প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে দুস্থ ও গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দকৃত চালের ৫০ ভাগ অনুসারীদের মাধ্যমে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর আসনের এমপি সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে। দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আজাদ ওরফে দুলালকে প্রকাশ্যে ইউপি ভবন চত্বরে মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে এমপির অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়ন চত্বরে ঘটে এই ঘটনা।
ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন চেয়ারম্যানের অনুসারীরা। কর্মসূচি থেকে অনতিবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
অভিযুক্ত এমপির দাবি, ‘গত ঈদুল ফিতরের তালিকা দিয়ে এবারও চাল বিতরণের প্রস্তুতি চলছিল। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ওই চেয়ারম্যান তাকে জানান, প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটির সুপারিশসহ সরকারি বিধিমোতাবেক তালিকা করা হবে। কিন্তু নিজেদের তালিকায় ওই চাল বিতরণের চেষ্টা চলছে এমন বিষয় জানার পর তার প্রতিনিধি আতিক মাস্টারসহ কয়েকজন বিষয়টি জানতে চান। ওই সময় চেয়ারম্যান উত্তেজিত হয়ে কথা বলে এবং একপর্যায়ে ওই মাস্টারকে লাথি মারেন। এরপর পরিকল্পিতভাবে নিজ রুমে ভাঙচুর চালিয়ে তাকে অপবাদ দেন।’
ইউপি চেয়ারম্যান এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এমপিকে ভাগ না দিতে চাওয়ায় প্রকাশ্যে ওই হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটায় এমপি অনুসারীরা যার ভিডিও ফুটেজও রয়েছে। তিনি ওই ঘটনায় মামলা করেছেন দাবি করে অনতিবিলম্বে সব হামলাকারীকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
হামলা প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার ইউপি কার্যালয়ে অতি দরিদ্র ৩৪১ জনকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কার্যক্রম ছিল। ওই চাল দেওয়ার জন্য তিনি পরিষদে পৌঁছার পর অভিযুক্তরা তাকে ঈদ উপহারের অর্ধেক চাল এমপিকে দিতে হবে বলে জানান। তাতে অস্বীকৃতি জানালে তারা তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। একপর্যায়ে পাইপ ও ইট দিয়ে আঘাতের পাশাপাশি কিল ঘুসি মেরে আহত করে।
মারপিটের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন আতিক মাস্টার, সিরাজ, রানা, ওয়াজেদ আলী, আরিফ, জীবন গাজী, ইমরান, রাজীবসহ আরও কয়েকজন।
ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশরা জানায়, হঠাৎ এমপির লোকজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের জেরে একপর্যায়ে রুমে ঢুকে বাকবিতণ্ডা শুরু করে। একপর্যায়ে চেয়ার দিয়ে টেবিলের কাঁচ ভেঙে ফেলে ও চেয়ার ভাঙচুর করে। তারা চেয়ারম্যানকে উপর্যুপরি কিল, ঘুসি ও লাথি মেরে গুরুতর আহত করে। এ সময় চেয়ারম্যানের চিৎকারে সবাই এগিয়ে এলে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত চলে যায়।
খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস, বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব, অফিসার ইনচার্জ শফিউল আযম খান ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ বিষয়ে জানতে ফোন দেওয়া হলেও অভিযুক্তদের মেবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আযম খান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান।