সিলেটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং কারাবন্দী শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করেছেন সংক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।
শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে এ দাবি জানান তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহ্বান করা এই সমাবেশে শতাধিক অভিভাবক ও নাগরিক অংশ নেন।
সমাবেশে বলা হয়, ‘আন্দোলন দমনের নামে শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে হত্যা, অব্যাহত ধরপাকড় ও নিপীড়ন-নির্যাতনে অভিভাবক এবং নাগরিক হিসেবে আমরা সংক্ষুব্ধ। আলোচনা হোক আর অনুশোচনার সিদ্ধান্ত হোক- আগে কারাবন্দি শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিন।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল করিম চৌধুরী কিম।
সূচনা বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন যুব সংগঠক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান।
প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘কোটা সংস্কারের একটি নির্দোষ দাবিকে অসহনীয় পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার দায় সরকারের। আরিচা রোডের ট্রাকড্রাইভারের মতো বেপোরোয়া রাষ্ট্র পরিচালনার খেসারত আজ দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে। দেশ আজ বিপন্ন। আমাদের সন্তানেরা বন্দুকের মুখে বুক পেতে দাঁড়াচ্ছে। যারা বন্দুক নিয়ে তাদের রুখে দিতে চাইছে ওরাও আমাদের ভাই, আমাদের সন্তান। এই অসহ্য পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছি না। রাষ্ট্রেরও সংস্কার প্রয়োজন।’
আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন বলেন, ‘চলমান ছাত্র আন্দোলনে সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের আটক করা হয়েছে। তাদেরকে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে। প্রশাসনকে মানুষের আবেগ ও সংবেদনশীলতা বুঝতে হবে। একজন সাধারণ ছাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো সমাজের মননে এর প্রতিক্রিয়া হয়। আর দুর্বৃত্তরা এর সুযোগ নেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এক চরম দুঃসময় ও ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছি। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রনে সরকারের চরম ব্যর্থতা, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, ব্যাপক প্রাণহানি, সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংসযজ্ঞে দেশের মানুষ আজ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় আছেন। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী কিংবা সুযোগ সন্ধানী সন্ত্রাসীদের দ্বারা হয়রানির আশঙ্কা।’
সমাবেশের এক পর্যায়ে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের ধরপাকড়ের নামে হয়রানি বা বিপদের সম্মুখীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দল-মত, জাতি-ধর্ম ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে যে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, বাহিনী বা সংস্থা দ্বারা হয়রানির শিকার হলে কিংবা নিজেকে বিপন্নবোধ মনে করলে আমাদের জানাতে পারেন। সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন পাশে থাকার চেষ্টা করবে।’
সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক আনসার খান, সাংস্কৃতিক সংগঠক মনির হেলাল, রাজনৈতিক সংগঠক উজ্জ্বল রায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন, পলিটিক্যাল স্ট্যাডিজের অধ্যাপক ড. দিলারা রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান ওয়েছ, রেজাউল কিবরিয়া, রোটারিয়ান সামসুল হক দিপু, অভিভাবকদের পক্ষে ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী অনি, অ্যাডভোকেট জাকিয়া জালাল, রুহুল কুদ্দুস মাসুম, মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক কর্মকর্তা রোমেনা বেগম রোজী, শিশু-কিশোর সংগঠন উষার পরিচালক নিগাত সাদিয়া প্রমুখ।
মেহেদী/পপি/অমিয়/