কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেটের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণের ৫ কোটি টাকার মধ্যে পৌনে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং প্রায় ৯ কোটি টাকা গরমিলের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুদক কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহাথীর মুহাম্মদ সামী। মামলায় সেতাফুল ইসলামসহ মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি ১১ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সাবেক অডিটর মো. সাইদুজ্জামান এবং বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালে ভৈরবের বিসিক শিল্পনগরী প্রকল্প, ২০১৪-১৫ সালে বাজিতপুর উপজেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ২০১৪-১৫ সালে অষ্টগ্রামের চৌদন্ত সড়ক প্রকল্প এবং ২০১৪-১৫ সালে উজানচর-বাজিতপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের মূল্য বাবদ চারটি এলএ কেসের বিপরীতে পৃথক ১২টি চেকের মাধ্যমে মোট ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এই ১২টি চেক গ্রহণ করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন, কে এ আল মামুন, মো. কামরুজ্জামান, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. আনিছুর রহমান, মোহাম্মদ মাহমুদ হোসেন শিমুল, রায়হান উদ্দিন, জিলন খান, আবুল কালাম ও আবদুল হামিদসহ ১০ ব্যক্তি। কিন্তু তারা কেউই এসব প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নন।
ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির আবেদন গ্রহণ, মালিকানাস্বত্বের প্রামাণিক দলিল ছাড়া ও সংশ্লিষ্ট রোয়েদাদ বইতে লিপিবদ্ধ না করে এবং স্বত্ব মালিকানা অনুযায়ী বিতরণ না করে নিজ উদ্যোগে অধিকাংশ এলএ চেকের মুড়ির অংশ ও প্রাপকের অংশে ভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম। এভাবে ১২টি চেক বিতরণের মাধ্যমে মোট ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন সেতাফুল ইসলাম। এ ছাড়া তিনি এসব চেকসহ অন্যান্য এলএ চেক নগদায়নের জন্য ভুয়া অ্যাডভাইস তৈরি ও জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠানোর পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখাকে এড়িয়ে সেসব চেক বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেন। এতে চারটি প্রকল্পের লেজার বইগুলোর সঙ্গে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রারগুলোর মোট ৮ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬ টাকার গরমিল ধরা পড়েছে। ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সরকারি অর্থ গরমিল ও আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটে।
দুদক জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। অনুসন্ধানকালে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ১২ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। মামলার তথ্য বিবরণী আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখন এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে এবং তিনি মামলাটি আরও অধিকতর তদন্ত করবেন।
এর আগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কিশোরগঞ্জ জেলায় ‘হাওর এলাকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প’ এর জন্য মোট ১৪০.৩৯৯ একর ভূমি অধিগ্রহণের পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুদক ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাম প্রসাদ বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মো. সেতাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। চার্জশিট দাখিল শেষে মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।