খুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সক্রিয় হয়েছে যৌথ বাহিনী। গত দুই সপ্তাহে পরপর কয়েকটি বড় অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের খবরে স্বস্তি ফিরছে জনমনে। বিশ্লেষকরা অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ছাড় পাচ্ছেন না রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারাও। চাপের মুখে আত্মগোপনে যেতে শুরু করেছে সন্ত্রাসীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যৌথ বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের মুখে দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে রয়েছে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু। ৮ জুন রাতে নগরীর সামছুর রহমান রোডে তার বাড়িতে অভিযান চালান যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রা, পাইপগানসহ কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়। এ সময় ওই বাড়ি থেকে আব্দুর রহমান, ইদ্রিস গাজী ও গ্রেনেড বাবুর বাবা জোনায়েদ চৌধুরী মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে ২২ জুন রাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ সালাউদ্দিন মোল্লা বুলবুল, তৌহিদুর রহমান তৌহিদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। টুটপাড়া তালতলা মেইন রোড থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি, একটি রিভলভার, একটি শটগান, চার রাউন্ড কার্তুজ, তিনটি রামদা, দুটি চাইনিজ কুড়াল, তিনটি চাপাতি, ১৭০ গ্রাম গান পাউডার, ১০৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারাও ছিলেন।
এর আগে ১৮ জুন বিদেশি রিভলভার, গুলিসহ খুলনা সিটি কলেজের একটি ছাত্র সংগঠনের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক রাজু আহমেদ ও ২৭০ পিস ইয়াবাসহ শরণখোলা ইউনিয়নের একটি ছাত্র সংগঠনের সাবেক সদস্যসচিব শামীম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে নতুন করে অপরাধ তৎপরতা শুরু করেছে। এলাকা নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার, পেশিশক্তির প্রদর্শন, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। পর পর কয়েকটি হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হওয়ায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অবৈধ অস্ত্রের উৎস খুঁজতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির তথ্য অনুযায়ী, খুলনা মহানগর ও জেলায় মে মাসে ১০টি হত্যা, ১৩টি ধর্ষণ, অস্ত্র আইনে পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ২৩টিসহ মোট ৩২৪টি মামলা হয়, যা গত এপ্রিল মাসে হওয়া মামলার চেয়ে ১৫টি বেশি।
খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রমে পুলিশ মাঠে সক্রিয় রয়েছে। খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা করে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হয়েছে। এরই মধ্যে অস্ত্রসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে।’
তবে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় পুলিশ অভিযান চালালেও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা যায় না। অজানা কারণে পুলিশ আসার আগেই তারা পালিয়ে যায়। আত্মগোপনে থেকে সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি, খুন, মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ করছে। সন্ত্রাসীদের কাছে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি জনমনে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।’ তবে খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ ইমরান বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছে।’