
লক্ষ্মীপুরে টিসিবির ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাদের আত্মীয়স্বজন ও পছন্দের ব্যক্তিদের পণ্য কেনার সুযোগ করে দিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কার্ডধারীদের পণ্য কিনতে না দিয়ে নিজেই পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কার্ডধারীরা টিসিবির পণ্য কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব অনিয়ম দূর করতে এবং প্রকৃত কার্ডধারীর পণ্য কেনা নিশ্চিত করতে তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পরও কার্ডধারীদের পণ্য কিনতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার নুসরাত জাহান ও সুবর্ণা বেগম এ ব্যাপারে অভিযোগ দেন। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বিক্রয় কেন্দ্রসহ আরও তিনটি কেন্দ্র ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
সরেজমিন ওই বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে তদারকি কর্মকর্তা আব্দুর রহিমকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা ডিলার এম এ মালেক তাকে জানাননি। অন্যদিকে ডিলার এম এ মালেক বলেন, ‘তদারকি কর্মকর্তা পণ্য বিক্রির সময় ঠিকমতো আসেন না। যারা কার্ড নিয়ে আসেন তাদের পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কার পণ্য কে নিচ্ছেন, তা তাদের দেখার সুযোগ হয় না।’
দেখা গেছে, দত্তপাড়া গ্রামের রুহুল জামিনের কার্ড নিয়ে পণ্য কিনতে এসেছেন একই গ্রামের সওদাগর বাড়ির টিপু হোসেন, রিফুজি বাড়ির শাহীনের কার্ড নিয়ে এসেছেন ওই গ্রামের সওদাগর বাড়ির আলী আকবর। হোসনেয়ারা বেগমের কার্ড নিয়ে এসেছেন দেলোয়ার হোসেন, ধোপা বাড়ির নূর নবীর কার্ড দিয়ে পণ্য নিচ্ছেন ওই বাড়ির সেলিম। অপর দিকে কার্ডধারী পলি মজুমদারের স্বামী শ্যামল মজুমদার, নাজমুন্নাহার, সুজিয়া বেগম, পেয়ারা বেগম, হাছিনা আক্তার, সুবর্ণা, নাছিমা বেগম ও হাছিনাসহ আরও অনেকেই অভিযোগ করে জানান, গত তিন বছর ধরে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হলেও তারা এক-দুইবারের বেশি পণ্য কেনার সুযোগ পাননি। এমনকি পণ্য কেনার সময় কার্ড রেখে দেওয়া হয়।
কার্ডধারী সুবর্ণা জানান, তার কার্ডটি ফেরত পেতে বারবার ইউনিয়ন পরিষদে যান। কিন্তু কার্ড ফেরত দেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানতে দত্তপাড়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে টিসিবির কার্ডধারীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৭৬ জন। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে কেউ যদি অভিযোগ করেন, তবে তার কার্ড বাতিল করে দেওয়া হবে। একজন বারবার পণ্য কিনবে, আর বাকিরা বাদ যাবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’
শুধু দত্তপাড়া ইউনিয়নই নয়। একই চিত্র দেখা গেছে সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে। উপজেলার হাজিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল আলম বাবুল, বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল রহমান, টুমচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন লোলা, এমনি মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউছুফ ছৈয়াল অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। তবে ইউপি সদস্যরা অনিয়ম করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘কারোর কার্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বাতিল করার সুযোগ নেই। একজনের কার্ড বাদ দিয়ে অন্য জনকে দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। পণ্য কেনার পর কার্ডধারীকেই ফেরত দেওয়ার কথা। কার্ড ইউনিয়ন পরিষদে জমা রাখার কোনো বিধান নেই। আমার কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’