ঢাকা ১৯ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
English

সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কমলেও কমেনি দুর্ভোগ

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৬ এএম
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কমলেও কমেনি দুর্ভোগ
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

গত তিন দিন ধরে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতিও হয়েছে। তবে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি বানভাসী মানুষের। যমুনা নদীর পানি জেলার শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে (১৩ দশমিক ২৯ মিটার)। একই সময়ে জেলার কাজিপুর মেঘাইঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি ২১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কাজিপুর পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে (১৫ মিটার), যার বিপৎসীমা (১৪ দশমিক ৮০ মিটার)। এ ছাড়াও এখনো পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চলবেষ্টিত ৩৪টি ইউনিয়নের ২১ হাজার পরিবারের প্রায় ৯৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। অনেকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এসব এলাকায় শুকনো খাবার, স্যানেটারি ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যসংকটও। অনেকেই ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৬ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমির রোপা আমন, বোনা আমন, পাট, তিল, মরিচ, বাদাম, শাক-সবজি ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করেনি কৃষি অধিদপ্তর।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান জানান, পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নে ২১ হাজার পরিবারের ৯৪ হাজার ২১৬ জন মানুষ এখনো পানিবন্দি। বন্যাদুর্গত এসব মানুষের জন্য ইতোমধ্যে ১০০ টন চাল, ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মজুত রয়েছে আরও ১ হাজার ২০০ টন চাল, ২০ লাখ টাকা ও ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার।

মামলা না নেওয়ায় ওসিকে চাকরি ছেড়ে দিতে বললেন কোর্টের পিপি

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম
মামলা না নেওয়ায় ওসিকে চাকরি ছেড়ে দিতে বললেন কোর্টের পিপি
পিপি আনিসুজ্জামান গামা ও ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ

মামলা না নেওয়ায় বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন জামালপুর জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আনিসুজ্জামান গামা।

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে এ বিষয়ে তাদের একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। 

আনিসুজ্জামান বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আশিকুর রহমান তুলনকে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম বাদশা মিয়া মারধর করেন। বিষয়টি নিয়ে আশিকুর থানায় মামলা করতে গেলে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মীমাংসা করার কথা বলে থানার ওসিকে মামলা না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এর প্রেক্ষিতে থানায় মামলা না নেওয়ায় মোবাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আনিসুজ্জামান গামা। এক পর্যায়ে তিনি ওসিকে স্বৈরাচারের দোসর বলে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বলেন। জবাবে ওসি শাকের পিপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের লোকদের বিএনপির বানিয়ে জামিন দেওয়ার অভিযোগ করেন। এ ঘটনার পর গত ২৯ এপ্রিল আশিকুর বাদী হয়ে নুরুল ইসলামসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে বকশীগঞ্জ থানায় মামলার আবেদন করলে মামলা নেন ওসি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওসির সঙ্গে পিপির ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের কথোপকথনে শোনা যায়-

‘আনিসুজ্জামান গামা: উনারে তো আমি মানবো না। মিল্লাত সাহেব (কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ) মামলা নেওয়ার না করার কে? উনি না করবে কেন? উনি মার খাইছে?
ওসি শাকের: আপনার এটা দলীয় বিষয়। দুই জনই দলের লোক, আপনি মামলা নেওয়ার জন্য চাপ দিতাছেন।

আনিসুজ্জামান: দলীয় কোনো বিষয় না। আর মিল্লাত সাহেব এখানে কোন বিষয় না। আপনার কাছে মামলা দিছি মামলা নিবেন।
ওসি: আচ্ছা মামলা দিছেন, মামলা নিব। উনি না করলে আমি কি উনার কাছে না শুইনা মামলা নিব।

আনিসুজ্জামান: তাইলে তো আপনি স্বৈরাচারের দোসর। একজনে না করবে আর আপনি মামলা নিবেন না। খালেদা জিয়া না করবে আপনি মামলা নিবেন না।
ওসি: মামলা নেওয়ার মতো তো ঘটনা না এইডা। ৩২৩ এর ঘটনা, আপনি তো আইন ভালোই জানেন, আপনি পিপি একজন।

আনিসুজ্জামান: ৩২৩ এর ঘটনা, ২৩ শেই মামলা নিবেন।
ওসি: ২৩ শে আবার মামলা কেমনে নেয়।

আনিসুজ্জামান: আপনি নিবেন না আপনি না করবেন।
ওসি: আপনার এত ক্ষমতা, আপনি কোর্ট থেকে মামলা করায়ে দেন অসুবিধা কি?

আনিসুজ্জামান: কোর্ট থেকে (মামলা) করবে তাহলে আপনি বেতন নেন কেন? আপনি রিজাইন দেন।
ওসি: আপনিও রিজাইন দেন, আমিও রিজাইন দেব, আপনিও রিজাইন দেন। আপনি সরকারি কাজ করতাছেন, আপনি বিএনপির নাম ভাঙাইয়া মিয়া চলতাছেন, হেই মিয়া আপনি আমারে হুমকি দিয়েন না। আমি আপনারে ডরাই না, আপনি কেঠা, হেই মিয়া আপনে কে? আপনারে আমি ভয় পাই? আওয়ামী লীগের লোকদের বিএনপি বানায়ে জামিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতাছেন।

আনিসুজ্জামান: আমি বিএনপির নাম ভাঙাইয়া না আমি সরকারি পিপি। আমি বিএনপির পিপি না, বিএনপির গোলাম না। আপনি রেকর্ড করে মিল্লাতরে দেন, রাখলাম।’

এ বিষয়ে আনিসুজ্জামান গামা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় তুলন নামের একজনকে মারধর করে বাদশা ও তার লোকজন। ওসি নিজে আমাকে ফোন করে মামলা লিখে দিতে বলেন। মামলা লিখে দেওয়ার পরও মামলা নেয়নি ওসি। সে মামলা নিবে না তাহলে আমাকে দিয়ে মামলা কেন লিখিয়ে নেবেন? এজন্য তাকে চাকরি রিজাইন দিতে বলেছি। মামলা নেওয়া যাবে না বলে ওসি পরে আবার মামলা কীভাবে নিলেন? আমি আসামিদের জামিন দেওয়ার কেউ না। এগুলো ভুয়া কথা। ওসি এজহার নামীয় আসামিদের না গ্রেপ্তার করে শুধু সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠান। সে নিজেই কল রেকর্ড করে ছড়িয়ে দিয়েছে।’

এদিকে  ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদকের মধ্যে একটা ঝামেলা হওয়ায় থানায় মামলা করতে আসেন। বিষয়টি স্থানীয় বিএনপি নেতারা মীমাংসা করার কথা জানান। এ বিষয়ে জজ কোর্টের পিপি মোবাইলে কল দিয়ে আমাকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেন ও চাকরি রিজাইন দিতে বলেন। ইতোপূর্বেও পিপি আনিসুজ্জামান বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক মামলা নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন। কে বা কারা কল রেকর্ড করছে তা জানি না।’

আসিফ/পপি/

বাংলাদেশি ২ কৃষককে ধরল বিএসএফ, প্রতিবাদে স্থানীয়দের হাতে আটক ২ ভারতীয়

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ০৩:৫১ পিএম
আপডেট: ০২ মে ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম
বাংলাদেশি ২ কৃষককে ধরল বিএসএফ, প্রতিবাদে স্থানীয়দের হাতে আটক ২ ভারতীয়
ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত থেকে এনামুল ইসলাম (৫০) ও মাসুম (১৫) নামে দুই বাংলাদেশি কৃষককে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ধরে নিয়ে গেছে।

এর প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

শুক্রবার (২ মে) সকাল‌ সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মজৈন সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।

আটক বাংলাদেশিরা উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুর ইসলাম ও বিরল থানার এসআই কাওসার ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিরলের ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মজৈন সীমান্তে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছিলেন মাসুদ ও এনামুল নামের দুই কৃষক। তখন বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে যায়।

সুমন/

মাছ ধরতে গিয়ে আরাকান আর্মির হাতে আটক ৪ রোহিঙ্গা

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
মাছ ধরতে গিয়ে আরাকান আর্মির হাতে আটক ৪ রোহিঙ্গা
ছবি: সংগৃহীত

টেকনাফে নাফনদী লাল দ্বীপ সংলগ্ন মায়ানমার জলসীমানা থেকে মাছ শিকারের সময় ৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে মায়ানমার সীমান্তে থাকা আরাকান আর্মি।

অপহৃত রোহিঙ্গারা হলেন, টেকনাফের জাদিমুড়া ২৭ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের বাসিন্দার মোহাম্মদ ইসমাইলের ছেলে আরাফাত উল্লাহ (২১), একই ক্যাম্পের বাসিন্দার সৈয়দ আলমের ছেলে আনিস উল্লাহ (২২), সৈয়দ আলমের ছেলে মোহাম্মদ জাবের (১৪) এবং মোহাম্মদ হাসানের ছেলে আনোয়ার সাদেক (২৭)।

বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল ৮ টায় টেকনাফের দমদমিয়া লাল দ্বীপ সংলগ্ন নাফ নদীতে মাছ শিকারের সময় তাদের আটক করা হয়।

টেকনাফের জাদিমুড়া ২৭ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের মাঝি মোহাম্মদ নুর বলেন, সকালে নাফ নদীতে কর্কশিট দিয়ে মাছ শিকারের সময় লাল দ্বীপ সংলগ্ন মায়ানমার জলসীমানা অতিক্রম কালে ৪ জন জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারকে আটক করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তার মধ্যে তিনজন পুরাতন ও এক জন নতুন রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। তারপরও অনেকে তা না মেনে মাছ ধরতে যায়। আজও সেভাবে মাছ ধরতে ধরতে নাফ নদীর লালদিয়া এলাকায় চলে গেলে ওই ৪ জনকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মির। তাদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বাহিরে যাওয়া অনুমতি না থাকলেও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তারা বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নাফ নদীতে রোহিঙ্গাদের মাছ শিকারের অনুমতি না থাকলেও বার বার তারা নাফ নদীতে মাছ শিকারে যায়। মাছ শিকারের সময় মায়ানমার জলসীমানা অতিক্রম করাতে জেলেদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি।

এসব জেলেদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন শাহপরীরদ্বীপ থেকে টেকনাফ পৌরসভা পুরাতন ট্রানজিট জেটিঘাট পর্যন্ত সকাল ৮ থেকে বিকার ৪ টায় পর্যন্ত মাছ শিকারের অনুমতি দিয়েছে। নাইট্যং পাড়া থেকে হোয়াইক্যং নাফ নদীতে মাছ শিকারের অনুমতি না থাকলেও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকেই নাফ নদীতে মাছ শিকারে যায়।

শাহীন/সিফাত/

সরকারি গাছ কেটে ফেঁসে গেলেন ইউপি চেয়ারম্যান

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ০১:৪০ পিএম
সরকারি গাছ কেটে ফেঁসে গেলেন ইউপি চেয়ারম্যান
ছবি: খবরের কাগজ

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সরকারি জায়গা থেকে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ১০৯ টি গাছ কর্তনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শাহাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়াসহ ১৩ জনের নামে মামলা দায়েরর করা হয়েছে।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে শাহাবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অন্য আসামীরা হলেন, প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক মো. শাহাব উদ্দিন, মুজিবর হোসেন, জরিনা বেগম, রজব আলী, আজিবর, ইলিয়াস, ঈমান আলী,ওমর, হায়দার, আবু সাঈদ, এনামুল ও শরিফুল।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে নড়াইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে কাটা গাছ জব্দ করে উপজেলা ভূমি অফিসে নিয়ে আসে।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশে মেহগনি ও আম গাছগুলো রোপণ করেছিলেন প্রশিকা নামে একটি এনজিও। সেসময় ওই সড়কটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতাভুক্ত মনে করে জমির মালিক হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ এবং দেখভালের জন্য ওই এলাকায় প্রশিকার গঠিত প্রভাতী যুব সংঘের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে গাছগুলো রোপণ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০ বছর পর ২০২৯ সালে গাছগুলো বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ওই এলাকায় বিদ্যুতের সাব-স্টেশনের কাজ চলায় গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। তাই গাছগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেন চুক্তি করা তিনটি পক্ষ। তবে এতদিনে সড়কটি খাস হয়ে যায়। এ কারণে গাছগুলো কর্তনের অনুমতি চেয়ে নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করে প্রশিকা। এতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ও প্রভাতী যুবসংঘের সদস্যরা সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। তবে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই গাছগুলো কেটে বিক্রি করে দিচ্ছিলেন প্রভাতী যুবসংঘের সদস্যরা।

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন দাবি করেন বলেন, গাছ কর্তনের জন্য তিনি ইউএনও বরাবর আবেদন করেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ও মেম্বার ইব্রাহিম শেখ। কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। হঠাৎ কয়েকদিন আগে মেম্বার ইব্রাহিম তাকে ফোন দিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গাছের যে ডালপালা কাটা হয়েছিল সেগুলো বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে, তাই ভেবে তাদের বিক্রি করে দিতে বলেন তিনি। এরপর কীভাবে কারা গাছ কেটেছে সেটা জানা নেই।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াররম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কর্তনের অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু না।

নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদের উল্লেখ করা হলেও রাস্তাটি ছিল ব্যক্তি মালিকদের জায়গার ওপর। এরপর ২০১৫ সালে ওই সড়কটি খাস হয়ে যায়। আর খাস জমি থেকে এভাবে গাছ কেটে নেওয়া বৈধ নয়। তাই অভিযান চালিয়ে গাছগুলো জব্দ করা হয়েছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শাহাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়াসহ ১৩ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ২৫ তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০২৫। আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।

শরিফুল/সিফাত/

মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য
ছবি: খবরের কাগজ

মাইক্রোবাসে লেখা অ্যাম্বুলেন্স, ছাদে সাইরেন, আর ভেতরে সাধারণ সিট, চিকিৎসা সরঞ্জামের বালাই নেই। চিকিৎসা নগরী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসব অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে প্রতিনিয়ত রোগী বহন করছে, চার্জ নিচ্ছে পেশাদার হাসপাতালের সমান বা তারও বেশি। মাইক্রোবাসকে সামান্য পরিবর্তন করে গড়ে তোলা এই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা এখন রীতিমতো লাভজনক বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। এসব অ্যাম্বুলেন্সের বেশিরভাগই অবৈধ। অথচ এর পেছনে লুকিয়ে আছে জীবনের ঝুঁকি, অনিয়ম আর নজরদারির ঘাটতি। একটি ট্রলি আর সাইরেন ছাড়া কিছুই থাকে না এসব অ্যাম্বুলেন্সে।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও পুলিশ, বিআরটিএসহ সব জায়গায় ম্যানেজ করে সেবার নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি হলেও একবার মামলা খেয়ে এক মাস চলতে পারে এবং মামলার দেওয়া কাগজ দিয়ে দীর্ঘদিন ট্রাফিক সিগন্যাল এড়িয়ে চলেন বলে জানান অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। দিনেরবেলা অ্যাম্বুলেন্সের তকমা লাগিয়ে রোগী পরিবহন করলেও আশেপাশের জেলাগুলোতে রাতের বেলা বিভিন্ন মোড় থেকে যাত্রী পরিবহন করা হয় এই অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সগুলো দিয়ে।

প্রশাসন এসব অবৈধ যানবাহন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি করেন চালকরা। ফলে দীর্ঘমেয়াদি কোন সুরাহা করতে পারে না পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ।

বিআরটিএর ভাষ্য অনুযায়ী, গাড়ী আমদানির সময় "হেলথ ভেহিক্যাল সার্ভিস" হিসেবে অ্যাম্বুলেন্স আমদানি করা হয়। যেগুলো পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে রোগী পরিবহন করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এসব তালিকা বিআরটিএকে পাঠানো হয়। তালিকা ধরেই অ্যাম্বুলেন্সের নিবন্ধন দেওয়া হয়। কোন ব্যক্তির নামে নিবন্ধন দেওয়া হয় না। ব্যক্তি মালিকানার অ্যাম্বুলেন্স চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ। 'গ' সিরিয়ালে প্রাইভেটকার এবং 'ঠ' সিরিয়ালে পিকাপের রেজিস্টেশন দেওয়া হয়। 'ছ' সিরিয়ালে ৭১ ও ৭৪ দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স রেজিষ্ট্রেশন দেওয়া হয়। এই সিরিয়ালের বাইরে যেসব অ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় চলাচল করে সেগুলো মূলত মাইক্রোবাস কেটে বানানো।

এছাড়াও শর্ত থাকে যে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর জন্য স্থায়ী শয্যা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক, চিকিৎসকের বসার ব্যবস্থা, স্ট্রেচার ও সাইরেন থাকতে হবে। চালক চিকিৎসক, রোগীসহ মোট ছয়জন বসতে পারে এমন গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স বানাতে হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর মেডিকেল ক্যাম্পাসের ভেতরেই রোগীর জন্য অপেক্ষা করছে লক্কর ঝক্কর মাইক্রোবাস। তবে সেগুলোর বেশিরভাগ লাইসেন্সবিহীন ও ঢাকা মেট্রো চ ও গ সিরিজের নম্বর প্লেট। তবে কিছু কিছু গাড়ীতে ঠ সিরিজ আছে। এসব গাড়িতে নেই ফিটনেসের বালাই, নেই কোন অক্সিজেন। বেশিরভাগ গাড়িই ব্যাক্তিমালিকানাধীন।

এই অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের একজন রাসেল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে সমিতি আছে সেই সমিতির আন্ডারে এই গাড়িগুলো চলে। এগুলো বেশিরভাগই নোয়া মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানানো। একটা এম্বুলেন্সের ভাড়া রোগীরা দিতে পারে না তাই আমরা কম দামে যাত্রীদের সেবা দেই। আমরা সেবা না দিলে রোগী যাবে কোথায়। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স কম। তাছাড়া সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দামও অনেক বেশি চায়। তাই রোগীরা যেতে চায় না। সবাই সময় মত তাদেরকে পায়না।

আর একচালক রিপন মিয়া বলেন, আমাদের সবাই একজোট রয়েছি। এ কারণে নতুন করে কেউ এই অ্যাম্বুলেন্স চালাতে গেলে সমিতির আন্ডারে আসতে হয়। তখন আর সমস্যা হয় না।

তবে অভিযোগ রয়েছে, কোন রোগী মারা গেলে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সিন্ডিকেটে পড়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হয়। মারা যাওয়ার সাথে সাথেই এই সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয় রোগীর স্বজনদের। ফলে লাশ নিয়ে বিপাকে পড়েন স্বজনরা।

জানা গেছে, এই অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট চালায় বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি রংপুর শাখা। এই কমিটির সদস্যরা অনেকেই পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গেও রয়েছে। সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণে হাসপাতাল এলাকায় ৭০ টি অ্যাম্বুলেন্স চলে যার ৫৫টিই মাইক্রোবাস কেটে বানানো। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাজাহান হাওলাদার ম্যাক্স সহ হাসপাতালে কর্মরত আওয়ামী পন্থী সংগঠনের কয়েকজন নেতা। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন ম্যাক্সের নিজের ভাই শরিফুল ইসলাম সহ অন্যান্য নেতারা।

সংগঠনের জেলা ও মহানগর শাখার সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, এই অ্যাম্বুলেন্স গুলো বেশিরভাগই মাইক্রোবাস কেটে বানানো। ৭০ টির মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি বৈধ। অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও আমরা সংগঠন থেকে বেশ কিছু দাবি-দাওয়া জানিয়েছি। আমরা মাঝখানে আন্দোলনে গিয়েছিলাম পরে পুলিশের সাথে সমঝোতা করে চলছে। পুলিশ কিছু দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছে আরও কিছু দাবি-দাওয়া আছে। যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে সেন্ট্রাল থেকে পরবর্তীতে যে ঘোষণা আসবে আমরা সেটাই করব। তবে এই অ্যাম্বুলেন্স গুলো থাকাতে রোগীরা কম দামে সেবা নিতে পারে। যার কারণে অবৈধ হলেও চাহিদা বেশি।

অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, এরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে ব্যবসা করে আসছে। আমাদের দুটি অ্যাম্বুলেন্স তাই তারা থাকলে রোগীরা কিছুটা সেবা পায়। অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাপারে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে হবে এবং অ্যাম্বুলেন্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে তাদের সাথে বসা হয়েছিল আবারও বসার চেষ্টা করব।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ- পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুর রশিদ বলেন, এটা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণ করার।

বিআরটিএ রংপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম সরকার জানান, মাইক্রোবাস বা পিক-আপ কেটে অ্যম্বুলেন্স বানানো একেবারেই অবৈধ। আমরা এই অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ না হবে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।

সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদেরর স্বজনরা।

সিফাত/