ঢাকা ১৭ কার্তিক ১৪৩১, শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

বিষের বোতল নিয়ে পুলিশ সদস্যের বাড়িতে কলেজছাত্রীর অনশন

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:১০ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
বিষের বোতল নিয়ে পুলিশ সদস্যের বাড়িতে কলেজছাত্রীর অনশন
ছবি : খবরের কাগজ

ঢাকার ধামরাইয়ে বিয়ের দাবিতে বিষের বোতল নিয়ে এক পুলিশ সদস্যের বাড়িতে অনশনে বসেছেন এক কলেজছাত্রী। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তিনি এ বাড়ি ছাড়বেন না। যদি বিয়ে না করে তাহলে বিষ পান করে আত্মহত্যা করবেন বলে জানান অনশনরত তরুণী।

রবিবার (৭ জুলাই) দুপুরের দিকে উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের বেরশ গ্রামের ঘটনা এটি।

জানা যায়, উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের বেরশ গ্রামে পুলিশ সদস্য সুব্রত বৈরাগী বাড়িতে সকালে অবস্থান নেন ওই তরুণী। তাকে বাড়িতে দেখে সুব্রত বৈরাগী পালিয়ে যায়। 

সুব্রত ওই গ্রামের গণেশ বৈরাগীর ছেলে। তিনি বর্তমানে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থানায় কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে।

অনশনরত তরুণী মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার কাট্রাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সাভারে ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। তিনি লালমাটিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী।

অনশনরত তরুণী বলেন, ‘এক বছর আগে পুলিশ সদস্য সুব্রতর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেম। আমি প্রথম দিকে পাত্তা দেইনি কিন্তু আমাকে কলেজে গিয়ে মাঝে মধ্যে বিরক্ত করে। এই নিয়ে কলেজে তাকে আটকিয়েছিল। এরপর সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পরে আমি রাজি হই। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে বিয়ের কথা বলে সুব্রত আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। তবে আমি তাকে বারবার নিষেধ করার পরও সে আমার কথা মানেনি। এতদিন পর্যন্ত ভালোভাবেই চলছিল।’

তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিয়ের কথা বলে সুব্রত। কিন্তু এরপর থেকে সুব্রত আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে না। পরে আমি নিরুপায় হয়ে আজ সকালে ওদের বাড়িতে অবস্থান নিই। কিন্তু সুব্রতর মা-বাবা ও বোন আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। শেষে সুব্রতর বাবা কয়েকদিন পরে বিয়ে দেবে বলে জানান।’ 

তরুণী আরও বলেন, ‘এখন যদি সুব্রত আমাকে বিয়ে না করে তাহলে আমি এই বাড়িতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করব। এলাকার লোকজন বিচারে বসবে বলে জানিয়েছে। তারা যদি সঠিক বিচার না করে, তাহলে আমি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করব।’

এই বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, ‘তরুণী প্রেমের সম্পর্কের কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা এই বিষয়ে নিয়ে পুলিশ সদস্যর বাবার সঙ্গে কথা বলি কিন্তু ছেলের বাবা মানতে নারাজ। তরুণী আমাদের ছেলের সঙ্গে অন্তরঙ্গ কিছু ছবিও দেখান।’

তবে অনশনের ব্যাপারে বাইশাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে সুব্রতর দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক আছে। এর আগেও আমার কাছে বিচার চেয়েছিল। সুব্রত হাজির হয়নি। তবে আমি চাই মেয়েটাকে বিয়ে করুক।’

এ বিষয়ে বাইশাকন্দা ইউনিয়নের বিট পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়েজ উদ্দিন  বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। ভুক্তভোগী যদি অভিযোগ করেন তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রুহুল আমিন/জোবাইদা/অমিয়/

চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ ধরায় ১২ জেলের শাস্তি

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ ধরায় ১২ জেলের শাস্তি
চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞায় ইলিশ ধরায় গ্রেপ্তার জেলেরা। ছবি: খবরের কাগজ

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরায় ১২ জেলেকে গ্রেপ্তার করেছে নৌ-পুলিশ। এদের মধ্যে চারজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা, পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা এবং তিনজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাত ১০টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম ইকবাল।

দণ্ডপ্রাপ্ত জেলেরা হলেন- একরাম মোল্লা, নাজমুল হাসান, শহর আলী ও জুম্মান হাওলাদার। 

নিয়মিত মামলার আসামিরা হলেন- রাজু সৈয়াল, মো. মাইনুদ্দিন, মো. কাশেম বকাউল, মো. আলমগীর গাজী, মো. মুছা কালিমুল্লাহ।

মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া কিশোর জেলেরা হলো- মো. সাকিব সৈয়াল, মো. হাবিব ছৈয়াল ও মো. নাইম হোসেন।

নৌ-পুলিশ জানায়, টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সকাল (৩১ অক্টোবর) থেকে  শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অভয়াশ্রম এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় দেড় লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ৪২ কেজি মা ইলিশ ও তিনটি কাঠের নৌকা জব্দ করা হয়।

চাঁদপুর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম ইকবাল বলেন, জব্দ করা নৌকা ও কারেন্ট জাল মামলার আলামত হিসেবে রাখা হয়েছে। জব্দ করা ইলিশ গরিব ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

ফয়েজ আহমেদ/সুমন/অমিয়/

রূপগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণে আরও এক নারীর মৃত্যু

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১ এএম
রূপগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণে আরও এক নারীর মৃত্যু
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় শেলী (৩৫) নামে দগ্ধ আরও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে একই পরিবারের ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, দুপুরের দিকে শেলী ৩০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মারা যান। বর্তমানে ওই পরিবারের মুন্নি ২০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

এর আগে মঙ্গলবার ভোরের দিকে দুই সন্তান সোহেল ও ইসমাইল এবং একই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়ে তাসলিমা এবং গত  বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে শেলীর স্বামী বাবুল আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

চট্টগ্রাম-খুলনায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
চট্টগ্রাম-খুলনায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে সপ্তাহখানেক ধরে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চলছে লোডশেডিং। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। লোডশেডিং বাড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এদিকে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, শোলকবহর, বাকলিয়া, কাজীর দেউড়ি, লাভলেইন, জুবিলী রোড, টেরি বাজার, হাজারী গলি, আন্দরকিল্লা, দেওয়ান বাজার মুন্সি পুকুর পাড়, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, হামজারবাগ, বিবিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে পানিসংকটে পড়েছেন অনেকে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৯০ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে সেদিন বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয় মাত্র ৮৫০ মেগাওয়াট। গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৮৯ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে ১ হাজার ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৯৪৯ মেগাওয়াট। 

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি (গ্যাস, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল) সংকট রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র ও মাতারবাড়ী ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ নম্বর ইউনিট, ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিজেন্ট পাওয়ার ও ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টটিও বন্ধ রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। 

পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম মৃধা জানিয়েছেন, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায়। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম। তাই লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে লোডশেডিং কমে আসবে। 

নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘একদিকে গরম, অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ঘুমানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’ নগরের হালিশহর এলাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী শাহানা আক্তার বলেন, ‘গতকাল রাতে ছয়-সাতবার লোডশেডিং হয়েছে। আমার বাচ্চার বয়স আড়াই বছর। বিদ্যুৎ না থাকায় সে ছটফট করে। ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না।’ 

খুলনায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎনির্ভর কাজ 
অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। এদিকে প্রচণ্ড গরমে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎনির্ভর সব কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসা, কম্পিউটার বন্ধ ও শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামের লোডশেডিং আরও বেশি।

বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) সূত্রে জানা গেছে, খুলনাসহ এ অঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার। পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে গড়ে ৬৫০-৬৭০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ মিলছে ৫৪০-৫৭০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং হয় গড়ে ১০০-১১০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শুধু খুলনায় লোডশেডিং হয় ৪০-৪৫ মেগাওয়াট। গতকাল ছুটির দিনে অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও দিনের বেলায় লোডশেডিং হয়েছে।

নগরীর পল্লী মঙ্গল ফিডারের আওতায় শেখপাড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, চার-পাঁচ দিন ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। লেদ মেশিনের কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে সন্ধ্যার পর গরমে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। 

একইভাবে দাকোপ, তেরখাদা, ডুমুরিয়াসহ উপজেলাগুলোতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাত-আটবার লোডশেডিং হচ্ছে। এ কারণে কম্পিউটার, ফটোকপি, লেমিনিটিং মেশিন, বাসাবাড়ির ফ্রিজ, এসি, টিভিসহ বিভিন্ন দামি জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে ইন্টারনেট সেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তেরখাদা সাব জোনাল অফিসের সহকারী ম্যানেজার মো. বিদ্যুৎ মল্লিক জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকের নিচে নেমে আসায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘লোডশেডিং হলে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোল্ডস্টোরেজে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। লোডশেডিং চলাকালে জেনারেটর চালিয়ে রাখতে বাড়তি ব্যয় হয়।

ওজোপাডিকোর কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। ওই কারণে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছেন।

দিনাজপুর সীমান্তে মাদক-গুলির শব্দে আতঙ্কে বসবাস

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ এএম
দিনাজপুর সীমান্তে মাদক-গুলির শব্দে আতঙ্কে বসবাস
দিনাজপুর সীমান্ত

দিনাজপুরের সাতটি উপজেলা বোচাগঞ্জ, বিরল, দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর এবং হাকিমপুরের সঙ্গে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার এলাকাঘেঁষা ভারতীয় সীমান্ত। কিন্তু সীমান্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মাদক ও থেকে থেকে গুলির শব্দ। ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে সীমান্তবর্তী মানুষকে। পাশাপাশি মাদকের ছোবলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশের অংশে ঢুকে পড়েন। কারণ ভারতীয় অংশে কাঁটাতারের বাইরেও ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ আন্তর্জাতিক রেখা অনুযায়ী ১৫০ ফুট এলাকা রয়েছে। সেই অংশে মাঝেমধ্যেই অনেক বাংলাদেশি এবং গ্রামের গরু, ছাগল ঢুকে পড়ে। বাংলাদেশের অংশে কাঁটাতারের বেড়া না থাকার কারণে অনেকটা অনিরাপদ বলে মনে করছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। 

কামদেবপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোরসালিন ইসলাম বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই ভারতীয় সীমান্তে গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এতে করে আমরা অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ২০২৪ সালের এপ্রিলের দিকে বিএসএফের গুলিতে নিহত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া গিয়েছিল এখানে।’

একই এলাকার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে গুলির শব্দে অনেক সময় রাতে ঘুম ভেঙে যায়। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান।’ 

দিনাজপুরের বিরলের ধর্মপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত আর পুনর্ভবা নদীঘেঁষা কামদেবপুর এলাকার দুই কিলোমিটারজুড়েই মাদকের ভয়াল থাবা পড়েছে। এই গ্রামে গত দুই বছরে মাদকাসক্ত হয়ে বেশ কয়েকজন অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। আবার কেউ কেউ বাপ-দাদার জমিজমা বিক্রি করে এখন সর্বস্বান্ত। মাদক সেবনের আগে যিনি ১০-১৫ বিঘা জমির মালিক ছিলেন, আজকে তারা অনেকেই একেবারে পথের ফকির। মাদকের ছোবলে পড়ে নিজের ভিটাবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন কেউ কেউ। 

কামদেবপুর গ্রামে চিহ্নিত চার থেকে পাঁচজন মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। যারা একসময়ে দিনমজুরের কাজ করতেন। আজকে তারা শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে গ্রামবাসী জানান। এই মাদক ব্যবসায়ীদের নাম প্রশাসনসহ অনেকেই জানেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তবে নিরাপত্তাহীনতার কারণে সংবাদকর্মীদের কাছে এসব মাদক ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ করতে চাননি গ্রামবাসী।

দিনাজপুর শহর থেকে কামদেবপুর গ্রামে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উঠতি বয়সী যুবকদের আনাগোনা দেখা যায়। জানা যায়, কামদেবপুর গ্রামের পাশেই গৌরীপুরের পুনর্ভবা নদীর ওপর স্লুইসগেটটিকে অনেকেই মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয় মনে করছে। প্রতিদিন দিনাজপুর শহর থেকে মোটরসাইকেলযোগে বেশ কিছু উঠতি বয়সী যুবককে কানদেবপুর গ্রামে যেতে দেখা যায়। 
কামদেবপুর গ্রামের স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে শিক্ষক পর্যন্ত অনেকেই মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কামদেবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিমের অফিসে বসেই ফেনসিডিল সেবনের দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় প্রশাসন কামদেবপুর উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। 

কামদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক হোসেন বলেন, ‘রাত হলেই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল নিয়ে আসছে। ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক আমাদের এই এলাকার যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’ 

একই গ্রামের যুবক হাসনাত মুহিত বলেন, ‘মাদক শুধু একটি পরিবার নয়, একটি গ্রামকে নয়, পুরো একটি ইউনিয়নকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান কাউকে মানছে না। দিনশেষে মাদকের টাকা জোগাড়ে সে বাবা-মায়ের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করছে।’

বিজিবির দিনাজপুর ২২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আহসান উল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিজিবি আরও কঠোরভাবে সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময় দিনাজপুরের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মাদকের ক্ষেত্রে বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। তবে মাঝেমধ্যে বিএসএফ অস্ত্র ব্যবহার করে। বিশেষ করে তারা নন-নিথার (অস্ত্র) ব্যবহার করেন, তবে সেটি প্রাণঘাতী নয়। এই শব্দে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

ক্ষমতা পালাবদলের পর থেকে মজুরি বকেয়া ভালো নেই সবুজ রাজ্যের শিল্পীরা

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০০ এএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ এএম
ভালো নেই সবুজ রাজ্যের শিল্পীরা
বকেয়া মজুরির দাবিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এনটিসির চা-শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। খবরের কাগজ

বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে মৌলভীবাজারের চা-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। এর ফলে বাগানগুলোতে অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। কাজ না করায় অনেক শ্রমিক পরিবার অর্ধাহারে বা অনাহারে দিনযাপন করছেন।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন জানিয়েছে, দেশে ১৬৬টি চা-বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারেই রয়েছে ৯২টি। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি-কোম্পানির (এনটিসি) ১৮টি চা-বাগান আছে। এসব বাগানে প্রায় ১৫ হাজার চা-শ্রমিক কাজ করেন। তাদের ওপর আরও ৬০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে।

মৌলভীবাজারে এনটিসির ৯টি চা-বাগান রয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন এসব চা-বাগানের শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না। বকেয়া মজুরির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন ওই সব বাগানের চা-শ্রমিকরা। জেলার এনটিসির বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিক নেতারা বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে তারা শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করছেন। তবে ন্যায্য মজুরি না পেলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলে জানান তারা।

আন্দোলনরত চা-শ্রমিক সীতারাম বাউরী বলেন, ‘আমাদের ৬ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। মজুরি না পেয়ে অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। ঘরে খাবার নেই। মালিকপক্ষ বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করা পর্যন্ত কাজে ফিরব না।’

কুরমা চা-বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি নারদ পাসী বলেন, ‘শ্রমিকরা প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে কাজ করেন। কিন্তু তাদের মজুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক দোকানি বাকি দিতে চাইছে না। দ্রুত বকেয়া মজুরি দেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

চা-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করছেন এস এম শুভ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সমস্যা চলছে। এ পর্যন্ত ৬ সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা এক সপ্তাহের মজুরি না পেলে ভয়াবহ সমস্যায় পড়তে হয়।’

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল বলেন, ‘এনটিসির চা-শ্রমিকদের এই কর্মবিরতির কর্মসূচিতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’ শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, ‘এখন চা-বাগানগুলোতে উৎপাদনের সময়। এখন যদি শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যান, তাহলে চা উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হবে।’