দীর্ঘ ৮ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। তিন ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি। তারা সবাই পড়ালেখা করে। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। পরিবারের আর্থিক দৈন্যতার কারণে সম্প্রতি একটা দোকানে চাকরি নিতে ঢাকায় যায় সে। পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আমার ছেলেটাকে হত্যা করেছে। শিক্ষার্থীদের বিজয় উদযাপন না করেই চলে গেল আমার ছেলেটা। আমি কার কাছে বিচার চাইব? কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলিবিদ্ধ নিহত ইশমামুল হকের মা শাহেদা বেগম।
ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তিনি। তার ছেলে জীবিত নেই সেটি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। প্রতিবেশীরা বাসায় এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা তাকে বুঝাচ্ছেন ইশমাম মারা যায়নি, সে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য শহিদ হয়েছে। আবার অনেকে সাতকানিয়া-লোহাগড়ার বীর হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন নিহত ইশমামকে।
জানা যায়, গত সোমবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচির মিছিলে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইশমামুল হক (১৭)। মিছিলে অংশ নেওয়া অন্য আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের গুলিতে নিহত ইশমামুল হক চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দর্জিপাড়া এলাকার মৃত নুরুল হকের পুত্র। অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েছে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। সে ঢাকার একটি মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণিতে পড়ালেখার পাশাপাশি চকবাজারে একটি দোকানে চাকরি করতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়।
নিহত ইশমামের বড় ভাই মুহিবুল হক জানান, ৮ বছর আগে আমার বাবা মারা যান। আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। ইশমাম (৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়। কোমরের একটু উপরে পেছন দিক থেকে গুলি ঢুকে পেট ভেদ করে বেরিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার প্রধান সমন্বয়ক ফরহাদ সাকিব বলেন, গত সোমবার সকালে 'রোড টু মার্চ' কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল চানখাঁরপুল থেকে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিল। চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ গুলি চালালে চারজন গুরুতর আহত হন। ওই চারজনের মধ্যে ইশমামও ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল ১০টায় লোহাগাড়া শাহপীর পাইলট হাই স্কুল মাঠে নিহত ইশমামের প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে নিজ গ্রামের বাড়ি দর্জিপাড়ায় তার দ্বিতীয় জানাযার নামাজ শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।