মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর দ্বীপাড়া গ্রামে সরকারি জমিতে বন্দোবস্ত পেয়ে তোলা দুই বিধবার ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভূমিদস্যুরা। গত রবিবার গভীর রাতে উপজেলার দ্বীপাড়া গ্রামের বিধবা নারী সুফিয়া বেগমের (৭৫) ঘরটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৫ জুন আরেক বিধবা নুরজাহান বেগমের (৬০) ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় তারাই।
জানা যায়, দ্বীপাড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের জমি সরকার ২০০১ সালে কিছু ভূমিহীন পরিবারকে বন্দোবস্ত দেয়। ওই সময় থেকে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার সরকারি জমি বন্দোবস্ত পেয়ে বাস করে আসছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে বন্দোবস্ত পাওয়া জমিতে দুটি পাশাপাশি ঘর তুলে বসবাস করছিলেন সুফিয়া বেগম ও নুরজাহান বেগম।
সম্প্রতি মিজান নামে এক ব্যক্তি ওই জমিটি নিজের বলে দাবি করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি সম্পত্তি নিজে বন্দোবস্ত নিয়েছেন দাবি করে মিজান ওই দুই বিধবার ঘরের জমি স্থানীয় সিরাজ খানের কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এদিকে সিরাজ খানও দেড় লাখ টাকার ওই সম্পত্তি কিনে একই গ্রামের উজ্জ্বলের কাছে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। পরে উজ্জ্বল ও সিরাজ খান মিলে ওই বিধবার ঘর দুটি গুঁড়িয়ে দেন।
এ ব্যাপারে সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। ছেলেরাও খোঁজখবর নেয় না। সরকার আমারে একটু জমি দিছে। ওই জমিতে ২৩ বছর ধরে ঘর তুলে থাকি। সিরাজ ও উজ্জ্বল মিলে আমার ঘর ভেঙে দিছে। ঘরে নগদ ৬০ হাজার টাকাসহ জাকাতের কিছু কাপড় ছিল। ওইগুলোও নিয়ে গেছে।’
অপর ভুক্তভোগী নুরজাহান বেগম বলেন, ‘সরকার আমারে ২৩ বছর আগে জমি দিছে। আমি ঘর তুলে বসবাস করছি। ২৫ জুন সন্ত্রাসী নিয়ে এসে উজ্জ্বল আমার ঘরটা ভেঙে দেয়। আমরা লোকজন নিয়ে প্রশাসনের কাছে গেলে আমাগো হুমকি দেয়। এখন আমরা কই যামু?’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উজ্জ্বল বলেন, ‘সরকার ওই জায়গাটি মিজান নামে এক ব্যক্তিকে বন্দোবস্ত দিয়েছিল। হাশেম নামে এক লোক আমার কাছে ওই জমি বিক্রি করবে বলেছিল। কারা ওই জায়গার ঘর ভাঙছে আমি বলতে পারছি না।’
আরেক অভিযুক্ত সিরাজ খান বলেন, ‘ওই জমিটা মিজানের। মিজান দখল করতে গেছে। আমি দখল করিনি। জমিটি মিজানের কাছ থেকে কিনে উজ্জ্বলের কাছে বিক্রি করার বিষয়টিও আমি জানি না।’
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম হোসেন বলেন, ‘সরকারি বন্দোবস্ত জায়গা কখনো হস্তান্তরযোগ্য নয়। অভিযোগটি স্থানীয় ইউপি সদস্য ফোনে আমাকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে এসি ল্যান্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি যাদের ভেঙেছে, তারা বিধবা অসহায় নারী। এ ব্যাপারে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দেব।’
এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা সোয়েব আলী বলেন, ‘ঘর ভাঙার কথা উল্লেখ করে দুই নারী থানায় অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’