সেনা প্রধান, রাষ্ট্রপতি, রাবি শিক্ষক আসিফ নজরুল ও বিএনপিসহ রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০-২২ হাজার হিন্দু-খ্রিস্টান অধ্যুষিত নাটোরে হিন্দু-খ্রিস্টানদের সুরক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রতিটি এলাকায় সারারাত জেগে দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় রাজনীতিকসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী একদল যুবক। তাদের ওই তৎপরতায় ইতোমধ্যেই কমেছে হামলা আর অগ্নিসংযোগ। এতে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে হিন্দু-ক্রিস্টানসহ স্থানীয় জনজীবনে।
নাটোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি ও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্রনাথ জানান, গতরাতে লালপুর উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকারের বাড়ি ঘর লুটপাট হয়েছে। এচাড়া একই উপজেলার সভাপতি জিতেন সাহার বাড়িও লুট এবং ভাংচুর হয়েছে।
সদর উপজেলার হরিশপুর নিয়নের শংকরভাগ এলাকায় গ্রাম্য চিকিৎসক রতনে সরকারের বাড়ি লুট হয়েছে। তাকে পিটিয়েও আহত করা হয়। কশবা পীরগঞ্জ এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরবিন্দ সরকারের বাড়ি লুট হয়েছে। সিংড়া উপজেলার অজিত মোহরীকে মারপিট করা হয়েছে। নাটোর শহরের পটুয়াপাড়া এলাকার মনিন্দ্রনাথ প্রাং ওরফে বাবুর ২টি মেটরসাইকেল নিয়ে দ্বোতলায় আগুন দেওয়া হয়েছে। বঙ্গোজ্বল এলাকায় স্নিগ্ধা সরকারের বাড়ি লুট হয়েছে। জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি, নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলির গাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে বসার রুমেও আগুন দেওয়া হয়েছে।
নাটোর ব্যাপটিস্ট মিড মিশন্স হাসপাতাল স্টাফ আমিন দেব জানান, নাটোরে ৫-৭ হাজার খ্রিস্টান বাস করেন। তবে জেলার কোথাও এখন পড়র্যন্ত কোন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বা কেন মারপিটের ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া বাজারের অধিবাসী সাইফুল ইসলাম আনোয়ার জানান, তারা গত সারারাত স্থানীয় হিন্দুদের বাড়িঘর এবং মন্দির রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তাদের মতো প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় রাজনীতিক ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় ওই দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় জামায়াত নেতা নাম প্রকাশ না করার শড়তে জানান, তারাও দলীয় নির্দেশনায়, রাত জেগে কাজ করছেন। এতে কোন মন্দির বা হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ জানান, দীর্ঘদিন আ'লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় স্থানীয় আ'লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতার প্রভাবে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এরমধ্যে কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতাও রয়েছেন। পট পরিবর্তনের কারণে ওই পূর্ব শত্রুতা এবং ক্ষোভের বহি:প্রকাশ হিসাবে দু'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পাওয়া গেলেও তাৎক্ষণিক সকলের পাশে, দাঁড়াচ্ছেন তারাসহ স্থানীয় অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার কোথাও ওই ধরণের হামলা বা ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়নি।
দিঘাপতিয়া বাজারের ব্যবসায়ী তপন কুমার পাল জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি ভালো। তারা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক ও কেটা সংস্কার আন্দোলনের যুবকরা সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজ নিচ্ছেন। এতে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে সকলের মধ্যে।
অ্যাডভোকেট খগেন্দ্রনাথ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে কোন অপ্রিতিকর খবর পাওয়া যায়নি। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
কামাল মৃধা/এমএ/