহজাহান হাওলাদার জানান, বাসায় নাঈম ও তার মেয়ে রোজা এক কক্ষে এবং অপর কক্ষে তারা (নাঈমের মা ও বোন) থাকেন। সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে কাজে বের হওয়ার সময়ও নাঈমকে নাশতা করতে দেখেন তিনি। সে সময় কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল রোজা। পরে সকাল ৯টার দিকে নাঈমের কক্ষে তাদের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পেয়ে তার মেয়ে তাকে খবর দিলে বাসায় এসে এ অবস্থা দেখতে পান তিনি।
নাঈমের বোন আঁখি আক্তার জানান, গত ছয় মাস আগে নাঈমের সঙ্গে তার স্ত্রী অনা আক্তারের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে নাঈম তার মেয়েকে নিয়ে থাকত। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে অনা নাঈমকে মোবাইল ফোনে কল করে জানায়, রোজাকে নিয়ে যেতে আজ বরিশাল আসবেন তিনি। এরপর থেকেই নাঈম মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ভুগছিলেন।
বাড়ির মালিক বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে নাঈম বাসা ভাড়া নিয়েছেন। বাসায় নাঈমের মা, বাবা ও বোন থাকতেন। কিছুদিন আগে তার চাকরি চলে গেছে, কোরবানিতে নতুন চাকরি হওয়ার কথাও বলেছিলেন নাঈম। সকাল ৯টার দিকে তার বোন আমাদের খবর দিলে আমরা পুলিশকে জানাই।’
মঈনুল ইসলাম/সালমান/