আয়তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মেট্রোপলিটন পুলিশ সংস্থা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। সিলেট মহানগরীতে ছয়টি থানা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এই ছয় থানার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
শনিবার (১০ আগস্ট) পর্যন্ত সিলেট মহানগর পুলিশের ছয়টি থানার কোনোটিতেই পুলিশি কার্যক্রম শুরু হয়নি।
শনিবার দেখা যায়, সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানা, জালালাবাদ থানা, এয়ারপোর্ট থানা, সিলেট, মোগলাবাজার থানা, শাহপরান থানা ও দক্ষিণ সুরমা থানার গেটে সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কয়েকটি থানায় এবিপিএন ও আনসার সদস্যদেরও দেখা গেছে।
জালালাবাদ থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার প্রধান ফটক বন্ধ করা। ভেতরে কয়েকজন সেনাবাহিনী সদস্য রয়েছেন। তারা জানান, এখনো চালু হয়নি। হয়তো আজ পুলিশ সদস্যরা আসতে পারেন। তবে এখনো কেউ আসেননি।
এয়ারপোর্ট থানারও একই চিত্র। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা জানান, থানার কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। শুক্রবার থেকে এই থানায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। থানার অফিসার ইনচার্জ এসে কিচ্ছুক্ষণ পর আবার চলে যান।
শাহপরান থানা একটু ব্যতিক্রম। এই থানার গেটে সেনাবাহিনী ও এবিপিএন সদস্য থাকলেও ভেতরে ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
হারুনুর রশীদ খবরের কাগজকে বলেন, আমিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা থানায় আছি, তবে থানায় এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। আমাদের এই থানায় কোনো হামলা-ভাঙচুর বা লুটপাট হয়নি। এই থানার আশপাশের এলাকার মানুষজন এই থানার নিরাপত্তা দিয়েছেন। এই এলাকার মানুষজন রাত জেগে থানা পাহারা দিয়েছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
মোগলাবাজার থানার প্রধান ফটকে দেখা যায় দুই সেনা ও এক আনসার সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। তবে এর কার্যক্রম চালু হয়নি। এখানে নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা সেনাবা সদস্যরা জানান, এখানো থানা চালু হয়নি। আগামীকাল থেকে চালু হতে পারে। এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসেছিলেন। পুলিশ সদস্যরাও কয়েকজন জয়েন করে চলে গেছেন। রবিবার (১১ আগস্ট) থানার কার্যক্রম শুরু হবে যদি তারা আসেন।
দক্ষিণ সুরমা থানারও একই অবস্থা দেখা যায়। এই থানায় দায়িত্বরত সেনাসদস্যরা জানান, এখনো থানা চালু হয়নি। কয়েকজন পুলিশ সিভিলে এসে দেখে গিয়েছেন।
কোতোয়ালি থানার প্রধান ফটকও বন্ধ ছিল। ভেতরে ফটকের পাশে সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন। তারা জানান, থানা এখনো চালু হয়নি। এই থানার ওসি সকালে এসে শুধু হাজিরা দিয়ে চলে গেছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া অফিসার এডিসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সিলেটের মাঠে পর্যায়ে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পালিয়ে যাওয়ায় পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিলেও সিলেট মহানগর পুলিশের ছয়টি থানা এখনো চালু হয়নি। বরং সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশের সদস্যরা মিলিত হয়ে ১১ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভ, আন্দোলনে নিহত পুলিশদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন পুলিশ সদস্যরা।
সাধারণ পুলিশ সদস্যদের উত্তেজিত জনতার রোষানলের মুখে ফেলে যাওয়ায় বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যরা এখন তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কথা প্রকাশ করছেন।
শাকিলা ববি/জোবাইদা/অমিয়/