ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বল ভেবে ককটেল নিয়ে খেলা, বিস্ফোরণে ২ শিশু আহত

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম
বল ভেবে ককটেল নিয়ে খেলা, বিস্ফোরণে ২ শিশু আহত
ছবি : খবরের কাগজ

রাজশাহীতে ময়লার স্তূপে কুড়িয়ে পাওয়া পরিত্যক্ত ককটেলকে বল মনে করে খেলার সময় বিস্ফোরণে দুই শিশু আহত হয়েছে।

সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে নগরীর টিকাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলো- নগরীর বোয়ালিয়া থানার টিকাপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (৭) ও একই এলাকার মো. শাহিনের ছেলে মো. সাবা (৮)। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার দুপুরে নগরীর টিকাপাড়া এলাকায় নিজেদের বাসার সামনে খেলাধুলা করছিল তারা। এ সময় সেখানে একটি ময়লার স্তূপে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১০-১২টি ককটেল পায় তারা। ককটেলগুলোকে বল ভেবে তা নিয়ে খেলা শুরু করলে বিকট শব্দে তা বিস্ফোরিত হয়। এতে দুই শিশু গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। পরে সেখান থেকে ৮-১০টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেন বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয়রা ধারণা করছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলেকে ঘিরে সংঘর্ষ চলাকালে এই ককটেলগুলো তৈরি করা হয়। পরে ব্যবহৃত না হওয়ায় সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়।

রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বিস্ফোরণে আহত দুই শিশুকে হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের শরীরের ক্ষতটা বিস্ফোরণের। তবে ককটেলের বিস্ফোরণ তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভর্তির পর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শরীরে স্প্রিন্টার বা অন্য কিছু থাকলে তা অপসারণ করা হবে।’

এনায়েত করিম/সালমান/

হত্যা মামলার বিচার এবং সাম্প্রতিক প্রেক্ষিত

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৬ এএম
হত্যা মামলার বিচার এবং সাম্প্রতিক প্রেক্ষিত
মাসুদ আহমেদ

সরকার পতনের পরপরই শুরু হয়েছে গণহত্যার জন্য দায়ী সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, পুলিশ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাদিক্রমে হত্যার অপরাধে ফৌজদারি মামলা দায়ের। যদিও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের গণহত্যা এখনো স্বীকৃত হয়নি। ঢাকা মহানগরসহ আরও ছয়টি স্থানে এ পর্যন্ত ৪১০টি মামলা হয়েছে। ডেপুটি কমিশনারের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। এসবে আসামি ও সাক্ষীর সংখ্যা মোট ৬০ হাজার। 

এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে প্রাথমিক চার্জশিট দিতে প্রয়োজন হবে তাদের নাম, বাবা ও মায়ের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, অপরাধের ধরন, সিআরপিসির প্রযোজ্য ধারা, সাক্ষীদের নাম ও ঠিকানা, সাক্ষ্য, আলামত ও অকুস্থলের বর্ণনা। এ ছাড়া লাগবে ভিডিও ক্লিপ, এফআইআর, নিহতের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, লাশ শনাক্তকারীর স্বাক্ষর, ধ্বংসকৃত সরকারি সম্পত্তির চিত্র এবং বিমাকারীর প্রতিবেদন ইত্যাদি। 

একেকজন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এর একেকটি মামলায় শুধু এই বিষয়গুলো প্রথমে হাতে লিখে এবং পরে টাইপ করে চার্জশিটের ছকে পেশ করতে কমপক্ষে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। তার পর তার ওপরস্থ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সার্কেল এএসপি, অতিরিক্ত এসপি ও এসপির সঙ্গে এবং কখনো কখনো সিনিয়র কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এগুলো যাচাই-বাছাই শেষ করে আদালতে পাঠাতে আরও তিন মাস করে সময় লাগবে। এগুলো হচ্ছে সেই সব মামলাসংক্রান্ত, যেগুলোর চার্জশিট সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার অনুমোদন করে আদালতে পাঠাতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। 

আরেক শ্রেণির মামলা এর মধ্যেই পাওয়া যাবে, যেগুলোর চার্জশিট প্রণয়নে জেলা জজ আদালতে শুনানি সম্পন্ন করতে হবে। এই মামলাগুলো যেহেতু হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংসসংক্রান্ত এবং এগুলো দায়ের হচ্ছে ঝড়ের গতিতে, সেহেতু এগুলোর বিচার করার জন্য প্রবল জনচাপ এবং ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দলের প্রবল চাপ থাকবে দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে। বাংলাদেশে বিচারকের সংখ্যা ২ হাজার ১০০ জনের মতো। বিচারাধীন এবং অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা প্রায় ৪২ লাখ। নতুন দায়েরকৃত মামলার দ্রুত বিচার দাবি করা মানেই পুরোনো মামলার বাদীদের প্রতি অন্যায় করা। 

কারণ এতে ‘আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং আগে আসলে আগে পাবেন’- সাধারণ ন্যায়বিচারের ভিত্তির চরম লঙ্ঘন। দ্রুত বিচার মানেই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিচারকরা আগের মামলার শুনানি স্থগিত করে এই ৪১০টি মামলার বিরতিহীন শুনানি গ্রহণ ও বিচারকাজ সম্পন্ন করা; যেমন সাম্প্রতিকালে নোয়াখালীর মাদ্রাসা মামলায় নুসরাত হত্যাকাণ্ডে এবং চট্টগ্রামে ওসি প্রদীপের মামলায় আদালত একাদিক্রমে শুনানি ও বিচারকার্য সম্পন্ন করে রায় দিয়েছিলেন। 

ধরা গেল, সেই বেদম বিচারকাজ আরম্ভ হলো। তখন এই মামলাগুলো যাদের কলমের ভেতর দিয়ে আগাতে থাকবে, তাদের মানসিকতা এবং অবস্থানের ওপর বিচারের মান ও গতি নির্ভর করবে। যেমন প্রধান উপদেষ্টা প্রথমেই বলেছেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে প্রাণহানি, সম্পদহানি এবং নৈরাজ্য হয়েছে তার জন্য আন্দোলনকারী ছাত্রদের দায়ী করা যায় না, দায়ী করা যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। বাস্তব হলো এই যে, আন্দোলনকারীদের হাতে ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। সরকারি গাড়ি ও মেট্রোরেলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। তাহলে এই দুটি বিষয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে কি মামলা বা শাস্তি হবে না? 

কারণ তারা তো নির্দোষ বলে সরকারপ্রধান উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কোনো ইনডেমনিটি জারি করা হয়নি। সরকারি সম্পত্তি না হয় রেহাই পেল, কারণ সেগুলো অপ্রাণীবাচক। কিন্তু ৪২ জন পুলিশের মারা যাওয়ার মামলা থেকে রেহাই দেবে কে? সন্তর্পণে পুলিশ বা নিহতদের স্বজন বাদী হয়ে মামলাগুলো করবেন, তা নিশ্চিত। তাতে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এদের সহকর্মীরা এবং সমর্থকরা পুলিশের নানা স্তরে কর্মরত। 

চার্জশিট প্রণয়ন এবং আদালতে অনুমদিত হওয়ার স্তর পর্যন্ত এরা চার্জশিটের উপজীব্যকে তাদের মনমতো না হলে কৌশলে তা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। তেমনি রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি সহানুভূতিশীল গোয়েন্দা ও পুলিশ সদস্যরাও মামলার চার্জশিটের উপজীব্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। প্রধান রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সমন্বয়করা সরকার পতনের প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন যে, জেলা, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের অধিকাংশ আওয়ামী প্রেতাত্মায় ভরপুর। 

এই বিশ্বাসে প্রথম কয়েক দিন বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তর থেকে ম্যাজিস্ট্রেট স্তর পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত এবং পদত্যাগ করানো হয়েছে। কিন্তু একজন জেলা জজ বা উচ্চতর আদালতের বিচারকের শূন্যস্থান কোনো বিপ্লবের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ এই না যে, এই সার্ভিসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত এমনকি ৫০ জন বিচারক রিজার্ভ রাখা হয়। একজন বিচারক তৈরি করতে দীর্ঘ সময় লাগে।

ফলে এই শূন্যস্থান পূরণ করে দ্রুত বিচার করা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হবে। অন্যদিকে আবার আগের আমলের মতো শাসন বিভাগ যদি বিচারকদের মামলার রায়ের ব্যাপারে তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন, তা হলে সেই সংস্কৃতি আগের আমলের মতোই নিচু হবে। বিচার কোনো তড়িঘড়ির বিষয় নয়। জেলা জজ পর্যায়ে যে রায়ই হোক, পরবর্তী দুটি স্তরে আপিল নিষ্পত্তিতে কী রকম সময় লাগে, তা স্মরণ করতে তিনটি মামলার উদাহরণই যথেষ্ট। 

প্রথমত, শাজনীন খুনের মামলায় বিচার শেষ হতে ১৮ বছর; দ্বিতীয়ত, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ১২ বছর; তৃতীয়ত, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার বিচার হতে ৮ বছর লেগেছিল। এই সর্বশেষ মামলাটি এখন ডেথ রেফারেন্স হিসেবে ৫ বছর ধরে উচ্চতর আদালতে বিবেচনাধীন আছে। অপরদিকে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সংঘটিত খুনের মামলার বিচার ও রায় কার্যকর হতে ৩৫ বছর সময় লেগেছে। এর মধ্যে ৬ বছর সংক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও। আবার বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলায় বিচার আরম্ভ হওয়ার পর সাড়ে ১৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। রায় এখনো অনিশ্চিত। 

পুলিশের সাবেক আইজি মামুন পলাতক ও কমিশনার আসাদুজ্জামান গ্রেপ্তার। তারাসহ ওই বিভাগের যারা সাবেক সরকারের অবৈধ সুবিধা ভোগ করেছেন এবং তাদের আমলে অধস্তন পুলিশ কর্মচারী নিয়োগ করেছেন, তাদের প্রভাব এই বিশাল বাহিনীতে অনেকাংশেই অক্ষুণ্ন রয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ড হাইকোর্টের একটি স্থান থেকে অযৌক্তিকভাবে আগত এক নির্দেশে মামলাটির বিচারকাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়। 

তারা সমাজের খুব প্রভাবশালী লোক ছিলেন না। তার পরও ক্ষমতার রশিতে এভাবে প্রভাব বিস্তার করা এই সমাজেই সম্ভব। মামলাটি শেয হতে ৩৮ বছর লেগেছে। সাম্প্রতিক মামলাগুলোর বাদী, আসামি ও সাক্ষীর মধ্যে মৃত ব্যক্তি, শিশু, বিদেশে অবস্থানরত এবং একেবারেই অসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ তাড়াহুড়ো। আমরা আত্মরক্ষায় সমর্থ একটা জাতি। ফলে প্রসিকিউশনের দক্ষতা আমাদের সামান্য। সরকারি মামলায় বিবাদীর উকিল যতটা দক্ষতা দেখান, সরকারি উকিল ততটা দক্ষতা তো দেখানই না বরং অনেক সময় নীরব থাকেন। ফলে আসামি খালাস পেয়ে যান। 

এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও কোর্ট দারোগা, পেশকার, পিপি, জিপি এবং আদালতের অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বৃহৎ অংশ অভিযোগ প্রমাণের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা নেবেন বলে মনে হয় না। অভিযুক্তরা অত্যন্ত শক্তিশালী, বিখ্যাত, প্রভাবশালী এবং ব্যয়বহুল আইনজীবী নিয়োগ করবেন। তাদের সামনে অখ্যাত সরকারি উকিলরা দুর্বলতার পরিচয় দেবেন। কাঁচাভাবে মামলা দায়েরের ফলে তা বৃদ্ধি পাবে। মুন সিনেমার পাকিস্তানি মালিক বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ৩২ বছর মামলা লড়ে ওই সম্পত্তির মালিকানা ফিরে পান। 

১৯৭২ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর দালালদের মামলায় বিবাদীদের সমর্থন করেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। এমনিতেও মৌলিকভাবে ব্রিটিশ আইন অপরাধীর পক্ষে থাকে। বাদীর উকিল অত্যন্ত মেধাবী, সৎ ও প্রভাবশালী না হলে অভিযোগ প্রমাণ করা প্রায় ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। এ দেশে নারী নির্যাতনসংক্রান্ত মামলার শতকরা ৯৫ ভাগ অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় অত্যন্ত সম্পদশালী এবং প্রভাবশালী এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনীত মামলাগুলো খুব দক্ষতার সঙ্গে দায়ের এবং চার্জশিট প্রণয়ন না করলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা যাবে বলে মনে হয় না। 

মামলাগুলোতে অনেকেই হুকুমের আসামি, অনেক সাক্ষী বিদেশ চলে গেছেন, অনেকেই মৃত ও আহত, অনেকে সময়ের পরিসরে এই বিষয়ে আর আগ্রহী থাকবেন না। অনেক ক্ষেত্রে বিচারকও রাজনৈতিক কারণে অভিযুক্তের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, কেউ কেউ আবার বোধ করবেন বিব্রত। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া মামলাগুলো দায়ের করা বিচারপ্রার্থীর জন্য আশাপ্রদ হবে না। ব্রিটিশদের প্রণীত ফৌজদারি আইন অক্ষুণ্ন আছে। তা একান্ত নৈর্ব্যত্তিক। সেগুলোর অন্তর্নিহিত লক্ষ্যের সঙ্গে পূর্ণ সামঞ্জস্য রেখে মামলাগুলো দায়ের করা উত্তম হবে। 

লেখক: সাহিত্যিক 
[email protected]

সিলেট সীমান্তে বিপুল পরিমাণ রুপিসহ যুবক আটক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ এএম
সিলেট সীমান্তে বিপুল পরিমাণ রুপিসহ যুবক আটক
রুপিসহ আটক মোহাম্মদ হৃদয় মিয়া। ছবি: খবরের কাগজ

সুনামগঞ্জে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রাত্রিকালীন টহল দলের অভিযানে ১৯ লাখ ৫০ হাজার রুপিসহ বাংলাদেশি এক যুবক আটক। 

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিজিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত আটটার দিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্তের বাংলাবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাউড়া গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে ভারতীয় মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। 

আটক যুবকের নাম মোহাম্মদ হৃদয় মিয়া (২৫)। তার বাড়ি দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভাওয়ালীপাড়া গ্রামে। 

বিজিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট ব্যাটালিয়নের অধীনে বাংলাবাজার বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবুল বাসার আজাদের নেতৃত্বে রাত্রিকালীন টহলদল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১২৩৫/৪-এস মেইন পিলারের ৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দক্ষিণ কলাউড়া গ্রামে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় অবৈধভাবে ভারত গিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে ভাওয়ালীপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ হৃদয় মিয়াকে আটক করা হয়। তার সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে ১৯ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি জব্দ করা হয়। 

ভারতীয় মুদ্রা থাকার বিষয়ে বিজিবিকে হৃদয় জানায়, বাদরেন নামক একজন ভারতীয় নাগরিকের নিকট মাছ বিক্রি করে রুপি নিয়ে ফিরছিলেন।

৪৮ বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতীয় রুপিসহ আটক যুবককে দোয়ারাবাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

উজ্জ্বল মেহেদী/ইসরাত চৈতী/

আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা দিচ্ছেন ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু সনদ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ এএম
আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা দিচ্ছেন ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু সনদ
ছবি : খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আত্মগোপনে থাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা দিচ্ছেন ট্রেড লাইসেন্স এবং নাগরিক সনদ। প্যাডে এখনো শেখ হাসিনা সরকারের থিম স্লোগান ব্যবহার করছেন। যাদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের যোগাযোগ রয়েছে, তাদের কেউ কেউ সনদ পাচ্ছেন। তবে এই সেবা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান।

সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, মেয়র এবং চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশির ভাগ ইউপি সদস্যরাও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। যোগাযোগ রাখছেন না কেউই। চেয়ারম্যানদের ব্যবহৃত মোবাইলও বন্ধ। 

এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকসেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। জরুরি প্রয়োজনেও পাচ্ছেন না কোনো সনদ। তবে যাদের সঙ্গে চেয়ারম্যানদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে, তারাই এ সেবা পাচ্ছেন। 

উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান। ৩৮ দিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে আসেননি। থাকছেন না কুমিরা এলাকার নিজ বাড়িতেও। তবুও এক ব্যবসায়ীকে গত ১ সেপ্টেম্বর একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছেন তিনি। অজ্ঞাত জায়গা থেকেই এই ট্রেড লাইসেন্সটি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে পরিষদে না এসেও ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যদি ট্রেড লাইসেন্স দিতে পারেন, তাহলে পরিষদে কেন আসছেন না, এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মধ্যে।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের কিউআর কোডসংবলিত একটি ট্রেড লাইসেন্স নুর-সু বিতান নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দেন চেয়ারম্যান। এর লাইসেন্স নম্বর-১৪৭৫। প্রোপ্রাইটরের নাম মোহাম্মদ নুরুল আবছার। তিনি কুমিরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আমিনুর রহমানের ছেলে। লাইসেন্স ফি বাবদ তিনি যে টাকা নিয়েছেন সেটা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে কি না নিশ্চিত নয় ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারীরা। লাইসেন্সের মেয়াদ দেওয়া হয়েছে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

এদিকে প্যাডের ওপর লেখা ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র, শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র, ‘শেখ হাসিনার দর্শন, সব মানুষের উন্নয়ন’। যদিও শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যান। কুমিরার চেয়ারম্যান এখনো কেন শেখ হাসিনা সরকারের থিম ব্যবহার করছেন। এটি নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক।

এ বিষয়ে কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শোভন কান্তি ভৌমিক বলেন, ‘পরিষদে চেয়ারম্যান আসতে পারছেন না, সেটা তো সবাই জানেন। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্য সনদপত্র স্বাক্ষর করে পাঠান তিনি। তবে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। সেবা যাতে অব্যাহত থাকে সেই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা আছে। একটু দেরি হলেও নাগরিকসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। পরিষদে কয়েকজন ইউপি সদস্য মাঝে মধ্যে আসেন।’

এদিকে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরীর বক্তব্যও একই রকম। ৫ আগস্টের পর থেকেই পরিষদে আসেননি বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ্ মিয়াজি। ওয়ারিশ সনদসহ অন্যান্য নাগরিক সনদে স্বাক্ষর দেন চেয়ারম্যান। সেবাগ্রহীতা ও পরিষদের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে তিনি সম্ভবত শহরেই বসবাস করছেন। এই পরিষদে শুধু জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা সমাজসেবক কর্মকর্তা লুৎফুনন্নেছা বেগম।

উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, ‘পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম তাজুল ইসলাম গত জুন মাসে হজে গিয়েছিলেন। তিনি যাওয়ার আগে দুটি প্যাডে স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছিলাম। এর মধ্যে একটি প্যাড শেষ আরেকটি আছে। তবে স্বাক্ষর আগের হলেও বর্তমানের তারিখ দেওয়া হচ্ছে। পরিষদে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে আছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম।’

কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড, সৈয়দপুর ও ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাদের পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

মূল হামলাকারীরা অধরা নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কাজে ফিরবেন না চিকিৎসকরা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ এএম
নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কাজে ফিরবেন না চিকিৎসকরা
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় স্থবির চিকিৎসাসেবা। সংগৃহীত

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার পরেও মূল হামলাকারী আসিফ হাসনাত জিহাদ ও আবু জিদানকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মামলাটি করেন হামলার শিকার কক্সবাজার ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সজীব কাজী। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়। সেখান থেকে দুজনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ায় তাদের আসামি হিসেবে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। 

হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোগীর মৃত্যুর পর জিহাদ, তামিম, তাহসিন ও জিদান সিসিইউতে প্রবেশ করে প্রথমে চিকিৎসকের কক্ষ ভাঙচুর চালায়। পরে চিকিৎসক সজীবকে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে চারতলা থেকে নিচে নামিয়ে মারধর করতে থাকেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বাকিরা। এ সময় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে অন্য চিকিৎসকরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের নতুন বাহারছড়া এলাকার তাহসিন মোহাম্মদ রেজা, তামিম মোহাম্মদ রেজা, আসিফ হাসনাত জিহাদ ও আবু জিদান। তাদের মধ্যে জিহাদ, জিদান ও তাহসিন ছাত্রদলের কর্মী। তাদের ছাত্রদলের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া তামিম শিবিরের সমর্থক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মছিউর রহমান বলেন, ‘সব আসামিকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ 

মামলায় আসামিদের নাম কেন উল্লেখ নেই জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিন ঞো বলেন,  ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করলেও তাদের পরিচয় আমরা নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। আমরা তাদের সহযোগিত করছি। মূল আসামিরা গ্রেপ্তার  না হওয়া পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক কাজে ফিরবে না।’

হামলাকারীরা রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী হওয়ায় কোনো চাপে ছিলেন কি না জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘কে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী বা নেতা, তা আমার দেখার বিষয় না। জড়িত কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া সরকারি সম্পত্তি নষ্টের দায়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হবে।’ 

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানান, চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবে পুলিশ। ইতোমধ্যে হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। জরুরি সেবা চালু থাকলেও তা চলছে খুব সীমিত। এতে রোগীরা বিপাকে পড়েছে।

কাজ শেষ না হওয়ায় বিপাকে হাজারও মানুষ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
কাজ শেষ না হওয়ায় বিপাকে হাজারও মানুষ
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাজালিয়া-শীলঘাটা সড়কের সুয়ালক খালের ওপর সেতুটির সংস্কারকাজ চলছে। যাতায়াতের জন্য তৈরি বিকল্প কাঠের সেতুটিও ভেঙে গেছে। খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া-শীলঘাটা সড়কের সুয়ালক খালের ওপর সেতুটির সংস্কারকাজ ৯ মাসেও শেষ হয়নি। যাতায়াতের জন্য বিকল্প হিসেবে একটি কাঠের সেতু তৈরি করা হয়। কিন্তু চার মাস আগে সেটিও ভেঙে গেছে। এরপর থেকে চন্দনাইশ ও পুরানগড় ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে পার হতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অসুস্থ রোগী, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি।

স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের শুরুতেই বিকল্প কাঠের সেতুটি নড়বড়ে হয়ে যায়। স্থানীয়দের চাপের মুখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢিলেঢালাভাবে মেরামত করে কোনোরকম দায় সারে।  তবে মেরামতের কিছুদিন যেতে না যেতেই সেতুটি পাহাড়ি ঢলে আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকে প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কাঠের সেতুটি মেরামত করা হয়নি। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিকল্প কাঠের সেতুটির জায়গায় বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সেজন্য অর্থ বরাদ্দ পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। 

গত বছরের আগস্টে সাতকানিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সেতুটির দক্ষিণ পাশের পিলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একই বছরের নভেম্বর মাসে সেতুটির সংস্কারকাজ শুরু হয়। ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দে কাজটি পায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর সিন্ডিকেট। ২০২৩ সালের মধ্যেই কাজটি শেষ করার কথা ছিল। অথচ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এসেও কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। 

চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি প্রায়ই এই দিক দিয়ে যাতায়াত করি। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মূল সেতুটি সংস্কার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া আপাতত চলাচলের জন্য কাঠের সেতুটি মেরামতের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

শীলঘাটা গ্রামের বাসিন্দা সনজিৎ বড়ুয়া বলেন, ‘কাঠের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় আমাদের গ্রামের মানুষের যাতায়াতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছেলেমেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হয়ে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে। হাট-বাজারে যাতায়াতসহ সব কিছুতেই স্থবিরতা নেমে এসেছে।’ 

আলী আকবর নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের এলাকার বাসিন্দারা উপজেলা, জেলা ও হাটবাজারে যাতায়াতে এই সেতুটি ব্যবহার করে থাকেন। সেতুটি ভেসে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াত ও শাকসবজি বাজারজাতকরণে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের এলাকায় কোনো হাসপাতালও নেই। মুমূর্ষু রোগী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ভেসে যাওয়া কাঠের সেতুটি মেরামতের মাধ্যমে যাতায়াতের উপযোগী করে দেওয়া হলে ভোগান্তি অনেকটা লাঘব হবে।’

ঠিকাদার মো. দিদারুল ইসলাম জানান, ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে খালটিতে অনেক বেশি পানি হয়েছে। এতে সেতুর দক্ষিণ পাশের পিলারটি পানিতে ডুবে গেছে। তাই আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টিপাত ও খালের পানি কমে গেলে সেতুর সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।

সাতকানিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তা সবুজ কুমার দে খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিকল্প সেতুটি বারবার যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে এখনো বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।’