ভরা বর্ষায় বৃষ্টির দেখা পাওয়া না গেলেও শ্রাবণের শেষ সময়ে এসে গাইবান্ধায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দুদিনের টানা বৃষ্টিতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। চলতি আমন মৌসুমে তাদের এবার সেচ বাবদ বাড়তি খরচ গুনতে হবে না। স্বস্তির বৃষ্টিতে কৃষকের পাট জাগ দেওয়ার দুশ্চিন্তারও অবসান ঘটেছে। কৃষকরা বলছেন, গত বছর এই সময় আমনের আবাদ করে তারা ভালো ফলন পেয়েছেন।
এবার পুরো মৌসুমে বৃষ্টি না থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টি তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এখন তারা পাটের খেতেই আমন আবাদ করবেন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমন রোপণ করা যায়। জেলার মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানাভাবে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, গত বুধবার থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়। এই দুদিনে এ সপ্তাহের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে। রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পলাশবাড়ী উপজেলার তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের আলম মিয়া (৫০) বলেন, পুরো আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়নি। শ্রাবণ মাস প্রায় শেষ, বর্ষা মৌসুমে পানি ছিল না। পানির অভাবে অনেক কৃষকই সেচযন্ত্র চালু করে আমন রোপণ করছেন। এতে চাষিদের সেচ বাবদ বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে। তবে গত বুধবার থেকে রাতে-দিনে থেমে থেমে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জমিতে পানি জমতে শুরু করেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
একই গ্রামের বিপ্লব মিয়া (৪০) বলেন, সাধারণত আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমন রোপণ করে থাকি। কিন্তু এবার আষাঢ়ে বৃষ্টি ছিল না। শ্রাবণের শেষ দিকে এসে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এখন আমন রোপণ করতে পারব। ভালো ফলন পাব। গত বছর এমন সময়ে আমন ধান রোপণ করেছিলাম। ভালো ফলন পেয়েছি।
প্রতিবেশী জাফিরুল ইসলাম (৫২) নামে এক কৃষক জানান, পানির অভাবে আমন রোপণ নিয়ে যেমন শঙ্কা ছিল, তেমনি পাট জাগ দেওয়া নিয়েও ছিল দুশ্চিন্তা। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পেরে অনেক চাষির পাট জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছিল। পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে এখন পাট কেটে দ্রুত আমন চাষ করতে পারবে।
কুমারগাড়ী গ্রামের বাটু মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে জমিতে পর্যাপ্ত পানি জমেছে। সব কৃষক একসঙ্গে আমন ধান রোপণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এতে কৃষি শ্রমিকসংকট দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১ লাখ ২৯ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছিল। এরই মধ্যে কৃষকরা সেচ কার্যক্রম শুরু করে জেলায় ৫৩ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ শেষ করেছেন। এ ছাড়াও জেলায় ১৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এসব আবাদ থেকে ৩৯ হাজার ৯০০ টন পাট উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, অনেক চাষিদের বীজতলায় বীজ পরিপক্ব হয়ে যাচ্ছে। তারা বৃষ্টির অপেক্ষা না করে আগেই সেচযন্ত্র চালু করে আমন রোপণ শুরু করেছেন। এখন ভারী বৃষ্টিতে জলাশয়গুলোতে পানি ভরে গেছে। কৃষকরা সহজেই পাট জাগ দিতে পারবেন। পানির অভাবে আমন রোপণ নিয়ে কিছুটা চিন্তা থাকলেও দুদিনের বৃষ্টিতে সেই সংকট দূর হয়েছে। কৃষকরা পুরাদমে আমন রোপণ শুরু করেছে। আগস্ট মাসের ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আমন ধান লাগানো শেষ হবে। তবে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমন রোপণ করা যায়। জেলার মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানাভাবে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।